নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অব্যক্ত ধ্বনি

আল-শাহ্‌রিয়ার

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।

আল-শাহ্‌রিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বদলে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি!!!

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কাতারের ওপর অবরোধ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর লেবানন নিয়েও সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে সৌদি আরব। দেশটির ৩২ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স ও পরবর্তী সম্ভাব্য রাজা মোহাম্মাদ বিন সালমানের শক্তি প্রয়োগের কূটনীতিই বর্তমান বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ইসরাইলের সমর্থন নিয়ে সুন্নি বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার যে পরিকল্পনা তিনি করেছেলেন তা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে। বরং সৌদি আরবের আগ্রাসী নীতি এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ও বিশ্বস্ততা বাড়িয়ে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে রেজিম চেঞ্জের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধের পর ইরাকে ইরানপন্থী শিয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব মূলত দেশটি নিয়ন্ত্রণ করছে। শিয়া ধর্মীয় নেতারা ছাড়াও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি ইরানপন্থী হিসেবে পরিচিত। ইরাককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদার বলে স্বীকৃতি দিলেও দেশটিতে ব্যাপক আকারে ইরানের প্রভাব বর্তমান। আইএস বিরোধী যুদ্ধ ইরাক-ইরান কে একসুতায় বাঁধলেও সৌদি আরবের প্রতি ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে ইরাকের ৮শ’ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায়। দেশটির সাথে ইরানের সম্পর্কে সব থেকে উৎকণ্ঠায় রেখেছে সৌদি আরবকে।

লেবাননে ইরানপন্থী রাজনৈতিক ও মিলিশিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ সেখানের সুন্নি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছে। দেশটিতে অব্যাহতভাবে ইরানের প্রভাব বাড়ছে। ইরানের সবচেয়ে বিশস্ত মিত্র সিরিয়ার বাশার আল আসাদকে উৎখাতে ব্যর্থতার পর তিনিই ক্ষমতাসীন থাকছেন। লিবিয়া আর ইয়েমেন হয়ে পড়েছে যুদ্ধক্ষেত্র। এ যুদ্ধের যেন কোনো শেষ নেই। অপর দিকে কাতারের সাথে বিরোধের কারণে দেশটি এখন সৌদি জোট থেকে ইরানের প্রভাব বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আরব লিগের মতো সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট (জিসিসি) অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সৌদি রাজপরিবারে ক্ষমতার লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে একাধিক প্রিন্স, সাবেক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন। দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতার মধ্যে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর কৌশল হিসেবে লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে সৌদি আরব ডেকে এনে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

সাদ হারিরিকে পদত্যাগ করানোর উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। কারণ লেবাননে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিজবুল্লাহ। এর আগে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলেও তিনি তাতে রাজি হননি। লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তৎপরতায় সৌদি আরবকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে ইসরাইল। কারণ হিজবুল্লাহর সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলের জন্য বড় হুমকি।

সাদ হারিরি সৌদি আরব এসে পদত্যাগ করে ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাকে হত্যা চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করে সৌদি টিভিতে বিবৃতি দিলেও হিজবুল্লাহ দেশটির সুন্নি প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। এমনকি লেবাননের সব রাজনৈতিক দল সৌদি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাকে সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করছে। ফলে হিজবুল্লাহর ওপর চাপ সৃষ্টির সৌদি কৌশল কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। দেশটির খ্রিষ্টান প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হারিরিকে অপহরণের জন্য সৌদি আরবকে দোষারোপ করেছে। দেশটির জনগন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বরং তাদের প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানাচ্ছে। সুতরাং লেবানন নিয়ে সৌদি ষড়যন্ত্র মাঠে মারা গিয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ইয়েমেনের শিয়া হুতি বিদ্রোহিরা সৌদি আরবের রিয়াদ বিমানবন্দর লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। সৌদি আরব হুতিদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার জন্য ইরানকে দোষারোপ করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে হুতিরা গোপনে উত্তর কোরিয়া থেকে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পেয়ে থাকতে পারে। ইয়েমেনের সাথে সৌদি আরবের ১৮শ’ কিলোমিটারের সীমান্ত আছে। যদি হুতিরা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পেয়ে থাকে তাহলে সৌদি আরবের জন্য তা হবে বড় ধরনের বিপদের কারণ। এ ছাড়া বৃহৎ কোনো শক্তি বিশেষ করে রাশিয়ার নীরব সমর্থন ছাড়া হুতি যোদ্ধাদের হাতে এমন সমরাস্ত্র আসার কোনো কারণ নেই।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নানামুখী স্বার্থের সম্পর্কের মধ্যে ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্কের সাথে রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক বাড়ছে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল কেনার চুক্তি করেছে তুরস্ক। এই প্রথম কোনো ন্যাটো সদস্য দেশ রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তি করল। তুরস্কে মার্কিন সমর্থনে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে তুরস্ক। বেশ কিছু দিন থেকে তুরস্কের সাথে সৌদি আরবের শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের পর দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। কাতারের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে দেশটির আমিরের আহ্বানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে তুরস্ক। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া একই ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছে যা অ্যামেরিকা, সৌদিআরব ও ইসরাইলের জন্য অসস্থিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।

সম্প্রতি ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া কিছু তারবার্তার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে তেলআবিব দেশটির কূটনীতিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন সৌদি আরবকে যেন সুন্নি মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য তারা প্রভাব বিস্তার করেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সামনের দিনগুলো সৌদি আরবের জন্য হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অঞ্চলে সৌদি আরবের চাপ প্রয়োগের কূটনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতা দেশটিকে বন্ধুহীন করে তুলছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইরান প্রভাব বিস্তার করছে। বৃহৎ শক্তি রাশিয়ার সাথে ইরান ও তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এখন প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: সব দেশের রাজনীতিই বদলায়।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: এখানে রাজনীতি বদলের বিষয় নয় সঙ্কটের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

নতুন নকিব বলেছেন:



নতুন মাথাগরম ক্রাউন প্রিন্স এবং দেশটির সম্ভাব্য পরবর্তী বাদশাহ মোহাম্মাদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাঈল চক্রে ভালো ভাবেই ফেঁসেছেন, মনে হচ্ছে!

ইসরাইল-আমেরিকার সাথে আঁতাত করে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধির ফলাফল অচিরেই হয়তো প্রত্যক্ষ করবেন তিনি। সউদিদের কর্মকান্ডে অনুমিত হচ্ছে, গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য দু:খজনক, হৃদয়বিদারক এবং মর্মান্তিক সব ভয়ঙ্কর পরিনতি অপেক্ষা করছে। আল্লাহ পাক বিশ্বময় এই জাতিকে হেফাজত করুন। হারামাইনের মর্যাদা সমুন্নত রাখুন।

দীর্ঘ পোস্ট পুরো বিশ্লেষন না পড়েই কথা বললাম। ক্ষমা করবেন।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সহমত।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৮

রাতুল_শাহ বলেছেন: দেখা যাক কি হয়!
সবচেয়ে মজার ব্যাপার ন্যাটো তুরস্ক নিয়ে।

আমেরিকা এখন আঙুল কামড়াচ্ছে। ইরানের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের গণতন্ত্র। যেটা মধ্যপ্রাচ্যে খুব অভাব।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫১

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সহমত। ইরানের সব থেকে বড় শক্তি তাদের একতা। জাতীয় প্রয়োজনে তারা ঐক্যবদ্ধ।

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার আলোচনা! + +
"Politics makes strange bedfellows"!

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সহমত।

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মাথামোটা বলদ প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান ইসরাঈল চক্রে ফেঁসে যাবে নিশ্চিতভাবে। কারণ ইসলাঈলকে কোন মুসলিম রাষ্ট্র পছন্দ করেনা (২/১টি ছাড়া)।




ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সহমত। ধন্যবাদ।

৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ইসরাইলের সাথে গোপন আতাত করে সৌদি আরব সবচেয়ে বড় ভূল করলো! ইরান-তুরস্কের প্রভাব এখন আরও বাড়বে। তাছাড়া একদিকে সৌদিদের সীমাহীন বিলাসিতা, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপি মুসলমানদের দুর্গতি সৌদিদের গ্রহনযোগ্যতা আর মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেন্জের সম্মুখীন করেছে। এদেরকে কেউ এখন আর বিশ্বাস করে না।
আপনার সুন্দর বিশ্লেষনের জন্য ধন্যবাদ।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৭

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সহমত। ধন্যবাদ।

৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

গরল বলেছেন: ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে লাগতে যেয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে, বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়াই হল বুদ্ধিমত্তার কাজ। তাদের বুঝতে হবে যে ফিলিস্তিন নামে কোন দেশ কোনদিন ছিল না, দখলকৃত যায়গা ছিল সিরিয়া, মিশর আর জর্ডানের। তারা কেন তাদের দখলকৃত যায়গা ফেরত নেয় না। শুধু শুধু কিছু সংখক মুসলিমদের উষ্কে দিয়ে তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করল। ইসরায়েলতো তাদের দেশের আরব মুসলিমদের পূর্ণ নাগরিক সুবিধা দিচ্ছে, এমনকি ইসরায়েলের সংসদে ১০ জনেরও বেশী আরব সদস্য আছে। শুধু শুধু ফিলিস্তিনিদেরকে উন্নত জীবন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: সমস্যা হল আপনার নামের মত আপনার চিন্তায়ও গড়ল রয়েছে। আপনি বলছেন ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নিয়ে তাদের হাতে মসুলমানদের সব কিছু তুলে দিতে! চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ধরলে বাঁধা না দিতে তাদের সাহায্য করবেন কেননা তারা চাঁদাবাজি থেকে উপার্জিত অর্থ নিশ্চয়ই সমাজে খরচ করবে তাতে আপনিও ভাগ পাবেন দারুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.