নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিয়াল মামা

শিয়াল মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপার্থিব সৌন্দর্য

২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:০৭

I started writing this sci-fi 5 yrs back।
Never completed. Won't complete.
Let it rather share incomplete, a draft.

অপার্থিব সৌন্দর্য
______________

--এক--

আজ ১ জানুয়ারি ২২৫৮ সাল।

আজ বিশেষ একটি দিন। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান পরিষদ সম্ভবত আজ টাইপ-২ মানব সভ্যতা অর্জন ঘোষণা করবে।

এর আগে, ২১৪০ সালে মানব সভ্যতা টাইপ-১ খেতাব অর্জন করে।

বলা হয় টাইপ-১ সভ্যতা অর্জন করা ছিল মানব সভ্যতার সবচেয়ে কঠিনতর অধ্যায়।

অনেকেই ধারনা করেছিলেন যে টাইপ-০ থেকে টাইপ-১ সভ্যতা বোধহয় কখনই অর্জন করা যাবে না।

১৯০০ সালের পর থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ, সন্ত্রাস, পরমানু ও রাসায়নিক অস্ত্রের বিস্তার ইত্যাদি দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন যে টাইপ-১ সভ্যতা অর্জনতো দুরে থাক, মানব সভ্যতাই বোধহয় শেষ হয়ে যাবে।

টাইপ-0 সভ্যতায় মানবজাতি হাস্যকরভাবে সম্পূর্ণ নির্ভর করত জীবাশ্ম জ্বালানীর উপরে। মূলত অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান সবই ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক। রোগ, আবহাওয়া, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কোন কিছুর উপরে মানুষের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বরং যুদ্ধ করে মানব সম্প্রদায় নিজেদের ও সমগ্র পৃথিবী নামক গ্রহটাকে ধ্বংসকরতে বসেছিল।

সে সময় পৃথিবীতে দেশ নামক একটি ব্যবস্থা ছিল। মানবজাতি অতি হাস্যকরভাবে সারা গ্রহটিকে ২০০ বা ততোধিক ছোট বড়ভাগে ভাগ করেছিল। প্রতিটি ভাগকে তারা একেকটি দেশ বলত।

প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইন ও দর্শন ছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল একটি দেশ অন্য একটি দেশকে মোটেই সহ্য করতে পারত না। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে স্বাধীনভাবে যেতে পারতনা। শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্রমণের অনুমতি নিয়ে যেতে পারত। অতি হাস্যকর কারনে দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পরত!

কি ভয়াবহ !!

ভাগ্য-ভাল যে, গণতন্ত্র নামক একটি দেশ পরিচালনা বাবস্থা সে সময় জনপ্রিয় হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় দেখা গেল যে একটি গনত্রান্ত্রিক দেশ আরেকটি গনত্রান্ত্রিক দেশের সাথে সাধারণত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনা। মূলত গনত্রান্ত্রিক দেশ ব্যবস্থার কারনেই আসলেই পৃথিবী ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেল।

যাই হোক, ২১৪০ সালের ৭ই এপ্রিল আকস্মিকভাবেই তৎকালীন ‘মানবসঙ্ঘ’ নামক বৈশ্বিক এবং সার্বজনীন সংগঠনটি মানব সভ্যতাকে‘টাইপ-১’, সভ্যতা হিসেবে ঘোষণা করে।

টাইপ-১ সভ্যতা হল সেই সভ্যতা যেখানে মানুষের পৃথিবী নামক গ্রহের উপর পুরপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। ঝড়-বৃষ্টি, আগ্নেয়গিরি, সাগর, আবহাওয়া সবকিছুই থাকে মানুষের হাতের মুঠোয়।

টাইপ-১ সভ্যতায় মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আর মোটেও নির্ভরশীল থাকেনি। এই সভ্যতায় শক্তি সরাসরি সূর্য থেকে গ্রহণ করেছে। মহাশূন্যে স্থাপিত বিশালাকার সৌরবিদ্যুৎ জেনারেটর ও মহাজাগতিক বিকিরণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করে তা তারহীন পদ্ধতিতে পৃথিবীতে আনয়ন ও ব্যবহৃত হয়েছে।

আসলে এই মাপকাঠিতে মানবজাতির ২১৪০ সালের আরও ২০ বছর আগেই টাইপ-১ সভ্যতা অর্জন করা উচিৎ ছিল। কিন্তু পৃথিবীতে অবস্থিত শেষ কয়েকটি পারমানবিক বোমা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চরম বিতর্কের বিষয়বস্তু। ‘গ্রহগত বিজ্ঞানসভা’ কোনভাবেই টাইপ-১ সভ্যতাকে স্বীকৃতি দেবার ব্যপারে আগ্রহী ছিলনা যতক্ষণ সকল পারমানবিক বোমা পৃথিবী থেকে বিতাড়িত বা নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল।

(প্রসঙ্গতঃ ২১৩২ সালে পৃথিবী থেকে দেশ প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়। সে বছরই ‘জাতিসঙ্ঘ’-কে ‘মানবসঙ্ঘ’ এবং ‘বিজ্ঞানসভা’-কে, ‘গ্রহগত বিজ্ঞান সভা’ নামকরণ করা হয়। ইংরেজী-কে ‘টাইপ-১ ভাষা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। )

যাই হোক অবশিষ্ট ৮০ টি পারমানবিক বোমার মধ্যে ৬৯ -টিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বুধ গ্রহের কাছে মহাশূন্যে কেন্দ্রীয় পারমানবিক বোমা ভল্টে। বাকি ১১-টি কে নিষ্ক্রিয় করা হয়। উল্লেখ্য যে পারমানবিক বোমা ভল্টের কাজছিল মহাশূন্যে পারমানবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে গ্রহাণুর আঘাত থেকে সৌরজগতের গ্রহ বা উপগ্রহগুলোকে বাঁচানো।

২১৪০ সালের ৭ই এপ্রিল, পৃথিবী পারমানবিক বোমা-শুন্য হওয়া মাত্রই টাইপ-১ সভ্যতা ঘোষিত হয়। পৃথিবী গ্রহের ৬ বিলিয়ন মানুষ, মঙ্গল গ্রহের ৪ হাজার, চন্দ্র উপগ্রহের ৩শ , ইউরোপা উপগ্রহের ৫০ জন মানুষ, তিন পৃথিবী-মান দিনব্যাপী উৎসব করেছিল।

এই দিন পৃথিবী গ্রহের পতাকার ডান দিকে উপরে একটি তারা যোগ করে তা উন্মোচন করা হয়। ১টি তারা টাইপ-১ সভ্যতার প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এ গেল ১১৮ বছর আগের কথা।

--দুই--

ফিরে আসি আজকের দিনে। আজ ১লা জানুয়ারি ২২৫৮ সাল। আজ বিশেষ একটি দিন হতে পারে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান পরিষদ সম্ভবত আজ টাইপ-২ মানব সভ্যতা অর্জন ঘোষণা করবে।

উল্লেখ্য যে টাইপ-২ সভ্যতার পূর্বশর্তহল হল, সৌরজগতের উপর সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তারে সক্ষমতা, এবং আশেপাশের সৌরজগতকে জয়ের নির্ভরযোগ্য মডেল প্রণয়ন। মানবজাতি এই পূর্বশর্তগুলো এই মুহূর্তে খুব ভালভাবেই আয়ত্তে এনেছে। সৌরজগতের সকল গ্রহ-উপগ্রহ গুলতো বটেই, এমনকি সূর্য-ও আজ মানুষেরপ্রায় পোষা একটি তারা।

মানুষ, সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি, নিউট্রিনো বিচ্ছুরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এক শতাব্দী আগেও সৌর-ঝরের কারণে পৃথিবী ও উপগ্রহের যোগাযোগ মডিউলগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতো। এখন সৌর ঝর তো নস্যি, মানুষ সূর্যের প্রতি ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারকে একক ধরে তার তাপমাত্রা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে।

মানব সভ্যতা এখন পৃথিবী, চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পরেছে ইউরোপা, ট্রাইটন উপগ্রহে। প্রতিটি উপনিবেশেই দুই বা ততোধিক প্রজন্ম বিদ্যমান, মানব শিশু জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছে সেসব গ্রহ এবং উপগ্রহতেই।

২২৫৬ সালেই মানুষ সূর্যের পরে সর্ব নিকট সৌরজগত আলফা সেঞ্চুরি জয় করে। আলফা সেঞ্চুরি হল একটি বাইনারি (দ্বৈত) সৌরজগত। এখানে দুটি সূর্য বিদ্যমান। এবং একটি বামন তারাও আছে বটে। দুটি মূল সূর্যের নাম আলফা-এ, আলফা-বি এবং বামন তারার নাম হল আলফা সেঞ্চুরি। আলফা সেঞ্চুরি পৃথিবী থেকে মাত্র ৪ দশমিক দুই আলোকবর্ষ দূরে।

২২৫৬ সালের ৪ঠা জুলাই, একদল তৃতীয় প্রজন্মের রোবট "আলফা সেঞ্চুরি-BC" নামক গ্রহে আবতরন করে। গ্রহটি মানব জীবনের জন্য প্রচণ্ড উষ্ণ। তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রী সেঃ। কিন্তু তৃতীয় প্রজন্মের রোবটের জন্য কোন সমস্যা নয়। "আলফা সেঞ্চুরি-BC" নামক গ্রহটিতে রোবটদল দুই পার্থিব-বছরের মধ্যেই ফ্যাক্টরি গঠনের মাধ্যমে ১ লক্ষ রোবট এবং ২০০ টি মহাকাশযান তৈরি করল।

৯৫ হাজার রোবট এবং ১০০ টি মহাকাশযান নিয়জিত হল গ্রহটিকে মানুষের বসবাসের মত তৈরি করতে। আর ৫ হাজার রোবট এবং বাকি ১০০ টি মহাকাশযান প্রস্তুতি গ্রহণ করম অন্য সৌরজগত জয়ের যাত্রা শুরু করতে।

আজ টাইপ-2 সভ্যতা সম্ভাব্য ঘোষণার মূল কারণটি হল, আজ থেকে প্রতি ১০ দিন অন্তর একটি করে মহাকাশযান একেকটি সৌরজগত জয়ের এর উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে। প্রথম মহাকাশযানটি যাবে ৪০০টি রোবট নিয়ে "বার্নারড" সৌরজগতের গ্রহতে। "বার্নারড" সৌরজগত পৃথিবী থেকে ৫,৯ আলোকবর্ষ দূরে। রোবটের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এক সৌরজগত থেকে অন্য সৌরজগত জয় করার মহান এই প্রয়াসটিই আজ টাইপ-২ সভ্যতা ঘোষণার মূল উপপাদ্য।

--তিন--

দুপুর ১২টা। মিক তার পোষা বেড়াল সিসিলিকে কোলে নিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন গেম খেলছিল। হঠাৎ একটি মেসেজ আবির্ভূত হল যে টাইপ-২ সভ্যতা ঘোষিত হয়েছে। জানা কথা। ঘোষণা আগে বা পরে আসবেই। মিক পাত্তা দিল না। খেলা চালিয়ে গেল। এবং মাঝে ঘুমিয়ে পড়ল।

মিক তার দৃষ্টিতে প্রচণ্ড আয়েশী জীবনযাপন করে। এবং সে তাতে খুবই পরিতৃপ্ত। আয়েশী অর্থ এই যে, সে কখনওই কোন পরিকল্পনা-মাফিক দিনপাত করে না। যখন তখন তার আইডি অফলাইন করে রাখে, দিনে একটির বেশী বাইরের কাজ রাখে না, সপ্তাহে কমপক্ষে ৪-৫ বার আয়েশ করে প্রাকৃতিক খাবার খায়। সে আয়েশী না তো কে!!

আজকের দিনে সবার আকর্ষণের বিষয়বস্তু হল মহাশূন্যে বা আশেপাশের উপগ্রহে অবকাশ যাপন। মোটামুটি আধুনিক কিন্তু বিলাসবহুল মহাকাশযানে চড়ে শপ্তাহখানিক আলোর গতির ১% বেগে সৌরজগতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আসা।

মিকের এসবের প্রতি কোন আগ্রহই নেই। শারীরিকভাবে এবং যানবাহনের সাহায্যে কোথাও থেকে ঘুরে আসা তার কাছে অনাবশ্যক মনে হয়। মিক মনে করে ঘুরে আসার আনন্দ হল মানসিক। আর মনে মনে কল্পনা করে তো ঘুরেই আসা যায়। "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা" এর মত।

২৫ বছর বয়সী মিকের এই মানসিকতার যথেষ্টই যৌক্তিকতা আছে। যথাসময়ে তা ব্যাখ্যা করা যাবে।

আপাতত বলা যাক নিমীলের কথা।

নিমীল ২৩ বছর বয়সী একজন তরুণী। অনেক ভিড়ের মাঝেও তাকে আলাদা করে চেনা যায়। কারণ সে চশমা পড়ে। চোখে সমস্যা না থাকলেও অ্যানটিক এই পরিধেয়টি সে শখ করেই নিয়মিত পরে। বলা যায় পৃথিবীতে এখন কাররই চোখের কোন সমস্যা নেই। এখন মানুষের চোখের বা শারীরিক যেকোনো সমস্যাই এখন ভ্রুনাবস্থাতেই প্রতিকার করা হয়।

নিমীল একজন ফটোগ্রাফার। তার প্রিয় বিষয়বস্তু হল মানুষের আবেগ। ত্রয়-বিংশ শতাব্দীতে মানুষের ভাবাবেগ অবশ্যই যান্ত্রিক হয়ে যায়নি। তবে প্রচণ্ড মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত এবং ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। মানব আবেগ তার প্রিয় বিষয়বস্তু হলেও দেখা যায় নিমীল বেশিরভাগ প্রকৃতির, মেঘের, পোকামাকড়ের জীবনযাত্রা, পাখির জীবনযাত্রা এবং রাতের আকাশের ছবিই তুলছে।

রেটিনাতে সংযুক্ত ইন্টালিজেন্ট লেন্সের মাধ্যমে সবাই ছবি তুললেও নিমীল ছবি তোলে দ্বাবিংশ শতাব্দীর সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্ট ক্যামেরার মাধ্যমে। যেহেতু এই ক্যামেরাগুলো অতীব পুরনো এবং নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত নয়, তাই তা ব্যবহার করার জন্য প্রাদেশিক নিরাপত্তা অফিস থেকে আনুমুতি নিতে হয়েছে।

বলে রাখা ভাল যে মানবসভ্যতায় এখন অর্থ উপার্জন করা মোটেও মূলধারার বিষয় নয়। বরং আজকের পৃথিবী অবাক হয় এই জেনে যে, মাত্র দুইশ বছর আগেও সবাই তাদের জীবনের ৭০% বা তার বেশি ব্যয় করত কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে। সেই অর্থ দিয়ে তারা খাবার, পোশাক এবং অন্যান্য সেবাগুলি কিনত।

মানব মেধা ও সময়ের কি নিদারুণ অপব্যয়!

অর্থের মাধ্যমে জীবনধারণের ব্যবস্থার কারণে লক্ষ কোটি মানুষ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মানব সভ্যতার বিকাশে কোন কাজে আসেনি। অনেকেই শুধুই অর্থ উপার্জন করেছেন, পৃথিবীর বুকে বেঁচে থেকেছেন এবং একসময় মৃত্যুবরণ করে হারিয়ে গেছেন।

একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় আনুমানিক ২০৫৫ সাল থেকে, পৃথিবীতে সিলিকন সভ্যতার অবসান হয়ে শুরু হয় ন্যানো প্রযুক্তির বিকাশ।

বাজারে আসে ফুড প্রসেসিং মেশিন, ন্যানো কম্পিউটার, ন্যানো রোবট ইত্যাদি।

যা হোক ন্যানো প্রযুক্তি নিয়ে কিছু বলা যাক।

ন্যানো প্রযুক্তি হল সেই প্রযুক্তি, যা অণু এবংপরমাণু স্তরে কাজ করে। এই প্রযুক্তি প্রায় ১০০% ত্রুটিহীন ভাবে ফলাফল আনয়ন করে।

যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে আসে এক ধরনের ন্যানো রোবট। যা কিনা চারটি মাত্র কার্বন পরমাণু দিয়ে গঠিত। প্রচণ্ড শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কেবল এই রোবটকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ন্যানো রোবটে তার দায়িত্বটি প্রোগ্রামিং করা থাকে। মানুষের শরীরে তা প্রবেশ করিয়ে দিলে তা এমনকি হৃৎপিণ্ডের ধমনীর ব্লক পর্যন্ত ছোটাতে সক্ষম। অর্থাৎ সেই সময় থেকেই বলা যায়, ডাক্তারদের আপারেশন করার ঝামেলা চুকে গেল।

ন্যানো ফুড প্রসেসরের ভেতরে মৌলিক ন্যানো উপকরণ ঢুকিয়ে যথাযথ কমান্ড দিলে, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই নির্দিষ্ট খাবার প্রস্তুত করে দেয়। আপনার যদি মাঝরাতে হঠাৎ পরটা-ডিম ভাজি খেতে ইচ্ছা করে, তবে একটি কমান্ডই যথেষ্ট। আবার আপনি কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার আগেই সাধারণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমান্ড প্রয়োগ করলে, বাড়ি ফিরেই হিম শীতল একগ্লাস লেবুর শরবত পেতে পারেন।

বলা বাহুল্য যে প্রথম দিকে ন্যানো ফুড প্রসেসরগুলো খুবই ধীর গতির ছিল। আপনাকে এক প্লেট গরম গরম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পাবার জন্য ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত। কয়েক বছরের মধ্যেই এই অপেক্ষার সময়টি মিনিটে নেমে আসল।

ন্যানো বা কোয়ান্টাম ফুড প্রসেসিং মেশিন বাস্তবিকভাবেই অভাব ও দরিদ্রতা দুর করে ফেলল। শুধু মানুষের খাবারের সংস্থান নয়, প্রোগ্রামিং করা মেশিনগুলো দুর্গম অঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের খাদ্য সংস্থানেও নিয়োগ করা হল।

মূলত ন্যানো প্রযুক্তির কারনেই, দুর হওয়া শুরু হয় ধনী-গরিবের বৈষম্য। শেষ হয়ে যায় খাদ্য সংকট। চিকিৎসা ব্যয় এসে পরে হাতের নাগালে। মানুষের হাতে এখন অঢেল সময়। অঢেল সময় সৃষ্টির জন্য। মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয় কবিতা, গান, শৈল্পিক, ভাবমূলক ও গঠনমূলক কাজে। প্রেরণা দেয়া হয় মনুষ্যত্ব বিকাশে। অবশ্য অতি সাবধানে ও সূক্ষ্মভাবে তদারকিতে রাখা হয় ধর্মসংক্রান্ত ব্যাপারগুলো। অঢেল সময় যেন মানুষকে পৌরাণিক কথামালার দিকে ধাবিত না করে।

--চার--

ত্রিমাত্রিক গেমটি খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে মিক পরলেও, পুরো শহর যেন জেগে উঠেছে। লোকজন দলে দলে শহরের বিভিন্ন পার্কে যেতে শুরু করেছে। অবশ্যই উৎসব হবে। এবং অবশ্যই গ্রহগত বিজ্ঞান সভার প্রধান স্যার লুমানিকের ভাষণ বড় পর্দায় শুনতে হবে। স্যার লুমানিক প্রিথিবিবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয়। তার রসবোধ এবং বক্তৃতার স্টাইল ভীষণ আকর্ষণপূর্ণ। স্যার লুমানিক এই মুহূর্তে অবস্থান করছেন ইউরোপা উপগ্রহের উপনিবেশে। ইউরোপা থেকেই তিনি টাইপ-২ সভ্যতার ঘোষণা দিয়েছেন।

মিক ঠিক করল যে সে পাশের বড় লেক পার্কে যাবে। সে স্মার্ট ওয়ালের দিকে হাতের ইশারায় লেকপার্কের লাইভ ছবি আনল।

মনটাই ভাল হয়ে গেল মিকের। ছোট বাচ্চাদের ভিড়! জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট স্টল। মিক রওনা দিয়ে দিল।

চার মিনিটের হাঁটার দূরত্বের প্রথম দুই মিনিট মিক ব্যয় করল সে নিমীলকে নক করবে কিনা।

'হাই নিমীল'।

'হাই'।

'শুনেছ নিশ্চয়ই T-2 ঘোষণা করেছে'।

'তাই নাকি! জানতামনা তো!' - নিমীল কণ্ঠে বিদ্রূপের সমস্ত নির্দেশনই বিদ্যমান।

'তুমি বোধহয় ব্যস্ত আছ।'

'হ্যা ব্যস্ত।'

'ঠিক আছে। পরে কথা হবে।'

নিমীল লাইন কেটে দিল।

মিক হাঁটার গতি একটু কমিয়ে দিল। পার্কের গেটের সামনে এসে, না ঢুকে, আবার হেঁটে দুরের গেইটটি দিয়ে ঢুকল।

মিকের মনটা ভাল হয়ে যেতে ১০ মিনিট সময় লাগলো।

মন কেন কেন হবেনা। কত মানুষ একসাথে! কত শিশু একসাথে! শিশুগুলো T-2 কিছু না বুঝলেও তারা এইটুকু বুঝতে পারছে যে আজ তাদের মা অথবা বাবা-মা এর মনটা খুব ভাল। শিশুদের আনন্দের এর চেয়ে বড় কারণ বিগত হাজার-লক্ষ বছরে হয়নি, কোনদিন হবেও না।

কিছুদূর পরে পরেই স্টলে একদমই পুরানোদিনের মত তৈরি পপ-কর্ণ, ক্যন্ডিফ্লস, আইসক্রিম, ললিপপ, বেলুন দেয়া হচ্ছে। লাল শাদা চেক পলিমার দিয়ে জায়গায় জায়গায় ছাউনি। পুরো পার্কটাই যেন পুরনো দিনের সার্কাসের মতন দেখাচ্ছে।

মাঠের মাঝে ৩০ ফুট উপরে শূন্যে ত্রিমাত্রিক প্রজেকশন হচ্ছে। সেখানে দেখানো হচ্ছে "বার্নারড" সৌরজগতের কাল্পনিক ভিডিও এবং আলফা সেঞ্চুরি-BC গ্রহ থেকে প্রথম যেই 'স্পেস বেন্ডিং মহাকাশযান'টি বার্নারড সৌরজগতের উদ্দেশে ছেড়ে যায় তার ভিডিও। উল্লেখ্য যে কিছুক্ষণ পরেই স্যার লুমানিকের ভাষণ ইউরপা উপগ্রহ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

'মিক মিক! অ্যাই মিক!!! '

একটি ৫ বছরের ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে মিকের জামা ধরে টানছে।

'আরে! লামি !! তুমি একা নাকি! তোমার আম্মু কোথায়? '

'আম্মু ওদিকে বসে আছে। আজ কি মজা তাই না!'

'হ্যা খুবি মজা। '

লামি হল মিকের প্রতিবেশী এবং অকৃত্রিম বন্ধু। মিক থাকে ৯৬ তলায়, আর লামি ও তার মা থাকে ৯৮ তলায়।

লামি ও মিকের বন্ধুত্বের মূল কারন হল তারা দুইজনই শখ মাছের একুইরিয়ামকে ঘিরে।

তারা একে অপরের সাথে মাছ বদলাবদলি করে। মিকের সামুদ্রিক মাছের এবং মিঠাপানির মাছের দুইয়েরই একুইরিয়াম আছে। অন্যদিকে লামির আছে শুধু মিঠাপানির।

মিক, মা আমাকে খুব সুন্দর কয়েকটি একুইরিয়াম প্লান্ট এনে দিয়েছে। তুমি দেখতে আসবেনা?

অবশ্যই আসব লামি। কালই আসব।

উহু কাল মা আমাকে নিয়ে নানাভাইয়ের সউল সিমুলেটরে নিয়ে যাবে। মা নানাকে খুব মিস করছে। তুমি আজই আস।

ঠিক আছে লামি। আজই আসব। চল তোমার আম্মুর কাছে এখন।

( সউল সিমুলেটর হচ্ছে সেই মেশিন যেখানে একটি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরের ৩০০ জিটাবাইট তথ্য ভরে রাখা হয়। সেই তথ্যে আবেগও বিদ্যমান। ধনী মানুষরা মারা যাবার আগে প্রচুর অর্থ খরচ করে এই সিমুলেশন ক্লাবের মেম্বার হন। এই ক্লাবের মেম্বাররা মারা গেলেও তার সাথে কথা বলা যায় এই সিমুলেটরের মাধ্যমে। )

লামির মা জুলি একটি স্কুলের গানের শিক্ষিকা। মিক ও লামিকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হেসে ফেলল।

কি খবর মিক! লামি তোমাকে এখানেও পাকড়াও করেছে?

সেটা আমার সৌভাগ্য জুলি! কিন্তু আজকের মত দিনে আমাদের উচিত তোমাকে পাকড়াও করে একটি গানের আসর করা।

জুলি আবার হেসে ফেলল।

পার্কের মাঝে ত্রিমাত্রিক ভিডিও থেমে গিয়েছে। লেখা উঠেছে যে কোন মুহূর্তে শুরু হবে স্যার লুমানিকের ভাষণ।

পিন পতন নীরবতার মধ্যে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শুরু হল স্যার লুমানিকের ভাষণ।

--পাঁচ--

প্রিয় বন্ধুরা। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, উপগ্রহ থেকে উপগ্রহান্তরে।

আমার শুভেচ্ছা নিন।

আজ মহান টাইপ-২ সভ্যতা ঘোষিত হয়েছে। মানব সম্প্রদায় প্রমাণ করেছে যে তারা একত্রে কাজ করলে অসম্ভবকে জয় করতে পারে।

আমি প্রথমেই স্রদ্ধাভরে স্মরণ করব কয়েক শাতাব্দি পূর্বের সেই সকল বিজ্ঞানীদের যারা দারিদ্রতা, সংস্কার ইত্যাদিকে তুচ্ছ করে বিজ্ঞান চর্চা করে গিয়েছিলেন। যাদের অসামান্য অবদানের ফলশ্রুতিতে আমরা আস্থার সাথে বিজ্ঞান-চর্চা চালিয়ে গিয়েছি এবং আজ আমরা টাইপ-২ সভ্যতার মাপকাঠিতেও পৌঁছে গিয়েছি।

আমার বয়স ৯৬। আমি আর মাত্র ৩ বছর বিজ্ঞানসভার প্রধান হিসেবে থাকব। আমার স্থায়িত্বকালে এই মহান অর্জন আমাকে করেছে আপ্লুত।

আজ 'আলফা সেঞ্চুরি' সৌরজগতের 'BC' নামক গ্রহ থেকে ১টি মহাকাশযান ২০০টি রোবট নিয়ে বার্নারড সৌরজগতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এই মহাকাশযান এক নতুন এবং যুগান্তকারী প্রযুক্তি দ্বারা আলোর গতির ২ গুন বেগে চলবে। এবং আমরা আশা করছি যে মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই বার্নারড সৌরজগতে আমাদের যান পৌঁছে যাবে।

(আলোর গতির ২ গুন গতি? এ কিভাবে সম্ভব? এ কি বলছেন স্যার লুমানিক! এ তো মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তবে কি টাইম ট্রাভেল সম্ভব? পার্কজুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল।)

স্যার লুমানিকও যেন জানতেন এমনটি হবে। তিনিও চুপ করে ছিলেন কয়েক সেকেন্ড।

আমি জানি আমার কথায় আপনারা হকচকিত হয়েছেন। না চিন্তার কিছু নেই। মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মোটেও ভুল ছিলেন না। আলোর চেয়ে গতিশীল কিছুই থাকতে পারেনা। তবে একটা ব্যপার খেয়াল করবেন যে, আলোর ফোটনের বাহন, যা কিনা স্পেস-টাইম নামক চাদর, তার গতি সম্পর্কে কিন্তু মহান আইনস্টাইন তেমন কিছু বলে যাননি।

মহান আইনস্টাইনের মৃত্যুর বহুবছর পর আবিষ্কৃত হয় যে বিগ ব্যং এর পর থেকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আলোর গতির চেয়েও বেশিগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। তারমানে স্পেস-টাইম বা মহাশূন্যের গতি আলোর গতি থেকে অবশ্যই বেশি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আমাদের নতুন প্রযুক্তির এই মহাকাশযানটি এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছে।

এই মহাকাশযানটিতে চারটি প্রচণ্ড শক্তিশালী অ্যানটিম্যাটার ইঞ্জিন রয়েছে। দুটির কাজ হচ্ছে প্রচণ্ড ভর-আবেশ সৃষ্টি করে মহাকাশযানের সামনের স্পেস-টাইম চাদরকে চরমভাবে সঙ্কুচিত করা। বাকী দুটি ইঞ্জিনের কাজ হল মহাকাশযানের পেছনের স্পেস-টাইম চাদরকে চরমভাবে প্রসারিত করা। ফলাফল এইযে স্পেস-টাইম চাদরটি আসলে আলোর গতির ২ গুন বেগে ছুটতে শুরু করে। এবং যেহেতু আমাদের মহাকাশযানটি সেই নির্দিষ্ট স্পেস-টাইমের মধ্যে বসে আছে, তাই তার গতিও আলোর গতির ২ গুন হয়ে যায়।

(এবারে পার্কজুড়ে হাত তালি এবং হর্ষধ্বনি, প্রায় ১ মিনিট পরে স্যার লুমানিক আবার শুরু করলেন)

আপনারা হয়ত আনুধাবন করতে পারছেন যে সামনের দিনগুলো আমাদের খুবই আন্যরকম হতে থাকবে। আমরা অতি শীঘ্রই আমাদের প্রযুক্তি উন্নততর করে মিলিয়ন আলোকবর্ষ দুরের গ্যালাক্সিগুলোকেও হয়ত জয় করতে পারব।

আমি জানি আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন ছটফট করছে। তা হল আলোর চেয়ে বেশি গতিতে গেলে তো সময়ের বিপরীতে যাওয়া সম্ভব। এখন থেকেকি তাহলে আমরা সময় পরিভ্রমণ করতে পারব?

এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আমার সামনের ৩ বছরের মেয়াদে আমি জানতে চাইও না। আমি সেই প্যারাডক্সে যেতে চাইনা যেখানে আমার মা-কে আমি দেখতে পাব তার শিশু অবস্থায়, যখন আমার জন্মই হয়নি। আমার ধারনা সময়ের পেছনে পরিভ্রমণ করলে প্রকৃতি সেটা কোনভাবে এবং খুব নিষ্ঠুরভাবে প্রতিহত করবে। আমি চাইনা মানুষকে সেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে।

প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার আর্জি আপনারা একাধিক সন্তান নিন। আপনার শিশুকে যত্নের সাথে প্রতিপালন করুন। আমরা মানব সভ্যতাকে বহুদূর নিয়ে যেতে চাই। সামনের দিনে আমাদের প্রচুর মানব প্রতিনিধি দরকার।

টাইপ-১ থেকে টাইপ-২ সভ্যতায় আসতে আমাদের ১১৮ বছর সময় লেগেছে। আমার বিশ্বাস আমরা আগামী ১০০ বছরের আগেই টাইপ-৩ সভ্যতায় পৌঁছে যাব।

আমি আপনাদের কাছে টাইপ-৩ সভ্যতা অর্জনের পূর্বশর্তগুলো নির্ধারণ করে দিতে চাই।

প্রথমতঃ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মদ্ধভাগে অবস্থিত সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের নিকট আমাদের একটি রবোটিক মহাকাশযানের পৌঁছাতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ ডার্কম্যাটার যা দ্বারা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের ৯০% তৈরি আমাদের কাছে তা এখনও অজানা। ডার্কম্যাটার কি তা নিরূপণ করতে হবে।
তৃতীয়তঃ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডার কোন একটি সৌরজগতের কোন গ্রহকে রোবটযান পাঠিয়ে মানব বসবাসের উপযুক্ত করতে হবে।

চতুর্থতঃ এন্ড্রোমিডার উদ্দেশে মানুষ সমেত মহাকাশযান পাঠাতে হবে। এমনভাবে পাঠাতে হবে যেন মাত্র মহাকাশযানের ভেতরে থাকা যাত্রীদের চতুর্থ প্রজন্ম এন্ড্রোমিডায় অবতরণ করতে পারে।

আমিই আশা করব, যেদিন এন্ড্রোমিডার উদ্দেশে মহাকাশযানটি ছেড়ে যাবে সেদিনই যেন টাইপ-৩ সভ্যতা ঘোষিত হয়।

আমি শেষ করার আগে আর্জি করছি, আপনারা মানবশিশুকে ভালবাসুন তাদের মাঝে মনুষ্যত্ব গড়ে তুলুন। মানবশিশুকে প্রস্তুত করুন পরবর্তীদিনের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে এবং লক্ষ্যকে অর্জন করতে।

ধন্যবাদ। আমাকে আপনাদের জন্য নিবেদিত করার সুযোগ করে দেবার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

স্যার লুমানিক তার বক্তব্য শেষ করলেন।

স্যার লুমানিক বিজ্ঞান সভার প্রধান হিসেবে বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকেন না। তিনি বরং ভীষণভাবে ব্যস্ত থাকেন পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ এবং উপগ্রহের মানুষের অনুপ্রেরণা যোগাতে। তার সমস্ত কাজের লক্ষ্যই হল মানব সম্প্রদায়কে, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে একটি অভিন্ন মতবাদের অধীনে আনয়ন করা। সেই মতবাদ মনুষ্যত্বের মতবাদ।

--ছয়--

নিমীল প্রতিবার মিকের সাথে রূঢ় ব্যবহার করার পরে বোধহয় একটু অনুতপ্ত বোধ করে।

নিমীল পরদিন সকালে মিককে দুবার ফোনকল করল। মিক 'RA' প্রায়ই ব্যব্যবহার করেনা, খুলে রাখে। নিমীলের কল সে মিস করল।

(RA হল 'রেটিনা অ্যাসিস্ট্যান্ট' যা কিনা মুল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। RA প্রতি পদে পদে তথ্য প্রদান করে তার বাহককে সাহায্য করে। তাপমাত্রা, দিক নির্দেশনা ছাড়াও ছবি তোলা, টেলিফোন করা), টেলিফোন আসলে তার জানান দেওয়া ইত্যাদি।)

মিক তার শোবার ঘরের ওয়ালস্ক্রিন সকাল থেকেই চালু রেখেছিল। কিন্তু অফলাইন অবস্থায়। অনলাইন থাকলেই শুধু বিভিন্ন বিরক্তিকর বার্তা আসতে থাকে। নীলিমের কল মিস করার এটাও একটা কারন। সকালে মিক সাধারণত ১৫০ বছর আগের 2D মানের বাচ্চাদের কার্টুন ওয়ালস্ক্রীনে ছেড়ে রাখে নির্মল আনন্দ পাবার জন্য।

মিক বিকেলে অনলাইনে আসল এবং নিমীলের কল দুটি দেখল। ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলেও মিক কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। বিকালের কফিটি সে প্রাকৃতিক কফিবিন দিয়ে নিজেই বানিয়ে থাকে।

Nilim called. mik missed. didnt call back.

what is the vibrating string? the symphony of God.

mik goes into the field and can decide what to download.

When I need you
I just close my eyes and I'm with you
And all that I so wanna give you
It's only a heartbeat away

যখনই আমি তোমাকে চাই
চোখ বুজলেই কি তবে তোমাকে পাই
সব উজাড় করে দেব যে তোমায়
তুমি এক হৃদস্পন্দন দুরে।

মাঝারি মাপের তারাকে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতাই যখন টাইপ-২ সভ্যতার অন্যতম প্রধান মূলমন্ত্র, তখন তারা বা সূর্য সম্পর্কে কিছু বলা যাক।

আমাদের সূর্য হল একটি মাঝারি মাপের তারা। একে ইয়োলো ডোয়ার্ফ বা হলুদ বামনও বলা হয়। শক্তি এবং তাপের ক্রমানুসারে তারা গাড় নীল, নীল, হালকা নীল, সাদা, হলুদ, কমলা ও লাল হয়। (যেখানে গাড় নীল হল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ এবং লাল হল সবচে কম উষ্ণ)

সূর্যে জ্বালানি হিসেবে কাজকরে প্রোটন। প্রোটন পজিটিভ চার্জ-যুক্ত। সমচার্জ সম্পন্ন হওয়ায় একটি প্রোটন আরেকটিকেবিকর্ষণ করে। কিন্তু মিলিয়ন মিলিয়ন মাইল বেগে যখন দুটি প্রোটন মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, তখন তাচার্জহীন হয়ে যায়। একই সাথে সামান্য ভর হারায়। এই সামান্য হারানো ভরটির বিনিময়ে হয় বিশাল একটি বিস্ফোরণ। পারমানবিক বিস্ফোরণ। সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন কিলোগ্রাম ভরের বিনিময়ে, বিলিয়ন বিলিয়ন সংখ্যক পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটছে। এভাবেই সূর্য কাজ করছে ৬ বিলিয়ন বছর ধরে।

--পাঁচ--

আইনস্টাইন। বিংশ শতাব্দী-এর একজন মহানতম বিজ্ঞানী, যিনি ছিলেন আত্মভোলা। শিশুক্লাসে শিক্ষক তার মাকে বলেছিলেন যে তার ছেলের কোন ভবিষ্যৎ নেই, সেই ‘আইনস্টাইন’ হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানী। ‘আইনস্টাইন’, সূর্যের চালিকা-শক্তির রহস্য বের করেছিলেন স্রেফ টেবিলে বসে, অঙ্কের ও কল্পনা শক্তি প্রয়োগ করে। তিনি বলেছিলেন E=MC2 যার অর্থ পদার্থের ভরের বিনিময়ে শক্তি ও শক্তির বিনিময়ে ভরযুক্ত পদার্থ পাওয়া যায়।

(চলবে) na

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:২৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: খুবই চমৎকার একটি পোস্ট দিয়েছেন।
পাঠ করে বিমোহিত হলাম।
আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪৭

শিয়াল মামা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুন্দর পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ রইলো।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪৮

শিয়াল মামা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখের বিষয় এই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখার জন্য আমি থাকবো না।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪৯

শিয়াল মামা বলেছেন: সত্যই। তবে আমাদের প্রজন্ম থাকবে। তার জন্যই তো আমরা এত ব্যাকুল হয়ে কাজ করছি মাত্র।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:০৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চমৎকার :)

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪৯

শিয়াল মামা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:১৮

আলোর_পথিক বলেছেন: সত্যিই দারুন লেখা, যেভাবে ভবিষ্যতের চিত্র এঁকেছেন তা ভাবতে সত্যিই ভাল লাগছে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৫০

শিয়াল মামা বলেছেন: ধন্যবাদ। মানবজাতির ভবিষ্যৎ ভাল হবেই হবে। আমাদের প্রজন্ম অসাধারণ এক পৃথিবী পাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.