নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I'll Sleep When I'm Dead

আমি একদিন মারা যাবো, এই সত্য মেনে নিতে আমার কোন আক্ষেপ নেই!আক্ষেপ শুধু একটি বিষয়তেই, আমি মারা যাওয়ার পর অনেক অসাধারণ চলচ্চিত্র,বই,গান এর সৃষ্টি হবে- যার স্বাদ আমি নিতে পারব না...

শাহরুখ সাকিব

জীবন খাতার শেষের পাতায়, এঁকে দিলাম আলপনা, আমার স্মৃতি পড়বে মনে, যখন আমি থাকব না...! মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন মানুষ নিজে ; অথচ বাকি সব অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিয়েছি! তাদেরকে হাসি খুশি রাখার মাধ্যমে! বুঝেন অবস্থা! একবারেই বদ্ধ উন্মাদ, আবেগপ্রবন,ভীতু এক মানুষ...!চিন্তাভাবনা করে সাধারণত কিছু বলা বা করা হয় না, এজন্য ঝামেলাতেও বেশি পড়তে হয়! তারপরও - always try to listen to my heart !Simplicity জিনিসটা খুব ভাল্লাগে, নিজেও তাই!'হাসিমুখ','দেশ','দেশের মানুষ','বৃষ্টি','জোছনা','প্রিয় মানুষগুলোকে বিরক্ত করা','শিশির ভেজা ঘাসের উপরে হাঁটা','জীবন','নিঃশ্বাস নেয়া','বইপড়া'(অবশ্যই পাঠ্যবই নয়!),'বন্ধু','বন্ধুত্ব','আড্ডা দেয়া','পাহাড়','সমুদ্র','সিনেমা দেখা','শাহরুখ খান' প্রভৃতির প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে! আমি নিম্নোক্ত জীবন দর্শনে বিশ্বাসী - "Live, Laugh and Love!" (বাঁচো , হাসও আর ভালোবাসো! ) :-D আর হ্যাঁ, নিজের প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় "মানুষ" বলতে পছন্দ করি, আগে মানুষ, তারপর বাকি সব... :-) আমার রক্তের গ্রুপ- B (Be Positive!) আমার রাশি- কুম্ভ (কিন্তু আমি মোটেই কুম্ভকর্ণ নই!) নিজেকে একটি শব্দে প্রকাশ করতে বললে আমি সেই পুরনো অসাধারণ শব্দটি বলব--- "পাগল" :-P :-P আমার ফেসবুক ঠিকানা- fb.com/syed.n.sakib.3

শাহরুখ সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন প্রিয় পরিচালক রাজু হিরানি (থ্রি ইডিয়টস এর ডিরেক্টর) :)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

যেই মানুষটা মাত্র তিনটি সিনেমা বানিয়ে কোটি কোটি মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন, হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন- সেই মানুষটা একসময় প্রবল ভয়ে আচ্ছন্ন থাকতেন। কি সেই ভয়? “ভূতের” ভয়।

যুক্তিবাদী বাবার কানে একদিন এই কথা গেল- তার ছেলে নাকি ভূতের ভয়ে কাঁপে। একদিন সন্ধ্যায় ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে চড়লেন- গন্তব্য শহরের বাইরে অবস্থিত জঙ্গল। যথাসময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালেন, ছেলেকে বললেন- বেড়িয়ে এসো গাড়ি থেকে! বাধ্য ছেলের মতো নেমে আসলেন। বাবা বললেন- তুমি নাকি ভূতকে ভয় পাও? তো ডাকো তোমার সেই ভূতকে! তুমি তো জানোই যে ভূত জঙ্গলে থাকে- ডাকো ভূতকে, আজকে ভূতের একদিন কি আমার একদিন! ভয়ে ভয়ে ছেলে ডাকতে থাকল- কিন্তু ভূত আর আসে না! অবশেষে ছেলের বাবা বললেন- যা শুনবে তাই বিশ্বাস করবে না। যুক্তিবাদী হওয়ার চেষ্টা করো, নিজের ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা কর। নিজের মনের কথা শুনো।
যুক্তিবাদী বাবা জানলেনও না, তার এই কয়েকটা কথা সেদিন তার ছোট্ট ছেলেকে কত অদ্ভুত ধরনের মানসিক শক্তি দিয়েছিল, যেটার প্রমাণ সে পরবর্তী জীবনে তার কাজে দেখিয়েছে।

ছেলের জন্ম নাগপুরে, ভারতের ছোট্ট এক মফস্বল শহরে। ইন্টার পর্যন্ত সাইন্সে পড়লেন- কিন্তু ছাত্র হিসেবে মোটামুটি থাকার কারণে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার মতো মার্কস পেলেন না। আশেপাশের সবাই “তোর জীবন ব্যর্থ! সাইন্সে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারলি না?” বলে আক্ষেপ করতে লাগলো- যদিও তিনি কিছুতেই বুঝলেন না এত সহজে জীবনের মতো এত বড় একটা জিনিস কীভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়! ভর্তি হলেন কমার্সে- উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে সিএ (CA- Chartered Account) তে পড়াশুনা করে “টাকা কামিয়ে” সো কলড “বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল” করা। কিন্তু এখানেও লাভ হল না, সংখ্যার হিসাব তার মাথায় ঢুকল না, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না পড়াশুনার। পরীক্ষার আগের দিন অনেক সাহস করে বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন- আমি কালকে পরীক্ষা দিব না, আমি কমার্স কিছুই বুঝি না। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, তার বাবা কিছুই বললেন না! শুধু বললেন- ঠিক আছে, না পারলে দিও না এক্সাম। কালকে থেকে তাহলে আমার দোকানে এসে বসে আমাকে সাহায্য করো। ছেলে নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে তার বাবা এত সহজে রাজি হয়ে যাবেন! মনে মনে বললেন-শুধু দোকানে বসা কেন? আপনি বললে আমি এখন পুরো নাগপুর শহর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে রাজি! নিজের জীবনের এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাটিকে তিনি পড়ে তার সিনেমাতে ব্যবহার করেছিলেন।

বাবার টাইপরাইটিং এর ইন্সটিটিউট ছিল। সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে সময় দিতে লাগলো ছেলে। তারপরেও হাতে থাকল অফুরন্ত সময়! কীভাবে কাজে লাগানো যায় এই সময়? কলেজের কিছু ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় হল যারা থিয়েটার করত। তাঁদের সাথে গেলেন একদিন মঞ্চনাটক দেখতে। দেখা শেষে মনে হল- এগুলো কোথায় ছিল এতদিন?! আমি তো জীবনে এই ধরনের কিছুই করতে চাচ্ছিলাম এতদিন থেকে!
থিয়েটারে যোগদান শুরু হল- এতই ভালো লাগতে লাগলো থিয়েটার- একাধারে অভিনয়, পরিচালনা, মেকাপ- সব করতে লাগলেন! একদিন প্রিয় বাবাকে খুলে বললেন সব, বাবা বললেন- শিখবে যখন, ভালো করে শিখ। ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিলেন পুনে শহরের Film and Television Institute of India তে। জীবনের সব ক্ষেত্রে বাবার এত সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই হয়তো নিজের প্রিয় ব্যক্তিত্বের নাম বলতে বললে নিজের বাবার নামই সবার আগে বলেন।
ছেলের ইচ্ছা ছিল ডিরেক্টর হওয়ার, ডিরেক্টর পদে অ্যাপ্লাই করলেন। কিন্তু ডিরেক্টর পদের অল্প সিটের জন্য অ্যাপ্লাই করতেন তখন হাজার হাজার ছাত্র। বুঝলনে এখানে হবে না তার। খেয়াল করলেন, এডিটিং পদে কেও আপ্লাই করে না তেমন, উল্টো এখানে সিট খালি থাকে! তাই এডিটিং কি এটা না বুঝেই সেখানে অ্যাপ্লাই করে দিলেন, টিকেও গেলেন, ক্লাস করতে লাগলেন। এই এডিটিং ই তার জন্য “শাপে বর” হয়ে আসলো।

স্কলারশিপ পেয়ে মুম্বাইয়ে চলে আসলেন, বিভিন্ন ফিল্মে এডিটিং এর কাজ শুরু করলেন- কিন্তু কয়েকদিনেই মন বিষিয়ে উঠল! বেশিরভাগ সিনেমার এডিটিং করার পড়ে দেখতেন সেই সিনেমা আর রিলিজ পাচ্ছে না, ফলে তিনি টাকাও পাচ্ছেন না- এভাবে একসময় বেঁচে থাকাই প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল তার কাছে। ফিল্মের এডিটিং কে “গুডবাই” বলে অ্যাড বা বিজ্ঞাপনের এডিটিং এর কাজে চলে আসলেন, ভালই চলতে লাগলো এখানে, “ফেভিকল” এর একটা বিজ্ঞাপনে নিজে অভিনয় পর্যন্ত করলেন। কিন্তু সিনেমা বানানো ছিল যার লক্ষ্য, বিজ্ঞাপন আর তাকে কতদিন ভুলিয়ে রাখবে?
অ্যাডফিল্মে কাজ করার সময় পরিচয় ঘটল প্রযোজক ও পরিচালক বিধুবিনোদ চোপড়ার সাথে। বিধুর ১৯৪২- অ্যা লাভ স্টোরি সিনেমার প্রমো বানালেন তিনি। এছাড়া মিশন কাশ্মির সিনেমার এডিটর হওয়ার সুযোগও পেলেন তিনি। তার কাজে বেশ সন্তুষ্ট হলেন বিধু। তিনিও বুঝলেন – এই হল সুযোগ- এতদিন যেই স্বপ্ন লালন করে এসেছেন তার সম্পর্কে মুখে ফুটে কিছু বলার! কাজের ফাঁকে ফাঁকে সিনেমার একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন তিনি এতদিন- একজন গুন্ডা যদি ডাক্তারি পড়তে মেডিক্যাল কলেজে চলে আসে তাহলে কি হতে পারে এই নিয়ে। বিধুকে শোনালেন- এত পছন্দ হল বিধুর এই স্ক্রিপ্ট- যে তিনি নিজেই সিনেমার প্রোডিউসার হওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলেন। আরও অসাধারণ ব্যাপার ঘটলো- সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয়ে রাজি হয়ে গেলেন শাহরুখ খান!

কিন্তু একসাথে এতবেশি “অসাধারণ” কিছু সম্ভবত ভাগ্যদেবীর ভালো লাগছিল না- সিনেমার শুটিং যখন শুরু হওয়া প্রায় নিশ্চিত- তখনই “শক্তি দ্যা পাওয়ার” সিনেমার ছোট্ট একটা রোল করতে গিয়ে কাঁধে ব্যথা পেয়ে মারাত্মক আহত হলেন শাহরুখ, কাঁধে অপারেশন করাতে হল, ডাক্তার তাকে পুরো রেস্টে থাকার পরামর্শ দিলেন। সঙ্গত কারণেই সিনেমাটি করতে পারলেন না শাহরুখ।নতুন পরিচালক লোকটি যেন অথৈ সাগরে পড়লেন। প্রযোজক বিধু সাজেস্ট করলেন সঞ্জয় দত্ত এর নাম- কিছুতেই পছন্দ হল না এই সাজেশন পরিচালকের। কারণ এই সিনেমাতে নায়ক একটি বিশেষ উচ্চারণে( হিন্দিতে যাকে বলে- টাপোরি ল্যাঙ্গুয়েজ) কথা বলবেন- যেটা তিনি শাহরুখ কে করতে দেখেছিলেন তার “রামজানে” সিনেমাতে। অগত্যা বাধ্য হয়ে তিনি সঞ্জয়ের কিছু সিনেমা দেখা শুরু করলেন- এবং সারারাত সঞ্জয়ের সিনেমা দেখে নিজেই এই সিদ্ধান্তে আসলেন, তার সিনেমার মুন্নাভাই নামক চরিত্রের জন্য সঞ্জয় দত্তই পারফেক্ট!
যথাসময়ে সিনেমার কাজ শেষ হল। সিনেমা মুক্তির আগে বেশ কিছু পরিচালককে সিনেমাটি দেখালেন। বেশিরভাগই প্রশংসা করলেন, অনেকে বললেন- পুরা সিনেমার কাজ মুম্বাইতেই শেষ করলেন? কোন আইটেম সং নাই ক্যান? একটা গানের জন্যও তো বিদেশের লোকেশনে গেলেন না! সঞ্জয় এর মতো একশন হিরোকে কি বুঝে কমেডি রোলে নিলেন? তিনি কোন কথা না বলে শুধু চুপচাপ শুনে গেলেন- ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নতুন পরিচালকদের বেশি কথা বলতে নেই বা প্রতিবাদ করতে নেই বলেই হয়ত!

২০০৩ সালে প্রথম সিনেমা “মুন্নাভাই এমবিবিএস” মুক্তি পেল- এবং ইতিহাসের চেয়েও বেশি কিছু সৃষ্টি করল! একদিকে যেমন চরম ব্যবসা করতে লাগলো এই সিনেমা, অন্যদিকে সমালোচকদের পরম প্রশংসা কুড়াতে লাগলেন- প্রায় ঝিমিয়ে যাওয়া সঞ্জয় দত্তের ক্যারিয়ার যেন নতুন করে জেগে উঠল। শুধু যে সিনেমাটি একটি ক্লাসিক এ পরিণত হল- তা নয়, মুন্নাভাই ক্যারেক্টারটি পর্যন্ত একটি আইকনিক ক্যারেক্টারে পরিণত হল! ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার, আইফা, স্টার স্ক্রিন- সবাই যেন বাধ্য হল এই সিনেমাকে পুরষ্কার দিতে! এই মুন্নাভাইকেই নিয়েই পরের সিনেমা বানালেন- লাগে রাহ মুন্নাভাই- যথারীতি এবারও বাজিমাত! প্রথমে সিনেমার নাম হওয়ার কথা ছিল “মুন্নাভাই মিটস গান্ধীজী”। কিন্তু একদিন নিজের বাসার কাজের লোককে জিজ্ঞেস করলেন- আচ্ছা আমার পরের সিনেমার নাম এটা হলে কেমন হয়? কাজের লোক বলল- এটার মানে কি? আমি তো ইংরেজি বুঝি না স্যার! তখনই নাম পালটিয়ে রাখলেন তিনি, পড়ে বলেছিলেন- আমি চাচ্ছিলাম- সিনেমাটি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছুবে- সেখানে বাসার কাজের লোক যদি সিনেমার নামই বুঝতে না পারল, তাহলে শুধু শুধু “মুন্নাভাই মিটস গান্ধীজী” নাম রেখে ইংরেজিতে আমার জ্ঞান কত সেটা জাহির করার কোন মানে হয়না!” জাতিসংঘে দেখানো এখন পর্যন্ত একমাত্র হিন্দি সিনেমা হল লাগে রাহ মুন্নাভাই- এটি জাতিসংঘে দেখানোর পর বলা হয়েছিল- দয়া করে এই সিনেমা দেখে শিখুন কীভাবে মানুষের সাথে ব্যবহার করতে হয়!

আবার তিন বছরের গ্যাপে বানালেন থ্রি ইডিয়টস নামের এক সিনেমা। এবার যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল তার এই কাজ! শুধু ইন্ডিয়াতে ২০০ কোটি ব্যবসা করল। আইএমডিবি টপ ২৫০ এর লিস্টে নাম চলে আসলো। হাজার হাজার তরুণ যেন নিজেদের জীবনের নতুন আর প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেল এই সিনেমা দেখে। স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমির খানের সাথে একসাথে বসে এই সিনেমা দেখলেন। দর্শক আর সমালোচক যেন প্রশংসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল এই সিনেমার! তারপরেও যেন মনে হল- প্রশংসা কম করা হয়ে গেছে এই মাস্টারপিসের!

এত গ্যাপ নিয়ে কেন সিনেমা বানান? এর উত্তরে তিনি বলেন- আমার সিনেমার কাহিনী আমি নিজে লিখি- এই লিখতেই আমার দেড় বছরের মতো লেগে যায়! এমনও দিন গেছে, আইডিয়া নিয়া বসে আছি- কিন্তু মাথায় সেই আইডিয়াকে সামনে নেয়ার মতো কোন ঘটনা মাথায় আসছে না! এরকম দিনের পর দিন গিয়েছে- চরম অসহায় লাগে তখন। আর একটা কারণ হচ্ছে কাস্টিং- যেই ধরনের চরিত্র আমার দরকার- সেই ধরনের ক্যারেক্টার না হওয়া পর্যন্ত আমি সিনেমার শুটিং এ হাত দিব না। উদাহরণ দিচ্ছি- থ্রি ইডিয়টস সিনেমাতে যেই ছেলেটা নিজের রুমে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেই ছেলেটার বাবা এসে যখন ছেলের কফিনের উপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে- সেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য বাবা চরিত্রে আমার যেই ধরনের মানুষ দরকার ছিল- সেই ধরনের একজনকে খোঁজার জন্য আমি কত সময় নিয়েছিলাম জানেন? বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা- আমি এক বছর সময় নিয়েছিলাম! অথচ তার শট ছিল মাত্র দুইটি!

তিনি আরও বলেন- এই ১০০ কোটি, ২০০ কোটিতে আমি বিশ্বাসী না। টাকা দিয়ে কেন শিল্পের মূল্যায়ন করতে হবে? তাহলে তো বলতে হয় আপনারা সেই অভিভাবকের মতই যারা ছেলে বা মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যালে পড়ে বলেই তাঁদেরকে “ভালো মানুষ” হিসেবে জাজ করে ফেলেন! তাহলে তো বুঝতে হবে থ্রি ইডিয়টস আপনারা শুধু দেখেছেন, মগজে কিছুই নেন নাই। একজন দর্শক হিসেবে আমি সব ধরনের ছবি দেখি বা এঞ্জয় করি। আমি দাবাং ও দেখি আবার মাই নেম ইজ খানও দেখি। ভালো সিনেমা জাজ করার উপায় আমার মতে একটাই- আজ থেকে ১০ বা ২০ বছর পড়ে সিনেমাটি দেখা ইচ্ছা আপনার করবে কিনা... যদি করে, তাহলে সেটিই ভালো সিনেমা। যেমন আজ থেকে দশ বছর পড়েও জাব উই মেট দেখে আমার ভালো লাগবে, তাই এটা আমার কাছে ভালো সিনেমা।
একটা সিনেমার জন্য সবচেয়ে জরুরি কোনটা? কাহিনী, অভিনয় নাকি শুটিং?- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অবাক করে দিয়ে তিনি বলেন- এডিটিং! কীভাবে? তিনি ব্যাখ্যা করেন- একজন লোক কলার খোসাতে পা ফেলে পড়ে গেছে- এই সিনটা যে কেও দেখালে এভাবে দেখাবে- প্রথমে লং শটে লোকটার দৌড়ে আসা, এরপরে ক্লোজ শটে কলার খোসা দেখানো, এরপরে আবার লং শটে গিয়ে লোকটার পড়ে যাওয়া দেখানো। এই একই জিনিস আমি দেখাবো এইভাবে- প্রথমে লং শটে লোকের দৌড়ে আসা, এরপরে ক্লোজ শটে কলার খোসা, এরপরে লোকটার মুখের ক্লোজশট, এরপরে লং শটে লোকটার পড়ে যাওয়া। আমার এই জিনিসে দর্শক বেশি আনন্দ পাবে কারণ আমি দর্শককে আগেই ইনফরমেশন বেশি দিয়ে দিয়েছি- যেটা সেই লোকটা জানেনা, অডিয়েন্স এতে নিজেকে বেশি পাওারফুল মনে করবে, দর্শক বেশি হাসবে এই সিন দেখে। থ্রি ইডিয়টস আমি তিন মাস একটা রুমে নিজেকে আটকে রেখে এডিট করেছি- শুধু খাওয়া, ঘুমানো আর টয়লেটের সময় ছাড়া আমি সেই রুম থেকে বের হতাম না- সেই রুমে কারো প্রবেশের অধিকার ছিল না- নট ইভেন আমির খান :)

এত প্রশংসা যিনি পেয়েছেন, তিনি সমালোচনাও কম পান নি। আপনার প্রত্যেক সিনেমাতে মদ খেয়ে মাতাল হওয়ার দৃশ্য কেন থাকে? থ্রি ইডিয়টস সিনেমাতে হোস্টেলে থাকা ছেলেরা এত বাজে ভাষায় কথা বলে- সেটা আপনি কেন দেখালেন? এই সিনেমাতে বাচ্চা ডেলিভার করার সিন আপনি এতক্ষণ ধরে আর এভাবে দেখালেন কেন?- এতকিছুর পড়েও এই লোকের সাফল্য কেও ঠেকিয়ে রাখতে পারে নাই। লাগে রাহ মুন্নাভাইতে গান্ধীজীর সামনে মুন্না মদ খাচ্ছে- এই সিন কীভাবে দেখালেন?- সবাই যখন এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন স্বয়ং গান্ধীজীর নাতি তুষার গান্ধী সবাইকে বলেন- আগে এই অসাধারণ সিনেমাটি দেখেন, তারপরে কথা বলেন!

এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা আমি কার কথা বলছি- নাম তার রাজকুমার হিরানি। আজ ২২ নভেম্বর তার জন্মদিন। বলিউড এ আমার বর্তমানে সবচেয়ে প্রিয় ডিরেক্টর কে এটা জিজ্ঞেস করলে আমি চোখে বন্ধ করে তার নাম বলব। যেই জিনিসটা সবচেয়ে অবাক লাগে- শিল্প আর বাণিজ্য- দুটোর এত অসাধারণ সম্মেলন আমি তার সিনেমা ছাড়া বলিউড এ আর কারো সিনেমাএ দেখি না। দর্শক তো আছেই, সমালোচকরা পর্যন্ত তার সিনেমার জন্য অপেক্ষা করেন! সামনের মাসের ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ তিনি আসছেন তার পরের সিনেমা পিকে নিয়ে, সাথে আছে আমির খান। অলরেডি সিনেমার পোস্টার নিয়া “ক্যাচাল” শুরু হয়ে গেছে! আমির খান দারুণ অভিনেতা- সন্দেহ নাই, তবে আমি প্রধানত অপেক্ষা করছি রাজকুমার হিরানির জন্য- এই লোকের উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখা যায়! শুভ জন্মদিন প্রিয় পরিচালক :D




তার অভিনয় করা ফেভিকলের সেই অ্যাড :) - http://www.youtube.com/watch?v=Xep4RftkRdo

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯

শাহরুখ সাকিব বলেছেন: থ্যাংকস :)

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩১

দূরের পথযাত্রী বলেছেন: আপনি যথেষ্ট স্টাডি করে পোস্ট দেন বুঝা যাচ্ছে।পড়ে মজা পেলাম।অসংখ্য ধন্যবাদ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩

শাহরুখ সাকিব বলেছেন: সিনেমা নিয়ে পড়তে ভাল্লাগে :) থ্যাংকস

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.