নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলকন্যার কথা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২

হুমায়ূন আহমেদের জলকন্যা গল্পের মূল চরিত্র বীনু। বীনুর বাবা ইদ্রিস আলী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। তিনি ভীষণ বদরাগী। অল্পতেই রেগে গিয়ে ছেলেমেয়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেন। তাই বড় হবার পরেও সন্তানরা তার ভয়ে তটস্থ থাকে।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে কর্তাদের এই চরিত্রটি স্বাভাবিক দেখা যায়। পিতাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম থাকে বলে আর সবার কাছে তিনি যেন রীতিমত শেয়াল দেবতা। তার মন ভাল থাকলে জোর করে সবাইকে হাসতে হয় আর মন খারাপ থাকলে সবাইকে ভয়ে চুপসে থাকতে হয়।

এই গল্পের সাইকোলোজি নিয়ে কথা বলা যাক।

ইদ্রিস সাহেব থমথমে গলায় বললেন, মেয়ে যে জামাটা পড়েছে সেই জামাটা দেখেছ? গলার কাটা কত বড় দেখেছ?
সুরমা ক্ষীণ গলায় বললেন, আজকাল তো সবাই এইসবই পরে।
ইদ্রিস সাহেব বললেন, ন্যুড ক্লাবে আজকাল তো অনেক ন্যাংটাও ঘুরে বেড়ায়। তোমার মেয়ে তো পড়াশোনা করার জন্য যাচ্ছে। সেকি তার বুক দেখানোর জন্য যাচ্ছে? সে দেখাতে চায় যে তার বুক বড়ো?
ইদ্রিস সাহেব কথাগুলো চাপা গলায় বললেও বীনু বারান্দা থেকে শুনে ফেললো। তার ইচ্ছা করলো ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যায়। সে লাফ দিয়ে পড়লো না।

স্ত্রীর সাথে ইদ্রিস আলীর আলাপনে এটি সহজেই অনুমেয় হয় যে স্ত্রীও তাকে ভয় পায় কারণ স্ত্রী তাকে ভয় না পেলে সন্তানরা অত ভয় পেত না। আর ইদ্রিস আলীর এইরকম নাটুকেপনা বাজে আলাপ চিরাচরিত নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙ্গালির পরিচিত আচরণ। আপাত দৃষ্টিতে এইসব আলাপ ভীষণ নিম্ন রুচির আর অশ্লীল মনে হলেও এটি তাদের কাছে স্বাভাবিক। তাইতো বাবার মুখে এমন কথা শুনে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছা করলেও বীনু লাফ দেয় না।

কিন্তু ইদ্রিস আলী তার থুড়থুড়ে অন্ধ বুড়ো মাকে ভীষণ মান্য করেন। এমনকি সন্তানরা তার চোখে বড় কোন অপরাধ করে ফেললেও মায়ের কারণে তিনি সন্তানদের কিছু বলেননা।

মানুষের যখন রাগ উঠে তখন বেশিরভাগ সময়েই সে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। চাইলেই এক মুহুর্তে সে তার রাগকে দমিয়ে ফেলতে পারেনা। অথচ আশ্চর্য রকম ভাবে মায়ের কথা শুনলেই ইদ্রিস আলী তার সন্তানদেরকে আর কিছু বলেনা। তাই মনে হচ্ছে ইদ্রিস আলী আসলে রাগ করার চেয়েও সন্তানদের কাছে রাগ করার ভান ধরে থাকেন। আগেকার দিনে এমনকি এখনও অনেক পরিবারে পিতামাতা তাদের সন্তানের সাথে এমন নাটুকেপনা আচরণ করেন।

এইসব মারাত্মক চাপে থাকা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা আবার নিজেদের অবস্থার তুলনায় দুঃসাহসীও হয়। দিনদিন তারা তাদের পিতামাতার পরিসর ভালমতো বুঝতে পারে। এমনকি কি করলে পিতামাতা তাদের পর্যন্ত পৌছুতে পারবেনা সেটিও তারা জানে। তাইতো বীনুর ভাই তার বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে সিগারেট টানে। দাদী বাড়িতে থাকলে বীনুও রাতের বেলা তার বান্ধবীর জন্মদিনে যাবার দুঃসাহসীক আবদার করে যেতে পারে। আর গল্পের শেষে এসে তীব্র দোটানায় পড়ে বীনু নিজের সীমাবদ্ধতা ভুলে গিয়ে কাপড় খুলে বান্ধবীদের সাথে জলকেলি খেলতে যায়।

এই যে তীব্র দোটানা, এর নাম মধ্যবিত্ত মানসিকতা। তারা বড়লোকদের মত হতে চায় কিন্তু হতে পারেনা। তাই অনেকে সারাক্ষণ হীনমন্যতায় ভুগে। কিন্তু একবার কোন সুযোগ পেলে তারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজের সীমাবদ্ধতাকে ভুলে যেতে চায়। সীমাবদ্ধতার কাছ থেকে তারা এক মুহুর্ত স্বাধীনতা চায়। গল্পের শেষে বীনুও কাঁদতে কাঁদতে তাই চেয়েছিল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮

জেন রসি বলেছেন: এই মধ্যবিত্ত মানসিকতার ব্যাপারটা হূমায়ুন আহমেদ তার অনেক লেখাতেই খুব সহজ সরল ভাবে তুলে ধরেছেন।




১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০১

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: অবশ্য মধ্যবিত্ত নিয়ে তিনি চালাকিও করেছেন। সেটি আরেকদিন বলবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.