নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I'll Sleep When I'm Dead

আমি একদিন মারা যাবো, এই সত্য মেনে নিতে আমার কোন আক্ষেপ নেই!আক্ষেপ শুধু একটি বিষয়তেই, আমি মারা যাওয়ার পর অনেক অসাধারণ চলচ্চিত্র,বই,গান এর সৃষ্টি হবে- যার স্বাদ আমি নিতে পারব না...

শাহরুখ সাকিব

জীবন খাতার শেষের পাতায়, এঁকে দিলাম আলপনা, আমার স্মৃতি পড়বে মনে, যখন আমি থাকব না...! মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন মানুষ নিজে ; অথচ বাকি সব অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিয়েছি! তাদেরকে হাসি খুশি রাখার মাধ্যমে! বুঝেন অবস্থা! একবারেই বদ্ধ উন্মাদ, আবেগপ্রবন,ভীতু এক মানুষ...!চিন্তাভাবনা করে সাধারণত কিছু বলা বা করা হয় না, এজন্য ঝামেলাতেও বেশি পড়তে হয়! তারপরও - always try to listen to my heart !Simplicity জিনিসটা খুব ভাল্লাগে, নিজেও তাই!'হাসিমুখ','দেশ','দেশের মানুষ','বৃষ্টি','জোছনা','প্রিয় মানুষগুলোকে বিরক্ত করা','শিশির ভেজা ঘাসের উপরে হাঁটা','জীবন','নিঃশ্বাস নেয়া','বইপড়া'(অবশ্যই পাঠ্যবই নয়!),'বন্ধু','বন্ধুত্ব','আড্ডা দেয়া','পাহাড়','সমুদ্র','সিনেমা দেখা','শাহরুখ খান' প্রভৃতির প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে! আমি নিম্নোক্ত জীবন দর্শনে বিশ্বাসী - "Live, Laugh and Love!" (বাঁচো , হাসও আর ভালোবাসো! ) :-D আর হ্যাঁ, নিজের প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় "মানুষ" বলতে পছন্দ করি, আগে মানুষ, তারপর বাকি সব... :-) আমার রক্তের গ্রুপ- B (Be Positive!) আমার রাশি- কুম্ভ (কিন্তু আমি মোটেই কুম্ভকর্ণ নই!) নিজেকে একটি শব্দে প্রকাশ করতে বললে আমি সেই পুরনো অসাধারণ শব্দটি বলব--- "পাগল" :-P :-P আমার ফেসবুক ঠিকানা- fb.com/syed.n.sakib.3

শাহরুখ সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি :)

১৯ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

একজন মানবসন্তানের পৃথিবীতে জন্ম নেয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের একটি ঘটনা, কিন্তু সেই আনন্দ পাওয়ার ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে তিনি আসেন নি। সাত ভাই আর দুই বোনের ঘরে তিনি যখন জন্ম নিলেন, তখন তার বাবা আর মার কপালে দুশ্চিন্তার নতুন একটা ভাঁজ পড়লো।
দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ার কারণ ছিল অবশ্যই, উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের বুধনা নামের যেই গ্রামে তার জন্ম, সেই গ্রামের প্রধান পেশা ছিল দুইটি- কৃষিকাজ করা আর ডাকাতি করা। বাবা কৃষক ছিলেন বলে তিনিও কৃষক হবেন- এটা সবাই ধরেই নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা হন নাই, অনেক কষ্টে পড়াশুনা করতে থাকেন। বাবা মাও চেয়েছিলেন, অন্তত একটা সন্তান যেন কিছু একটা করুক। রসায়ন নামক বিষয়ে নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করলেন তিনি এবং তিনিই ছিলেন নিজের গ্রামের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। ভেবেছিলেন পড়াশুনা শেষ করেই নিজের গ্রামেই কিছু করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু এক মধ্য রাতে ডাকাতের গুলির আওয়াজ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় আতঙ্কে। মাথায় শুধু তখন একটি চিন্তাই ঘুরতে থাকে "এই গ্রাম থেকে আমাকে পালাতে হবে, যেভাবেই হোক এখানে আর থাকা যাবে না"

এক পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানিতে চিফ কেমিস্ট এর চাকরি পেলেন। খুব একটা মন্দের চাকরি না, কিন্তু তারপরেও কেন জানি ভাল লাগছিল না। থিয়েটার করা এক বন্ধুর সাথে একদিন দেখা হল, বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন- সন্ধার পরে কি করিস? "কিছুনা, ফ্রি থাকি, অফিস থেকে যেয়ে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে যাই"। এটা শুনে বন্ধু তাকে থিয়েটারে নাটক দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। সেই একটি নাটক দেখা তার পুরো মাথাকে "আউলায়" দিল। নাটক দেখে তার মনে হল "এই জিনিসই তো এতদিন আমি খুঁজছিলাম, এরকমই তো কিছু করতে চাচ্ছিলাম। এটা এমন একটা জিনিস, যেখানে আপনাকে কারো অধীনে থাকতে হয়না, আপনি স্বাধীন, আমি গালি পান বা তালি- সেটা সম্পূর্ণ আপনার নিজের কাজের উপর নির্ভর করবে এবং সেই জিনিসটা আপনি পাবেন একদম ইনস্ট্যান্ট"। আস্তে আস্তে নাটক দেখা তার নেশা হয়ে গেল, ৭০ বা ৭৫ টা নাটক দেখার পরে বেশ ভাল রকমের কনফিডেন্স পেলেন, আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা এতো বেশি ছিল যে কেমিস্ট এর চাকরিটা ছেড়ে দিলেন থিয়েটারে কাজ করার জন্য। কিন্তু খাওয়ার পয়সা আসবে কোত্থেকে? অদ্ভুত হলেও সত্য যে, সাইন্সের সাবজেক্ট থেকে গ্রাজুয়েশন করা একজন মানুষ নিজের পেট চালানোর জন্য রাতপ্রহরী বা ওয়াচম্যান এর চাকরি নিলেন। সারাদিন তিনি মানুষের নিরাপত্তা দিতেন, আর সন্ধ্যার পর থেকে তিনি নিজের স্বপ্নের পিছে ছুটতেন।

যেই থিয়েটারে তিনি কাজ শুরু করলেন, সেই একই থিয়েটারে মনোজ বাজপাই নামক আরেক অসাধারণ অভিনেতা কাজ করতেন। মনোজের সাথেই তিনি কাজ শুরু করলেন, কিন্তু মানুষ হয়ে না, গাছ হয়ে। সবাই যেখানে বড় ছোট ক্যারেক্টার পাচ্ছে, সেখানে তিনি গাছ সেজে টানা তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নাটক করতেন- এটাই ছিল তার ক্যারেক্টার। আস্তে আস্তে আরও কাজ করতে থাকলেন। বেড়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসকে নতুন রূপ দিতে তিনি জয়েন করলেন NSD বা ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে। সেখানে অভিনেতা হিসেবে তিন বছর কাজ করার পরেও আরও চার বছর ছিলেন। সবই হচ্ছিল, অভিনেতা হিসেবে অনেক পাকা হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু টাকা পয়সাটাই ঠিকমতো আসছিল না কারণ থিয়েটার না করা মানুষও জানে যে থিয়েটার থেকে খুব বেশি পয়সা আসে না। সিদ্ধান্ত নিলেন মুম্বাই গিয়ে সিনেমাতে কাজ করবেন। সিনেমা জগতে চেনাজানা কেও ছিল না, কিন্তু নিজের ট্যালেন্ট এর উপরে অনেক বেশি ভরসা ছিল। কিন্তু মানুষটা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেন নি যে তিনি গরম কড়াই থেকে আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন।

মুম্বাইতে এসে দেখলেন কোথাও তিনি পাত্তা পাচ্ছেন না। এই ইন্ডাস্ট্রি আগে গ্লামার চায় যেটা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই মানুষটার ছিল না। যত জোরে তিনি প্রোডিউসারদের দরজায় ধাক্কা দিতেন, তার চেয়ে বেশি জোরে তারা তার মুখের উপরে সেই দরজা আটকে দিত। দেড় বছরের মত সময় লাগল শুধু প্রোডিউসারদের সাথে দেখা করতেই। একসময়ে সিদ্ধান্ত নিলেন টিভি সিরিয়ালে কাজ করবেন, কিন্তু সেখানের এক প্রোডিউসার তাকে বললেন- তুমি তো কালো, তোমাকে নিলে প্রোডাকশন খরচ বেশি হবে কারণ তোমার উপরে লাইট বেশি দিতে হবে। তার ভেতরের আত্মবিশ্বাসের পাহাড়টা যেন আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়ছিল। বাধ্য হয়ে এক্সট্রা হিসেবে কাজ ক্রয়া শুরু করলেন, তারপরেও কাজ জোটানো যেন ছিল সোনার হরিণকে কাছে পাওয়ার মত। ১৯৯৯ সালে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন, আমির খানের সাথে- নাহ, বেশি খুশি হওয়ার কারণ নাই, প্রায় তিন ঘণ্টার সেই সিনেমাতে তিনি স্ক্রিনে ছিলেন মাত্র ৫০ সেকেন্ড- যেখানে আমির খান তাকে জেলে টর্চার করেন আর তিনি তারস্বরে চিৎকার করতে থাকেন। মজার ব্যাপার হল, এই কাজটাও তার করার কথা ছিল না, যার করার কথা ছিল, সেই লোক সেদিন শুটিং করতে আসেন নি দেখে তিনি এই রোলটা পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন এই রোলে তাকে আর কে মনে রাখবে? কিন্তু হীরা যত গভীরেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, জহুরী তাকে চিনতে ভুল করেন না। অনুরাগ কাশ্যাপ নামক এক "পাগলাটে" পরিচালক তাকে তার এই ৫০ সেকেন্ডের অভিনয় দেখে বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলেন। তৎক্ষণাৎ অনুরাগ তার সাথে দেখা করেন এবং Shool​ সিনেমাতে তাকে ছোট্ট একটা রোল দেন, হোটেলের ওয়েটার। এখানেও তার ক্যারেক্টারের দৈর্ঘ্য সেই ৫০ সেকেন্ড এর আশেপাশেই। তবু তখন তার মতই স্ট্রাগল করা পরিচালক অনুরাগ তাকে বলেছিলেন- আপনাকে খুব বেশি বড় রোল আমি দিতে পারি নাই, তবে জেনে রাখেন, আমি বেঁচে থাকলে একদিন আপনাকে নিয়ে পুরো একটি তিন ঘণ্টার সিনেমা বানাব, i promise that. অনুরাগের করা সেই ওয়াদা এই অসহায় মানুষটাকে তখন অনেক বেশি সাহস দিয়েছিল।

সবাই শুধু সাহস দিতেন, আশা দিতেন- কিন্তু একটা ভাল রোল এই মানুষটাকে কেও দিতেন না। সবাইকে বলতেন- আমাকে যেকোনো রোল দেন, বোরিং রোল দেন- আমি সেটাকে ইন্টারেস্টিং বানায় দিব, তাও কিছু একটা দেন। কিন্তু মুখে বড় বড় কথা বলে আড়ালে শুধু "নায়ক" খোঁজা মানুষগুলো তার কথায় কান দিতেন না। ফলাফল সেই একের পর এক ছোটখাটো রোল- ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা, পাসিং শট বা ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া Bypass এর মত অসাধারণ শর্টফিল্ম- যেখানে কোন চরিত্রের কোন সংলাপ নাই! অথবা বলিউড এর ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট সিনেমা মুন্নাভাই এমবিবিএস এর ছোট্ট এক পকেটমারের চরিত্র। কাজ না থাকা মানুষের কাছে স্বাভাবিকভাবেই পয়সা আসবে না, তার ক্ষেত্রেও তাই। চারজন মানুষের সাথে ভাগাভাগি করে একটি মেসে থাকতেন, মাথার উপরে ছাদ থাকলেও খাবারের নিশ্চয়তা ছিল না। এক বন্ধুর বাসায় খাবার খেতেন, তো আরেক বন্ধুর কাছ থেকে সিগারেট। এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে আরেক বন্ধুর ধার শোধ করতেন। এভাবে প্রায় এক বছর পার করলেন। অর্থ ছাড়া নাকি মানুষের জীবন চলেই না- তিনি অর্থ ছাড়াই দৌড়াচ্ছিলেন, যদিও সেই দৌড়ানোর সময় হোঁচট খাচ্ছিলেন বারবার। একদিন এক বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাইলেন, তিনি ভুলে গেছিলেন তার সেই বন্ধুও তার মতই একজনের কাছ থেকে ধার করে আরেকজনের ধার শোধ করেন। সেই বন্ধু বললেন- আমার কাছে কিচ্ছু নাই। জীবনে প্রথমবার সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগল নিজেকে, বন্ধুর মুখে এই কথা শোনার পরে তিনি আর তার বন্ধু দুইজনেই উপরের দিকে তাকিয়ে হা করে কাঁদতে লাগলেন। আরেক বন্ধু আইডিয়া দিলেন তার সাথে ধনে পাতা বিক্রি করার, ৫০ টাকায় ধনে পাতা কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করার আইডিয়াটা খারাপ লাগলো না তার। কিন্তু ট্রেনে করে আসার সময় একদিন সেই ধনে পাতাও নষ্ট হয়ে গেল- অভাগা যেদিকে তাকায়, সেদিকের অবস্থা এভাবেই মনে হয় খারাপ হয়ে যায়। নিজেকে অভাগা ভাবতে শুরু করলেন, না খেয়ে কত দিন কেটেছে সেটার হিসাব করা একদিন বন্ধ করে দিলেন। রুমে নিজেকে আটকে রেখে অনেকদিন কেঁদেছেন কিছু করতে না পারা কারণে।

এই বাজে অবস্থা থেকে বাঁচালেন সেই পাগলাটে অনুরাগ কাশ্যাপ। মুম্বাই এর বোমা হামলার উপরে নির্মিত ব্ল্যাক ফ্রাইডে সিনেমাতে তাকে মোটামুটি ভাল একটা রোল দিলেন। কাঁপিয়ে দিলেন তিনি সেই রোলে, স্বয়ং অনুরাগ পর্যন্ত তার পারফর্মেন্স দেখে হতবম্ভ হয়ে গেলেন। কিন্তু বিধি বাম- সেন্সর বোর্ড এই সিনেমা আটকে দিল! মানুষের যখন খারাপ অবস্থা যায়, তখন যেন ভাগ্যদেবী কিছুতেই মুখ তুলে তাকান না- তার ক্ষেত্রে এই কথাটা যেন চিরন্তন সত্য হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক ছোট রোল আর মানুষের মুখ থেকে না শুনতে শুনতে একসময় বিরক্ত হয়ে ভেবেছিলেন সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ শুরু করবেন, কিন্তু অভিনয়ের প্রতি ভয়াবহ ভালোবাসা থেকেই সম্ভবত সেটা করতে পারেননি। ২০০৯ এ নিউইয়র্ক নামের সিনেমাতে টানা তিন মিনিটের কাছাকাছি তার একটা দৃশ্য ছিল, যেই দৃশ্য দেখে তার সহশিল্পী ইরফান খান পর্যন্ত কেঁদে দিয়েছিলেন। এই সিনেমা আর পরের বছর আমির খানের প্রযোজিত পিপলি লাইভ সিনেমা দিয়ে তিনি একটু হলেও নজর পান বলিউডে। নিউইয়র্ক এ তাকে দেখে নিজের সিনেমা "কাহানী" তে কাস্ট করেন পরিচালক সুজয় ঘোষ। বদরাগী এক ইন্সপেক্টরের চরিত্রে এবারো যথারীতি তিনি কাঁপিয়ে দিলেন। মূলত এই সিনেমার পরেই সবার মুখে এক প্রশ্ন- "কেই এই ছোটখাটো মানুষ? কোথা থেকে আসলো? কীভাবে এতো অসাধারণ অভিনয় করে সে? কি তার নাম?"

নাম তার নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। যেই মানুষেরা একসময় তার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত, তারাই তখন নিজে থেকে তার সাথে দেখা করতে আসতে লাগলো। অনুরাগ কাশ্যাপ এতদিন পরে অবশেষে নিজের ওয়াদা পূরণ করলেন- গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর নামের এক সিনেমা বানালেন দুই পার্টে যেখানে ফয়জাল খান নামের এক অদ্ভুত চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন কে সুযোগ দিলেন। সব ঠিকমতোই হচ্ছিল, কিনতি পার্ট টু এর শেষের অংশে যেখানে নওাজ কে গুলি করতে করতে এগিয়ে যেতে হয়, সেই সিনটা নওাজ কিছুতেই করতে পারছিলেন না। অনুরাগ বললেন- আপনাকে পাওয়ার শো করতে হবে না, আপনি আপনার উপস্থিতি দিয়ে বোঝান যে আপনি পাওারফুল। পরিচালকের কাছে একটা দিন সময় চাইলেন তিনি, সারারাত ঘুমালেন না, সকালে শুটিং সেটে যাওয়ার পরে অনুরাগ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন- কি হয়েছে আপনার? চেহারার এই অবস্থা কেন? তিনি বললেন- আপনি ক্যামেরা রেডি করেন, আপনার শট আজকে "ওকে" হয়ে যাবে। শুধু শট না, এই সিনেমার সাথেই যেন নওাজের পুরো জীবনটা ওকে হয়ে গেল। এতদিনের কষ্টের মূল্য অবশেষে পেতে লাগলেন, সবাই তার জয়ধ্বনি শুরু করলেন। লিড রোলে Patang নামক একটি সিনেমা করে অনেক আগেই বিখ্যাত সমালোচক Rodger ebert​ এর অনেক প্রসংসা পেয়েছিলেন, তবে তার ইন্ডাস্ট্রি তাকে চিনল গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর এর পরে।

এরপর করলেন সালমান খানের সাথে দক্ষিণের সিনেমার রিমেক কিক। সালমান খানের সিনেমাতে সাধারণত সালমান খান ছাড়া আর কিছুই থাকে না আর পাবলিক সাধারণত সালমান খানকেই দেখতে যায় সিনেমা হলে। কিন্তু কিক সিনেমাতে অল্প কিচ্ছুক্ষণ স্ক্রিনে থেকে নিজের অদ্ভুত সেই হাসি দিয়ে পাবলিকের মনে ও মাথায় নিজের স্থান দখল করে নিয়েছেন এই নওাজুদ্দিন। মশলা সিনেমাতে খুব যে তিনি আগ্রহী- তা কিন্তু না, কিন্তু বছরে একটি বা দুটি বিগ বাজেটের মশলা সিনেমা করার ইচ্ছা তার আছে, তার কারণ হল তিনি মনে করেন- এই সিনেমাগুলোর মাধ্যমে তার ছোট বাজেটের, একটু অন্যরকমের সিনেমাগুলো একটু হলেও পরিচিতি পাবে। এই বছর বদলাপুর নামের আরেক অদ্ভুত সিনেমাতে অদ্ভুত লেভেলের অভিনয় করেছেন তিনি। যেই মানুষটার হাতে আগে কোন সিনেমা তো দূরের কথা, একটা ভাল রোল থাকত না, বদলাপুর করার পরে এই মানুষটার আকছে ২৮ টি সিনেমার অফার আসে ;)

মানুষটার হাত ভর্তি এখন সিনেমা, তার শিডিউলের জন্য পরিচালক আর প্রযোজক এখন তীর্থের কাকের মত বসে থাকেন। তার পরের সিনেমা শাহরুখ খানের সাথে, যেখানে শাহরুখ ভিলেন আর তিনি পুলিশ। Raees নামের সেই সিএনাম রিলিজ পাবে সামনের বছরের জুলাই মাসে। আশা করি, ভিলেনরুপী শাহরুখ খানের জীবন তিনি দুর্বিষহ করে দিবেন নিজের অসাধারণ প্রতিভার মাধ্যমে। এতো কিছুর পরেও মানুষটা এখনও আগের মতই আছেন। তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর পেশা হল মানুষের চুল কাটা অর্থাৎ নাপিত, অথবা তরকারি বিক্রেতা- গ্রামের সেই বন্ধুদের তিনি এখনও ভুলেন নি। ভুলেন নি নিজের ভাই বোনদেরও- ভাইদের ফ্যামিলির অনেক খরচ তিনি নিজের বহন করেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত বোনের চিকিৎসা খরচ ও তিনি একাই বহন করছেন। নিজের হোক বা নিজের মানুষদের- কারো কষ্ট বহনে যেন তার জুড়ি নাই। নিজের শোষণ করা সব কষ্টকেই তিনি যেন উগড়ে দেন সিনেমাতে তার প্রতিটি ক্যারেক্টারে। অভিনেতা পরমব্রত বলেছেন- ইরফান খান অভিনয় করেন মাথা দিয়ে, আর নওয়াজউদ্দিন অভিনয় করেন হৃদয় দিয়ে।

সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন- মুম্বাইতে আসার আগে কি ভেবে এসেছিলেন? কার মত হতে চেয়েছিলেন? অমিতাভ, নাসিরুদ্দিন শাহ, আমির না শাহরুখ? উত্তরে তিনি বলেন- আমি নওয়াজ হতে চেয়েছিলাম, নওয়াজ হয়েই ছাড়ব, নিজের অনেক প্রতিভা এখনও দেখান বাকি আছে, সেটা সামনে দেখাতে চাই। - আমরাও সেটাই চাই, আপনার জন্মদিনে আমাদেরও সেটাই কামনা, শুভ জন্মদিন প্রিয় নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি! :D গুগলে আপনার অনেক ছবি আছে, কিন্তু বদলাপুর সিনেমার এই এক্সপ্রেশনটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে- আপনার জীবনের সমস্ত হাসি,কান্না, দুঃখ, পরাজয়, প্রাপ্তি- সব যেন এই এক এক্সপ্রেশনে উঠে আসছে।

শেষ করার আগে একটি ১৮+ কৌতুক তাকে নিয়ে -
- গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর সিনেমাতে কে বেশি ভাল অভিনয় করসে? মনোজ না নওয়াজ?
- নওয়াজ, কারণ সে খাট ভাঙসে :P

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:২৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: তার জীবন নিয়েই তো একটা সিনেমা বানানো যায়! গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর দেখে তার চরম ভক্ত হয়ে গেছি। অনেক শুভকামনা তার জন্যে।

২০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

শাহরুখ সাকিব বলেছেন: থ্যাংকস হামা ভাই! :)

২| ২০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা লেখা পড়লাম। হামা ভাই ঠিক বলেছেন তার জীবনটাই একটা সিনেমা। আপনি খুবই চমৎকার লিখেছেন।

সারফারোস মুভির সেই দৃশ্য সেই কান্না, কানের পাশ দিয়ে গুলি যাবার পর তার সেই এক্সপ্রেশন দূর্দান্ত ছিল।

ভদ্রলোক আরো সফলতা পাক, এই কামনাই করি!!

২০ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

শাহরুখ সাকিব বলেছেন: :)

৩| ২০ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট।
বাদলাপুরে আমি বরূন ধাওয়ানকে না দেখে ওকে দেখেছি। অনন্য তিনি

২০ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১০

শাহরুখ সাকিব বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.