নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলােদেশর একজন প্রখ্যাত কবি তারঁর শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে নিখিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী সাহেবের বঙ সফরের বর্ণনা প্রদান করেন। সেই কবির নাম নাইবা বললাম। কারণ তার নামটা তেমন একটা পরিচিত না হলেও তিনি বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির কর্মকর্তা ছিলেন এটুকু বলে রাখি।
সেই সময় কবি অনেক ছোট ছিলেন। বয়স প্রায় ১১ কি ১২ হবে। তিনি তার মামার সঙে রেসকোর্স ময়দানে যান কায়েদে আযমের বক্তব্য শোনার জন্য। তার মামা বলেন, সামনে না বসলে জিন্নাহ সাহেবের মুখখানাই দেখা যাবে না। আর আজ দেখতে না পারলে ভবিষ্যৎ এ আর হয়তো দেখার সুযোগ মিলবে না। কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মঞ্চে উপস্থিত হলেন। সঙে ছিল তাঁর ভগ্নি। কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ সাহেব তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন। প্রথমেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বললেন। তারপর বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বললেন,“ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা!” রেসকোর্স ময়দানে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা্। হঠাৎ ময়দানের এক কোন থেকে ভেসে এলো কয়েকটি শব্দ! শেম! শেম! কি লজ্জা! কি লজ্জা! এরপর পর্যায়ক্রমে ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠল।
আজ হয়তো অনেকেই নতুন করে আর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে ব্লগপোষ্ট তৈরী করবেন। আজ আমি কোন ইতিহাস লিখব না। ইতিহাসকে সামনে তুলে আনার সময় হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু মূল্যবোধকে জাগ্রত করার সময় হয়তো পাওয়া যাবে না!
জাতি হিসেবে আমরা যে বদ্ধ উন্মাদ আর পাগল তার অনন্য নজির প্রতিবছর ২১ ফ্রেব্রয়ারী তে দেখা যায়(!)
আজ ভাষা দিবস না হওয়া স্বত্বেও পুরো জাতি ভাষা দিবস পালনে ভয়ানক ব্যস্ত আর ভাবখানা এমন যে,শহীদদের শোকে তারা পাথর(!) প্রথম ভাষা দিবস মূলত পালন করা হয় ৮ ফাল্গুন।আর ৮ ফাল্গুন ছিল গতকাল।অর্থাৎ গতকালকের দিনটি ছিল আমাদের অহংকার, ভাষা দিবস।সালাম, রফিক,জব্বার প্রমুখরা ফাল্গুনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবন দিয়েছিল ফেব্রয়ারীকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়।
আজ যদি আমরা ফেব্রয়ারীকে পালন না করে ফাল্গুনকে পালন করতাম তবে জাতিসংঘ সারাবিশ্বে ঘোষনা দিত ৮ ফাল্গুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।তখন পুরো বিশ্ব জানতে পারত বাংলাদেশের একটি মাসের নাম ফাল্গুন।আর আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালনের জন্য সারাবিশ্ব ফাল্গুন নামটির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চিনতে পারতো। তবেই সালাম,রফিক,জব্বারের আত্নত্যাগ সার্থক হতো।
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সার্থকতা শুধুমাত্র একটাই, উর্দুকে তাড়িয়ে তার স্থানে হিন্দিকে বসিয়ে দিয়েছে! অতীতে বাংলার জনগন যেমন উর্দু ভাষা পুরো বুঝতে পারলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলতে পারতো। আজও তেমনি বাংলার জনগন হিন্দিকে পুরোপুরি বুঝতে পারে এবং বেশ পরিষ্কার হিন্দিও বলতে পারে।
সালাম,রফিক,জব্বার প্রমুখরা যদি আজ দেখতে পারতো যে ভাষার জন্য তারা আন্দোলন করছে তার কি করুন অবস্থা, তবে আমি নিশ্চিত এইবার তারা নিজেরাই নিজেদের গলায় রশি দিয়ে গাছের মগডালে ঝুলে পড়তো(!) চারদিকে এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের আধিক্যে বাংলা মিডিয়ামদের অবস্থা ৭৩ এর কঙ্কাল সার। শহর অঞ্জলে কেউ মামুনি,মাম্মি ছাড়া 'মা' ডাকে বলে আমি শুনিনি। অথচ ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাতই ছিল বাংলা ভাষায় প্রানভরে 'মা' বলার স্বাধীনতা নিয়ে।
হিন্দি সিরিয়ালের কল্যানে বাংলার নারীকূল আজ পরভাষায় দারুন এক্সপার্ট! তাদের মুখের ভাষা এখন এই রকম, "ভাবিসাব আপ খানা খায়েঙ্গে না"!আর তরুনীদের গায়ে শোভা পায়, চিকিনি চামেলী, ঝিলিক,পাগলু,আর পাখি নামক পোষাক সমূহ। এই সবই আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে ধার করা সংস্কৃতি।
বাংলাদেশের অফিস আদালতে আজও চলছে ইংরেজির আধিক্য! আদালতে দাড়িয়ে আছে আধামুর্খ এক আসামী। জজ ঘোষনা দিয়ে দিল, উক্ত আসামীকে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার হুকুম দেয়া হল। তখন কাঠগড়ায় দাড়ানো আসামী তার উকিলকে জিজ্ঞেস করে, জজ বুড়া মিয়া ইংলিশে ফটর ফটর কইরা ঐগুলা কি কইয়া গেল (!)
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যানে গড়ে উঠেছে অনেক মিডিয়া। তার মধ্যে অন্যতম এফএম চ্যানেলগুলো। এই এফএম চ্যানেলগুলোতে যেহারে হিন্দি গান বাজানো হয় তাতে মনে হয় আমরা যেন হিন্দুস্থানের কোন এক শহরে বাস করছি। আর এফএম চ্যানেলের আরজেদের বাংলিশ উচ্চারণ শুনে মনে হয়, বাংলা ভাষাটা কি এত্তোটাই গরীব যে তাকে ইংরেজির সাপোর্টে উচ্চারণ করতে হবে??
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬
নাজরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেছেন: আপনার সাথে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।