নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের জানালা

শামীমুল বারী

শামীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : দূতালি

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪





ওহ্ কত সুন্দরভাবে কথা বলল ও। বেশ স্মার্ট বলতে হবে। তবে কেমন যেন নির্লজ্জ ভাব। প্রথম পরিচয়ে এত খোলামেলা। বার বার আলাপচারিতার দৃশ্যাবলী রোমন্থন করতে থাকে আশিক। ওকে কিছুটা পরিচিত মনে হয় আশিকের কাছে। কোথায় যেন দেখেছে ওকে? হ্যাঁ রেজার সাথেই ওকে একবার ঘুরতে দেখেছে। তাইতো কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে।



সে দিন আবার দেখা হলো ওর সাথে। অভিযোগের সুরে বলল, আমাকে দেখেন নি যে?



আশিক অপ্রস্তুত হয়ে বলে, ও আচ্ছা, তাই তো! তুমি যে এখানে দাঁড়িয়ে....



- আচ্ছা ভাইয়া, আপনার হাতে কি কোন সময় আছে? জরুরী কথা ছিল।



- তোমার কথা শুনতে পারলে ভালই হতো। কিন্তু আমি যে এখন বেশ ব্যস্ত। আরেক দিন কথা হবে।



আশিক কোন রকম বুঝিয়ে চলে আসে। জরুরী কথাটা শুনতে ওর মনে সত্যি কিছুটা কৌতুহল জাগে। তারপরও এড়িয়ে যাওয়াটাই বেশি পছন্দ হয় ওর।



পরদিন মধুর ক্যান্টিন থেকে ফিরছিল, এমন সময় ওর সাথে দেখা হলো। আশিককে দেখেই ও বলল,



- ভাইয়া চলেন কিছু খাই।



- থ্যাঙ্কস। কিন্তু আমি যে এই মাত্র নাস্তা করেছি।



- তাহলে আমাকে নাস্তা করান।



আশিক খুব সমস্যায় পড়ে যায়। কি করা যায় চিন্তা করে। হেসে বলে, দাওয়াত না দিয়ে এভাবে খাওয়ানো যায় না কি?



- সত্যি দাওয়াত দিবেন?



- দেখ, শুধু তোমাকেই না, তোমার বন্ধু-বান্ধব সবাইকে দাওয়াত দিব। সত্যি সত্যি একটা পার্টি দিয়ে ফেলবো।



- তাহলে সে দিনের অপেক্ষায় রইলাম।



আশিক হাফ ছেড়ে বাঁচে।



বেশ কিছু দিন হয়ে গেলো। এর মধ্যে গ্রীষ্মের ছুটিও শেষ হলো। একদিন দুপুর বেলায়, ও সবেমাত্র বাসায় ফিরেছে, এমন সময় ফোন আসলো। আশিক দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলো।



অপর প্রান্ত থেকে মিষ্টি কন্ঠে ভেসে এলো, কে বলছেন? আশিক ভাইয়া?



- হ্যাঁ



- আমাকে চিনেছেন?



- এ্যা... এ্যা... কে যেন? ... ও আচ্ছা, চিনেছি। হ্যাঁ তুমি। কেমন আছো?



- ভাল আছি। আর আপনার কথা শুনে আরো ভাল হয়েছি।



- কি ব্যাপার? এতদিন পর হঠাৎ?



- কোন ব্যাপার নেই। হঠাৎ করে ফোন করতে নেই বুঝি?



অনেকক্ষণ গল্প করে ওর সাথে।



ফোন শেষে আশিকের মন বেশ ভাল হয়ে যায়। ফোনের কথাগুলো কানে বাজতে থাকে, প্রতিধ্বনিত হতে থাকে বার বার। ওর সামনে যেন ভেসে উঠছে এই ফোনালাপের প্রতিচ্ছবি। একপ্রান্তে ও এবং অপর প্রান্তে মেয়েটি কথা বলছে। মনে হয় ওরা যেন সামনা সামনিই কথা বলছে। কি মিষ্টি মেয়েটির কথা! কত কথাই না বলল মেয়েটি। পড়াশুনার চেয়ে অন্য কথাই বেশি। কিন্তু মেয়েটির চেহারা তো ভাল করে মনে আনতে পারছে না। হ্যাঁ, লম্বা, বেশ সুন্দরই মনে হচ্ছে। আসলে আশিক বার বার এড়িয়ে যাওয়ার কারণে ওর মুখায়ব অতটা স্পষ্ট নয়। তবে কথা বেশ আকর্ষণীয়। চেহারার চেয়ে কথাই বেশি ভাসছে ওর সামনে।



পরদিন মেয়েটিকে ক্যাম্পাসে খুঁজেছে বার বার আশিক। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায় নি। ক্লাসে একেবারেই মন বসে নি। মনে হয়েছে, কখন স্যার বের হবেন আর কখন ওকে খূঁজে বের করা যাবে।



করিডোর থেকে নিরিবিলি গাছতলা পর্যন্ত পাওয় যায় নি ওকে। মধুর ক্যান্টিন, অপাজেয় বাংলা, ডাস, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান... কোথাও নেই। অবাক ব্যাপার ! গেল কই মেয়েটি? খূঁজতে গিয়ে বারটার ক্লাসও মিস করেছে। পরে হতাশ হয়ে ভাবলো, ওকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে হয়তো ও হারিয়ে গিয়েছে।



এতদিন মেয়েটিকে ও এড়িয়ে যেত। আজ তো ও আর এড়াতে চাচ্ছে না। কিন্তু মেয়েটি গেলো কোথায়? কেন এমন হলো?



তারপরের দিনও পেল না ওকে।



এমন এক অবস্থা যে, খোঁজ আশিককেই নিতে হচ্ছে। কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছে না, লজ্জা করে। বিশেষ করে এমন একজন সম্পর্কে কিভাবে সে জিজ্ঞেস করবে, যার ব্যাপারে সে তেমন কিছুই জানে না। সে যেন অজ্ঞাত কাউকে খূঁজছে। ব্যাপারটা সত্যি হাস্যকর। তারপরও সে জেনে বুঝেই এ হাস্যকর কাজটিই করছে। মনকে মানাতে পারছে না।



মেয়েটির সাথে ওর আলাপ হয়েছে মাত্র। তাও মেয়েটির পক্ষ থেকে। এখন শুধু কৌতহলবশতঃ ওকে খুঁজছে। তা ছাড়া এক ধরনের আকর্ষণ যে কাজ করছে না, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। যাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারছে না আশিক।



নাহ। ও আর খুঁজবে না। কেন খুঁজবে ওকে? যতোসব ছেলেমীপনা আর কি! মনে হলো এটা এক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই না। ধরতে গিয়েও ধরা যায় না। আশিক বাস্তবতায় ফিরে আসে। এ ধরনের সস্তা আবেগকে আর প্রশ্রয় দেয়া যায় না। এ দু’তিন দিনে তো ওর কম ক্ষতি হয় নি। ক্লাস, লাইব্রেরি ওয়ার্ক মিস হয়েছে কিংবা ক্লাস করলেও মন ছিল অন্য জায়গায়। এমনিতে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে এভাবে অবহেলা করলে নির্ঘাত পিছিয়ে যেতে হবে। যদিও আশিক এখনো কিছু নম্বর বেশি পেয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে এভাবে অমনযোগী হলে অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না কিছুতেই।



দুয়েক দিন পর বিকেল বেলা। আশিক পাড়ার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কলোনীর সিঁড়ির গোড়ায় আড্ডা মারছে। এমন সময় কাজের মেয়ে এসে বলল, ভাইয়া আফনের ফোন আইছে।



আশিক ফোন ধরে জিজ্ঞেস করে, হ্যালো ... কে বলছেন?



- আমি লুনা.....



আশিক সাথে সাথে লাইন কেটে দেয়। আবার জ্বালাতন করতে এসেছে এই মেয়েটি। শুধু শুধু কৌতুহল বাড়িয়ে সরে পড়বে আর মিষ্টি কথার ফুল ঝরাবে। যতোসব ন্যাকামী!



পরদিন যথারীতি ক্যাম্পাসে যায় আশিক। এমন সময় পেছন থেকে ডাক আসে, আশিক ভাইয়া শুনেন ... শুনেন..।



আশিক তাকিয়ে দেখে লুনা ওকে ডাকছে। আশিক কিছুটা থমকে যায় লুনার গম্ভীর মুখ দেখে। ক্লাস করতে এসে লুনার মুখোমুখি হয়ে যাবে ভাবতেও পারে নি। লুনার মুখ দেখে ও গতকালের আচরণে কিছুটা লজ্জিত হয়।



- আমি কী অপরাধ করেছি? লুনার চোখে মুখে বেদনাভরা রাগ।



কিছুক্ষণ চুপ থেকে আশিক ধীরে ধীরে বলে, কেন এমন বলছো?



- তাহলে ফোন ছেড়ে দিলেন কেন? লুনার মুচকি হাসি বেড়িয়ে আসে।



- সব কিছুরই কি কৈফিয়ত দিতে হবে? ক্লাসের সময় হয়েছে, আর দাঁড়াতে পারছি না। পরে কথা হবে। এ বলে দ্রুত চলে যায় আশিক।



ক্লাসে আশিক মন বসাতে পারে নি। সব সময় বিষণ্ণ ছিল। ঝোঁকের মাথায় কীসব বলে ফেলেছে! কেন এমন বলল? সত্যি তো ওর কোন দোষ নেই। ও মাঝে মাঝে কথা বলত, ফোন করত। সবই ওর ইচ্ছায়। ওর প্রয়োজনে আশিকের প্রায় সব কিছু জেনে নিয়েছিল। আর আশিকের তো ওর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা ছিল না, কোন প্রয়োজনও ছিল না। তাই আশিক ওর কোন কিছুই জানে না। এ জন্যই তো সে সময় আশিক ওকে খুঁজে পায় নি। মেয়েটার উপর রাগ করার তো কোন কারণ নেই, বরং নিজের উপরই রাগ করা উচিৎ।



আচ্ছা, আশিককে কেন প্রয়োজন ওর? কোথায় পেল ওর ফোন নম্বর? মনে পড়ে প্রথম পরিচয়ের কথা। হঠাৎ দেখা হয়েছিল সেদিন। করিডোরে একা পেয়ে লুনা জিজ্ঞেস করে, আপনিই তো আশিক ভাই, তাই না?



অবাক হয়ে বলল, কিভাবে জানলেন?



- বাহ্, আপনাকে কে না চিনে? আর আমি লুনা। আপনার ডিপার্টমেন্টেই পড়ি। তবে আপনার জুনিয়র।



আশিক কিছুটা আড়ষ্ট। লুনা আবার বলল, কি ব্যাপার ভাইয়া, আমাকে আপনি করে বললেন যে? আমি তো আপনার ছোট।



- আচ্ছা না হয় তুমি করেই বলব।



- কেন এমন যেচে কথা বলছি জানেন? আপনাদের মত ভাল ছাত্রদের কাছ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পাব বলে।



বিকেল ৪টা। তখনো আজানের বেশ বাকী। এমন সময় লুনা এসে হাজির। ভাগ্যিস তখন আশিকের আম্মা পাশের ফ্ল্যাটে ছিলেন। বাসার অন্যরা ঘুমিয়ে।



- কি ব্যাপার, কেন এসেছ? আশিক জিজ্ঞেস করে।



- এমনি আসলাম। ভাইয়া আপনি কি সত্যি রাগ করে আছেন?



- দূর... কেন রাগ করব? আচ্ছা বলতো এভাবে চলে আসা কি ঠিক হয়েছে?



- তাহলে চলেন, আমরা বাইরে কোথাও যাই।



- তা কি হয! তুমি এ বাসায় প্রথম এলে আর চলে যাবে, তা হয় না। দাঁড়াও, আম্মাকে ডেকে আনছি।



- না না ... এত ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অকারণে ঝামেলা বাঁধিয়ে লাভ নেই। আমি নীচে যাচ্ছি আর আপনি রেডি হয়ে আসেন।



আশিক কথা না বাড়িয়ে বলল, আচ্ছা যাও, আমি আসছি।



পুরো বিকেল লুনার সাথে কাটালো আশিক। রমনা রেস্টুরেন্টে ফাস্ট ফুড খেলো। রমনায় ঘুরাঘুরি করলো। গাছের নীচে বসে গল্প করলো। আশিক বেশ সাবলীল হয়ে যায় লুনার সাথে।



সন্ধ্যা হয়ে এলো। উঠার জন্য লুনা তাড়া দিতে থাকে। উঠতে আশিকের মন চাচ্ছিল না। তবুও উঠতে হলো। মনে হলো সময় যেন দ্রুত ফুরিয়ে গেছে। বিশাল রমনা সময়টাকে আটকিয়ে রাখতে পারে নি। যাওয়ার সময় লুনা আশিকের হাত চেপে বলে, আশিক আবার দেখা হবে।



আশিকের সারা গায়ে শিহরণ লেগে যায়। আর শুধু আশিক নাম শুনে চমকে উঠে। বেশ পুলকিত হয়ে বলে, ধন্যবাদ লুনা, ধন্যবাদ। তোমার এই সাহসিকতায় আমি দারুণভাবে মুগ্ধ। ভাবছিলাম, কিভাবে আমাদের এই কৃত্রিমতার দেয়াল দূর করা যায়। তুমিই সাহস করে ভেঙ্গে দিলে। আজ থেকে এ সম্পর্কই থাকবে।



ধীরে ধীরে ওদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। লুনাকে আশিকের বেশ ভাল লেগে গেছে। আশিকের সব স্বপ্ন তৈরী হচ্ছে লুনাকে ঘিরেই। কী যেন এক বিরাট পাওনা পেয়ে গেছে ও, আর কিছুর প্রয়োজন নেই।



আশিকের অনার্স পরীক্ষা চলছে। পরদিনও পরীক্ষা আছে। এমন সময় লুনার ফোন আসে। আশিক ফোন ধরে জিজ্ঞেস করে, লুনা কী করছে এখন? গতকাল তোমার অপেক্ষা করলাম তুমি আসলে না। একটুও পড়াশুনা হয় নি। আর পড়াশুনা করেই বা কী হবে? এই জীবনে তো শুধুই পড়েছি।



- যাও দুষ্টু! খোকা-খুকুর মত পড়তে বস নইলে মার দেব।



- আচ্ছা আচ্ছা, আমি পড়তে বসছি। তবে মাস্টারনী সাহেবা একটু আসবেন না, খোকা-খুকু ঠিকমত পড়ছে কিনা দেখতে?



- হ্যাঁ, আমি আর আসি? তখন তো আর মাস্টারনী মানবেন না, একেবারেই প্রেমিকা। বল ছাত্রের সাথে টিচার কিভাবে প্রেম করে? তোমার লজ্জা করে না, ছি....ছি....। হো হো করে লুনা হেসে দিল।



- ধুত্তরী, দুষ্টামী বাদ দাও। তোমার সময় আছে কি না তাই বল?



- তোমার জন্য আমার সময় থাকবে না, এটা কোন কথা হলো? কোথায় যাবে বল?



- চল আজকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সময় কাটাই। ওখানেই দুপুরের খাবার খাব।



- সুন্দর প্রস্তাব। ঠিক আছে, ঠিক আছে।



অনার্সে আশিক ফাস্ট ক্লাস মিস করে। তবে সে সেকেন্ড ক্লাস ফাস্ট হয়। আর কেউ ফাস্ট ক্লাস পায় নি। সবার ধারণা ছিল একমাত্র ওই ফাস্ট ক্লাস পাবে। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ওর অনেক সারপ্রাইজ মার্ক ছিল। ফাইনাল ইয়ারে বেশ পিছিয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত আর ফাস্ট ক্লাস পায় নি ও। লুনার সাথে গভীর সম্পর্কের কারণেই হয়তো এমন হয়েছে। আশিক মনে করে তাতে কিছু আসে যায় না। কিছু পেতে হলে তো কিছু ছাড়তেই হবে। পিছনে তো আর খারাপ রেজাল্ট নেই। পুরোটাই ভাল - দুটিই স্টার। একটা সেকেন্ড ক্লাসে কী আসে যায়। সামনে আবার ভাল করা যাবে।



মাস্টার্সে ক্লাস চলছে সপ্তাহখানিক হলো। আশিক অনেক সিরিয়াস। মাত্র এক বছরের কাস। প্রথম থেকে সিরিয়াস না হলে ভাল করা যাবে না। লুনাকে সময় দেয়ার তেমন একটা ফুসরৎ পায় না। লুনার খুব অভিযোগ। বলে, এখনই যদি সময় দিতে না পারো, তবে ভবিষ্যতে তো আমাকে ভুলেই যাবে।



বিকেল বেলা, আশিক ক্লাস শেষ করে ফিরছিলো। লুনার সাথে দেখা। লুনা একেবারে সামনা-সামনি যেন পথ আগলিয়ে দাঁড়ায়। বলে, কি ব্যাপার আশিক, তোমার কোন পাত্তা-ই নেই।



- না, কই সবই তো ঠিক আছে। আসলে ক্লাস ও লাইব্রেরি ওয়ার্ক নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি তো, হয়তো একটু খোঁজ-খবর কম নিতে পারছি।



- আগে প্রায় প্রতিদিন আড্ডা মারতে, এখন তো কোন খোঁজই পাই না।



- হুম....



- ওকে, চলো আমার সাথে।



- কী ! তুমি কি আমাকে কিডন্যাপ করতে চাচ্ছো? হেসে দিলো আশিক। বলল, আচ্ছা চলো তাহলে।



ওরা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গিয়ে বসে। গল্পে গল্পে সময় কেটে যায়। আশিকের উপলব্ধি হয় যে, লুনাকেও ওর সময় দিতে হবে। এ কয়দিনের আচরণের জন্য ও কিছুটা লজ্জিত। বিদায় বেলায় লুনা এক কাণ্ড করে বসে। এই প্রথম আশিককে চুমো দেয়। আশিক ভীষণ আড়োলিত হয়ে পড়ে। লুনা বলে, আমি তোমার জন্যই, প্লিজ আমাকে ঠেলে দিও না।



- এভাবে কথা বলো না, লুনা। আমাকে ভুল বুঝো না। সত্যি আমি তোমাকে সময় দিবো।



সময় অনেক গড়িয়ে যায়। আশিক লুনার প্রেমে ভীষণ মজে যায়।



এদিকে মাস্টার্স পরীক্ষা এসে যায়। প্রিপারেশন অতো ভাল হয় নি। পরীক্ষা শেষ হলো। এবারের পরীক্ষা বেশ খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে সময়টা তেমন কাটতে চায় না। ইদানিং লুনাকেও তেমন একটা পাওয়া যায় না। ও কিছুটা ব্যস্ত।



একদিন হঠাৎ রিকশায় রেজার সাথে লুনাকে দেখে। লুনা আশিককে দেখে দ্রুত রিকশা থামিয়ে বলে, কি ব্যাপার আশিক! তোমাকে ফোন করেও পেলাম না। আর এদিকে রেজা ভাই আমাদের দুজনকে ইনভাইট করেছেন, চাইনিজ খাওয়াবেন।



- আশিক আমিও তোর বাসায় কয়েকবার ফোন করে না পেয়ে লুনার এখানে ফোন করে দাওয়াত দেই। রেজা বলে।



- আমি আসলে সকাল থেকেই বাসায় ছিলাম না। ঠিক আছে কোথায় খাওয়া যায় চল। আশিক ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।



ইতোমধ্যে মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আশিকের জন্য কোন সুসংবাদ নেই। ও ফাস্ট ক্লাস তো পায় নি, এমন কি কোন সিরিয়ালেও ওর নাম নেই। অথচ চার জন ফাস্ট ক্লাস পেয়েছে। আর ওর চরম প্রতিদ্বন্দ্বি রেজা ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে।



তার কিছুদিন পর আরো একটি খবর ওর কানে আসে, যা অবিশ্বাস্য। সামনের শুক্রবার রেজার সাথে লুনার বিয়ে। কান দুটোকে বিশ্বাস করতে পারে নি ও। যখন ওর হাতে বিয়ের কার্ড পৌঁছে, তখন সবুজ-শ্যামল পৃথিবী যেন সহসা ওর কাছে ধূসর হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ প্রান্তর যেন গোধূলীতে ছেয়ে যায়। যেন আধো আঁধারে পৃথিবীর প্রতিটি অনু-পরমানু আশিকের সাথে প্রহসন করছে।



লুনার একটি কথা এখনো ওর কানে বাজছে। একদিন হাসতে হাসতে লুনা বলেছিল, আশিক এত হাসাইও না, আমি ঠিকই একদিন কাঁদাবো।





রচনাকাল : ১২.০৭.১৯৯৯







মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭

অসহায় নাগরিক বলেছেন: সুন্দর!

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৫৫

শামীমুল বারী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.