নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বপ্ন দেখি সত্যের, সুন্দরের। যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দেয় আমি সেখান থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। অপেক্ষা করতে চাই শেষ পর্যন্ত। তাইতো আছি পরিশেষের অপেক্ষা্য...

পরিশেষের অপেক্ষায়

আমি একজন মুসলমান কিন্তু সবধর্মের মানুষকেই ভালবাসি কারণ আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টিl আমি আমার দেশ ও দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি।

পরিশেষের অপেক্ষায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ওপেনারের তামিমের গল্প

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

বাংলাদেশ ক্রিকেটে একসময় একটা গল্প ছিল এইরকম যে, খেলা শুরু হয়ে ওপেনাররা যখন মাঠে যেত তখন ধরুন ওয়ান ডাউন বা টু ডাউন কেউ একজন ওয়াশরুমে গেছে। কেবল প্যান্টের জিপার খুলবে এমন সময় দরজায় শব্দ, বাইরও, উইকেট গেছে, তাত্তারি বাইরও...
.
এই ছিল অবস্থা! ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরু থেকেই ওপেনিংয়ে সমস্যাটা মারাত্মক ছিল বাংলাদেশের। অধিকাংশ ম্যাচেই দেখা যেত ক্রিজে যাওয়ার সাথে সাথেই দুই ওপেনার আউট। হয়ত ওয়ানডাওনে নামা ব্যাটসম্যান বসেছেন প্যাড পড়তে, কিন্তু প্যাড হাতে নেওয়ার আগেই মাঠের ডাক পড়ে গেল।
.
তখন অবশ্য নিয়মিতই বাংলাদেশ একশো থেকে দেড়শোতেই আটকে থাকত। প্রতি ম্যাচে ভয়াবহ ওপেনিংয়ের পর টপ আর মিডল অর্ডারও খাবি খেত তারপর শেষদিকে খালেদ মাসুদ, রফিক কিংবা অন্য কোনো লোয়ার অর্ডারের ব্যাটে টেনেটুনে দেড়শোয় যেত রান
.
দলে যারা যারা ব্যাট করতে পারত তাদের সবাইকেই ওপেনিংয়ে ট্রাই করানো হত। একম্যাচে দেখা যেত, একম্যাচে ৩০ করছে তো পরের ১০ ম্যাচে মিলেও ৩০ হয়না।
.
সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ, অপি, জাভেদ ওমর, রাজিন সালেহ, নাফিস ইকবাল, মেহরাব জুনিয়র, আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিস.. আরও অনেককেই ওপেনিংয়ে টেস্ট করানো হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল অই একই ..এর মধ্যে দুই নাফিস আলোর ঝলকানি দেখালেও, অইটা ধুমকেতুই হয়ে রইল চাদের আলো আর হতে পারল না..
.
তারপর একদিন একটা ছেলের খোজ পাওয়া গেল। হাতের কবজিতে প্রচন্ড শক্তি.. না না.. বুকে প্রচন্ড সাহস। ফাস্ট বোলার বাউন্স দিছে? ডাউন দ্যা উইকেটে গিয়ে লফটেড শট। সাম্প্রাসের মত নাকি ফোরহ্যান্ড শট খেলে, ডাক করতে চায়না, চাবুকের মত ব্যাট ঘুড়ানো শুরু করল। পাড়ার বোলারদের মত কভার ড্রাইভ মেরে দিত।
.
ডরভয় ছিলনা যেন, আউটের চিন্তা করত না। ক্রিজে আসো মারো। বোলার চোখের দিকে তাকাইলে ১৯ বছরের ছোকরাটা মাঝ মাঠে গিয়ে গিয়ে চোখ বড় করে তাকাতো। অই চোখে ছিল বোলারদের প্রতি তীব্র রাগ.. ব্যাট হাতে নিয়ে পরের বলেই ডাউন দ্যা উইকেটে গিয়ে বোলার স্প্যাক ড্রাইভ কিংবা এক পা উপরে তুলে লং অনের উপরে পাঠায়ে দিত..
.
যেখানে পাওয়ার-প্লের ১৫ ওভারে ৩০ হলেই আনন্দ, ৪০ হলে তো একেবারেই ঈদ আর বিনা উইকেটে গেলে তো ঈদুল ফিতরের ঈদের মত আনন্দ.. নাচো নাচো অবস্থা.. সেখানে রান ৪০ ছাড়িয়ে ৫০, তাও ছাড়িয়ে ষাটে..তারপর ৭০ আবার মাঝেমাঝে ৮০ তেও চলে যেত !!
.
চোখকে বিশ্বাস করা যেত না! কিভাবে সম্ভব? বাংলাদেশেএ কোনো ওপেনার ফিল্ডিং রেস্ট্রিকটেড ওভারে ফোরহ্যান্ড, কভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, স্কয়ার কাট করবে! আবার রানও ৬০-৭০ যাবে! হাউ কোড দিস পসিবল?
.
বলা হলো বোলারকে ভয় লাগেনা? চোখ উপরে তুলে জানিয়ে দিলেন, বোলারকে ভয়? বোলারের চেহারা দেখে তো খেলিনা! তার বল দেখে খেলি। সো ভয়? নো ওয়ে .. ইউ কান্ট প্লে অ্যা বোলার, ইউ ক্যান অনলি প্লে অ্যা বল...
.
ছেলেটার নাম তামিম ইকবাল। দ্যা গেমচেঞ্জার ম্যান। ওপেনিং থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডসই এখন এই একটা প্লেয়ারের দখলে। এক এক করে রেকর্ড তার পায়ের কাছে এসে লুটালো। উইলোর দাপটে বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যার্থতার ইতিহাসকে নিজের মত সফলতায় গুছিয়ে লিখলেন।
.
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৯ তে লক্ষ্য ছিল ৩১২ রান। উহু সম্ভব না! তামিম বললেন, হারার আগে হারতে নেইরে পাগলা, অসম্ভব কিছুই নাই। ফলাফল তামিমের ১৫৪ তে ভর করে সহজেই জিতে নিল টাইগাররা!
.
এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের আগেই জানিয়ে দিলেন অনার বোর্ডে নাম লিখাবেন তামিম। মগের মুল্লুক পাইছো? ক্রিকেটের তীর্থস্থান, লর্ডস চিনো? হালের অনেক মহারথী ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে গিয়ে চোখে আন্ধার দেখে... সেখানে সেঞ্চুরি? তাও বাংলাদেশের ..??
.
বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল কিভাবে ব্যাট করতে হয়। সেঞ্চুরি করে অনার বোর্ডে নাম তো লেখালেনই তার উপর মাত্র ৯৪ বলে শতক হাকিয়ে লর্ডসের সোয়া'শো বছরের ইতিহাসে সেকেন্ড ফাস্টেস্ট সেঞ্চুরি, সাথে ব্যাকবডি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ইটস লর্ডস এন্ড ইটস মি.. রাইট ডাউন মাই নেম হেয়ার ..!
.
পরের টেস্টে আবারো সেঞ্চুরি সেটাও সম্ভবত রানের চেয়ে বলের সংখ্যা কম রেখে। এরপর ব্যাটিংয়ে আরও অনেক কীর্তি করেছেন। দলকে জিতিয়েছেন অনেক বার, সেঞ্চুরি করে টানা তিন বলে তিন ছক্কা হাকিয়ে পৌঁছেছেন ডাবল সেঞ্চুরির দুয়ারে। গড়েছেন টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড তাও আবার অবিশ্বাস্য এক ওপেনিং পার্টনারশিপে ম্যাচ জিতিয়ে!
.
তামিম আসার পরেও অনেক ওপেনার পরিবর্তন হয়েছে। কখনো নাফিস, আশরাফুল, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকি, এনামুল বিজয়, নাজিমুদ্দিন এমনকি নাইম ইসলামও খেলেছেন ওপেনিংয়ে! তারা কেউ টিকতে পারেননি, কখনো এসেছেন কখনো গেছেন, কেউ কেউ আবার এমনই গেছেন যে আর ফিরেই আসেননি...
.
কিন্তু এক তামিম ইকবাল ঠিকই টিকে আছেন এবং শক্তভাবেই টিকে আছেন। তবে তার সঙ্গীদের উঠানামা হলেও ইদানীং ওয়ানডেতে সৌম্য সরকারের সাথে এবং টেস্টে ইমরুল কায়েসের সাথে তার জুটিটাকে নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে..
.
সেই তামিম আজও ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারন করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেই দুই সেঞ্চুরি এক ফিফটি আর টেস্টে ডাবল টন হাকিয়েছেন। মাঝেমাঝে ব্যার্থ হন কিন্তু ঠিকই ফিরে আসেন স্বরূপে, ফিরে আসেন বোলারদের জন্য ত্রাস হয়ে, এখনো বোলারদের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকেন, এখনো বাউন্সারে সীমানা ছাড়া করেন, সাম্প্রাসের ফোরহ্যান্ড, রংতুলির আকা কভার ড্রাইভ কিংবা বোলারদের কলিজা কাঁপিয়ে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে হিট করেন...
.
এই তামিমই যখন দুই এক ম্যাচ খারাপ খেলে তখনই হেটার সমাজ সুশীলতায় দুষ্ট হয়ে ‘চাচা-ভাতিজা’ থিউরি ঢেলে দেয়। তার পেইজে গিয়ে তার পরিবারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠে। তামিমকে দল থেকে বাদ দিয়ে একেকজন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠে...
.
কিন্তু ওরা ভূলে যায় তামিম বাংলাদেশের প্লেয়ার, তামিমকে বিদেশের প্লেয়ারদের পাল্লায় ফেলে মেপে দেখতে গেলে হবেনা, মাপতে হবে আমাদের দেশের ক্রিকেটের সাথে... ওরা ভূলে যায় এই একজন তামিমকে পেতেই আমাদের ২০-২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে... ওরা ভূলে যায় একজন তামিম ইকবাল আমাদের ক্রিকেটে প্রতিবছর আসেনা..
.
ওরা ভূলে যায় বাংলাদেশের ওপেনিং ইতিহাসকে নতুন করে লিখানো তামিমকে.. ওরা দল থেকে ছুড়ে ফেলে দিতে চায় তাকে। ওরা ভূলে যায় তামিমের মত আর কাউকে পাওয়া যায়নি এখনো। ওদের অতীত নেই তাই ওরা ভুলে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া তামিমের অতীত ইতিহাস...
.
ওরা ভূলে যায়, বিশ্বকাপে এক হাফ সেঞ্চুরিতেই ভারতের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার পর জহির খান যখন তেড়ে এসেছিলেন, তামিম বলটাকে তার দিকে ছুড়ে দিয়ে ইশারায় পপিং ক্রিজ দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল, যা, বল কর...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.