নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাকরানের রাফখাতা

ছবিকর

Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic

ছবিকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টিগল্পঃ “মা মেঘের কান্নায় ভিজবে আজ?”

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

কয়েকদিন ধরে আমার ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালার কাঁচটার খুব মন খারাপ। বৃষ্টি আসি আসি করেও আসছিল না। শেষে আর থাকতে না পরে ধুলার আস্তরণের চাদর পরা কাঁচটা মন খারাপ করে আমায় বলল,

“বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। বৃষ্টি কি আর আসবে না?”



আমি বললাম, “মন খারাপ করিস না। এসে যাবে।”



আমাদের বিল্ডিঙয়ের কার্ণিশটা আজ বলল, “খুব ইচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজব।”

এদিকে আজ সকালে কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি, এমন সময় বারান্দাটা বলল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”



“বৃষ্টিতে ভিজব,” বলে উঠল আমার কালো জুতো গুলোও।



আমিতো পড়লাম মহা বিপাকে। আমি তো আর চাইলেই বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিতে যাবে না। বৃষ্টি ঝরানো যে মানুষের খাদ্য হজম করার চেয়েও জটিল- এ ব্যাপারটা এই মূর্খদের কে বুঝাবে!!



আমি তাদের বুঝিয়ে বললাম, “দ্যাখ, বৃষ্টি তো ইচ্ছে করলেই আর নামতে পারে না। বৃষ্টি হতে হলে অনেক কিছু হতে হয়।

প্রথমে, নদী-সমুদ্র সবকিছু পানি ঢেঁকুর দিয়ে বাতাসে দেয়।

বাতাস সেই বাষ্প উড়িয়ে নিয়ে যায় মেঘের কাছে।

মেঘ আবার একটু দুষ্টু প্রকৃতির। সে আবার বাষ্প জমিয়ে রাখে।”



পর্দাটা ফাঁক করে জানালাটা হঠাৎ প্রশ্ন করল, “কেন? মেঘ বাষ্প জমায় কেন??”



“আরে, বুঝলি না, আমরা যেমন ছোটবেলায় শুধু বড় হতে চাইতাম, ঠিক তেমনি মেঘও চায়, তারা বড় হোক। বাষ্প জমালে মেঘ আকারে বড় হয়।“



“কিন্তু বড় হলে কী হবে?”, এবার জিজ্ঞাসা করে উঠল এতক্ষণ চুপ করে থাকা আমার রুমের দেয়ালটা।



“আরে, বুঝলি না? বড় হলে মেঘরা যে তাদের সঙ্গীকে খুঁজে পাবে। এক ছেলে মেঘ খালি আকাশের এপার থেকে ওপারে ভেসে বেড়ায় মেয়ে মেঘের খোঁজে। মেয়ে মেঘকে দেয়ার জন্য বাষ্প জমায় সে।

সে সেই বাষ্প কোলে নিয়ে বেড়াতে থাকে, বেড়াতে থাকে, বেড়াতে থাকে।



একদিন হঠাৎ করে ঘুরতে ঘুরতে যখন তার পছন্দের মেয়ে মেঘকে খুঁজে পায়।

তখন ভয়ে ভয়ে কাছে যায় তার।

মেয়ে মেঘ রাজি হলে ভালবাসার আকর্ষণে মেয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরে।

শুরু হয় ভালবাসা। আদরের খুনসুটি।

আর সেই আদরে জন্ম নেয় তাদের সন্তান। সেটা হল বিজলি। মানব সন্তান যখন প্রথম ভূমিষ্ঠ হয়, তখন যেমন কান্না করে, ঠিক তেমনি, বিজলি বাতি জ্বালিয়ে প্রকৃতিকে জানান দেয়, “দেখ দেখ, আমি এসেছি।”



ঠিক তখনি মা মেঘের আনন্দের কান্না বের হয় চোখ দিয়ে।

সেই কান্না বুঝলি কী?

হুম, ঠিক ধরেছিস,

সেটাই বৃষ্টি।

তো এবার বুঝেছিস, আমি-তুই-তোরা চাইলেই বৃষ্টি হবে না।

বৃষ্টি হতে হলে মেঘে মেঘে ভালবাসার ঘর্ষণ লাগবে।”



একটানা কথা শেষ হল আমার।

আমার আবার সুযোগ পেলেই লেকচার দেয়ার বাজে অভ্যাস আছে। কথা শেষে অবাক হয়ে দেখলাম, আমার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। একনাগাড়ে শুনছিল সব।



সাদা এপ্রোন,

রুমের সবুজ দেয়ালটা,

লাল পর্দা,

জানলার কালো গ্রিল,

বসার ছোট্ট লাল টুলটা,

আমার বাদামি প্যান্ট- সবাই।



এমনকি আমার রুমের সবচেয়ে চঞ্চল নীল দেয়ালঘড়িটাও চুপ করে ছিল।

একটা টু শব্দও করেনি সে।



তাদের দেখে মায়া হল আমার। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মন খারাপ করা ধূসর আকাশটা দেখে নিলাম একবার। বললাম, “চিন্তা করিস না। আমার মন বলছে আজ বৃষ্টি আসবে।” একটু ঠাট্টার ছলে আরো বললাম, “আমি ডাক্তার মানুষ, মায়ের লেবারের সাইন-সিমটম দেখে ডেলিভারির সময় আঁচ করতে পারি। আজ মা মেঘের বাচ্চা হবে। দেখিস। আজ বৃষ্টিতে ভিজতে পারবি।”



শেষের কথা ওদের কানে যেতে না যেতেই, দুষ্টু জানালাটা আবার বল উঠল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”

সাথে বসে থাকা পর্দাটা বলল, “আমিও বৃষ্টিতে ভিজব।”

দেয়ালটার সর্দি লেগেছিল কয়েকদিন ধরে। অথচ সেও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”

তাদের কথা শুনে আমার এপ্রোন, প্যান্ট, জুতা সবাই এবার কোরাসে বলল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”



বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যখন যাচ্ছি, দেখি পথের ধারে দাঁড়ানো রিকশাটা বলল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”

ফুটপাথের কোণায় জমে থাকা সবুজ মস-ফার্ণের দল বলল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”

শেষমেশ পিচ ঢালা ধূসর রাস্তাটাও বলে উঠল, “বৃষ্টিতে ভিজব।”



আমি আর তাদের মানা করার কে?



আজ তো মেঘের কান্নায় ভেজারই দিন।

আজ তো বৃষ্টিরই দিন।

আজ বৃষ্টিতে ভেজার দিন।



পুনশ্চঃ এটি বানানো গল্প নয়। কার যদি বিশ্বাস না হয়, আগামীকাল আমার রুমে এসে দেখে যেবেন তাদের। দেখবেন, আমার রুমের দেয়াল, জানালা, এপ্রোন, জুতা, প্যান্ট সবাই প্রানের আশা মিটিয়ে আজ বৃষ্টিতে ভিজেছে।

আর তারা ভিজেছে বলেই আমাকেও আজ ভিজতে হয়েছে। তাদের দেখে দেখে রাখতে হয়েছে। বেশি ভিজলে তাদের আবার ঠান্ডা লেগে যাবে না? আমিও না দেখলে তাদের আর কে দেখে রাখবে বলুন? ওরা ছাড়া আমার আছেই বা আর কে!



০৫ ০৪ ১৫



ছবির কথাঃ ছবিটা তুলেছি বারান্দার গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে ক্যামেরা বের করে বৃষ্টির মাঝে ছাতা ধরে। এজন্য ফোকাসিংয়ে একটু সমস্যা হতে পারে।

ক্যামেরারও ভেজার সাধ হয়েছিল আজ। কিন্তু, আর যাই বলুন, সেটাকে তো আর ভেজানো যায়না, তাইনা?? :p





ফেসবুক লিঙ্কঃ Click This Link





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫২

আহমেদ জী এস বলেছেন: ছবিকর ,




বাহঃ , বেশ সুন্দর । রূপক দিয়ে বিজ্ঞানে ভেজা গল্প ।

গল্পটাও বোধহয় বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছিলো তাই ক'দিন থেকেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি ......

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০৮

এনামুল রেজা বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগলো খুব।

শুভকামনা।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৫

অতঃপর তন্ময় বলেছেন: খুব ভালো লাগলো

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হ্যাপ্পি বৃস্টি বিলাস।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:০৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: খুবই সুন্দর লেখনী। অনেক ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান ডাক্তার।

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সুন্দর লেখনী, প্রথম লাইনটাই পড়েই ভাললাগা শুরু করলো ----শুভকামনা রইল

৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫

সুমন কর বলেছেন: ভালো লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.