নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাকরানের রাফখাতা

ছবিকর

Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic

ছবিকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাওয়ার লঞ্চের সাদা ভাত, ভাজা ইলিশ আর ডালের চচ্চড়ি

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩

মাঝে মধ্যে আমার বড় অদ্ভুত সময়ে বড় অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস খাওয়ার গ্যাড়া উঠে। এই যেমন, সেদিন কালবৈশাখীর রাতে খুব ইচ্ছে করছিল, ঢাকা ভার্সিটির জগন্নাথ হলের খিচুড়ি-মুরগি-সয়াবিন ভুনা খেতে। কাল রাতে খুব ইচ্ছে উঠল পুরান ঢাকার বিউটি’র লাচ্ছির জন্য। আর এখন খুব ইচ্ছে হচ্ছে, মাওয়ার লঞ্চের ডাইংনিংয়ে শুকনো মরিচ আর ডালের চচ্চড়ি মাখিয়ে গরম গরম সাদা ভাত খেতে।



লঞ্চে করে সারারাত কাটিয়ে ঢাকা যাওয়ার উপর আমার আগে থেকেই অনীহা ছিল। আমার ভাল লাগত বিআরটিসি বাসে করে বরিশাল-কাওড়াকান্দা-মাওয়া-গুলিস্তান রুট। জার্নিটা আমার বেশ প্রিয় ছিল। বরিশাল থেকে ১৫০ টাকায় কাওড়াকান্দি, সেখান থেকে লঞ্চে করে পদ্মা পার হতে লাগত ৩০টাকা। এরপর ওপারে মাওয়া থেকে আবার বাস ধরতাম ঢাকার মাত্র ৭০টাকা দিয়ে। সব মিলিয়ে ভাগ্য ভালো থাকলে ২৫০-৩০০টাকার মধ্যে পাঁচ- সাড়ে পাঁচ ঘন্টায় পৌঁছে যেতাম ঢাকা।



এই রুটটা পছন্দ করার পিছনে একটাই কারণ ছিল। পদ্মা তার নাম। বর্ষাকালে বাতাসের তোড়ে পদ্মা হয়ে উঠত প্রমত্ত হয়ে। চুলোর উপর চায়ের হাড়িতে পানি বসালে কিছুক্ষণ পর যেমন দমকে দমকে পানি উপচিয়ে পড়ে, বর্ষার দুপুরে পদ্মার বুকেও সেই একই ঘটনা ঘটে। ঢেউগুলোর তোড়ে নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো লঞ্চগুলোও তখন ডিঙ্গি নৌকার মত দোল খেতে থাকে। কাঁপতাম আমরা। সেই ভয়ের এক রোমাঞ্চ ছিল। পদ্মার পাগলপারা বাতাস ক্ষিদে এনে দিত পেটে। লঞ্চের নিচ তলায় একটা ছোট্ট খাবারের দোকান ছিল। সেখানে শুধু পাওয়া যেত ভাত, ডাল আর ইলিশ মাছ। গন্ধ ছড়াত পুরো লঞ্চ জুড়ে। সেই গন্ধে ক্ষিদে আরো দ্বিগুণ যেত বেড়ে। পাশ থেকেই ধরে আনা ইলিশের টুকরো গুলো মশলা মাখিয়ে রাখা থাকত বড় থালায়। মাথা, পেটি, লেজ সব সাজানো থাকত একের পর এক। নিজের ইচ্ছে মত টুকরো বেছে দিলে সেটা সাথে সাথে ভেজে দিত দোকানদার। ভাজার পর তেলে জবজব করত টুকরোগুলো। সাথে আবার একটু তেল দিতে বললে প্লেটে উঠিয়ে দিত চুলার উপরে বসানো তাওয়া থেকে।



তবে, মাছবিমুখ আমার কেন জানি বেশি ভাল লাগত ডালের চচ্চড়িটা। ভাতের সাথে কেন জানি বেশ চচ্চড়িটা মিলে যেত। সাথে আবার তেলে ভেজা দুটা শুকনো লাল মরিচ। বেশ তৃপ্তি করে খেতাম। এত মজার খাবার আমি জীবনে কম খেয়েছি, বিশ্বাস করেন।



খাওয়া শেষে খবরের কাগজের টুকরায় হাত মুছতে মুছতে শুকনো মরিচের লাল ঝাল সইতে না পেরে আমি যখন মুখ দিয়ে দমকে দমকে শ্বাস নিতাম, ঠিক তখনি লঞ্চে দশ টাকা প্যাকেট মূল্যের সাদা সন্দেশের মত টফি বেচত এক ভদ্রলোক। ভাত-ডাল-মাছের পর আমি প্রতিবার ওই প্যাকেট কিনতাম। কাছাকাছি এলাকায় কোন এক বাড়িতে বানাত এটা। অনেক বেশি মিষ্টি ছিল। এত মিষ্টি যে গলা জ্বলা শুরু করত। দশ টাকার প্যাকেটে কমসে কম বিশটা টফি দিত। কতবার যাওয়ার পথে বাসার কাজের খালার পিচ্চিটার জন্য প্ল্যান করে কিনে নিজেই যেতে যেতে অর্ধেক প্যাকেট শেষ করে দিয়েছি ঠিক নাই।



গত বছর মাওয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় একসাথে প্রায় কয়েকশ’ মানুষ মারা যাওয়ার পর, আম্মা নিষেধ করলেন অই রুট দিয়ে যেতে। এরপরেও একবার গিয়েছিলাম। সেদিন কী হয়েছিল, তা আর আজ না বলি। এরপর আম্মার বারংবার নিষেধের কারণে এই লঞ্চগুলোতে আর উঠা হয়নি। মিস করি সেই ভ্রমণটা। মিস করি সেই ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত, হলুদ শুকনা ডাল, আর লাল মরিচ। মিস করি, সেই খাবারের লোভে বর্ষার পদ্মার হুমকিকে উপেক্ষা করে লঞ্চে ওঠা। মিস করি, এসব তুচ্ছ সাধের জন্য জীবন বাজি রাখা।



যে কয়দিন লঞ্চে করে মাওয়া পার হয়েছি কোনদিন আমি এই মেন্যু বাদ দেইনি। এটা খাওয়ার জন্য আমি সকাল থেকে উপোস থাকতাম বিকাল পর্যন্ত। কখনো যদি সুযোগ হয়, জীবন বাজি রেখে পদ্মার বাতাস খেতে খেতে লঞ্চে দুলুনি খেতে খেতে মাওয়ার লঞ্চের সেই ইলিশ-ডালের চচ্চড়ি-ভাত খেয়ে দেখবেন। এ পাগলকরা স্বাদ বেইলি রোড, বনানী বা ধানমন্ডির কোন রেস্টুরেন্টেও পাবেন না। নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এসির বাতাসের সাথে যেমন পদ্মার হাওয়ার তুলনা হয়না, এটারও তেমনি। ভাল লাগবে, কথা দিচ্ছি...



লঞ্চডুবির ভয় পাচ্ছেন? স্বর্গীয় স্বাদের জন্য জীবনটা একটু বাজি রাখলেনই বা।

বয়স তো মাত্র তেইশ, এখন বাজি না রাখলে কখন?



মাঝে মাঝে এসব তুচ্ছ জিনিসের জন্য জীবনখানা স্বর্গীয় মনে হয়।

মাঝে মাঝে এসব তুচ্ছ সাধের জন্য জীবন বাজি রাখলেই জীবনখানা স্বর্গীয় মনে হয়।



ফেসবুকে ঠিকানা: Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

অবিবাহিত ছেলে বলেছেন: আমরা অবশ্য ফেরিতেই যাই । বিশেষত জোছনা রাতে মাওয়া থেকে ফেরিতে উঠে ওপার চর জানাজাতে নামতাম । ওপারের পাচ্চর পর্যন্ত ভ্যানে করে যেতাম । ফুটপাতের দোকান চা সিগারেট খেয়ে মাঝরাতে আবার ফেরিতে উঠে সকালে মাওয়া থেকে ঢাকার বাস ধরতাম । এবারের ১৪ ফেব্রুয়ারি সবাই বউ নিয়ে গিয়েছিলাম অবশ্য দিনের বেলা । ব্রীজটা হয়ে গেলে পদ্মার এই এডভেন্জার ও অকৃত্রিম সৌন্দয্য খুব মিছ করব ।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: পদ্মা-মেঘনা দুই নদীতেই লঞ্চে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে। অসাধারন নদী, প্রকৃতি, আশেপাশের সবকিছু। আপনার লেখা পরে আবার পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। ভালো লাগলো লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.