নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিগোবার্তা মেনচু এর সংগ্রামের কাহিনী

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৯

গুয়াতেমালা এটি ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮ শত নব্বই বর্গ কিঃমিঃ এর একটি মধ্য আমেরিকা দেশ । যেটি এককালে ছিল মায়া সভ্যতার লীলাভূমি । যা কোলে জন্ম নেয় এক সংখ্যালঘুর জাতির এক রক্ষকর্তা মসিহা -"রিগোবার্তা মেনচু"
.
রিগোবার্তা মেনচু নামটি পড়ে বুঝবার উপায় নেই যে উনি পুরুষ নাকি মহিলা । উত্তরটি হল মহিলা । এই মহিলার হাত ধরে একটি সংখ্যালঘু আদিবাসী মুক্তি পেয়েছিল অত্যাচারের যাতাকল থেকে ।
.
মেনচু ছিলেন গুয়াতেমালার কুইচি গোত্রীয় এক মায়া রেড ইন্ডিয়ান নারী । যিনি ১৯৫৯ সালে জন্মেছিলেন এক গরীর কৃষক পরিবারের ৯ সন্তানদের মাঝে ৬ষ্ট সন্তান হয়ে । নিতান্ত শিশু বয়সেই তার হাতেখড়ি , বাবার এক চিলতে জমিতে । কচি কচি হাতে তুলতেন ভুট্টা শিম । এই সামান্য জমি তাদের পরিবারের খাদ্য জোগানোর পক্ষে অপ্রতুল । দারিদ্র সীমাহীন আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অবাস্তব কল্পনা । তাই বাবা মা ও ভাইবোনদের সাথে মেনচুও তখন পুরোপরি কৃষক মজুর । কাজ করে শত শত বছর ধরে তাদের রক্ত চুসে আসা সেই শেতাঙ্গ প্রভুদের কথি ও তুলা ক্ষেতে ।
.
মেনচুর বয়স যখন ২০ তখনো উনি গোত্রীয় ভাষা কুইচি ছাড়া কিছুই জানতেন না । উনি আপন প্রচেষ্টায় পরবতী ৪ বছরে শিখেন রাষ্ট্রীয় ভাষা স্প্যানিশ । এরপর প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী মুলক বই "আমি , রিগোবার্তা মেনচু" । বঞ্চিত নিপীড়িত নির্মূলিত আদিবাসী জীবনের অপূর্ব এক আলেখ্য । সারা পৃথিবী জানতে পারলো তার নাম । তার শিউরে উঠলো । জানতে পারলো চোখের অগোচরে ঘটে যাওয়া একটি জাতির উপর নিষ্ঠুর ঘটনা সমূহ পূর্ণ বিবরণ ।
.
সে কিভাবে বাবার অনুসারী হয়ে মেনচু জড়িয়ে যায় আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনে , যা তাকে পরবর্তীতে টেনে নিয়ে যায় আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে । ৭০ ও ৮০ দশকে তার গ্রামটিকে গুয়াতেমালান সেনাবাহিনী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় । মুহুর্তের মাঝে সেই গ্রামের বাসিন্দা সংখ্যা ৪০০ থেকে কমে ১২ জন হয়ে পড়ে । গুয়াতেমালান সেনাবাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে তার ১৬ বছর বয়সী কিশোর ভাই প্রেত্রোসিনি অপহরণ করা হয় । যেখানে তাকে জীবন্ত অবস্থায় ধীরে ধীরে তার শরীরের চামড়া ও পায়ের তলার মাংস কেটে নেয় এরপর জনা তিরিশেক পুরুষ ও নারীর সঙ্গে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে ।
.
মেনচুর বাবা কৃষক সমিতির সঙ্গীসাথীদের নিয়ে নিজের এই দুঃখ দুর্দশার চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা জন্য স্পেন দুতাবাসের সামনে সমাবেশ হয়েছিলেন । সেখানে সমাবেশ শুরু হবার আগেই পুলিশ বাহিনী নির্মম গুলি বর্ষণের চালালো । একজন প্রাণীও সেইদিন বাঁচেনি ।
.
তার বাবার মৃত্যুর এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরেই তার মাকে টেনে-হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায় সৈন্যরা । সেনাব্যারাকে বন্দী অবস্থায় সেনা অফিসাররা তাকে ধর্ষণ করে পালাক্রমে , ধারাবাহিকভাবে । নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে জীবন্ত অবস্থায় কেটে নাওয়া হয় দেহের বিভিন্ন অঙ্গ । অত্যাচারে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় তার দেহ । মুহূর্ষু অবস্থায় সৈন্যরা তাকে ফেলে রাখে এক গাছতলায় সম্পূর্ণ নগ্নাবস্থায় । সেই উন্মুক্ত আকাশের নিচে ধুকে ধুকে তিলে তিলে তার মৃত্যু ঘটে । কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি । মৃত্যুর পর তার মরদেহের মুখে সৈন্যরা প্রস্রাব করে দেয় পৈশাচিক উল্লাসে ।
.
এরপর তারা মেনচুর আরেক ভাইকেও গুলি করে মেরে ফেলে ও তার বউ মারিয়াকে ধর্ষণ করার পর জবাই করে হত্যা করে ।
.
.
মেনচুর অন্তরঙ্গ বান্ধবী পেত্রোনা ডোনা । ১ মেয়ে ১ ছেলের মা এই ডোনা ছিল অপরূপ সুন্দরী । ভূস্বামীপুত্র কার্লোস গাসিয়া পেত্রোনাকে তার রক্ষিতা হওয়া প্রস্তাব দিয়ে প্রায়শ উত্যক্ত করতো । প্রস্তাবে সম্মত না হওয়া কার্লোস তার পিতার দেহরক্ষী পাঠিয়ে ডোনাকে ভরদুপুরে দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে তার দেহটাকে গুনে গুনে ২৫ টুকরো করালো । তার চিৎকারে পুরো গ্রাম ছিল কম্পিত । কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি চাকুরীচ্যুত হবার আশংঙ্কায় । ছোট সন্তানটি ডোনার পিঠেই ছিলো সেও দায়ের কোপে টুকরো হয়ে গেলো ।
.
মেনচুর বয়স তখন ২১ । উনি আত্মগোপনে থেকে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান মেক্সিকোতে । এখানেই কেটে যায় ১৩টি বছর । এখানে থেকে উনি জনমত গড়ে তুলেন । বিধবা ও শিশুদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেন ।
.
মেনচুর বয়সটি ছিল কারো সাথে প্রেম করে সংসার পাতানো । উনি উনার পুরো জীবনটি দিয়ে দিলেন তার জাতিকে উদ্ধার করার প্রচেষ্টায় । এর ফলশ্রুতি উনি ১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পেলেন । আমেরিকার সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ এড়িয়ে এক নিরপেক্ষ শান্তি পুরস্কার ।
.
পরের দু বছরের ভিতরেই উনার একান্ত প্রচেস্টায় আদিবাসী গেরিলাদের সাথে সামরিক বাহিনীর শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হলো । লিখা হলো আমরা সবাই ভাই ভাই । সেই হতে আদিবাসীরা দেশের মুল জনস্রোতে মিশে গেলো । এক নেতার দুরদর্শীতার ফলে একটি দেশে শান্তি স্থাপিত হয়ে ।
.
মেনচু আমাকে কি শেখালো ? প্রশ্নের উত্তরে আমার উত্তর
.
- আমাদের "৭১" এর ঘটনার সাথে ওদের জীবনের প্রায় সবই মিলে অর্থ্যাৎ ৭১ মত ঝড়ঝাপটা কমবেশি প্রতিটা জাতির উপর দিয়ে গিয়েছে । এই ব্যাপারে কোন জাতি লড়ে হেরেছে , কোন জাতি জিতেছে , কোন জাতি আজো লড়ে চলেছে । আমরা সৌভাগ্যবান আমরা জিততে পেরেছি ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০৯

আলাপচারী বলেছেন: ভালো লিখা।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৩৪

খন্দকার সাদ্দাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো লেখা।

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০০

হামিদ আহসান বলেছেন: ......++++++

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৮

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ :-)

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: চেষ্টা করেছি বেটার কিছু লিখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.