নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

চট্টগ্রাম দেখতে যাই (২য় পর্ব)

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

সকাল সাড়ে সাতটায় আমরা ট্রেন থেকে নামি। সবাই হই হুল্লোর করছিল এর মাঝে খবর পেলাম বর্নালি তার ফোন পাচ্ছেনা। কিন্তু কখন কিভাবে কি হল তা সে জানেনা। তার ধারণা ট্রেন থেকে নামার সময় ফোনটি চুরি হয়েছে। চট্টগ্রামে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই একটা খারাপ খবর শুনতে হলো। স্টেশনে আমাদের জন্য ইজি বিডি ট্যুর এজেন্সির গাইড আজাদ ভাই অপেক্ষা করছিলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি আর পরিচ্ছন্ন শাদা পোশাকের হেন্ডসাম এই ভদ্রলোক হাসিমুখে আমাদেরকে স্বাগত জানান। তারপরে এজেন্সির গাড়ি আমাদেরকে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে একটা হোটেলে পৌঁছে দেয়। সেখানে আমাদের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল এক ঘন্টা। এই এক ঘন্টার ভেতরে সবাইকে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার সারতে হবে।

খাবার সেরে আমরা আবার গাড়িতে উঠলাম। গন্তব্য বায়েজিদ বোস্তামির মাজার। আমার শহর সিলেটে শাহজালাল আর তার ভাগনে শাহপরানের মাজার রয়েছে। মাজার সম্পর্কে তাই আমার বেশ জানাশোনা আছে। এইখানে বিচিত্র ধরণের ভিক্ষুকের দেখা মেলে। মাজারের ভিক্ষুকদের অত চাহিদা নেই যদিও। আপনি যখন তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবেন তখন কেউ কেউ অদ্ভুত ভাবে আপনার দিকে চেয়ে রইবে। সামনে থালা রেখে দিয়ে তারা শুধু চেয়েই থাকে। পয়সা দিলেও চেয়ে থাকে না দিলেও চেয়ে থাকে। এইভাবে তারা যেন আধ্যাত্মিক হইতে চায়। অথবা ভীষণ দরিদ্রতা তাদেরকে যেন অমানুষ বানিয়ে ফেলেছে। তারা যেন আর মানুষ নয়। এভাবেই চিরকাল বসে থাকা কোন বৃক্ষ বিশেষ। কিন্তু বৃক্ষেরও তো অনুভূতি আছে। এক যুগ ধরে চেয়ে থাকা এইসব ভিক্ষুকদের বুঝি তাও নেই।
মাজারে কিছুক্ষণ ঘুরে আর বোস্তামির কচ্ছপ দেখে তারপর আমরা রওয়ানা হলাম ফয়েস লেকের দিকে। হঠাৎ মনে হলো হোটেল থেকে ক্যামেরা আনতে ভুলে গেছি। আজাদ ভাইকে বলে রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে হোটেল থেকে ক্যামেরা আনলাম।

ফয়েস লেক নিয়ে অনেক মিথ শুনেছি আগে। কিন্তু লেকের পাড়ে গিয়ে এর চারপাশ দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভীষণ শান্ত আর চারপাশে শুনশান নীরবতা। সবাই নৌকাতে করে লেকে ঘুরলো। আমি পায়ে হেঁটে লেকের আশপাশটা দেখলাম। এখানে আরো কিছুক্ষণ কাটিয়ে তারপরে আমরা দুপুরের খাবার সাড়লাম। সারারাত ভ্রমণের পরে আবার ট্রেন থেকে নেমেই এত ঘুরাঘুরি করে সবাই একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। দুপুরের খাবারের পরে ক্লান্তি যেন আরো বেড়ে গেলো। বাস ছাড়তে না ছাড়তেই তাই সবাই নিদ্রা গেলো। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমাদের বাস পতেঙ্গা সমুদ্র বন্দরের কাছে পার্ক করা আছে।

পতেঙ্গাতে আমি আগেও একবার এসেছিলাম। ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার কালে। সেবার একা একা চট্টগ্রাম শহর ঘুরে বেড়িয়েছি। এটিই ছিল আমার দেখা প্রথম সমুদ্র দর্শন। অনেক বছর পরে আবার পতেঙ্গাতে এলাম। গতবার এসে স্পিডবোটে চড়তে না পারার একটা আফসুস ছিল। এবার সেই আফসুস ঘুচলো। স্পিডবোটে করে আমরা সমুদ্রের পাড়ে চক্কর দিলাম। সিনেমাতে নায়ক যেটিতে করে গুন্ডাদেরকে ধাওয়া করে সেই জলযানেও চড়লাম। সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে থাকলে একটা মজার ব্যাপার ঘটে, ঢেউ এসে ফিরে যাবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা পায়ের তলা থেকে বালি সহকারে নিয়ে যায়। তখন পায়ের তলায় শিরশির করে। ধীরেধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। সমুদ্রের পানিতে কমলা রঙ মিশিয়ে দিয়ে সূর্য ডুবে যেতে থাকে। ঠিক এই সময় দূর সমুদ্রের পানে চেয়ে থেকে কেমন যেন একটা বিষণ্ণ অনুভূতি জাগে। প্রিয় মানুষদের কথা মনে পড়ে। পরিবারকে মনে পড়ে। সবাইকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। আমি বিষণ্ণ হয়ে চেয়ে রই। সূর্য ডুবে যায়। দূরে সমুদ্র মাঝে জাহাজ দেখা যায়। জাহাজগুলি আলো জ্বেলে বসে থাকে। সৈকতের পাড়ে খাবারের দোকানগুলো বিভিন্ন আলোক সাজে সজ্জিত হয়। আমরা বাসে ফিরে আসি।

চট্টগ্রাম শহরের বাজে দিকটি হলো সম্ভবত এর রাস্তা। এত ধুলাবালি আর ভাঙ্গাচুরা যে বাসে বসে থেকে একেকজনে রীতিমত বিরক্ত হচ্ছিল। আমরা কয়েকজনে গান ধরলাম। বাসে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার কালে সবাই একসাথে গান গায়। এইসব গান গাইবার কালে কোন সুর, তাল, লয়, কথা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হয়না। যেকোন কিছু একটা গাইলেই সবাই মাথা দুলাতে থাকে। এই সুযোগে আমি, মোতাহের আর রোকন মিলে বেশ কিছু গান গেয়ে ফেললাম। মৌমিতা আর সুফিয়ানও গাইলো। ভাঙ্গাচুরা রাস্তা আর ভীষণ যানজটের মাঝে হেলেদুলে এক সময় আমরা হোটেলে ফিরলাম। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য আবার বের হলাম। আমরা যে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম কাকতালীয় ভাবে সেখানে একজন সিলেটী লোক কাজ করতেন। তিনি আমাদের যত্ন করে খাওয়ালেন। খাওয়া শেষে আমরা একেকজনে এত ক্লান্ত ছিলাম যে বিছানায় শুইতে না শুইতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ভ্রমণের প্রথম দিন শেষ হলো।

(চলবে....)


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: (১ম পর্ব)

http://www.somewhereinblog.net/blog/shaikat123/30220817

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৬

ফাহিমা জেরিন জেবা্ বলেছেন: চট্টগ্রাম শহরটি আসলেই সুন্দর।কিন্তুু মাঝের কয়েক দিন এর বৃষ্টিতে রাস্তা গুলোর অবস্থা আরো খারাপ হইছে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: নগর পিতা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন কে জানে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.