নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শানজিদ অর্ণবের ব্লগ

শানজিদ অর্ণব

শানজিদ অর্ণব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আংটির সংস্কৃতি : স্মরণ-বিস্মরণ, প্রেম-প্রত্যাখান

১২ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯

সলোমন কিংবা অন্যদের কাহিনী থেকে আমরা জেনেছি যে, নিজের আংটি হারালে আপনি আপনার দাপ্তরিক পরিচয় হারাবেন এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়ও হারাতে হবে। এক কথায় বলা যায়, আংটি চুরি মানে মানুষের পরিচয় চুরি। আংটি হারানো সঙ্গে নিজের স্মৃতি হারানো, নিজের পরিচয় ভুলে যাওয়ার পৌরাণিক কাহিনীও প্রচলিত আছে। আবার প্রেমিকের উপহার দেয়া আংটি হারিয়ে প্রেমিকার প্রেমিককে ভুলে যাওয়ার গল্পও আছে। প্রেমিকা আবার সেই আংটি খুঁজে পেলে প্রেমিককে চিনতে পারে। এভাবে আংটি দুই ধরনের প্রতীক বহন করে— ব্যক্তিগত পরিচয় (নামাঙ্কিত) বহন করা আংটি ও যৌনতার প্রতীক (বিয়ের আংটি), যৌনসঙ্গীর পরিচয় নিয়ে আংটি অনেক পুরাণেরও জন্ম দিয়েছে। টম জোয়েলনার তার প্রথম প্রেমিকাকে দেয়া এনগেজমেন্ট রিং নিয়ে লিখেছেন, ‘এ আংটির মধ্যে অনেক স্মৃতি আছে, যা চাইলেই মুছে দেয়া সম্ভব না। অন্তত যত দিন এটা তার মালিকের আঙুলে থাকবে। আংটি একটা জীবন্ত স্মৃতিভাণ্ডার।’ আমেরিকা ও ইউরোপে একজনের হাত থেকে আরেকজনের আঙুলে আংটি পরিয়ে (অনেক সময় আঙুলে একটা সুতো বেঁধে দেয়া হতো) দিয়ে তাকে কোনো দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হতো। আংটি মানুষকে যা কিছু ভুলতে এবং স্মরণ করিয়ে দিতে পারে, তার মধ্যে আছে নারী ও শিশু।
আংটিকে ঘিরে স্মৃতি-বিস্মৃতির কাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাতটি শকুন্তলার। প্রাচীন ভারতের এ কাহিনী খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে কবি কালিদাস রচিত সংস্কৃত নাটকের মাধ্যমে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
প্রাচীন ভারতে আংটি
উনিশ শতকে চার্লস এডওয়ার্ডস সরল বর্ণনায় লিখেছিলেন, ‘সংস্কৃত খোদাই করা নীলকান্তমণি ও চুনীর নামাঙ্কিত আংটির প্রচলন অনেক প্রাচীন সময়কাল থেকে প্রচলিত ছিল, দালিলিক নিদর্শনের আগে থেকেই আংটির প্রচলন ছিল।’ কিন্তু ঐতিহাসিক দলিলে ভারতে নামাঙ্কিত আংটির কথা পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে। সময়টা ছিল উত্তর-পশ্চিম ভারতে ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের অভিযান পরিত্যাগ করার পরে ইন্দো-গ্রিকদের আগমনের পর। বিশাখা দত্ত রচিত ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক নাটক মুদ্রারাক্ষস-এ নামাঙ্কিত আংটিকে রাজকীয় দলিল হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। নাটকটি দক্ষিণ ভারতে সপ্তম শতকে রচিত হয়েছিলসীতার অলঙ্কার
ভারতীয় ঐতিহ্যতে নারী ও অলঙ্কার-বিষয়ক মূল্যায়নকে পাওয়া যায় বাল্মীকি রচিত সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণে। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয় ২০০ শতকের মধ্যে রচিত রামায়ণ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের কেন্দ্রীয় একটি গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।
রামায়ণে যুবরাজ রাম সীতাকে নিয়ে বনবাসে যান। শুরুতে তিনি নিজের সব গহনা ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু মামুলি ধরনের গহনা গায়ে বনে যাওয়ার পরিকল্পনা তিনি বাদ দিলেন এবং নিজের সব গহনা পরে বনবাসে গেলেন। সীতার অলঙ্কার পুরো মহাকাব্যের বিভিন্ন অংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সীতাকে হরণের সময় রাবণ তার এক রাক্ষসকে অলঙ্কারশোভিত সোনার হরিণে পরিণত করে। হরিণটি দেখে সীতার খুব পছন্দ হয় এবং তিনি রামকে অনুরোধ করেন হরিণটি এনে দেয়ার জন্য। রামের অনুপস্থিতিতে রাবণ ছলনা করে সীতাকে অপহরণ করে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সীতার পায়ের মল ও গলার হার একটি পর্বতের ওপর আছড়ে পড়ে। এরপর সীতা বুদ্ধি করে নিজের অন্য অলঙ্কারগুলোও মাটিতে ফেলতে থাকেন। তার আশা ছিল— নিচে থাকা বানররা তার অলঙ্কারগুলো খুঁজে পেয়ে তাদের নেতার কাছে নিয়ে যাবে এবং সেই নেতা বিষয়টি রামকে জানাবে। সীতা জানতেন তার অলঙ্কার দেখে তাকে শনাক্ত করতে পারবেন। সত্যি সত্যিই সীতার প্রত্যাশা অনুযায়ী বানরদের একটি দল সীতার অলঙ্কারগুলো পেয়ে সেগুলো তাদের রাজার কাছে নিয়ে যায়। বানরদের রাজা তখন রামকে গিয়ে বলেন, ‘অলঙ্কারশোভিত সীতাকে রাবণ অপহরণ করে নিয়ে গেছে, আমি দেখেছি তিনি রাবণের হাতে বন্দি অবস্থায় নিজের শরীর থেকে অলঙ্কার ছিঁড়ে মাটিতে ফেলেছেন।’ পরবর্তীতে হনুমান সীতাকে সে সময়ের বর্ণনা দিয়ে বলেছিল কীভাবে তার অলঙ্কার পেয়ে রাম কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, সীতার অলঙ্কার বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আর্তনাদ করছিলেন, ‘প্রিয়তমা!’
রাম ও সীতা যখন বনবাসে যান তখন তাদের সঙ্গে রামের ভাই লক্ষ্মণও ছিল। সীতাকে খুঁজতে বের হয়ে রাম লক্ষ্মণকে বললেন, ‘এগুলো অবশ্যই সীতার অলঙ্কার।’ লক্ষ্মণ জবাব দিলেন, ‘আমি তার কানের ও মাথার অলঙ্কার চিনি না। শুধু তার পায়ের নূপুর চিনি, কারণ প্রতি সকালে আমি তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতাম।’ এ জবাবের মাধ্যমে বোঝা যায় লক্ষণ কখনো সীতার চেহারা ও দেহের দিকে তাকাননি এবং তাই তার প্রতি কখনো কোনো কামনা অনুভব করেননি। একই সঙ্গে এ বক্তব্য দিয়ে লক্ষণ সীতার ও তার সতীত্বের সাক্ষ্য দিলেন। এখানে অলঙ্কার একই সঙ্গে নারীর পরিচয় ও সতীত্ব প্রমাণের ক্ষমতা রাখছে।
রাম যখন সীতাকে উদ্ধারের জন্য হনুমানকে লঙ্কায় পাঠালেন তখন অলঙ্কার স্ববিরোধী বার্তা দিচ্ছিল। হনুমান প্রথমে গহনাসজ্জিত একজন নারীকে দেখল। কিন্তু তাকে দেখেই হনুমান বুঝল— এই নারী সীতা হতে পারেন না। কারণ ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে কোনো নারী তার স্বামীর উপস্থিতি ছাড়া গহনায় সজ্জিত হতে পারেন না। আর হনুমান যখন সত্যি সত্যি সীতাকে দেখল, তখন তিনি ময়লা, জীর্ণ পোশাক পরে আছেন, তার শরীরে কোনো অলঙ্কার নেই; নির্বাসনে থাকা সতী স্ত্রীর আদর্শ চেহারা। কিন্তু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পরে হনুমান দেখল তার শরীরে রাম বর্ণিত সব অলঙ্কারই যথাযথভাবে সজ্জিত। পর্বতে পড়ে যাওয়া অলঙ্কারগুলো নেই, সব দেখে-শুনে হনুমান সীতার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলো।
প্রত্যাখ্যাত শকুন্তলা
রাজকীয় অলঙ্কার এবং এক নিরীহ বালিকার ভাগ্যবিপর্যয় নিয়েই এগিয়েছে শকুন্তলার কাহিনী। রাজার নামাঙ্কিত আংটি এখানে অতি প্রয়োজনীয় প্রামাণিক উপাদান। রাজারা নারীদের এ রকম আংটি দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সীতার মতো শকুন্তলার ক্ষেত্রে আংটিটি তার নিজের ছিল না, হিন্দু পুরাণেও মাছের দেখা মেলে। ভারতীয় শাস্ত্রে মাছের আগমন খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো বন্যা থেকে একটি মাছ কিছু উত্তম চরিত্রের মানুষকে রক্ষা করে নায়কের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়। উদ্ধারকৃতদের একজন মাছটিকে ছোট অবস্থায় একবার বাঁচিয়েছিলেন।
মাছ ভারতে সচেতন মনের প্রাচীন প্রতীক। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে রচিত উপনিষদে বলা হয়েছে: ‘একটি বড় মাছ নদীর উভয় তীরেই ভ্রমণ করে, কাছের প্রান্তে যায় আবার দূরবর্তী তীরেও যায়, ঠিক একইভাবে একজন স্বপ্নচারী ঘুমেও থাকেন আবার জেগেও থাকেন।’ একটি মাছ যখন গভীর সাগরে সাঁতার কাটে, তখন তা গভীর, নিমগ্ন চৈতন্যের প্রতীক প্রকাশ করে এবং স্বপ্ন ও জাগরণ, স্মৃতি ও বিস্মৃতির ধারণাকে প্রতিপন্ন করে।
স্মৃতির প্রত্যাবর্তন
আমাদের আলোচনা অতীতের পুনরুত্থানের দুটি ভিন্ন চেহারা দেখিয়েছে— অতীতের প্রেম ও স্মৃতি। এ পুনরুত্থান হয়েছে মাছের কাছ থেকে আংটি উদ্ধারের মাধ্যমে। এ পুনরুত্থান কখনো বিপদ ডেকে আনে আবার কখনো সমস্যার সমাধান করে। উভয় ক্ষেত্রেই আংটির জায়গা হয়েছিল মাছের পেট; এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা আমাদের ভাগ্য বদলাতে পারি না; কোনো পরিণতিকে আমরা চাই বা না চাই, সেটা আমাদের জীবনে আসবেই। উভয় ক্ষেত্রেই আংটি ধোঁয়াশায় ঢাকা স্মৃতির প্রতীক। আংটিটি অবশ্যই পাওয়া যায়, কারণ এটা যিনি হারিয়েছেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পলিক্রেটাস তার আংটি সাগরে ছুড়ে ফেললেও তা আবার তার কাছে ফিরে আসে।
ফ্রয়েড তার থিওরি অব দ্য রিটার্ন অব দ্য অপরেসড (Wiederkehr des Verdrängten)-এ অতীতের এ রকম একটি পৌরাণিক গল্প বিশ্লেষণ করেছেন। তার মূল্যায়ন মাছের পেটে আংটির বিভিন্ন আঙ্গিকের পুরাণগুলোকে বিশ্লেষণে আলো ফেলেছে। ফ্রয়েড তার বিখ্যাত গ্রন্থ দি ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস (১৮৯৯) গ্রন্থে অদিপাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘অদিপাসের মতো আমরা নিজেদের জীবনে একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তার মতো আমরাও চোখ বন্ধ করে শিশুবেলার কথা স্মরণ করতে চাইব।’ কয়েক বছর পরে তিনি তার মোজেজ অ্যান্ড মোনোথেইজম (১৯৩৭) গ্রন্থে লিখেছেন, ‘একটা শিশু দুই বছর বয়স পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে যায়, সেগুলো যদি সে বুঝতে না পারে তাহলে সে আর পরবর্তী জীবনে সেগুলো স্মরণ করতে পারবে না। তবে একভাবে সেগুলো আবার ফিরে আসবে— সেটা হলো স্বপ্ন। এছাড়া একমাত্র সাইকোঅ্যানালিটিক্যাল চিকিত্সার মাধ্যমেই সে সময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পরবর্তীতে যেকোনো সময় সেই স্মৃতি মানুষকে আবেগতাড়িত করতে, তার কর্মকাণ্ডে প্রভাব রাখতে পারে, কোনো মানুষকে পছন্দ-অপছন্দ করায় প্রভাব রাখতে পারে এবং তার প্রেমের কোনো বস্তু পছন্দে প্রভাব রাখতে পারে— যে পছন্দকে সে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কষ্টের স্মৃতি আমরা দমিয়ে রাখি, তবে এজন্য আমাদের মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এই দমিয়ে রাখা স্মৃতি আবার বিস্ফোরণ হতে পারে কাছাকাছি ধরনের কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে।
শিশুকালের স্মৃতি উদ্ধারের ফ্রয়েডীয় পদ্ধতি আমাদের পুরাণে দেখা যায়, শিশুকে উদ্ধার, গল্পের সাগর থেকে কোনো ভাবনাকে উদ্ধার, যেখানে মনে হয়েছিল সেগুলো আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ গল্পের সাগর হিন্দু ন্যারেটিভে পরিচিত কথাসরিত্সার নামে। একে ফ্রয়েড বলতেন ধর্মের ‘ওশানিক ফিলিং’।
প্রখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ রামানুজন শকুন্তলার কাহিনীতে দেখেছেন, ‘কোনো কিছুই বদলায় না, কেবল রূপান্তর হয়।’ রোমান কবি ওভিড বলেছেন, ‘কোনো কিছুই ধ্বংস হয় না, কেবল বদলে যায়।’ ফ্রয়েড বলেছেন যে, ‘কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া মানে প্রকৃতপক্ষে তাকে নতুন করে পাওয়া।’ বৌদ্ধরা যেমন বলেন, ‘আমি কখনো কিছু হারাইনি।’
স্মৃতিকে দমিয়ে রাখার এবং স্মৃতি ফিরে আসার প্রক্রিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দুই ধরনের গল্পে পৌরাণিক চেহারা পেয়েছে— একদিকে আছে মাছের মাধ্যমে আংটি উদ্ধার, পলিক্রেটস সিনড্রোম এবং সলোমন/শকুন্তলা সিনড্রোম। স্মৃতিকে দমিয়ে রাখা বিভিন্ন সময় খারাপ ফল বয়ে আনে (অপরাধবোধ, স্নায়বিক চাপ), আবার স্মৃতির পুনরুত্থান (স্বপ্ন ও সাইকোঅ্যানালিসিস) মানুষের জন্য ওষুধের মতো কাজ করতে পারে (শকুন্তলা/সলোমন সিনড্রোম)।
মূল্যবান জিনিস হারানো এবং পানিতে খুঁজে পাওয়ার যে কাহিনী, তা আমাদের আচার-প্রথার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে। ইহুদিদের নববর্ষ রোশ হাসহানাহ। এদিন তারা একটি বিশেষ প্রথা পালন করে, যার নাম তাজলিখ। এতে ইহুদিরা সাগর, নদী বা ঝরনায় গিয়ে প্রার্থনা করে এবং রুটির গুঁড়ো পানিতে ছুড়ে দেয়। এ গুঁড়ো তাদের পাপের প্রতীক। তারা আশা করে মাছেরা এই গুঁড়ো খেয়ে ফেলবে এবং তাদের নিজেদের জীবনে নতুন করে আর পাপ ফিরে আসবে না।
আংটি হারানো ও ফিরে পাওয়া
মাছের মধ্যে হারানো আংটি খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে মাছ স্মৃতি পুনরুদ্ধার ও স্মৃতির ধারবাহিকতার প্রতীক হয়ে ওঠে। মাছের প্রতীকটি এখানে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। প্রথমত. মাছ সাগরের গভীর থেকে আংটি আগলে রাখে। একই সঙ্গে আমরা জানি, মাছের চোখের পলক পড়ে না, ঘুম-জাগরণ— সবসময়ই তার চোখ খোলা থাকে; তাই মাছ হচ্ছে চিরজাগ্রত চেতনার রূপ, যার মনোযোগ এক মুহূর্তের জন্যও টলে না। চোখের পলক ফেলার সময়কে জার্মান ভাষায় বলে Augenblick আর সংস্কৃতে নিমেষ। কিন্তু মাছের পলক পড়ে না, তাই এক মুহূর্তের জন্যও স্মৃতির ক্ষয় হয় না।
ব্রিটিশ কবি জেমস ফেনটন আংটি হারানো ও খুঁজে পাওয়ার মধ্যে অদ্ভুত এক বৈপরীত্য দেখেছেন: ‘আংটি যখন হারিয়ে যায় বা মৃতের কবরে দিয়ে দেয়া হয়, তখন তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। যেকোনো মূল্যবান জিনিসের ক্ষেত্রে এটা একটা বৈপরীত্য। না হারালে বা কবরে না গেলে আংটিটি হয়তো একদিন গলিয়ে ফেলা হয়, নয়তো পরিবারের প্রয়োজনে বিক্রিও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি আংটিটি কোনো জলায় পড়ে থাকে বা তার কথা যদি মানুষ ভুলে যায়, তাহলে সেটা অনেক দিন পর পুনরুদ্ধার হবে।’
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি পুনরুদ্ধারের ভরসা মানুষকে আশার ক্ষীণ রশ্মি দেখায়। যেমন— সলোমন বা শকুন্তলার আংটি। এ আংটি নিজের প্রেমিক, স্বামী বা সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা জাগিয়ে রাখে; আমাদের মৃত্যুর পরও আশা জেগে থাকে; আংটি বা সন্তানের মাধ্যমে মৃত্যুর পরও আমাদের স্মৃতি বেঁচে থাকে। আমরা যত কিছু হারাই, তার মধ্যে স্মৃতিই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান এবং পুনরুদ্ধারযোগ্য। এ পুনরুদ্ধার নির্ভর করবে মানুষটি যথেষ্ট ভাগ্যবান কিনা এবং তিনি উদ্ধারের পথটি চেনেন কিনা তার ওপর।

সূত্র: ওয়েন্ডি ডনিগারের দ্য রিং অব ট্রুথ অ্যান্ড আদার মিথস অব সেক্স অ্যান্ড জুয়েলারি

(লেখাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ ২১ জুলাই ২০১৭ 'দৈনিক বণিক বার্তা'র বিশেষ সাময়িকী 'সিল্করুট'-এ প্রকাশিত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:১২

এস ওয়াই গ্লোবাল এলটিডি বলেছেন: পোস্টটি পড়ে অনেক ভাল লাগল । শুভ কামনা রইল নতুন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.