নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বপ্ন দেখি সত্যের, সুন্দরের। যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দেয় আমি সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। অপেক্ষা করতে চাই শেষ পর্যন্ত। তাইতো আছি পরিশেষের অপেক্ষা্য...

পরিশেষের অপেক্ষায়

আমি একজন মুসলমান কিন্তু সবধর্মের মানুষকেই ভালবাসি কারণ আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টিl আমি আমার দেশ ও দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি।

পরিশেষের অপেক্ষায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বিদ্রোহী সাকিবনামা

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২২

সাকিব আল হাসান, শুধুই একটি নাম নয় কিংবা হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাসের সার্থক মহাকাব্যের কোনো চরিত্র নন। বরং সাকিব আল হাসান নিজেই হচ্ছেন একটি মহাকাব্য।
.
যে মহাকাব্যের স্বাদ বাংলাদেশ নিতে পারলেও প্রতিপক্ষ দল বুঝতে পারা তো দূরে থাক, পড়ার স্বাদই উপভোগ করতে পারেনি। উল্টো ছলনাময়ী সেই কাব্যের মারপ্যাঁচে পড়ে খেই হারিয়েছে বারবার।
.
রাজদরবারে রাজার সামনে প্রজা যেমন সুবোধ বালকের মত চুপটি করে বসে থাকে, ক্রিকেট মাঠের ২২ গজের অই রাজত্বেও সাকিবের প্রতিপক্ষ তেমনিভাবে তার আধিপত্য মেনে নিয়েছে।
.
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে সদ্য কৈশোর শেষ করা এক টগবগে যুবকের পরিচয় ঘটেছিল বিশ্বক্রিকেটে। অভিষেক ম্যাচেই নিজের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিলেন যে, হারিয়ে যাবার জন্য আসেননি তিনি। প্রথমে বল হাতে ১ উইকেট এরপর ৩০* রান করে দলকে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন।
.
কথায় আছে, বড় বড় তারকাদের উত্থান নাকি বিশ্বমঞ্চেই হয়ে থাকে। দলের নবীনতম সদস্য হলেও ডাক পেলেন বিশ্বকাপ দলে, হয়তবা ক্রিকেট বিধাতা তার নিজের হাতেই সাকিব নামের ছেলেটির ভাগ্য লিখতে চান বলেই...
.
সুযোগটা লুফে নিতে ভূল করলেন না সাকিব, ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরির করে বিশ্বমঞ্চেই সদর্পে ঘোষনা বিশ্বকে শাসন করতেই এসেছেন তিনি। সাথে তামিম-মুশির দুই অর্ধশতক তারও আগে মাশরাফি-রাজ্জাকের বোলিং তোপ, ফলাফল প্রথম রাউন্ড থেকেই ইন্ডিয়া নকড আউট...
.
সেই বিশ্বকাপেরই দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশরাফুলে অনবদ্য ব্যাটিংয়ে গোটা বাংলাদেশ যখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর, তখন বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়ে সাকিবই কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিনত করে গোটা জাতিকে আনন্দের জোয়ারে ভাসার সুযোগ করে দিলেন...
.
ঠিক তখন থেকেই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাফল্যে ডানা মেলতে শুরু করেছিল। এরই ফাকে নিজের টেস্ট অভিষেকও করে ফেলেছেন সাকিব। অলরাউন্ডার হলেও তখন মূলত ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতেন সাকিব।
.
আসলের হিসাব নাকি বাকি রাখতে নেই, রাখলেন না সাকিবও। কিউইদের বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামলেন স্পেশাল বোলার হিসেবে, আর মাঠ ছাড়লেন টাইগারদের পক্ষে সেরা ৭/৩৬ বোলিং ফিগারের রেকর্ডটা নিজের করে...
.
সেই থেকে শুরু বাহাতের ক্যালমা.. পেয়ে গেলেন ওয়ার্ল্ডের সেরা ফিঙ্গার স্পিনারের তকমা। এক সাকিবকে সামলাতেই প্রতিপক্ষের অবস্থা। বোলিংয়ের ধান্ধা থাকলেও ব্যাটিংয়ে কিন্তু খারাপ করছিলেন না একেবারেই। কি ব্যাটিং আর কি বোলিং দুই জায়গাতেই সাকিব তখন দলের নির্ভরতার মূর্ত প্রতীক।
.
২০০৯ এর শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার, জিততে হবে লংকানদের সাথে। দায়িত্ব কাধে নিলেন সাকিব, ৯২ রানে নটআউট থেকে দলকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে..
.
সিরিজটা শেষ হওয়ার পরেই প্রথমবারের মত প্রথম হওয়ার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ওয়াটসনকে টপকে গিয়ে সাকিব আল হাসান হলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার! আর নিয়মিত ভালো বোলিংয়ের কারনে সেই বছরেই নভেম্বরে ভেট্টোরীকে হটিয়ে হলেন ওডিআই বোলিংয়ের নাম্বার ওয়ান..
.
ওয়ানডে নয়, ক্রিকেটারের মানদন্ড টেস্ট..
.
হয়ত সেকথা জানতেন সাকিবও, তাইতো একের পর এক দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে চলেছিলেন প্রথম হওয়ার দিকেই। ২০১১ তে পাকিস্তানে সিরিজের পরে পেয়ে গেলেন সেই খেতাবটাও! হ্যা ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টের নাম্বার ওয়ান প্লেয়ারের পতাকাটা তখন লাল-সবুজেরই...
.
বাদ রইল কি? টি-টুয়েন্টি..
.
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি।
.
ইতিহাস দেখলো এমন এক কীর্তি যা ক্রিকেটে এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি। বিশ্ব সেবারই জানল যে সেরা অলরাউন্ডারের প্রশ্নে ওয়ানডে, টেস্ট না টুয়েন্টি জিজ্ঞাসা করার দরকার হয়না..
.
হ্যা... একই সাথে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টুয়েন্টি তিন ফরম্যাটেরই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যে একজনই। তিনি আমাদের লাল-সবুজের প্রতিনিধি দ্যা ওয়ান ম্যান আর্মি..তিনি সাকিব আল হাসান!
.
ক্রিকেট সাইটের র্যাংকিং তালিকায় তিন ফরম্যাটেই যখন দেখি সাকিব আল হাসানের পাশেই লাল-সবুজের অই পতাকা যেটা বছর চল্লিশেক আগে ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে কিনছি তখন গর্ব আর শ্রদ্ধায় বুকটা ভইরা যায়...
.
বাংলাদেশ ভারতের তীব্র খারাপ সম্পর্কের মাঝেও যখন দেখি ইডেন গার্ডেনে আইপিএলের ফাইনালে আশি-নব্বই হাজার ভারতীয় শুধু এক নামেই - সাকিব! সাকিব! সাকিব! চিল্লাচ্ছে সেই সময়ে মনের অবস্থা লেখার ক্ষমতা শুধুমাত্র জীবনানন্দ, রবিঠাকুর কিংবা নজরুলের মত কিংবদন্তী সাহিত্যিকদেরই আছে...
.
বিশ্ব ক্রিকেটের শাসন করা অজি-ব্রিটিশদের যখন শুনি এক বাংলার ছেলের প্রশংসায় বাক্যব্যায় করছে তখন ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি আর নিজেরেই বলি ‘সময় এখনো আসে নাইরে পাগলা, সময় আরও বাকি রইছে’...
.
আজীবন বাংলাদেশকে হেলায় ফেলে আসা পাকিস্তানের ওপেনিং বোলার ওহাব রিয়াজের কটুক্তির বিপরীতে সাকিব্বাই যখন ব্যাট উচিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেয় ঠিক তারপরের দিনই পত্রিকায় আসে রমিজ রাজার কান্নার কথা...
.
বাঘের গর্জনের সামনে পইড়া একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ যখন ‘ছাইড়্যা দে মা, কাইন্দা বাঁচি‘ কইয়্যা চিল্লায় ঠিক তার বিপরীত পাশেই দেশের টপ লিস্টেড শান্তির ছবি ‘মাশরাফির বুকে সাকিব্বাই’ চোখের সামনে ভাইস্যা উঠে...
.
আনকোরা মোস্তাফিজে ক্যাপ্টেন কুল প্রজাতি যখন হট হয়ে ধাক্কা মারে.. ঠিক তার পরের ওভারেই যেন প্রতিশোধ নিতেই সাকিব্বাই অই ধোনিরে প্যাভিলনের ঠিকানা ধরাইয়া দেয়...
.
যখন দেখি আজীবন চোখ রাঙ্গানী দেওয়া ইন্ডিয়ান'দের ক্যাপ্টেনরে আউট কইরা চোখের সামনে গিয়া সাকিব্বাই চোখ রাঙ্গানী দেয় আর সাকিবের সেই হুঙ্কারে ধোনি মাথা নিচা কইরা মাঠ ছাড়ে..
.
তখন হাত দুইটা মুঠ কইরা গায়ের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহিত হওয়ার আগেই, নিজের পরনে থাকা শার্টের কালারটা কয়েক হাত উচা কইরা নিজেই নিজেরে কই..
.
“তোর সময় আইসা পড়ছে রে পাগলা”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.