নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন মুসলমান কিন্তু সবধর্মের মানুষকেই ভালবাসি কারণ আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টিl আমি আমার দেশ ও দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) থেকে রসায়নে অনার্স সমাপ্ত করা অত্যন্ত রসিক একটি ছেলে ছিল, সে ছিল একাত্তরের একজন দুর্ধর্ষ ক্র্যাক যোদ্ধা।
ছোটবেলায় প্রচন্ড ডানপিটে দুরন্ত স্বভাবের ছেলেটি ছিল অসম্ভব ক্রিকেট পাগল। ক্রিকেটইই তার ধ্যানজ্ঞান ছিল। সারাদিন শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট খেলতেন। ‘আজাদ বয়েজ ক্লাব’ এর হয়ে খেলা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন সেই সময়ে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান...
তখন ওয়ানডে ম্যাচ না থাকলেও হতো ৪০-৪৫ ওভারের করে ক্রিকেটে ম্যাচ। আর সেই ক্রিকেটে তুফান নামে পরিচিত ছিল ছেলেটি। নাম হচ্ছে জুয়েল, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল।
ক্রিকেট বলটা যে পেটানোর জন্যই বানানো হয়েছিল সেটা সেই ৬৮-৬৯ এর যুগে করাচীর মাঠেই বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিল জুয়েল। উইকেটের চারপাশে বোলারদের বেড়ধক পিটিয়ে বোলারদের অবস্থা আজকের টুয়েন্টির মত ছাড়খার করে দিত ছেলেটা..
দুর্দান্ত স্লগ সুইপ করতে পারত জুয়েল, একবার তার খেলা দেখে এক পাকিস্তানী কোচ বলছিল, “এই ছেলে এইখানে কি করতেছে? ওর তো ন্যাশনাল টিমে চান্স পাওয়ার কথা!” কিন্তু পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান হলেও পাকিস্তান দলে চান্স পেতনা কারন সে ছিল বাঙ্গালি, আর বাঙ্গালী মানেই পাকিস্তানের জন্ম চোখের বিষ...
.
একাত্তরের ২৫ শে মার্চ কালরাতে হানাদারদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মেলাঘরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন জুয়েল। সাথে পেয়ে যান আরও কিছু দুর্দান্ত সাহসী ক্র্যাক হ্যাডেড বন্ধুদেরকে
একপাশে কিংবদন্তি খালেদ মোশাররফ আরেকদিকে মেজর হায়দার, দুই মাস্টারমাইন্ডের কাছে দুইমাস যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্যন্য গেরিলাদের সাথে চলে আসেন ঢাকায়।
জুয়েল, আজাদ, বদি, রুমির মতো আরও কয়েকজন বঙ্গশার্দুলকে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ‘ক্র্যাক প্লাটুনের’। যারা পরের সময়টাতে ঢাকা শহরে যুদ্ধে অভিনব কৌশলে আক্রমন করে পুরো শহরে পাকিস্তানীদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল
পাকিদের ঘাটি হিসেবে পুরো ঢাকা শহরের নিয়ন্ত্রন নেওয়ায় এটিই ছিল ওদের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। আর এই ঢাকাতেই একের পর এক দুঃসাহসী অপারেশনের মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে জানিয়ে দিয়েছিল বাঙ্গালী গৃহযুদ্ধ নয় বাঙালী মুক্তিযুদ্ধ করছিল...
এতোদিনে ঢাকা ইন্টারকনে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে, চেকপোস্ট অপারেশন, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে, ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের মত অসংখ্য শিহরণ জাগানো গেরিলা হামলা সফলভাবে শেষ করে..
এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ অপারেশনের সময় পাকিদের গুলিতে জুয়েলের ডান হাতের তিনটা আঙ্গুল গুরুতর আঘাত পায়, হালকা ব্যান্ডেজের পর ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডাঃ আজিজুর রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ সুলতানার কাছে। দুজনে মিলে যখন অপারেশন করছিলেন তখন জুয়েল মিনতি করে বলেছিল,
"ডাক্তার সাহেব.. দেশ স্বাধীন হইলে আমি ন্যাশনাল টিমের হয়ে ওপেনিংয়ে নামুম..ক্যাপ্টেন হমু.. আঙ্গুল তিনটা রাইখেন.. স্যার প্লিজ"
হুম.. তারমত কিছু ক্র্যাক হেডেড'দের কারনেই তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক ও প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী মিলিটারিদের ইন্দুরের বাচ্চা বানাইয়া দেশ স্বাধীন হইছিল..
কিন্তু রুমি,আজাদ,বদি আর জুয়েলদের মত আরও অসংখ্য ক্র্যাক হেডেড পিপলরা এই স্বাধীন দেশটারে দেইখা যাইতে পারেনাইই..
৩০ আগস্ট দিবাগত রাতে পাকি শুয়োরছানাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় এদেশেরই কিছু কুখ্যাত রাজাকার বাচ্চারা। বড় মগবাজারে আজাদের বাসায় পাকবাহিনী হানা দিয়ে জুয়েল, আজাদ, কাজী কামাল ও আজাদের দুই ছোটভাইকে আটক করে ফেলে। জুয়েলের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা দেখে তার ভাঙ্গা আঙ্গুলগুলো শক্ত করে মুচড়ে ধরে হাতিয়ার কোথায় জানতে চায় পাকিরা, আর ভাঙ্গা আঙ্গুলের ব্যাথায় জুয়েলের আর্তচিতকারে ভারী হয়ে উঠে বাংলার আকাশ...
সেই রাতেই পাকিস্তানীদের হাতে আরও ধরা পড়েছিল রুমি, বদি, আলতাফ মাহমুদসহ নাম না জানা আরও অনেকে, বিশেষ করে ক্র্যাক প্লাটুনকে ধ্বংস করার নেশায় মেতেছিল মারখোরেরা। সেদিনের সেই রাতের পর তাদের আর কাউকেই আর খুজে পাওয়া যায়নি...
না তারা মারা যায়নি, তারা মরতে পারেনা, তাদের মারা যায়না। তারা ফিরে আসে...তারা ফিরে আসে বারবার, হাজার বার...
...জুয়েলরা ফিরে আসে কখনো তামিমের ব্যাটে ডাউন দ্যা উইকেটে, কখনোবা সৌম্যের ব্যাটে ভর করে উমর গুলদের সীমানা ছাড়া করে, কখনো আসে মুশফিকের সেই স্লগ সুইপে, কখনো আসে উইকেটের পিছনে মুশির বকবকানি হয়ে, কখনো আসে মাশরাফি হয়ে কিংবা সাকিব আল হাসানের বজ্র হুংকারে...
কিন্তু এরপরেও সজ্ঞানে সবকিছু জানার পরেও প্রজন্মের কিছু "খেলার সাথে রাজনীতি না মিশানো" শুয়োরের চেয়েও অধম মারখোর প্রজাতির রামছাগলের মত ইনিয়ে বিনিয়ে পাকিস্তানের সাপোর্ট জায়েজ করার হাজার চেষ্টা করে...
ওরা ভূলে যায় আমাদের রুমি,মোস্তাক,আজাদ জুয়েলদের কথা। মিরপুরের হোম গ্রাউন্ডে গিয়ে শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে নিজের জন্মইতিহাসকে পায়ের নিচে ঠেলে দিয়ে চোখ-মুখে চাদ তারার পতাকা অঙ্কন করে চিতকার করে উঠে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে...
জুয়েলের ভাঙা আঙুলে দেশের হয়ে ওপেনিংয়ে খেলার আকুতি মিনতির কথা শুনলে তখন কেবলই আফসোস হয়...
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ !!!!
একমত:
জুয়েলের ভাঙা আঙুলে দেশের হয়ে ওপেনিংয়ে খেলার আকুতি মিনতির কথা শুনলে তখন কেবলই আফসোস হয়...
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৯
মনুমনু বলেছেন: "....।ওরা ভূলে যায় আমাদের রুমি,মোস্তাক,আজাদ জুয়েলদের কথা। মিরপুরের হোম গ্রাউন্ডে গিয়ে শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে নিজের জন্মইতিহাসকে পায়ের নিচে ঠেলে দিয়ে চোখ-মুখে চাদ তারার পতাকা অঙ্কন করে চিতকার করে উঠে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে........."
কারণ, গোপালীপূচ্ছর ব্যবচ্ছেদ পরিচিতী যে এখনো বাকী।
৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: আমরা তোমাদের ভুলবো না...ভুলতে দেবো না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাতরে তোমাদের বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের চেতনা ছড়িয়ে দেবো।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮
পাজল্ড ডক বলেছেন: ...জুয়েলরা ফিরে আসে কখনো তামিমের ব্যাটে ডাউন দ্যা উইকেটে, কখনোবা সৌম্যের ব্যাটে ভর করে উমর গুলদের সীমানা ছাড়া করে, কখনো আসে মুশফিকের সেই স্লগ সুইপে, কখনো আসে উইকেটের পিছনে মুশির বকবকানি হয়ে, কখনো আসে মাশরাফি হয়ে কিংবা সাকিব আল হাসানের বজ্র হুংকারে...
জুয়েল,রুমি,আজাদেরা শহীদ--তাদের জন্যই এই বাংলাদেশ পেয়েছি। এই ক্র্যাক হেডেড বীররা বাংলার মাটিতে নতুন করে জন্ম নিক সাকিব,তামিম,মুশফিক, মাশরাফি হয়ে।