নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়েশা ফয়েজের চোখে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩১



অনেকটা হঠাৎই ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারীর আট তারিখে আয়েশা নামীয় এক বালিকার বিয়ে হয়ে যায় এক বেকার যুবকের সাথে । ছেলেটিকে তাঁর বাবা দেখাবার সাথে সাথেই নিজ কন্যার জামাই হিসেবে পছন্দ করে ফেলেছিলেন । কারণ মূলত দুটো । এক- ছেলেটি অত্যন্ত সুদর্শন ও দুই- ছেলেটির মত ছেলের বাবাও শিক্ষিত ।
.
দিন গড়ালো । সেই যুগে বছর ঘুরতেই ঘর আলো করে বাচ্চা হত তবে বিয়ের ৪ বছর পরও আয়েশার বাচ্চা হচ্ছিল না । এই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে প্রথমে চাপা দুশ্চিন্তা এবং শেষের দিকে অশান্তি শুরু হয়ে গেলো । বাসায় ভিক্ষে করতে আসা ভিখারীটিও কপট কৌতূহলের সুরে আয়েশার শ্বগুড়িকে জিজ্ঞেস করে, -কই গো চাচি, নাতি দেখান আপনার! শ্বাশুড়ি দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন । আয়েশার প্রাণের বন্ধু ছিল তাঁর ছোট ননদ হামিদা । একদিন সে কোথা থেকে শুনে এলো আয়েশা নামের মেয়েদের বাচ্চা হয় না । উদাহারণ সরূপ তার ফুফু আয়েশার কথা টানা হলো । তারও বাচ্চা হচ্ছে না । এত বড় (!) প্রমাণ পেয়ে আয়েশার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো ।
.
অথচ এটা নিয়ে তাঁর স্বামীর কোন মাথা ব্যাথা ছিল না । উল্টো তিনি মাঝে মাঝে বলতেন গ্রামের মানুষ সাদাসিধে হয়, যখন যেটা মুখে আসে বলে ফেলে ! তুমি মন খারাপ কোরো না । একটা চাকরী হোক তখন তোমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যাব । আয়েশা সাহস পান । তবে স্বামীর চাকুরী হয় না । অবশেষে আয়েশার বাবা বেকার জামাইয়ের জন্য পুলিশের চাকুরীর কাগজপত্র নিয়ে আনলেন । কিন্তু তার স্বামী পুলিশের চাকুরী করবেন না । মাষ্টারী করবেন । এটা এমন এক যুগের কথা যে যুগে স্ত্রীরা চাইলেই সকলের সামনে স্বামীর সাথে কথা বলতে পারতেন না । রাত হলেও পারা যেত না । যতক্ষণ না শ্বাশুড়ি শুতে যেতে বলতেন । ততক্ষণ রান্নাঘরে কাজ করতে হতো । অবশেষে আয়েশা অনুমতি পেলেন । - আব্বা স্বপ্নে দেখেছেন তোমার রিজিক পুলিশের মাঝে । আয়েশার স্বামী চোখ কপালে তুলে বললেন - 'এর মাঝে এক রাউন্ড স্বপ্নও দেখা হয়ে গেছে ! কোথায় যাই আমি এখন ?' শেষ পর্যন্ত তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন এবং চাকুরী হয়ে গেলো !
.
সিলেটে পোষ্টিং পড়লো তাদের নিজেদের জীবন শুরু হলো । হঠাৎ একদিন আয়েশার শরীর খারাপ হয়ে গেলো । কিছু খেতে পারেন না ,বমি আসে । ডাক্তার বললেন - 'তুমি মা হবে' । খবর শুনে পুলিশ সাহেবের খুশি দেখে কে । সে যুগে সন্তানের জন্মসংক্রান্ত আবুল হাসনাতের বিখ্যাত বইটি তার কিনে আনা হলো । বিস্ময় , রোমাঞ্চ আর কৌতুহল নিয়ে দুজন রাত জেগে জেগে বইটি পড়েন । শিহরিত হন । নতুন জীবন আসছে।
.

আজমীর শরীফ থেকে আনা ফুলটি ভিজিয়ে দেয়া হলো । আয়েশা বুঝতে পারলেন আর দেরী নেই । এই ফুলের আছে অলৌকিক ক্ষমতা , পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুটে উঠে আর ফুল ফোটা মাত্র বাচ্চার জন্ম হয় । কিন্তু ১২ ঘন্টা পার হয়ে গেলো বাচ্চা হবার নাম নাই । কিছুক্ষণ আগেও আনন্দে ঝলমল করা বাড়িটা থমথমে। হাতে-পায়ে তাবিজ বেঁধে দেয়া হয়েছে, গুড় পড়া, পানি পড় খাওয়ানো হচ্ছে ৷ অবস্থা দেখে সরকারি ডাক্তারকে আনা হয়েছে, তিনিও চিন্তিত মুখে বসে আছেন । একটু পর পর বলছেন, আর খানিকক্ষণ দেখি , তারপর না হয় ফোরসেপ ডেলিভারির চেষ্টা করব ৷ যে বাড়ি একটু আগে আনন্দে ঝলমল করছিল সেই বাড়ি এখন থমথম করছে । কারো নাওয়া-খাওয়া নেই । ডাক্তার চিন্তিত মুখে বসে আছেন । সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না । বহুজনকে কাঁদিয়ে অবশেষে সন্তানটি ধরণীতে পর্দাপণ করলেন ।
.
আয়েশার বিছানা করা হলো । প্রথমে খড় বিছিয়ে তার ওপর তোষক । কাছে একটা মাশলার পাঠের পাতা , হলুদের গুঁড়া , সরিষা আর ধূপ পোড়ানো হচ্ছে , যেই ভেতরে আসব এই আগুনে গা হাত পা সেঁকে আসতে হবে । বাচ্চাকে আনা হলো । মাথাভরা কাল চুল , টকটকে ফর্সা গায়ের রং , চোখ বড় বড় । যেন চোখ বড় বড় চোখে আয়েশাকে বলছে, - কি? বলছিলে না আমার মুখ দেখবে না? এখন দেখলে তো । আয়েশার বুক মমতায় নড়ে উঠলো ।
.
ছেলেটার ডাক নাম রাখা হল কাজল । পুরো নাম শামসুর রহমান ।
.
আয়েশা তখনো জানতেন না এই নাম একদিন চাপা পড়ে যাবে এক বিখ্যাত নামের আড়ালে । 'হুমায়ূন আহমেদ' ।
.
.
.
স্যার আপনার অনুপস্থিতি আমার বুকে আজো বিষাদের আলপনা আঁকে৷ শুভ জন্মদিন স্যার। যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন।
তথ্য সুত্র: 'জীবন যে রকম' -আয়েশা ফয়েজ



শান্তনু চৌধুরী শান্তু

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গল্প বলার ধরন চমৎকার।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২২

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ১৩ নভেম্বর ও ১৯ জুলাই আসলেই মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে কি যেন এক হারানোর বেদনায়। মনের মাঝে এক জমাট বাধা কষ্ট এই দুইটি দিনে, অশ্রু হয়ে চোখের কোন দিয়ে বেয়ে পড়তে চায়।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৩

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: বুক ভর্তি কষ্ট । বুঝানো কঠিন । লিখে বুঝানো আরো কঠিন ।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৯

হোসেন শামীম বলেছেন: একেতো প্রিয় লেখকের জীবন থেকে নেওয়া কিছু কথা, আর তার সাথে মা হওয়ার আবেগ ব্যাপারটার মিশ্রনটা দারুন মজা দিয়েছে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৪

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ এই অনুভূতি আয়েশা ফয়েজেরই আমি কেবল কিছুটা আলপনা যোগ করেছি ।

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার কিছু অংশ তুলে এনেছেন !

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৬

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ চেষ্টার কমতি ছিলোনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.