নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছলনাময়ী মিস জুলিয়া!

১১ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৫২

অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তে সকল অলুক্ষুণে সম্ভাবনাকে পরোয়া না করে এক শেষরাতে আমি মিস জুলিয়াকে ফোন করলাম। শেষ রাতে যেহেতু কেউ মিথ্যে বলতে পারে না তাই আমিও কোন মিথ্যার আশ্রয় নিইনি। সে ফোন রিসিভ করতেই বলতে শুরু করলাম, আমি যে তোমায় পছন্দ করি এবং সেটি অনেকদিন আগে প্রেমে পরিণত হয়েছে তা কি তুমি বুঝতে পেরেছ মিস?

মিস জুলিয়া উত্তর দিল, হু।

এবার আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই জিজ্ঞেস করলাম, রাতে খেয়েছিলে?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বেশ নরম স্বরে মিস জুলিয়া বলল, না খাইনি। খিদায় পেট জ্বলছে। তুমি না আমায় ভালবাসো? এক্ষুণি খাবার এনে দিয়ে যাও।


এখন আমি সদ্য প্রেমিক। প্রেমিকা চাইলে সাগর থেকে ডুবে ডুবে মুক্তা এনে দিতে পারি অথবা বিষধর সাপের মাথা থেকে মনি… তাই এটা কোন ব্যাপার না ধরণের একটা ভাব করে বললাম, এটা কোন ব্যাপারই না। জানলা খোলা রেখো। আমি এই যাচ্ছি আর এই আসছি।

সেই রাতে আমি মিস জুলিয়ার জন্যে খাবার আনতে গিয়েছিলাম ঠিকই। কাঁচা ঘুম থেকে বিল্লাল ভাইকে উঠিয়ে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলেছি। অবশ্য প্রেমিকার খিদা মানে যেহেতু নিজেরই তাই বিল্লাল ভাইয়ের কাছে গিয়ে কাকুতি মিনতি করে বললাম, ও ভাই। আরে ও বিল্লাল ভাই ওঠো না। বাইরে কত সুন্দর চাঁদনী রাত আর বেরসিক তুমি কিনা দোকান লাগায়া ঘুমাইতাছ? ভাই খিদা লাগছে। খাবার কি
আছে তাড়াতাড়ি দাও।

রাত তিনটার সময় বিল্লাল ভাইয়ের টঙে যেহেতু এর চেয়ে ভাল আর কিছু পাওয়া সম্ভব না তাই কলা আর পাউরুটি নিয়েই প্রেমের প্রথম পরীক্ষায় পাশ হবার জন্য রওয়ানা হলাম।
খাবার নিয়ে মিস জুলিয়াদের বাসার সামনে গিয়ে আমি তাকে ফোন দিলাম। মিস জুলিয়ার রুমের জানালা খোলা। জানালাতে একটা পর্দা সাটানো। ঘরে মৃদু আলো জ্বলছে। বাইরে থেকে জানালার দিকে তাকালে মনে হয় পর্দার ওপাশে বুঝি কেউ দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমবার ফোন দেবার পরে মিস রিসিভ করলো না। ভাবলাম ফোন হয়ত সাইলেন্ট করে রেখেছে তাই দেখেনি। তাই রাত সাড়ে তিনটার সময় ভুঁইয়া কলোনির চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কলা আর পাউরুটি হাতে আমি আবার মিস জুলিয়াকে ফোন দিলাম। এবারও মিস ফোনটি রিসিভ করলো না। এইসব বারেবারে ফোন দিয়ে আমার অভ্যেস আছে তাই মিস জুলিয়ার নাম্বারে আমি বারেবারে ফোন দিতেই থাকলাম। ১৩তম বার রিং বাজার সময় ওপাশ থেকে কে যেন রিংটি কেটে দিল। মনে মনে বললাম, রাত পৌনে ৪টার সময় মিথ্যা ক্ষুধার কথা বলে যেই প্রেমিকা নিজের ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে চিট করতে পারে ভবিষ্যতে সে আরো ভয়াবহ চিট করার ক্ষমতা রাখে। তাই ছলনাময়ী প্রেমিকার ঘরের সামনে থেকে এক্ষুণি চলে যাওয়া উচিত এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যেইনা আমি পেছন দিকে ঘুরলাম অমনি দেখি মিস জুলিয়া।
না না, মিস জুলিয়ার ভূত পেছনে দাঁড়িয়ে নয়। সে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে অট্ট হাসছে। পৌনে চারটার সময়, ১৩ বার রিসিভ না করা ফোন কল, কলা আর পাউরুটি হাতে মিস জুলিয়াকে দেখে মুহুর্তেই আমার সব অভিমান শেষ হয়ে গেল। আমি ইশারা দিয়ে তাকে বললাম, নিচে নেমে এসো প্রিয়তমা মিস জুলিয়া। আমার ইশারা পেয়ে সে হাসতে হাসতে বলল, রেলিং বেয়ে ছাদে উঠে খাবার দিয়ে যাও।
আমি জীবনে কখনো কারোর বাসার রেলিঙয়ে চড়িনি অথচ কি আশ্চর্য সে রাতে মিস জুলিয়াদের বাসার রেলিং চড়ে আমি ছাদেও উঠে গেলাম। ছাদে উঠে মিস জুলিয়াকে আমি কলা আর পাউরুটি দিলাম। শেষরাতে ক্ষুধার্ত মিস জুলিয়া গপাগপ করে তা খেতে লাগল। তার খাওয়া দেখে আমারও খিদে পেয়ে গেল। আমি তাকে বললাম, তোমায় ভালবাসি মিস জুলিয়া। মিস জুলিয়া হাসতে লাগল আর আমায় এসে জড়িয়ে ধরলো। যেন মিস জুলিয়া নয় আমার বাহুডোরে আবদ্ধ কোন রাজকন্যা। আমি তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মিস জুলিয়া আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো, "ভীতু কোথাকার, শুধু স্বপ্নেই তোমার হিরোগীরি, বাস্তবে এসে ভালবাসি বলতে পারিস না?" এই বলে সে পেত্নীদের মত হাসতে লাগলো।

মিস জুলিয়ার এমন বিকট হাসি শুনে হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙল। এতক্ষণ যে উষ্ণতা ছিল আমার প্রেমিকার, চেয়ে দেখি তা হতচ্ছাড়া কোলবালিশের! ফেসবুক চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হাতে তখনো ফোনটা ধরে রেখেছি। ফোনের স্ক্রিন আনলক করে দেখি কত সুন্দর করে মিস জুলিয়া আমার দিকে চেয়ে হাসছে! তাড়াতাড়ি এক্ষুনি আবার ঘুমিয়ে পড়তে হবে দেখি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.