নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগোরাঃ দার্শনিক হাইপাশিয়ার করুণ গল্প

১০ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮

আমরা সবাই জানি যে যুগে যুগে যত মনুষ্য গোষ্ঠি এসেছে সবথেকে উন্নত হচ্ছি একবিংশ শতকের আমরা যারা এখন বাস করছি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়ত জানিনা যে আজও আমরা পিছিয়ে রয়েছি প্রায় এক হাজার বছর। আমরা পিছিয়ে রয়েছি আমাদের থেকেই যা আমরা আরো আগেই হতে পারতাম। সেই গল্পটি শোনা যাক।

৩৯১ খ্রিষ্টাব্দ অর্থাৎ চতুর্থ শতকে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া শহরে বহু ইশ্বরবাদী পেগান ধর্মাবলম্বী এবং একেশ্বরবাদী ইহুদী এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বাস করতো। চতুর্থ শতকে এই শহরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এখানেই ছিল পৃথিবীর সব থেকে সমৃদ্ধ পাঠাগার। যেটি ছিল একই সাথে সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে জ্ঞান বিতরণ এবং প্রার্থনাস্থল। দার্শনিক প্লাটোর মতবাদকে ভিত্তি করে সেখানে বিজ্ঞান গবেষণার জন্যে প্লাটোনিক স্কুল গড়ে উঠেছিল।

স্পেনিশ চলচ্চিত্রকার এলেজান্দ্রো আমেনবারের ২০০৯ সালে নির্মিত আগোরা চলচ্চিত্রে আলেক্সান্দ্রিয়া পাঠাগার এবং সে সময়কার লোকেদের বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, প্রেম এসব ব্যাপার রূপকার্থে ফুটে উঠেছে।

গল্পটি শুরু হয় প্লাটোনিক স্কুলে যেখানে পেগান দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ হাইপাশিয়া তার শিক্ষার্থিদের মহাজাগতিক জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে পাঠ দান করেন। হাইপাশিয়ার পিতা থিয়ন আলেক্সান্দ্রিয়া পাঠাগারের প্রধান। হাইপাশিয়া এমন একটি ঐতিহাসিক চরিত্র যার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা সবকিছু ছিল জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে। গাণিতিক ব্যাখ্যার সাহায্যে তিনি সূর্য এবং তার আশেপাশে আবর্তিত পৃথিবী সহ বাকি গ্রহগুলোর ঘূর্ণন সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু এইসব ঘূর্ণন কি বৃত্তাকার নাকি সরলরৈখিক নাকি উপবৃত্তাকার নাকি অন্যকিছু তা নিয়ে তিনি সন্ধিহান। এদিকে হাপাশিয়াকে ভালবাসে তারই ছাত্র অরেস্টেস। কিন্তু হাইপাশিয়ার এতে কোন আগ্রহ নেই তাই ঋতুস্রাবের রক্তমাখা রুমাল দেখিয়ে সে অরেস্টেসকে বুঝাতে চায় যে প্রেমেরও সীমানা আছে যেখানে জ্ঞানের চর্চা অসীম।
জ্ঞান তাপসী হাইপাশিয়াকে গোপনে আরেকজন ভালবাসে। সে হাইপাশিয়ার দাস ডেভুস। তাইতো প্রতিদিন হাইপাশিয়ার পাঠদান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সে পৃথিবীর ঘূর্ণনের মডেল তৈরি করে সবার কাছে প্রশংসিত হয়।

আলেক্সান্দ্রিয়া শুধু জ্ঞান চর্চার স্থানই ছিল না। এটি একই সাথে কট্টর ধর্মবলম্বীদের আবাসস্থলও ছিল। তাই উগ্র খ্রিষ্টান এবং পেগানদের মাঝে প্রায়ই নিজেদের ইশ্বরকে নিয়ে বাদানুবাদ হতো। একদিন তাদের ইশ্বরকে বিদ্রুপ করার কারণে পেগানরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খ্রিষ্টানদের উপর হামলা করে, সংখ্যা গরিষ্ঠ খ্রিষ্টানরাও উল্টো হামলা করে। ফলে পেগানদের আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে বিতাড়িত করা হয়। পাঠাগারটি খ্রিষ্টানরা দখল করে নেয়। সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং এ সম্বন্ধীয় যত ধরণের পুস্তক ছিল সবকিছু পুড়িয়ে ফেলা হয়।

তারপর কয়েক বছর কেটে যায়। দাস ডেভুস খ্রিষ্ট ধর্মের স্বেচ্ছাসেবীতে যোগ দেয়। আর হাইপাশিয়ার প্রেমিক অরেস্টেস ধর্মান্তরিত হয়ে পেগান থেকে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে আলেক্সান্দ্রিয়ার সরকারী প্রধান প্রিফেক্ট হয়। এবার খ্রিষ্টান এবং ইহুদীদের মাঝে দ্বন্দ শুরু হয় যার বিচার দায়িত্ব পড়ে অরেস্টেসের উপর। অরেস্টেস কোন বিচার করতে পারেনা। এদিকে হাইপাশিয়া নিজের জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন নিয়ে গবেষণার দিকে ধীরে ধীরে সাফল্য পেতে থাকে। সে প্রমাণ করে যে পৃথিবীর ঘূর্ণন বৃত্তাকার নয় বরং উপবৃত্তাকার। অন্যদিকে খ্রিষ্টান যাজক সাইরিল আগোরাতে বাইবেল থেকে বিবৃতি দেয় যে নারীরা সবসময় পর্দা মেনে নিচু হয়ে রবে। তারা পুরুষকে শিক্ষা দিতে কিংবা পুরুষের উপর কোনরূপ কর্তৃত্ব করতে পারবেনা। যে এসব করবে সে ডাইনি। তাকে মেরে ফেলা হবে। সাইরিলের আহবানে হুজুগে জনতা হাইপাশিয়াকে দোষারোপ করে। তারা তাকে মারতে গমন করে। তাই অরিস্টিস তার প্রিয়তমা হাইপারশিয়াকে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণের অনুরোধ করে। হাইপাশিয়া রাজি হয়না। উগ্র জনতা হাইপাশিয়াকে বন্দী করে নিয়ে যায়। তারা তাকে উলঙ্গ করে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করতে উদ্যত হয়। প্রেমিক দাস ডেভুস এমন অমানবিক কষ্টকর মৃত্যুকে সামন্য হলেও সহজ করার জন্যে নিজের হাতে আজীবন গোপনে লালিত প্রিয়তমা হাইপাশিয়াকে গলা টিপে হত্যা করে।

মৃত্যু হয় মুক্ত চিন্তার অধিকারিণী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নারী জ্যোতির্বিদ হাইপাশিয়ার। যার মৃত্যুর এক হাজার দুইশো বছর পর সতের শতকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানসেন কেপলার আবার বিবৃতি দেন যে গ্রহগুলোর আবর্তন আসলে উপবৃত্তাকার!

আগোরা চলচ্চিত্র নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে যেহেতু এখানে নির্দিষ্ট ধর্মের ত্রুটি দেখানো হয়েছে। কিভাবে যুগযুগ ধরে উগ্র ধার্মিকরা মানুষের চিন্তাকে আটকে রেখেছে, কিভাবে বিজ্ঞানের উন্নতিতে ধর্ম বাধা হয়েছে তা আগোরাতে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আগোরা চলচ্চিত্র কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে যেভাবে ইতিহাসকে প্রকাশ করেছে তা প্রশংসনীয়। এটি দেখে আগ্রহী হয়ে অনেক কিছু খুঁজে বের করে পড়েছি, জেনেছি।

আগোরাতে হাইপাশিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচেল উয়েইসজ। নারী দার্শনিক চরিত্রে তার চেয়ে সেরা অভিনয় আর কে করতে পারবে! দাস ডেভুস চরিত্রে মেক্স মিঙ্ঘেলা এবং অরেস্টেস চরিত্রে অস্কার আইজ্যাক নিজেদের সেরা অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রের সেট দেখে একবারও মনে হয়নি তা আধুনিক যুগের তৈয়ারী। গল্পের সংলাপ এবং পোষাক গল্পের সাথে সামঞ্জস্য ছিল। আর যেহেতু এটি ইতিহাসকে কেন্দ্র করে রূপক পরিবেশনা তাই আগোরার প্রতি ইতিহাস বিকৃতির কোন অভিযোগ নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.