নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের জানালা

শামীমুল বারী

শামীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তীহ মরুভূমির খাবার

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

মুহাম্মদ শামীমুল বারী

তীহ মরুভূমি। সিনাই উপদ্বিপে অবস্থিত।

চারদিকে রৌদ্রের তীব্র উত্তাপ। কোথাও তেমন কোন গাছপালা নেই। ছায়া নেই। পানি নেই।

এ মরুভূমিতে হঠাৎ এসে আশ্রয় নিলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রায় সোয়া ছয় লক্ষ মানুষ। তারা যেন জ¦লন্ত কড়াইতে এসে হাযির হলো। এই কিছুদিন আগে তারা লোহিতসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছে। তাদের যতটুকু খাদ্য মজুদ ছিলো তাও প্রায় শেষ হবে হবে করছে।

পেছনে শত্রু। সামনে শত্রু। পেছনে লোহিত সাগরের ওপারের মিসরবাসী। সামনে আমালিকা গোত্রসমূহ। কারো কাছ থেকেই কোন রসদ পাওয়ার উপায় নেই। কোন কিছুই বিক্রয় করবে না এই শরনার্থীদের নিকট। খাবারের চিন্তার আগে তো থাকার চিন্তা করতে হবে। বাধ্য হয়ে সবাই এখানেই তাবু গাড়লো। কারণ এ মরুভূমিতে কেউ-ই আক্রমন করতে আসবে না।

পুরো মরুভূমিতে অসংখ্য তাবু ছড়িয়ে গেল। পড়ন্ত বিকেলে লোকেরা এ মরুভূমিতে এসেছিল। তাবু গাড়তে গাড়তে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সবাই-- পরদিন কিভাবে এ মরুভূমিতে থাকবে? তাদের নবী আল্লাহর কাছে খুব করে দোয়া করলেন।

পরদির ভোর হলো। সূর্য উঠি উঠি করছে। লক্ষ লক্ষ চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে-- সূর্য উঠবে, উত্তাপ বাড়বে। আর সবাই যেন সিদ্ধ হতে থাকবে। সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। তাদের নবী আশ^স্থ করলেন। বললেন, ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করবেন।

লোকেরা আকাশপানে চেয়ে আছে। দেখতে দেখতে কতগুলো মেঘ এসে আকাশ জুড়ে গেল। সূর্য ঢেকে গেল। মৃদুমন্দ বাতাস বইতে লাগলো। তাবুর জায়গাগুলো শীতল হয়ে গেল। পুরো দিন এভাবেই কেটে গেল। শুধু একদিন নয়, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর মেঘমালার ছায়াদানে এমন আরামেই কেটে গেল তাদের দিনকাল।

এখানে বারটি গোত্র এসেছে। বানু ইসরাঈলের বার গোত্র। সাথে রয়েছেন তাদের নবী মূসা (আ)। বানু ইসরাঈল হলো আল্লাহর নবী ইয়াকুব (আ)-এর বংশধর। তাঁর আরেক নাম ছিল ইসরাঈল। সে হিসেবে বানু ইসরাঈল হলো ইসরাঈলের সন্তানেরা। ইয়াকুব (আ)-এর বারজন ছেলে ছিল। সেই বারজন ছেলের বংশধররা বারটি গোত্রে বিভক্ত হলো। দ্বাদশ ছেলে লাবীর বংশধর ছিলেন মূসা ও হারুন (আ)। মুসা (আ) বারটি গোত্রের একজন করে নেতা নির্ধারণ করে দিলেন। যাদেরকে নাকীব বলা হতো। নাকীবগণ তাদের গোত্রের সবকিছু দেখাশুনা করতেন, পরিচালনা করতেন, লোকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেন।

বানু ইসরাঈলের সাথে করা আনা পানি ফুরিয়ে গেল। তীহ মরুভূমির কোথাও কোন পানি পাওয়া গেল না। কোন নদী, খাল কিংবা ঝর্ণা কোথাও কিছু নেই। তীব্র পানির সংকট দেখা দিল। লোকেরা এসে মুসা (আ)-এর কাছে বলল। মূসা (আ) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে একটা নির্দিষ্ট পাথরে তাঁর লাঠি দিয়ে আঘাত করতে বললেন। মূসা (আ) সেই পাথরে আঘাত করলেন। আল্লাহর কী মহিমা! কী অবাক করা ঘটনা! সাথে সাথে সেখান থেকে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো। কী ছলছল স্রোতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। মুসা (আ) বারটি গোত্রের প্রত্যেককে একটা করে ঝর্ণা দান করলেন। অফুরন্ত পানি। সবাই ইচ্ছেমত ব্যবহার করছে, কিন্তু পানির কোন শেষ নেই।

এদিকে তাদের সাথে আনা খাবারও শেষ হয়ে গেল। গরম থেকে আল্লাহ তাদেরকে বাঁচিয়েছেন, পানি দান করেছেন। কিন্তু খাবার না থাকলে আর কয়দিনই বা বেঁচে থাকা যায়। মরুভূমিতে কোন পশু-পাখি নেই যে শিকার করে খাওয়া যাবে। জমিতেও চাষ করার কোন উপায় নেই। কেনা কাটা করে কোন কিছু কিনবে সে ব্যবস্থাও নেই। বিরান মরুভূমি, আশে-পাশে কোন জনপদও নেই। পেছনে-সামনে কিছু দূরে যেসব জাতি রয়েছে, তারা তাদের জাত-শত্রু। কোন কিছুই তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে না। হায়! ওরা এখন কীভাবে বাঁচবে? সবাই খুুব পেরেশান হয়ে গেলো। আবার আল্লাহর নবীর কাছে গিয়ে আরয করলো। নবী মূসা (আ) আল্লাহর কাছে উত্তম খাদ্যের জন্য দোয়া করলেন।

এবারও আল্লাহর এক অনুপম কুদরত দেখা গেল।

আকাশ থেকে খাবার নেমে এলো। খুব অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না? আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে, শিশির পড়ে, ঝলমলে রোদ নামে। পাখি উড়ে নেমে আসে। কুট কুট করে দানা-পানি খায়, ফড়িং ধরে। বেশ মজা করে আবার উড়ে যায়। কিন্তু খাবার নামে ব্যাপারটা কেমন। তাও আবার একদিন, দুদিন বা হঠাৎ হঠাৎ করে নয়, ক্রমাগত চল্লিশ বছর ধরে এ খাবার নেমে এসেছিল।

আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য মান্না ও সালওয়া খাবার নাযিল করলেন। ধনিয়ার মত ছোট ছোট দানার মান্না শিশিরের মত বর্ষণ হতো। জমিতে পড়ার সাথে সাথে জমে যেত। মান্না খুব সুস্বাদু ও মধুর মত মিষ্ট ছিল। আর চড়ুই বা কোয়েল পাখির মাংসের মত এক ধরনের মাংস ছিল সালওয়া। এগুলো প্রতিদিন সকালে তাবুর বাইরে পতিত হতো। সেখান থেকে লোকেরা সংগ্রহ করতো। আর ইচ্ছেমত খেতো। সবার জন্য পর্যাপ্ত ছিল। আল্লাহ লক্ষ লক্ষ লোককে দীর্ঘকাল তাঁর অসীম দয়ায় এভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এ জাতি ছিল বড়ই অকৃতজ্ঞ। আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত পেয়েও, অসংখ্য নিদর্শন সরাসরি দেখেও আল্লাহর নাফরমানি করতো। আল্লাহ যা বলতেন তার উল্টো করতো তারা। এ নাফরমানির কারণে এই তীহ মরুভূমিতে তারা চল্লিশ বছর আটকে ছিল। এর ভেতর থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে নি।

এ নিয়ামত প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের ১৬০ নং আয়াতে বলেন,
আর তার জাতিকে আমি বারোটি পরিবারে বিভক্ত করে তাদেরকে স্বতন্ত্র গোত্রের রূপ দিয়েছিলাম। আর যখন মূসার কাছে তার জাতি পানি চাইলো তখন আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম, অমুক পাথরে তোমরা লাঠি দিয়ে আঘাত করো। ফলে সেই পাথরটি থেকে অকস্মাত বারোটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যেকটি দল তাদের পানি গ্রহণ করার জায়গা নির্দিষ্ট করে নিল। আমি তাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম এবং তাদের ওপর অবতীর্ণ করলাম মান্না ও সালওয়া - যেসব ভাল ও পাক জিনিস তোমাদের দিয়েছি সেগুলো খাও। কিন্তু এরপর তারা যা কিছু করেছে তাতে আমার ওপর জুলুম করে নি বরং নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে।

এই অনুগ্রহের কথা আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ৫৭ ও সূরা ত্বহার ৮০ নং আয়াতেও আলোচনা করেছেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: ওরা জন্মগতভাবেই অবিশ্বাসী।

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩৫

শামীমুল বারী বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.