নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পকার

গ্রিন জোন

গল্পকার

গ্রিন জোন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা (ছোটগল্প)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

কলেজ থেকে ফিরেই ব্যাগটা ঘরের খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তিনা ছুটল বাবার ঘরের দিকে। ঘরে বাবা নেই, বেরিয়ে গেছেন সকালে। কালকের পুরো সময় অস্থিরতায় কেটেছে তিনার। কারণ বাবা বলেছিলেন, সকালে দেখা করে কলেজে যেতে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি।
ভোরে ক্যামিস্ট্রির অতিরিক্ত ক্লাস ছিল, তাই বাবার সঙ্গে দেখা করা হয়নি।
গত কয়েকদিন ধরে বাবার মনটা খারাপ। তবে বাবা কাউকে কিছুই বলেননি। কয়েক দিন ধরে মায়ের মনের ঈশান কোনেও কালো মেঘ লক্ষ্য করেছে তিনা।
তবে গুরুতর মনে হয়নি তিনার কাছে। হঠাৎ কোনো কোনো সমস্যা হঠাৎ দেখা দিলে মায়ের মন এমন খারাপ থাকে।
ঝটপট ফ্রেস হয়ে নেয় তিনা। ফ্রেসনেস মূলত জন্মগতভাবেই তিনার মধ্যে রয়েছে। নতুন করে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হলে তিনা যেন একেবারে চকচকে। মেয়েটার মধ্যে অসাধারণ ব্যক্তিত্ববোধ, যা চলার পথে দারুন কাজে দেয়। আর এই গুণের জন্য তিনাকে সমীহ করে চলে সবাই। যেকোনো ছেলে ওর ধারে কাছে আসতে পারে না। কেউ কোনো কথা বলতে চাইলেও তিনার সাথে হিসাব-নিকাশ করেই কথা বলে। এই ব্যক্তিত্ববোধের গুণটাই তিনাকে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি দিয়েছে আশপাশের মানুষের কাছে। এজন্যই ইমতিয়াজ তিনাকে আরও বেশি ভালবাসে। আরও বেশি আকড়ে ধরতে চায়।
ইমতিয়াজ তিনার বন্ধু। ছেলেটা বেশি সিনিয়র না হলেও তিনার সঙ্গে তার অনেকদিনের বন্ধুত্ব। তিনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েই বলা যায় তিনাকে জীবনসঙ্গী করে নিতে চায় সে। তাছাড়া তিনার বাবা মোহাইমেন বাবর ইমতিয়াজের বাবার বন্ধু। বাবর সাহেব তিনা ও ইমতিয়াজের বিষয়টি অবগত আছেন।
ইমতিয়াজের সঙ্গে তিনার পরিচয় হয় সেকেন্ড ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ে। বাবা ধনাঢ্য হওয়ায় ইমতিয়াজ কলেজে বিশেষভাবে পরিচিত। তাছাড়া সে ভাল ফুটবল খেলোয়াড় এবং স্থানীয় যুবক। কলেজের দক্ষিণ গেট পেরিয়ে ডান দিকে যে পনের তলা ভবন দেখা যায় তার একটা ফ্লাট ওদের। উপশহরে আরও কয়েকটা বাড়ি আছে ইমতিয়াজের বাবার।
ফাইনাল ইয়ারটা শেষ করেই ইমতিয়াজের পরিকল্পনা সে জিআরই কোর্সটা সম্পন্ন করে স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবে।
সম্বিত ফিরে পায় তিনা। এখনও খাওয়া হলো না। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় সে। মুখটা অনেকটা প্রসন্ন। ইমতিয়াজকে ভাবতে তার ভাল লাগে। ইদানিং তাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবে সে। তবে বিষয়টিকে চূড়ান্ত মনে না করে খুব বেশি প্রশ্রয় দেয় না।
রান্নাঘরে ঢুকতেই আপু.. ডাকে ফিরে তাকায় তিনা। স্নেহের ভাইটি স্কুল থেকে ফিরেছে। ওর নাম রাতুল। ক্লাস সেভেনে উঠেছে মাত্র। রাতুলের হাতে দৈনিক পত্রিকা। বাবার পত্রিকা। এ পত্রিকায় কাজ করেন তিনার বাবা মোহাইমেন বাবর। জেলা প্রতিনিধি তিনি। পত্রিকার হেডলাইনগুলো গড় গড় করে পড়ে শোনাচ্ছে রাতুল। তিনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকিয়ে শুনছে খবরগুলো।
রান্না ঘরের দরজায় এসে দাাঁড়িয়েছে মা মনোয়ারা বেগম। ছেলের পড়তে পারার দক্ষতায় তিনিও মুগ্ধ।
আপু…। ডাক দেয় রাতুল। কি বলবি বল.. তিনার গলায় আদরের সুর। তিনা খেতে বসেছে। রাতুলের প্লেটেও সাদা ভাত ভর্তি। জামান স্যার বলেছেন আব্বুর পত্রিকা নাকি বন্ধ করে দেবে সরকার। রাতুলের কথায় চমকে ওঠে তিনা ও মনোয়ারা। একঝাঁক উৎকণ্ঠা দুটি মুখের ওপরে ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে যায়।
আরও বিষণœ হয়ে উঠেছে মনোয়ারার মুখ। তিনা মায়ের কাঁধে হাত রেখে বলে চিন্তা করো না মা। রিজিকের মালিক আল্লাহ।
মনোয়ারা জানে স্বামী গত তিনমাস ধরে বেতন পান না। দোকানের ভাড়ায় পাওয়া মাত্র ক’টাকায় টিনটিন করে চলছে সংসার। আড়াই লাখ টাকা লোন নিয়ে তিনার যে জটিল অপারেশন করা হয়েছিল, তার কিস্তি দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তিনা-রাতুল এসবের কিছুই জানে না। দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মনোয়ারার। স্বামীর অসহায় মুখটা বার বার ভেসে উঠতে থাকে মনে। বালিশে মুখ লুকায় মনোয়ারা। সকালে সেই যে বেরিয়ে গেছে এখনও ফেরেনি লোকটা।
বাবর সাহেব রাতে ফেরেননি। ফোনে কোনো যোগাযোগও করেননি। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই কেটে গেছে মনোয়ারার রাত। তিনা-রাতুলকে মোটেও বুঝতে দেননি মনোয়ারা। তিনা ঘুমানোর আগে একবার জিজ্ঞেস করে বাবার কথা। মনোয়ারা প্রতিদিনের মতো দেরি করে ফিরবেন বলে জানিয়ে দেয় তিনাকে।
সূর্যটা সকালে আলো ছড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন যেন চারদিক বিষণœ। ফোন বেজে ওঠে তিনার। ওপার প্রান্ত থেকে ভেসে আসে সালাম। সালামের জবাব দিতে গিয়ে মুচকি হাসে তিনা। ফোনে কথা বলার শুরুতে হ্যালো বলার পরিবর্তে সালাম দিয়ে শুরু করার মজাটা তিনাই শিখিয়েছে ইমতিয়াজকে।
ঝটপট কলেজের পথে বেরিয়ে পড়ে তিনা। তিনার পা আজ যেন চলছে না। কাপড় পায়ে জড়িয়ে গেল একটু আগেও। প্রায় পড়েই যাচ্ছিল ও। আকাশে হালকা মেঘ। গলির ফাঁক দিয়ে নীল আকাশে খ- খ- মেঘের সারি। ক্রমশ ঘন হতে শুরু করেছে মেঘগুলো। একঝাঁক কাক চিল্লাতে চিল্লাতে অদূরে মানুষের জটলায় গিয়ে থেমে যায়। সামনে চলে আসে জটলাটা। পুলিশের একটি ভ্যান ঘিরে মানুষগুলো এগিয়ে আসছে। ভ্যানের মেঝেতে বিছানায় মোড়ানো একটি লাশ। আতঙ্কে অন্যপথে সটকে পড়ে তিনা।
ওইতো কলেজের দক্ষিণ গেট দেখা যাচ্ছে। রিকশা থেকে নেমে পড়ে তিনা। এখানেই আসবে ইমতিয়াজ। মুঠোফোন বেজে ওঠে তিনার। চমকে ওঠে ও। ফোনের রিংটন কেন যেন ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছিল। এমন কোনোদিন হয়নি। ইমতিয়াজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনা ফোনটা রিসিভ করে..। চিৎকার..বাবা..। ইমতিয়াজের কোলে লুটিয়ে পড়ে তিনা।
বাবর সাহেবের আত্মহত্যার একমাস পার হয়ে গেছে। অশ্রুভরা চোখে কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে তিনা। ইমতিয়াজ আসবে। দেড়ঘণ্টা হয়ে গেল কিন্তু ইমতিয়াজ এলো না। ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনার চোখে গল গল করে বেরিয়ে আসে অশ্রু।
ঝাপসা চোখে বাবার রেখে যাওয়া চিরকুটটা মেলে ধরে তিনা। ইমতিয়াজ দেখতে চেয়েছিল ওই চিরকুট। … মা-রে.. আমি তোদের ছেড়ে যেতে চাইনি…ওরা পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে..ঋণের কিস্তি দিতে পারছিনা..ওরা আমার দুনিয়াকে জাহান্নাম করে দিতে চায়.. তাই পালালাম…।
গণ্ডদেশ অশ্রুতে ভিজে উঠেছে। ঝাপসা চোখে একাকার হয়ে গেছে কলেজের ভবনগুলো। বাবার ছবি ভেসে ওঠে মনে। অস্ফূট স্বরে বেরিয়ে আসে বাবা..।
সমাপ্ত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০১

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

গ্রিন জোন বলেছেন: ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.