নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহেরা

আরেফিন৩৩৬

একটি নেতৃত্বই পারে একটি জাতিকে পরিবর্তন করতে; আমি এ কথায় বিশ্বাসী।

আরেফিন৩৩৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা-র দিনগুলো, জাতির সংকট ও সংগ্রামের ইতিহাস

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


ছবিটা ক*রো*না শুরুর দিকের, একটু একটু করে বের হতাম। এই দিনে ব্যাপক কড়াকড়ি কিন্তু বৃষ্টি-র পর রাস্তা হাঁটতে মন চাইলো, আবার স্যালুনও খোলা কিনা দেখছিলাম।
সময়গুলো হৃদয়ে গাঁথা, ক*রো*নায় বিজয় সারণী রোডটা এখনো আমার চোখে ভাসে, ক্ষুধার্ত মানুষের সারি, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মধ্যবিত্তের ভীড়, সিএইচএমএ তে উচ্চবিত্তের ভীড় ; একটু নিঃশ্বাস নেয়ার জন্যে শত শত কোটি টাকা বাজি ধরা, দিতে চাওয়া। সরকারের যত উন্নয়নের গল্প সর্বপ্রথম ধূলায় মিশে গেলো টেকসই উন্নয়ন যে কিছুই করেনি তা একে একে বের হয়ে আসতে শুরু করলো।

মনে পড়ে বাংলাদেশের শীর্ষ দুই ধনী ব্যাক্তি যমুনা গ্রুপের বাবুল চৌধুরী এবং আব্দুল মোনেম গ্রুপের আব্দুল মোনেম মিয়া কোন আইসিইউ পাননি। অথচ চাইলেই উনারা দেশে বড় বড় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। হয়তো করা হয়নি। দোষ দিচ্ছি না।
বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সে সময় কাজে দিয়েছিলো। তা দিয়ে সরকারের সাফল্য প্রচারিত হয়েছে, অথচ সব ভূয়া। মনে পড়ে গার্মেন্টস কর্মীদের অপরিসীম আত্মত্যাগ। একটা দূর্বিষহ পরিস্থিতির সাথে সংগ্রাম করা মানুষগুলোর করোনায় কিছু হবে না বলেছিলাম কারণ স্রষ্টা মজলুমের উপর জুলুম করেন না, করেওনি। এসব কারণে সব সময় বাংলাদেশের মানুষের উপর একটা অসাধারণ মমতা অনুভব করি, তাদের মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই।
ভারত নামক বন্ধু রাষ্ট্র টাকা নিয়ে ক*রো*নার ভ্যাক্সিন দেয়নি। মনে আছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা হাওয়ায় মিশে গেলো।

মনে আছে মেহনতি মানুষের কথা, " আমরা ক*রো*নায় নয় না খেয়ে মারা যাচ্ছি"। বিপদ কালীন সময়েও সরকারি আমলাদের আচরণ। ডাক্তারদের মানবতা, কত চেষ্টা মানুষকে বাঁচাবার। আবার কত কত ডাক্তার পালিয়ে বেড়াতো এটাও কিঞ্চিৎ সত্য পুরোপুরি নয়। আরেকটি চটকাদার কথা বের করেছিলো চারুকলা-র বিজ্ঞানীরা, এই দুষ্টলোকদের কোন কিছু করার নেই শুধু নৈতিকতার ভিত্তি ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া। লিখাটি ছিলো এ রকম
" যদি আসে ভালো সময় কেটে যায় দুর্দিন, মনে রেখো পাশে ছিলো ডাক্তার-বিজ্ঞান কোন মসজিদ মন্দির নয়"
কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি লাশ ধোয়া এবং দাফন করতে, ক*রো*নায় ভয়ের কিছু নেই এটি দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিলোই মসজিদের ঈমাম আর মুয়াজ্জিন-রাই। লাশ ধোয়া,পাশে থাকা; সবই তারা করেছিলো। নারায়নগঞ্জের বিএনপি নেতা খোরশেদ সাহেব; পৃথিবী জেনেছিলো মানুষ মানুষের পাশে থাকে। খোরশেদ সাহেব হিন্দু ভাইদের লাশও সৎকার করে দিয়েছেন। কোনকিছুই ভুলে যাওয়া যাবে না।

পু লি শ বাহিনীর অনেকের ব্যাক্তিগত মানবিক আচরণ। মনে পড়ে বৃদ্ধ বাবা-মা-সন্তানকে ফেলে রেখে যাওয়ার করুন অবস্থা। মনে পড়ে জুরাইন কবরস্থানে মূ*র্খে*র দলের সাইনবোর্ড ; ক*রো*নার রোগীদের দাফন করা যাবে না।
মনে পড়ে ত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের মারাত্মক মায়াময় চিত্র।

সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে বিএনপি এমপি প্রার্থীদের সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দেয়ার হিড়িক অথচ তেমন কেউই নেতাকর্মীদের খোঁজ নেয়নি। মনে হচ্ছে এইতো ভোট বেড়ে গেলো, অথচ পাশে থাকা, তার জন্যে দিনরাত কাজ করা সেই কর্মীটির খবর নাই। নিয়তি অনেককেই এমপি হতে দেয়নি। নেতাকর্মীর ভেতরের কান্না যারা বোঝেন না তাদের কেউ বুঝাতে পারবে না। রাজনীতি চর্চায় শুধু টাকা থাকলে হয় না, কোথায় কিভাবে খরচ করতে হয় তার দূরদর্শিতা থাকতে হয়।
তখনই চিন্তা করতাম হয়তো এদের কপালে হয়তো এমপি হওয়া আর হবে না,হয়নি এবং হচ্ছেও না।
এমপি হবে কষ্ট করা, সার্ভাইব করা ঐ মানুষগুলোই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারই সাধারণের সহযোগিতার অন্তরালে নিজেদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাহায্য করতো। টাকা বিতরণ নিয়ে চেয়ারম্যান আর মেম্বারদের দলীয় কারসাজি।
সবই মাথায় আছে, মনে হচ্ছে এইতো রিল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি।
একেকটি বিপর্যয় আসে প্রচলিত পুরাতন নানা সিস্টেম ভেঙ্গে দিতে,ভেঙ্গেও দিয়েছে। আবার অনেকেরই মুখোশ খুলে দিতে, দিয়েছেও। একে একে সরকারের নগ্ন চিত্র বের হয়ে আসে। অনেকেই বলেছিলো ক*রো*না গেলে একটি মানবিক দেশ,সমাজ গড়ে তুলবে।
---- আমি সেখানে কমেন্ট করে, স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলাম, আগামী হতে যাচ্ছে একটি চরম স্বার্থপর পৃথিবী। অনেকেই কটাক্ষ করেছিলো, কারণ তারা জীবনটিকে নিবিড়ভাবে দেখে না, কখনো জীবনের কাছে যেতে পারেনি, শুধু কেতাবি বিদ্যা আর আবেগের অতিশয্যে জীবন পার করেছে। অর্থনীতি যখন সংকুচিত হয়ে আসে তখন মানুষের ভেতরের স্বার্থপরতা বের হয়ে আসে, এবং মানুষ কিছুটা স্বার্থপরও হয়ে যায়, যেতে বাধ্য হয়। ব্যয় সংকুচন করতে গিয়ে।

বঙ্গবদ্বীপে সর্বপ্রথম স্বার্থপরতা ঢুকার ইতিহাস হলো ভূমি থেকে অধিকার কেড়ে নেয়ার পর। তাহলে আপনাকে জানতে হবে আগের ভূমি ও জীবন ব্যবস্থাপনা কেমন ছিলো বাংলায়?
কৃষক তার ফসল উৎপাদন করতো, মাঝি ধানের বিনিময়ে নদী পার করতো, মুদি জুতা তৈরি করতো, তাঁতী কাপড় বুনতো, কামার কাঁচি-কাস্তে করতো, গায়ক কথক ফসলের বিনিময়ে গান শুনাতো, জেলে মাছ দিতো, ধূপা কাপড় ধূতো, সকলে নিলে এর-ওর ক্ষেতে হাল দিতো, ঘর করতো; বেশিরভাগ বিনিময় ছিলো ফসলে চালে-ধানে-গমে।
মুদ্রা ব্যবস্থা ছিলো কিন্তু বাংলায় অসাধারণ পণ্য ও সেবা বিনিময় ব্যবস্থা ছিলো দীর্ঘদিনের।

তাতে ব্রিটিশদের লাভ কি? তাদের লাগবে ফসল এবং মুদ্রা! তাই এ বিনিময় পদ্ধতি ভাঙ্গতে হবে। ফসলের ক্ষতি হোক, ফসল বেশি হোক প্রয়োজন রাজস্বের। তাই মুদ্রা ব্যবস্থা শক্ত করা হলো, ভূমি কেড়ে নিয়ে চিরস্থায়ীসহ নানা পদ্ধতিতে পরীক্ষণ হলো। শুরু হলো অত্যাচারী যত সম্প্রাদায়ের উদ্ভব, নায়েব-গোমস্তা,পাইক-পিয়াদা, সিকদার-জোতদার,লাঠিয়াল, দাদন,মহাজন, মধ্যস্বত্বভোগী। হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত মানবিক ভূমিওয়ালা এক রাতে হয়ে গেলো নিঃস্ব। দুধ-ভাত খাওয়া মানুষটির জোটে না ডাল-ভাত। হাজার বছরের ঐতিহ্যের জীবনে নেমে এলো দূর্বিষহ অনিশ্চয়তা, পিতৃভূমি হারানোর তীব্র যন্ত্রণা, নিঃস্ব সহায়হীন জীবন। যে লোকটি তার পাড়াপ্রতিবেশিকে দেখতো, সে এখন নিজেই খেতে পায় না। এ ইতিহাসে হাত না দিয়ে আপনি একটি সমৃদ্ধ জাতি হতে চান? গুড়ে বালি, ব্রিটিশ-কে স্বজন জেনে এগুতে চান? শুধু একাত্তর আর ভাষা আন্দোলন জেনে ইতিহাস শেষ দিতে চান? আপনার সবই গুড়ে বালি। আপনি ঋণ সালিশী আইন, কৃষক প্রজাস্বত্ব আইন জানবেন না, শেরে-এ-বাংলা-কে জানবেন না, আপনি একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়তে চান, আপনার সংগ্রামই তো আসবে না। ইতিহাসের চোরাগলিতে পড়ে মরবেন। মাটি খাঁমচে আপনার পূর্বপুরুষের সংগ্রাম জানবেন না হবে না। রক্তজবার মতো ক্ষতগুলো জানবেন না হবে না। আপনার পূর্বপুরুষ যে কিংবদন্তি ছিলো সেটি আপনাকে জানতে হবে, আপনার ভেতরের হীনমন্যতা সর্বাগ্রে দূর করতে হবে।

ভূমি অধিকার পেতে, ফসলের অধিকার পেতে আপনার পূর্ব পুরুষ কি করেছে, ভূমি অধিকার হারিয়ে কি হয়েছে; আপনাকে জানতে হবে। এটি জানাই আপনার বড় মুক্তি, তাছাড়া কোন মুক্তি নেই।
এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা বিশেষ প্রয়োজন। ব্রিটিশদের দ্বারা প্রবর্তিত এ আইনে একটি সূর্যাস্তের পর একটি সূর্যোদয়ে মানুষ জানতে পারে হাজার বছরের বংশপরম্পরায় পাওয়া তার ভূমি আর তার নেই। ফসলে ধানে তার অধিকার পুরোপুরি নেই। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় শুরু হয় ভূমি অধিকারের আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন।
ভূমি অধিকারকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের প্রাণ যায়। কত সম্ভ্রম যায়, কত অসহায়, নিরুপায় সময় যায়!
সলিল চৌধুরীর গানে
------ পঞ্চাশে লাখ প্রাণ দিছি, মা বোনেদের মান দিছি
-- আর দেবো না আর দেবো না
রক্তে বুনা ধান হো
সাঁওতালদের আত্মত্যাগ, আপনাকে জানতে হবে। কিভাবে একটি উদার জাতি, সহমর্মিতার জাতি ; দীর্ঘ ব্রিটিশ চালে হয়ে গেলো স্বার্থপর ; আপনাকে জানতে হবে। সেখানে কাজ করতে হবে। এটি তো আমাদের সংস্কৃতি ছিলো না, কোথায় কোথায় আরোপ হলো; আপনাকে খোঁজে বের করতে হবে এবং বের হয়ে আসতে হবে।
আপনার পূর্বপুরুষের দ্বীপ্ত ঘোষণা আপনাকে জানতে হবে, জানতেই হবে।
---- হেই সামলো।।
হেই সামলো ধান হো
কাস্তেটা দাও টান
আর দেবো না আর দেবো না
রক্তে বুনা ধান, মোদের প্রাণ হো।
এ ঘোষণা এত শক্তি এত জীবনঘনিষ্ঠ এবং জীবন ভাবাবেগীয় ঘোষণা যা আপনি পাশ কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না। সে শক্তিই আপনি পাবেন না। আপনি ভারতীয় ইতিহাসবিদদের ধার করা ইতিহাসে পায়ে মাটি পাবেন না, মাটির গন্ধ পাবেন না, প্রিয় পূর্বপুরুষের সেতুবন্ধন মেলবন্ধন খোঁজে পাবেন না, শুধু অন্ধকারে হাতড়াবেন।

যাই হোক, ক*রো*নায় তাবৎ পৃথিবীর কলকারখানার বেশিরভাগ বন্ধ থাকায় খারাপ সময় দেখে সর্বপ্রথম তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো(ওপেকভুক্ত)। দেশে দেশে ঋণ সুবিধা দিয়ে তেল দেয়ার প্রস্তাবণা দিতে থাকে। তেলের পৃথিবী আসার পর তারা সর্বপ্রথম খারাপ সময় দেখে।
আর এখন জ্বালানি কিনতে আমাদের সরকার কাতার-কুয়েতের পিছে পিছে ঘুরে। এবং সোনারও ব্যাপক দর পতন ঘটে।
তখন সোনা মজুদে মনোযোগী হয় তিনটি দেশ ১. যুক্তরাষ্ট্র ২. চীন ৩. ইসরায়েল। এবং তেল মজুদেও মনোযোগী হয় এ তিনটি দেশই। ঐ সময় বাংলাদেশ সরকারকে এ পরামর্শ দেয়ার রাস্তা খোঁজেছি যে ঋণ সুবিধা দিছে রিজার্ভ আছে তাইলে তেল কেনো, কিন্তু তখন আমার বড় ভাই একটি অসাধারণ কথা বলেছিলো, "স্বৈরাচার ঘাড়ে রেখে তাকে সমৃদ্ধির পথ দেখানো যাবে না, তারা স্থায়ী হওয়ার পথ খোঁজবে" কথাটি তাবৎ পৃথিবীর দামি কথা বলে আমি মনে করি। তিনি আরেকটি কথা বলেছিলো যে কারণে আমার বড় ভাইকে আমি আলাদা ভাবে শ্রদ্ধা করি, আগেও শ্রদ্ধা তো করতাম, এখন বিশেষ ভাবে করি। কথাটি --
" এসব করোনা কিছু না যত পারো মানুষকে সহযোগিতা করো, আগামী ১০০ বছরেও মানুষকে সেবা করার এ সুযোগ পাবে না"
বলেছিলেন, মহান আল্লাহ বিশেষ বিশেষ সময়ে মানুষকে সেবা করার একটা বিশাল সুযোগ দেয়।

আরেকটা কথা বিশেষ ভাবে যোগ করি, ইসরায়েল কেন এত বিশেষ ভাবে হামাসের উপর ক্ষেপেছে এত হামলা করেছে? ইরানের দিক নির্দেশনায় হামাস ইসরায়েলের তেল শোধনাগারসহ ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি কৃত্রিম খনি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

দুঃসময় এবং ইতিহাসকে ধারণ করতে হয়৷ ইতিহাস ভুলে গেলে জাতি আত্মভোলা হয়ে যায়। আত্মভোলা জাতি এগুতে পারে না। আমাদের গৌরবের দিনগুলো ফিরে আসুক, পূর্বপুরুষের আত্মত্যাগের বদ্বীপে নব জীবন পাক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.