নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আবৃত্তি" এটা তোমার গল্প

৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪১



মেয়েটাকে শক্ত করে হাতে ধরে আছি । কিন্তু কোন মতেই হাতে রাখতে পারছি না । ঠিক তখনই কাকে যেন দেখলাম ! "মারিয়া রড্রিক্স" ! ! আমাকে দেখে মৃদু হেসে সে ধীর পায়ে হেটে আসতে লাগলো ।
.
মুহুর্তের মাঝে নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম । মাথার ভেতরে বেজে উঠছে কিছু পুরনো লাইন । "তন্বী শ্যামা শিখরি-দশনা পক্ক বিম্বাধরষ্ঠী"
.
অনেক বছর আগের কথা । অনার্স শেষ করেছি দেড় বছর হয়ে এলো । কিন্তু চাকরী নেই । আমার বাসার দুদিকেই সিগারেটের দোকান , বাকি করতে করতে তাদের মুখ দেখাবার জো রাখিনি । কিন্তু কি আর করা ? এই বয়সে বাবার কাছ থেকেও টাকা খুঁজতে কষ্ট হয় । পারি না । তাই মা যা দেয়ই তাতেই কোন মতে চলে । কিন্তু এই ভাবেই আর কতদিন ? ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বাজে ।
.
এই বেকারত্বকে খোঁচাতেই যেন এক বন্ধু একটা টিউশনি নিয়ে হাজির । বিরক্ত হলাম । চাকুরীর এই বয়সে টিউশনি করা রীতিমত অপমানজনক । কিন্তু যখন শুনলাম ছাত্র মালদার পার্টি , যাকে বলে বিলেতি পার্টি , ৭ হাজার দিবে , তাও শুধু বাংলা পড়ানোর জন্য ! ! তখন আর না করতে পারলাম না । বন্ধুর কথায় পরের দিনই টিউশনিতে চলে গেলাম ।
.
গিয়েই "থ" । এ তো ছাত্র নয় ! ছাত্রী ! তার উপর সবে বিদেশ থেকে এসেছে , বাংলা উচ্চারণও ঠিকমত বলতে পারে না । অর্থ্যাৎ তাকে অ আ থেকে শুরু করতে হবে । বিরক্তিতে মন ছেয়ে গেলো । বন্ধুটাকে হাতে কাছে পেলে কিলাতাম । আমাকে কি র্নাসারীর বাচ্চার কেয়ারটেকার পেয়েছে ? ইচ্ছা ছিল প্রথম দিন গিয়েই চলে আসবো । কিন্তু অত্যাধিক আর্থিক সংকটের কারণে নিজের মনের উপর জোর লাগতে পারলাম না ।
.
আমার ছাত্রীর নাম মারিয়া রড্রিস । তবে আমি ওকে প্রথমবার মরিয়ম ডাকাতে রীতিমত খেপেই গিয়েছিল , তবে মারিয়া মেয়েটা খারাপ না , দেখতেও বেশ ভালোই , শ্যামল বর্ণের চেহারাটাও খুব আকষর্ণীয় তবে বিদেশে থাকতে চেহারাতেও বিদেশী ভাব চলে এসেছে , চঞ্চল থাকে সব সময় । প্রেম করার জন্য একদম আদর্শ । কিন্তু প্রেমের করুণ অভিজ্ঞতার দরুণ এই লাইনে আর চিন্তা করিনি । আমার সাথে ঘরের সবাই বেশ সম্মানের সাথে কথা বলে । মাঝে মাঝে তাদের ড্রইং রুমে তার ইংল্যান্ড প্রবাসী বাবার সাথে আড্ডা চলে , দেশে চলমান রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে বুদ্ধিদিপ্ত মন্তব্য করি । তার কাছেই প্রথম জানলাম মারিয়া বিয়ে ঠিক করা আছে তারই বন্ধুর ছেলের সাথে
.
তা যাইহোক , তাকে বাংলাটা প্রায় বুঝিয়ে এনেছি কিন্তু মাঝে মাঝে সে এমন কিছু বাংলা শব্দ বা লাইন নিয়ে আসে যা বুঝাতে রীতিমত কষ্টই হয় । যেমন
- তন্বী শ্যামা শিখরি-দশনা পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী,
মধ্যে ক্ষামা চকিত-হরিণী প্রেক্ষণা নিন্ম-নাভিঃ !
.
এগুলো কি আমি নিজেও জানি না । এগুলো নাকি তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড তাকে দিয়েছে । তা যাইহোক দিনগুলো ভালোই কাটছিলো ।
.
তবে আমার ঠিক কি ভুল ছিল জানি না একদিন হঠাৎই সে আমার হাত ছুঁলো
- স্যার আপনি কি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না ! বিস্মিত আমি সাথে সাথে মাথা নেড়ে জানালাম "না"। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল "স্যার জানেন আজ আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি । আপনি আর আমি যিশুর সামনে দাড়িয়ে , যিশু নিজে আমাদের মেয়ের নাম দিলেন "আবৃত্তি" । আমি তো হতভম্ভ ! মেয়েটা তলে তলে এতদুর ?
.
- স্যার আপনাকে আমি আজ রাতটা সময় দিলাম , কাল ভালোভাবে ভেবে চিন্তে জানাবেন... বলে এক রকম দৌড়ে চলে গেলো ।
.
.
সেইদিন সারা রাত বসে বসে ভেবেছি । এটা কি হল ? এটা কি হল ? ভুল কি আমারই ? শেষ রাতে একটা ফাইনাল ডিসিশন নিলাম । তারপর যা হবার হবে । তবে আমি জানতাম না তাকে আমার ডিসিশনটা আর কখনো জানানো হবে না । তাদের গলিতে ঢুকলাম , দেখলাম মাটিতে একটা মানিব্যাগ পড়ে আছে । কার না কার ভেবে তুলে চেক করছি তখনই কিছু ছেলে এসে বলল -"কিরে তুই আমার মানিব্যাগ চুরি করেচিস কেন ?" তারপর আমাকে কিছু বলবার কোন চান্সই দিল না । ধপাধপ মার । প্রথম আঘাতটাই করেছে এক বাদামী চুলের ছেলে , সেটাই আমাকে অন্ধ করে দিলো । শুধু মনে আছে আমি মাটিতে পড়ে আছি আর আমার গায়ের উপর একটা পর একটা লাথি পড়ছে । যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হসপিটালে । দীর্ঘদিন হসপিটালে পড়ে ছিলাম কিন্তু মারিয়া আমাকে একবারও দেখতে এলো না । তবে মারিয়ার বাবা আমার বন্ধু মারফত জানিয়ে দিলো একটা চোরকে সে তার মেয়ের টিচার বানাতে রাজি না !
.
.
-স্যার কেমন আছেন ?
.
কি বলব বুঝছি না । মারিয়া আগের থেকে সুন্দর হয়েছে । বালিকা থেকে এখন পুরো যুবতী
.
-এই তো ভালো এখানে কি মনে করে ?
-স্যার হ্যাসব্যান্ডের সাথে শপিং এসেছি
.
হেসে উঠলাম । -আর আমি আমার মেয়ের সাথে শপিং এ এসেছি ।
-ওমা কি কিউট ! স্যার ওতো একদম আপনার উপর গিয়েছে
-আমার মেয়ে যখন আমার উপরই যাবে
-তা তো বটে । স্যার নাম কি রেখেছেন ?
-হুম....মায়া , পুরো নাম মায়া চৌধুরী
-মায়া ! খুব সুন্দর । একদম মায়া জন্মে যায় । স্যার আমার হ্যাসব্যান্ডকে দেখবেন না ? ঐ যে , এই রর্বাট এদিকে আসো
.
মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি । এক বাদামীর চুলের সুপুরুষ ধীর পায়ে আমার দিকে হেঁটে আসছে ! । তার চেহারায় বিস্ময়ের চিহ্ন । সে আমাকে চিনতে পেরেছে ! আর আমিও তাকে চিনতে পরেছি ।
.
আমি গলা নামিয়ে মারিয়াকে বললাম -মারিয়া তুমি জীবনে খুব সুখী হবে । কারণ আমার চেয়ে বুদ্ধিমান লোকের হাতে তুমি পড়েছ , ভাগ্যিস আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি , তাই বলেই তো তোমার এই সৌভাগ্য ।
.
বিপরীতে সে কি বলবে বুঝতে না পেরে একটা কষ্ট মেশানো হাসি দিলো । রবার্টের সাথে খানিকটা পরিচয়মুলক কথা হলো । সে আমার চোখে তাকাতে পারছে না । পাপবোধটুকু এখনো তার মাঝে কাজ করছে ।
.
.
বিদায় নিয়ে চলে আসার আমার মেয়েটা বলে উঠলো
-বাবা তুমি খুব পচা
-কেনরে মা ?
-মিথ্যা বললে কেন ? আমার নাম তো আবৃত্তি , আবৃত্তি চৌধুরী , মোটেও মায়া চৌধুরী না
.
হেসে কোলে তুলে নিলাম । পিছনে ফিরে দেখি মারিয়া একটা পিলার পিছে দাড়িয়ে আমাদের দেখছে । ভুল দেখলাম কিনা জানি না । মনে হল সে কাঁদছে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫২

প্রথমকথা বলেছেন: সুন্দর গল্প
ভাল লাগল।।

০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৬

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.