নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ নতুন দিনই নতুন চাহিদা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়॥ ”

শাহরিয়ার বাপন

“ নতুন দিনই নতুন চাহিদা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়॥ ”

শাহরিয়ার বাপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধন্যবাদ ঈশ্বরের পুত্র!!!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫১



আজ একটা জীবনের গল্প বলবো। রবি ঠাকুর বলেছিলেন জীবনটা একটা পাঁচমিশালি রকমের জোড়াতালা ,প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক, কাল্পনিক এবং বাস্তবিক, সত্য-মিথ্যায় মিশাইয়া মানুষের জীবন একরকম করিয়া কাটিয়া যায়। যার খানিকটা বিধাতা গড়েন, খানিকটা আপনি গড়ে, খানিকটা পাঁচজনে গড়িয়া দেয়। আমি জানি না রবি ঠাকুর কোন জীবনের কথা বলেছিলেন। আমি যে জীবন দেখেছি, সে জীবন এদের নিজের গড়া নই।এদের জীবন গড়ে সমাজ। যারা এখানকার ঈশ্বর। আজ ঈশ্বরের গল্প নয়। আজ বলবো ঈশ্বরের পুত্রের পল্প।
প্রথম ৬২৪-৬২৬ সালের মধ্য মগ জলদস্যুদের মরদেহ ছাপ করার জন্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিলো তাঁদের। আরেক দফায় ১৯৬৪ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কাজের প্রলোভনে আবারো তাদের আগমন। সভ্যতার রঙ্গিন আলোতেও তারা সব সময় ধুসর। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বংশ পরম্পরায় মিউনিসিপ্যালিটির পাতাল নর্দমায় নেমে সাফ করেছেন শতাব্দীর সঞ্চিত জঞ্জাল। সভ্য সমাজে এরা সুইপার আর শিক্ষিত সমাজে হরিজন বলে পরিচিত। হরিজন কথাটির উৎপত্তির সাথেও মিশে আছে প্রহসনের গল্প। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা গান্ধী সন্মান করে এদের নাম দিয়েছিলেন,“হরি” অর্থাৎ ঈশ্বরে পুত্র। মহাত্মা গান্ধী হয়তো এ সমাজে তাদেরকে সন্মানের বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সমাজ ও সামাজিকতার স্বীকৃতি দেননি, মূল সমাজের সঙ্গে যুক্ত করেননি। ক্ষমতা যখন যার হাতে থাকে, তখন সেই শাসক জাত নিজেদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য, বিভাজন টিকিয়ে রাখার জন্য একটি শাসক শ্রেণী ঠিকই তৈরি করে দিয়ে গেছেন। মহাত্মা গান্ধীর হরিজন তার একটা প্রমাণ মাত্র । ভারতের মাটিতে আজো দেবদাসীদের যৌনদাসি বানানোর প্রচলন আছে। এসব দেবদাসীরা অধিকাংশই হরিজন সম্প্রদায়ের থেকে আসা। ব্রাহ্মণরা তাদের দিনের পর দিন তাদের ভোগ করে। তাতে অবশ্য ব্রাহ্মণদের জাত যায় না, জাত যায় হরিজনদের হাতের জল পান করলে, অন্ন গ্রহণ করলে। ছোট বেলায় দেখেছি বাসার বাথরুম পরিষ্কার করতে আসা লোকটাকে মা অথবা চাচিমা কলার পাতাতে খেতে দিত। একবার মাকে জিজ্ঞসা করলাম, মা ওনারে কলা পাতায় খেতে দিলে কেন? লোকটা কি মনে করবে? উত্তরে মা ঠিক কি বলেছিল মনে নেই, তবে উত্তরটা অনেকটা এমন ছিল......ওরা মদ,গাঁজা খাই,ওদের সাথে খাইলে নামাজ হয় নাকি!!!! কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, “হরিজনরা এদেশেরই মানুষ, তারা এদেশের ভোটার, তাদের বৈষম্যর ব্যাপারে রাষ্ট্র সচেতন”। আসলেই কি তাই? বারবার পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে প্রান্তিক এই জনপদের কথা। আসলেই কি তারা ভালো আছে?

কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম যশোরের মেথর পট্রিতে। এখানে ৫০০০-৫৫০০ লোকের বসবাস। প্রাকৃতিক নিয়মে এখানেও সকালে সূর্য ওঠে,আলোকিত করে তোলে চোখের রশ্মি । কিন্তু এখানকার প্রতেকের সকাল শুরু হয়, সূর্য উঠার আগেই সভ্য সমাজের কাছে একেবারেই অকল্পনীয় একটি জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার লড়ায়ে। এখান কার প্রতিটা রুমে গড়ে ৭-৮ জনের বসবাস। ডাস্টবিনের পচাবাসি খাবারই এখানকার সকালের নাস্তা। এখানে নেই কোন স্যানিটেশন। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে এদের জন্য আবার স্যানিটেশন!!! নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানকার বাচ্চারা কেউ যানে না, ভালোবাসা কি? কেউ জানে না শেখ মুজিব কে?,মেজর জিয়া কে? তারা শুধু এটাই জানে, “তারা যে বেঁচে আছে তার নামই জীবন”। এখানে বসবাস করে পাটনী, কায়পুত্র, কৈবর্ত, কলু, কোল, কাহার, ক্ষৌরকার, নিকারী, পাত্র, বাউলিয়া, ভগবানীয়া, মানতা, মালো, মৌয়াল, মাহাতো, রজদাস প্রভৃতি সম্প্রদায়। এরা আসলেই ঈশ্বরের পুত্রই। এতো সম্প্রদায় একসঙ্গে পৃথিবীর মাঝে আর এক পৃথিবীতে বসাবাস করছে মিলেমিশে। কিন্তু নেই কনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নেই ধর্মের নামে রক্তপাত। ফেরার পথে কথা হলো একই যরে বসবাস করা তিন প্রজন্মের ঈশ্বরের পুত্র-পুত্রবধু, নাতি-পুতি,আণ্ডা-বাচ্চাদের সাথে। বেশ অনেকক্ষণ গল্প হলো তাঁদের সাথে। কথাপ্রসঙ্গে একসময় পুলীন চন্দ্রের নাত বউ শ্রীমতি মিনো রানীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কতো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে? উত্তরে শ্রীমতি মিনো রানী এক লজ্জার হাসি চোখে নিয়ে আচলে মুখ ঢাকল। আমি একটু সংকোচ বোধ করলাম!!!
কিন্তু না এ হাসিতো আমি আমার ছোট বোনের মুখে দেখেছি, অচেনা লোকের সাথে কথা বলার সময়। একসময় দেখলাম আমাদের জন্য খাবারের রাজকীয় আয়োজন ... চা- বিস্কুট সঙ্গে একটা খুব বেশি মজে যাওয়া কলা। যেমনটা আমি আমার মাকে দেখেছি অথিতিদের আপ্যায়ন করতে। সন্ধ্যা হলো ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলল,উলু ধ্বনি হলো, পুলীন চন্দ্র বাবুর বউ শ্রীমতি পলি রানী কোলের মাঝে ছোট্ট এক ঠাকুরের প্রতিমাকে পূজা শুরু করলেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম পাশের বাড়ির আন্টিও যে ঠাকুরেরই পূজা করেন ঐ ভদ্রমহিলাও একই ঠাকুরের পূজা করছেন। কথা হলো পুলিন বাবুর ছেলে যতীন চন্দ্র বাবুর সাথে, তিনি একগাল হাসি নিয়ে বললেন, তাদেরকে সমাজে কনো কাজ দেওয়া হয়না , এমনকি তাদেরকে দোকানের কাপে চা পর্যন্ত খেতে দেয়া হয়না। এমন আরো কতো কি!!! অথচ এখানকার মেয়েরা সভ্য সমাজের কাছে রাতের রজনীগন্ধা!!!
বেশ কিছুটা রাত হলো ফিরে আসার সময় পুলীন চন্দ্র বাবুর হাতে হাত রেখে বললাম, “আপনারা ভালো থাকবেন, আপনারা নিশ্চয় একদিন প্রজ্বলিত হবেন”। কিছুই বললেন না পুলীন চন্দ্র বাবু । আমি দেখলাম পুলীন চন্দ্র বাবু ঘরের ছেঁড়া ছাঁদ দিয়ে আকাশের পানে চেয়ে রয়েছেন । আচ্ছা পুলিন চন্দ্র বাবু ঈশ্বরের কাছে কি কিছু নালিশ করছে,নাকি সে কিছু জানতে চাই???
সে কি জানতে চাই তারা কার? তারা কি ঈশ্বরের নাকি সমাজের নাকি কেউ তাদের না।
ফেরার পথে নিজের ভিতর একটা অনুভূতি খেলা করছিলো , নিজের অজান্তেই একবার বলে ফেললাম, “শরীরে অনুভূতিরা যেখানে খেলা করে তাঁর নাম যদি হৃদয় হয়। তবে কসম সেই হৃদয় নামের মাংস পিণ্ডের, আবার যদি জন্ম নিই তবে কোন মেথরের ঘরে জন্ম নিব”।



মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৩

হাফিজ হুসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ লেখককে। একটা ভালো পোষ্ট দেয়ার জন্য।বে আমার মনে হয় তাদের এই অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ার ব্যাপারে তাদেরও কিছু দায় আছে। তারা তো চাইলেই মাটির কাজ করতে পারে। চাইলেই তারা ঠেলা গাড়ি ইত্যাদি চালাতে পারে। এতে তো তারা কিছুটা হলেও এই অবস্থার উন্নতি করতে পারে। আমি বলতে চাইছি তারা তো চাইলেই অন্য কাজ করতে পারে। যদিও বাস্তবতা আমি জানি না।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৪

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #হাফিজ হুসাইন

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: “আপনারা ভালো থাকবেন, আপনারা নিশ্চয় একদিন প্রজ্বলিত হবেন”। কিছুই বললেন না পুলীন চন্দ্র বাবু । আমি দেখলাম পুলীন চন্দ্র বাবু ঘরের ছেঁড়া ছাঁদ দিয়ে আকাশের পানে চেয়ে রয়েছেন । আচ্ছা পুলিন চন্দ্র বাবু ঈশ্বরের কাছে কি কিছু নালিশ করছে,নাকি সে কিছু জানতে চাই???

হৃদয়কে ছূঁয়ে গেল!??/

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৫

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #বিদ্রোহী ভৃগু

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্ট ইস্টিকি করার মতোন।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৬

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #রাজীব নুর

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৪

আবু তালেব শেখ বলেছেন: আপনার মত সুন্দর ভাবনা যদি মিয়ানমারের মগ দস্যুদের থাকতো
তাহলে রোহিংগারা শান্তিতে বসবাস করতো বার্মায়।
সুন্দর পোস্ট তবে আপনিকি পরজন্মে বিশ্বাসী? ???

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৫৮

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #আবু তালেব শেখ

৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯

শকুন দৃিষ্ট বলেছেন: “শরীরে অনুভূতিরা যেখানে খেলা করে তাঁর নাম যদি হৃদয় হয়। তবে কসম সেই হৃদয় নামের মাংস পিণ্ডের, আবার যদি জন্ম নিই তবে কোন মেথরের ঘরে জন্ম নিব” তবে তাই যেনো হয় গো ভগবান! তাই যেনো হয়!!!

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৫৯

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: তবে তাই যেনো হয় #শকুন দৃিষ্ট

৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কবি নীরব থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই...হয়তো কোন একদিন ভালো কোন সরকার এসে এদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে...

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০০

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: .......তবে তাই যেনো হয় #বিচার মানি তালগাছ আমার

৭| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: জাতপাতের খেলায় মানুষ মানুষ হয় না মন ধারন করে রাখে বৈষম্য
ভালো লেখা শুভেচ্ছা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০২

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #রোকসানা লেইস

৮| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৫

জাহিদ অনিক বলেছেন:

ঈশ্বর পাশা খেলায় ব্যস্ত আছেন।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০১

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #জাহিদ অনিক

৯| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০৭

শৈবাল আহম্মেদ বলেছেন: ধন্যবাদ, এরা ভালবাসা বোঝে এরা মুজিব সহ অনেককে চেনে,এরাও ভালমন্দ মিলিয়ে নিজেদের কাছে একরকম ভাল আছে। এদের মধ্যেও ভাল-মন্দ,সভ্য-অসভ্য আছে। এবং এরাও ইচ্ছা করলে বা প্রয়জন মনে করলে জীবনটাকে পাল্টাতে পারে। সেটা তাদের জ্ঞানের বা মনের ব্যপার। (যেমন আমাদের একাক জনের ধারনাগুলো একাক রকম।) এটাতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থার মত নির্মম নয় যে আপনাকে আবার মেথরের ঘরে জ্বন্ম নিয়ে পৃথিবীতে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন আনার মাঝে কোন স্বার্থকতা থাকবে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৫৯

শাহরিয়ার বাপন বলেছেন: ধন্যবাদ #শৈবাল আহম্মেদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.