নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের জানালা

শামীমুল বারী

শামীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুতোষ গল্প : আগুনের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল ওরা

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৬

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বড় বড় গুহায় আগুন জ্বলছে আর জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখায় সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। উত্তাপ আর উত্তাপ। আশে পাশে কেউ দাঁড়াতে পারছে না। এমনকি আকাশের অনেক উপর দিয়েও যদি কোন পাখি উড়ে যেতে চায়, সেই পাখি আগুনের উত্তাপে পুড়ে গুহায় পড়ে যাবে।



কেউ কি পারবে এমন আগুনের গুহার কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকতে? কিন্তু সত্যি একটা জাতি এমনি আগুনের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিলো। যে কোন সময় তারা সেখানে পড়ে গিয়ে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারতো।



শোন তাহলে ঘটনা।



বুয়াস নামে এক মরুদ্যান ছিল ইয়াসরিবে। ইয়াসরিব হলো মদীনার আগের নাম। তোমরা মদীনার নাম শুনে থাকবে। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা) এ শহর গড়েছিলেন।



মরুদ্যানে ফাঁকা ফাঁকা গাছপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে সূর্যের আলো ঝিলমিল করে। ভ্রমণকান্ত মুসাফিরের মন জুড়িয়ে যায়। অথৈ বালি আর বালি মাড়িয়ে সূর্যের উত্তাপ ছাড়িয়ে কোন কাফেলা যখন একটি মরুদ্যানের সন্ধান পায়, সেই কাফেলা যেন কোন বেহেশতের সন্ধান পেয়ে যায়। যেন অনাবিল শান্তি আর সুখ তাদের কাছে ধরা দেয়। কাফেলা সেখানে বিশ্রাম নেয়, পানি পান করে। তাদের বাহন পশুগুলোকে ছেড়ে দেয়। ওগুলো মনের আনন্দে ঘাস, লতা-পাতা খায়, ইচ্ছে মত পানি পান করে। মরুদ্যান ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ওরা মশক অর্থাৎ চামড়ার থলি ভরে ভরে পানি নিয়ে যায়।



বুয়াস ছিল তেমন এক মরুদ্যান। শান্তির নীড়। ইয়াসরিবের লোকেরা শহরের বাইরে প্রায় সেখানে গিয়ে আয়েশ করতো। মেষপালক আর রাখালেরা তাদের পশুদের এখানে ছেড়ে দিয়ে আরাম করতো। এমন মরুদ্যানগুলো ছিলো তাদের চারণ ত্রে।



কিন্তু এ বুয়াসেই ঘটে যায় এক বিরাট কান্ড !



তা আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগের কথা। ৬১৭ খৃস্টাব্দের ঘটনা। তুমি, তোমার আব্বু, তোমার দাদু, দাদুর দাদু এমন অনেক আগের লোক জন্ম নেবার পূর্বেই ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল।



সে সময় ইয়াসরিবে আওস ও খাজরায নামে বড় বড় দুটো আরব গোত্র ছিল। এছাড়া ইয়াহুদিদের তিনটি গোত্রও সেখানে বসবাস করতো। গোত্র তিনটি হলো বানু কুরায়জা, বানু নাদীর ও বানু কায়নুকা। এরা ছিল ভীষণ দুষ্ট।



দুষ্ট ইয়াহুদিরা ইয়াসরিবের আওস ও খাজরায গোত্রের লোকদের বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটতো। ওরা সুদের ব্যবসা করতো। কিছু টাকা ধার দিয়ে তার বিনিময়ে দ্বিগুণ তিনগুণ টাকা আদায় করতো। চক্রাকারে আর কিস্তিতে সুদের হার বেড়ে গিয়ে কয়েক গুণ হয়ে যেতো। যে একবার তাদের ঋণের ফাঁদে পড়তো, সে সব কিছু হারিয়ে ভিুকে পরিণত হতো। এভাবে ইয়াসরিবের লোকদের বোকা বানিয়ে নিজেদেও স্বার্থ আদায় করতো ইয়াহুদিরা।



ওদের দুষ্টু বুদ্ধি ছিল চমৎকার। তিনটি ইয়াহুদি গোত্র বন্ধুত্ব করার েেত্র আওস ও খাজরায গোত্রদ্বয়কে ভাগ করে নিয়েছিল। বানু কুরাইজা ও বানু নাদীর ছিল আওস গোত্রের বন্ধু, আর বানু কাইনুকা ছিল খাজরায গোত্রের বন্ধু। এরা শলা পরামর্শ দিয়ে সব সময় আওস ও খাজরায গোত্রের মধ্যে মারামারি, হানাহানির আগুন জ্বেলে দিতো। ঝগড়া, ফ্যাসাদ, যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখতো। হয়তো কোন ঠুনকো ঘটনায় বছরের পর বছর যুদ্ধ চলতো। মারা যেত শত শত লোক, ধন-সম্পদ শেষ হতো। আরো গরীব হয়ে যেত এরা।



অন্যদিকে ইয়াহুদিদের ফায়দা হতো অনেক। এরা ঋণ দিতো যুদ্ধরত পগুলোকে। অনেক অনেক টাকার ঋণ। ইয়াহুদিরা ভাল অস্ত্র বানাতো। যুদ্ধ না থাকলে অস্ত্র কিনবে কারা? এসব অস্ত্র দু’পরে কাছেই বিক্রয় করতো।



এভাবে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধের কারণে ইয়াসরিববাসীরা দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। এরা সংখ্যায় অনেক বেশি হয়েও ইয়াহুদিদের পদানত থাকতো।



হঠাৎ একদিন শান্ত বুয়াস অশান্ত হয়ে ওঠে। রণ ডঙ্কা বেজে ওঠে। যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়ে গেলো চারদিকে। শান্ত মরুদ্যান রণেেত্র পরিণত হলো।



আওস ও খাজরায গোত্র একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে যুদ্ধ ভয়ঙ্কর রূপ নিলো। আওসের দলনেতা হুদাইর এবং খাজরাযের দলনেতা আমর। খাজরায ছিলো আওসের চেয়ে বড় গোত্র। তাদের যোদ্ধা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম ছিলো অনেক বেশি। তারা তীব্র আক্রমণ চালিয়ে আওস গোত্রকে পরাজিত করে। তাদের নেতা হুদাইর নিহত হয়।



আওসও দমবার পাত্র নয়। তারা তাদের নেতা হত্যার বদলা নিতে কয়েকটি বেদুইন গোত্রের সাথে চুক্তি করে। আর যুদ্ধের ইন্ধনকারী ইয়াহুদি গোত্রগুলো তো ছিলোই। বানু কুরায়জা ও বানু নাদীর গোত্র আওসের সাথে যুদ্ধে যোগ দেয়। অন্যদিকে বানু কায়নুকা খাজরায গোত্রের সাথে যোগ দেয়।



যুদ্ধের মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে যায়। প্রচণ্ড আক্রমণে খাজরায বাহিনী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তাদের অনেক যোদ্ধা মারা যায়। এবার ইয়াহুদিরাও ছাড়া পায়নি। খাজরাযের ইয়াহুদি মিত্র কায়নুকারও অনেক লোক মারা যায়।



যুদ্ধ আর শেষ হতে চায় না। আবার খাজরায বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। এভাবে একাধারে পাঁচ বছর যুদ্ধ চলতে থাকে। তারপরও যুদ্ধের কোনো শেষ নেই।



আওস ও খাজরাযের সাথে এমন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা সব সময় লেগে থাকতো। একই জাতি হয়েও ওরা চিরশত্র“। একবার যুদ্ধ লেগে গেলে তা আর শেষ হতে চাইতো না। একবারের যুদ্ধ তো একশত বিশ বছর পর্যন্ত চলেছিল।



এভাবে যুদ্ধ করে করে ওরা দুনিয়ায় খুব দুঃখ কষ্টে কাটাতো। আর আখিরাতে? সেখানে তো তাদের দাউ দাউ করা আগুনে চিরকালই থাকতে হবে।



এদিকে আওস ও খাজরায উভয় গোত্রের একদল লোক ইসলাম গ্রহণ করে। তারা নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ইয়াসরিবে আসার জন্য অনুরোধ করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকে ইয়াসরিবে হিজরত করেন। আর তাই ইয়াসরিবের নাম হয়ে যায় মদীনাতুন্নবী বা নবীর শহর, সংেেপ মদীনা। আল্লাহর নবী মদীনায় এসে সবার সাথে মিলমিশ করে দেন। তাদের সবাইকে নিয়ে একটা সনদ রচনা করেন। সবাই সেই সনদ মেনে চলে মারামারি-শত্র“তা ভুলে যায়, ভাই-ভাই হয়ে যায়। এসময় চরম শত্র“ আওস ও খাজরায গোত্রের লোকেরাও একে অপরের পরম বন্ধু ও ভাই হয়ে যায়। ইসলামের কল্যাণে যুদ্ধবাজ এই জাতি শান্তির পতাকাতলে সমবেত হয়।



ইসলামগ্রহণের পূর্বে তাদের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যেন এরা সবাই জ্বলন্ত আগুনের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল, যে কোন সময় তারা সেখানে পড়ে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের এ অবস্থার কথাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এভাবে বলেন,

তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর আলাদা হয়ে যেও না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো : যখন তোমরা ছিলে একে অপরের দুশমন, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা একে অপরের ভাই হয়ে গেলে। অথচ তোমরা ছিলে অগ্নিকুন্ডের শেষ সীমানায়, আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের উদ্ধার করেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট করে বলে দেন, যাতে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পার। -সূরা আলে ইমরান ১০৩

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯

শাবা বলেছেন: চমৎকার গল্প। গল্র শেষ না করা পর্যন্ত মোটিভ বুঝা যাচ্ছিলো না।

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭

আমিজমিদার বলেছেন: পুলাপানের গপ ভালই।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১

শামীমুল বারী বলেছেন: বড়রাও এ গপ পড়ে মজা পেতে পারে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক কিছু বিষয় গল্পের আকারে জানতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.