নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক

শেহজাদ আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন দেয়া আসলেই কি অযৌতিক বা অনুচিত?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

(১)



গত কিছুদিন আগে দেশে ক্রিকেট উৎসবের মহোৎসব বসেছিল এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সৌজন্যে। তার পাশাপাশি কিছু মানুষ দাবি তুলেছিল যে বাংলাদেশ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের অন্য কোন দলকে সমর্থন করা চলবেনা। এর পাশাপাশি স্টেডিয়ামে অন্য দেশের পতাকা বহন করার এবং তা প্রদর্শন করা তো যাবেনা-ই।



এই ব্যাপারে তারা ব্লগে এবং মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি করেছে। প্রথম আলোতে ফারুক ওয়াসিফ এই ব্যাপারে একটা পুরো প্রন্ধই রচনা করে দিয়েছেন, “খেলায় পাকিস্তানকে সমর্থন কেন?”

( Click This Link )



আমার বক্তব্য হল, ঢালাওভাবে বিষয়টা না দেখে আরও র্যাlশনালী বা লিবারেলভাবে বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমাদের দেশে স্পষ্টতই আইন আছে দেশের মাটিতে অন্যদেশের পতাকা না উড়ানোর ব্যাপারেঃ



“Except as stated in the above Rules, the flag of a Foreign State shall not be flown on any car or building in Bangladesh without the specific permission of the Government of the People’s Republic of Bangladesh.”

(People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, article 9.IV)

(http://www.cadetcollegeblog.com/adjutant/43624)



তো, এইখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো আসলেই একটা বেআইনি কাজ। বাংলাশের অধিবাসী হয়ে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকা উচিত নয়। সেইক্ষেত্রে সংশয় বা অস্পষ্টতার কিছু নেই।



কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, কিছু মানুষ অন্য দেশকে সমর্থন দেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর রাগ প্রকাশ করে ফেসবুক আর ব্লগে বিভিন্ন মতামত দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে , বাংলাদেশের বলতে গেলে ৫০-৬০% লোক যে বাংলাদেশের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। পাকিস্তানকে যে কোনমতেই সমর্থন করা যায়না, সেই ব্যাপারে তারা অনেকেই অনেক অনেক যুক্তির অবতারণা করেছেন, এমনকি পাকিস্তানকে যারা সমর্থন করে, তাদের রাজাকার, নব্য রাজাকার, রাজাকারের দোসর, ছাগু, পাকি জারজ ইত্যাদি নানান ধরণের তকমা দিয়ে ভরিয়ে ফেলছিলেন।



কয়েক বছর আগে রাহিন রায়হান নামের এক ব্লগার (সম্পর্কে আমার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দের ছোট ভাই) প্রথম আলো ব্লগে লিখেছিলেন, “একালের নব্য যুদ্ধাপরাধী আবার কারা?আমি আসলে আমাদের তরুণ সমাজের সেই অংশটার কথা বলছি যারা নিজ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে উদাসীন।দেশের তরুণ সমাজের বড় একটা অংশ কিন্তু এদের অন্তর্ভুক্ত।পাকিস্তানের খেলা হলে তাদের গ্যালারীতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে।তাদের গালে আঁকা থাকে পাকিস্তানের পতাকা।এবং হয়ত বুকেও। এমনকি বাংলাদেশের সাথে খেলা হলেও এরা অনেকেই প্রকাশ্যে এবং অনেকেই মনে মনে পাকিস্তানের শুভকামনা করে থাকে।বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হারলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় “yahooooo Pakistan jitse.shabash Pakistan!!!!!!!!”. তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।অবাক হয়ে ভাবি এরা কি আসলে বাংলাদেশি?এদের যুক্তি পাকিস্তানের প্লেয়াররাতো আর ১৯৭১ এর জেনোসাইডে অংশ নেয়নি।তো তাদের সমর্থন করলে দোষ কোথায়?

না । এই যুক্তি আমি খন্ডাবো না।সত্যি বলতে আমার রুচি হয়না।এই নব্য রাজাকারদের আমার বোঝানোর কিছু নেই”।

(http://prothom-aloblog.com/posts/7/145671)



আসুন, আমরা বুঝতে চেষ্টা করি, এই ধরণের তকমা দেয়া আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত , সেই ব্যাপারটা। আর বুঝে দেখি আসলে এইসব ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদির দাবিগুলো আসলে কতটা বাস্তবসম্মত।



(২)



একসময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টেস্ট বা ওয়ানডে কিছুই খেলতো না। বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাস্টাস পায়, আর ২০০০ সালে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। তার আগ পযন্ত দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য ক্রিকেট নেশনকে সমর্থন করতে হয়েছে।



পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ বলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন করে এসেছে। তবে এটি পাকিস্তানকে সমর্থন করার একমাত্র কারণ নয়। পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেতের পরাশক্তিগুলোর অন্যতম অনেকদিন ধরেই। তারা ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ২০০৯ সালে টি-তোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকটের শিরোপা জেতে। এর আগে ও পরে তারা অসংখ্য টুর্নামেন্ট এবং দ্বি-পাক্ষিয় সিরিজ জয়লাভ করেছে বিশ্বের সব ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে। তবে, শুধু সাফল্য দিয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেত-উতকরষতা বিচার করা যাবেনা। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা যাকে বলা হয়, “The Game of Gloriuos Uncertainty”. আর ক্রিকেট যদি অনিশ্চয়তার খেলা হয়, তবে এর সবচেয়ে সক্ষম ও বাস্তব উদাহরণ হল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। তারা এমন একটা দল যারা একটা হারা ম্যাচ, যেখানে জয় অসম্ভব মনে হয়, সেখান থেকেও ম্যাচ জিতে আসে। তাদের খেলায় তাই আছে অনিশ্চয়তা, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা।



তবে, মানুষ যেহেতু জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে, হারতে হারতে জিতে যাওয়া ম্যাচের কথাই বেশি মনে রাখে, তাই পাকিস্তানের নৈপুণ্য ভাস্বর আসাধারণ সব জয়কেই মানুষ বেশি মনে রাখে। যেমনঃ ১৯৮৪৫ সালে শারজায় জাভেদ মিয়াদাদের শেষ বলে মারা ছক্কায় অথবা ২০১৪ সালে আফ্রিদির পরপর দুই বলে ছক্কা মেরে দলকে জেতানোর স্মৃতিই মানুষের চোখে বেশি ভাসে।



আমি যে কথা এখানে স্পস্ট করে বলতে চাচ্ছি, সেটা হল বাংলাদেশের মানুষ বাস করে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের নিজেদের জীবনেও অনেক রকম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। হরতাল, রাজনৈতিক সংঘরষের কারণে মানুষ জানেনা যে, সে আজ বাসা থেকে বের হলে সুস্থমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা? মধ্যবিত্ত বাঙালি জানেনা সামনের মাসের বাড়িভাড়া সে ঠিকমত দিতে পারবে কিনা, যদি বাড়িওয়ালা বছরের পর বছর ভাড়া বাড়িয়েই চলেন।



তবুও তারা দিনশেষে ‘যুদ্ধজয়’ করে বাসায় ফিরে আসে। মাস শেষে সে টেনেটুনে ভাড়া ঠিকই দেয়।

অনিশ্চয়তার ঘোরাটোপে বাস করা বাংলাদেশের মানুষ, তাই পাকিস্তানের পারফরম্যান্স বা খেলার সাথেই যেন নিজেদের জীবনের মিল খুজে পায়। পাকিস্তান তাই নিজের অজান্তেই তাদের কাছে প্রিয় ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছে।



(৩)



আমাদের সমাজে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে প্রতিবাদের ভাষাই হল পাকিস্তান বিরোধিতা করা। উগ্র জাতীয়তাবাদী এই সকল লোক যে কোন ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনা, নিন্দা আর মুন্ডুপাতকেই দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসেবে মনে করেন, সে ইস্যু বাস্তবসম্মত বা যুক্তিযুক্ত হোক বা না হোক।

যেমন সচলায়তন ব্লগে ধ্রুব আলম নামে একজন কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলেন “পাকিস্তান ভাল খেলে, তাই সমর্থন দেই। আসলেই?” নামে। সেখানে তিনি কিছু হাস্যকর স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে প্রমাণ চেষ্টা করেছেন যে, পাকিস্তান আসলেই অতটা ভাল খেলেনাঃ

( http://www.sachalayatan.com/guest_writer/51688 )



অথচ, তার দেয়া পরিসংখ্যান থেকেই এটা বোঝা যায় যে, পাকিস্তান অসাধারণ একটা ক্রিকেট দল। ধ্রুব আলম নিজেই লিখেছেন, ২০০০ সালের পর থেকে পাকিস্তান ভারতের সাথে ৪৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে জয়লাভ করেছে ২৫ টিতে, হেরেছে ২৩ টিতে।



সেই লেখার শেষে এই উগ্র জাতীয়তাবাদী লিখেছেন, “ছাগলামি ছাড়ুন, সাহস নিয়ে অন্তত স্বীকার করুন যে পাকিস্তান ভাল ক্রিকেট দল নয়। “



অথচ একজন পক্ষপাতহীন মানুষ তার লেখা দেখলেই বুঝতে পারবে যে এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ভাল ক্রিকেট দলের স্বীকৃতিটাই লুকিয়ে আছে।



কাজেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশী সমর্থকদের ছাগল প্রমাণ করতে গিয়ে লেখক নিজেই যে একটা ছাগল সেটাই কি প্রমাণ করলেননা?



সুষুপ্ত পাঠক নামের এক ব্লগার তার ব্লগে লিখেছেন যে, “আমরা মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না।“

(Click This Link)



এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় কোন টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারে না দেখেই কিন্তু মানুষ পাকিস্তান বা ভারতকে অনেকটা বাধ্য হয়েই সাপোর্ট করে। কারণ, তাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে, যেটা বাংলাদেশ দলের নেই। আর বাংলা ভাষাভাষী অন্য ধর্মের অন্য কোন দেশও তো সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে সাথে খেলে না যে বাংলাদেশের মানুষ সেই দেশকে সমর্থন করবে। তাই, এখানে মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না’—সেই কথা বলাটাও বোকামি। আর এখানে প্রশ্ন রাখতে হয় যে, বাঙ্গালী হলে কি একটা মুসলিম দেশ ভাল খেললে তাকে সাপোর্ট দেয়া যাবেনা?



এরকম আরও হাজারো ছাগল আমাদের দেশে রয়েছে, পাকিস্তান তো পাকিস্তান, পাকিস্তানের মানুষজনদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ‘মারখোর উমুক’, ‘মারখোর তুমুক’ টাইটেল লাগিয়ে দেয়, সেই লোকটা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সজ্জনই হোকনা কেন। দেশের প্রয়জনে, দেশের ক্রান্তিলগ্নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার, মাঠে নামার দরকার এরা অনুভব না করলেও মনে মনে একটা প্রশান্তি তারা লাভ করে এই ভেবে যে—“যাক, আর কিছু না হোক পাকিস্তান, পাকিস্তানী আর পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের সমর্থকদের তো অন্তত ফেসবুক আর ব্লগে শোয়ায় দিছি...”



(৪)



খেলাধুলার ময়দানে মানুষ সেই সব ক্রিকেট শক্তিকেই সমর্থন দিয়ে থাকে, যারা কিনা অনেক দূর যাওয়ার, বিশেষ করে শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। যেমন, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। তাই, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দলকে সমর্থনের প্রয়োজন মনে করেনা।



তাইতো, সাফ ফুটবল বাংলাদেশে আয়োজন করা হলেও পাকিস্তানের বা ভারতের ম্যাচের সময় পাক বা ভারতী পতাকা উড়াবার ঘটনা চোখে পড়েনা।



কিন্তু, ক্রিকেট খেলার ব্যাপারতা ভিন্ন। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফেভারি্ট থাকেনা। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যাতা নেই। বিশ্বের সেরা দল হিসেবে র্যািঙ্কিং-এর ১-২-৩-এ থাকার যোগ্যতাও হয় নাই। এখানে স্বাভাবিকভাবেই তাই মানুষ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দলকেই সাপোর্ট করে। তাইতো, ভারত বা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন দিতেই তাদের ম্যাচে বাংলাদেশের মানুষেরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি নিয়ে আসে। এসব দলকে মানুষ সমর্থন দেয় এই জন্য যে, তারা চ্যাম্পিয়ন দলের সমর্থনকারী হতে চায়। বাংলাদেশের যদি সেইসব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা থাকতো, তবে সাফ ফুটবলের মত সেইসব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই শুধুমাত্র সমর্থন পেত। অন্য কোন দেশের সমর্থন দিতে মানুষ টিভির সামনে বসতোনা, বা স্টেডিয়ামে যেতনা।



আর এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন। বাংলাদেশ টেস্ট বা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার অনেক আগে থেকেই পাকিস্তান বা ভারত বিশ্ব ক্রিকেটের সফল দল এবং বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই তাদের সমর্থন করে এসেছে।



এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ যতদিন না পর্যন্ত ক্রিকেটীয় সাফল্যে ভারত-পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সমপর্যায়ে যেতে না পারছে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ অন্য দলকে সাপোর্ট করবেই।



আর একটা মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেই দেশের বেশিরভাগ মানুষ সাপোর্ট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ইসলাম ধর্ম জিনিসটা বাংলাদেশের মুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে অনেক গভীরভাবে কাজ করে। পাকিস্তানের চিত্তাকর্ষক, রোমাঞ্চকর খেলার ধরনের কথা না হয় আবার উল্লেখ নাই করলাম। এজন্য তাদের নব্য রাজাকার বলা শুধু ভুলই নয়, আমানুষিক। এখানে আমি ‘সবুজ’ নামে আমার এক ঢাকা কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কথা উল্লেখ করবো, যে কিনা পাকিস্তানের সমর্থন করে, তবে অবশ্যই বাংলাদেশের পর। এইবারের এশিয়া কাপ ২০১৪-এ বাংলাদেশ-পাকিস্তান’ ম্যাচে বাংলাদেশের নিশ্চিত জেতা ম্যাচ আফ্রিদি যখন একের পর এক ছক্কা মেরে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ও আমাকে বললো, “ভাই,আফ্রিদি একটা কইরা ছক্কা মারে, আর আমার মনে হইতাছে কেউ আমার বুকে একবার কইরা ছুরি মারতেছে ভাই”।



এখন, উগ্র জাতীয়তাবাদী ছোট ভাই রাহিন রায়হানের বক্তব্য অনুযায়ী আমার আরেক ছোট ভাই সবুজতো তাহলে একজন ‘নব্য রাজাকার’। একজন ‘নব্য রাজাকার’-এর বাংলাদেশের পরাজয়ে বুকে ছুরির আঘাত পাওয়ার মত ব্যাথা হয়! ভালো তো, ভালো না?



সবুজের মত মানুষকে নব্য রাজাকার ট্যাগ দিতে গেলে বিশেষ পরিমাণে নিচু মনমানসিকতার মানুষ হতে হবে। রাহিন রায়হানের মত মানুষদের নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, আসলে তার নিজের মনমানসিকতা কোন পর্যায়ের...!



আমরা শুধু পাকিস্তান পাকিস্তান বলি, অন্য দেশগুলোর কথা বলি না কেন, ভারতের কথা বলি না কেন? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যদি দেশকে ভালোবেসে হয়, তাহলে ভালো কথা। কিন্তু ইসলাম বিরোধীতাঁর কারণে যদি হয় তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।



কই, ভারতকে তো দেশের ১০-১৫% লোক সাপোর্ট করে। ভারতকে সাপোর্ট করা ঠিক হবেনা, এমন কোন লেখা তো চোখে পড়ে নাই। ৭১’ সালের পর ভারত কি আমাদের সাথে কম করেছে? গতকালই তো বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা দাবি করলেন, “বাংলাদেশের খুলনা থেকে সিলেট, এক তৃতীয়াংশ নাকি ইন্ডিয়ার দখলে নেয়া দরকার”।



আর এটাওতো সত্য যে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সহমরমী, অন্য কোন দেশের ক্রিকেটাররা তা কমই আছেন।



৭১’ সালে পাকিস্তানের বর্বর ভূমিকার কথা সবাই জানে। পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেজন্য ক্ষমা চায়নি, এটাও সত্য। কিন্তু, বাংলাদেশে সরকার তো অনেক আগেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিয় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করা অনৈতিক বা অনুচিত হবে কেন?



পরিশিষ্টঃ যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থনের বিরোধিতা করছেন, তারা আশা করি পাকিস্তানের সাথে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিরোধিতাও করবেন । সার্কের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান যদি আঞ্চলিক উন্নয়নে একটা ভাল পরামর্শ দেয়, আর বাংলাদেশ তাকে সমর্থন করে, তাহলেওতো (কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদীর চোখে) একাত্তরের চেতনার অবমাননা হবে, তাই নয় কি...?



যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি ক্রিকেট-বিশ্বে সত্যিই পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, তবে আশা করা যায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলোকে সমর্থন দেয়ার প্রবণতা অনেক কমবে। ‘জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়া’র বর্তমান ধারা বদলে তারা ‘নিশ্চিত হারা’ ম্যাচেও দেশকে জয় উপহার দেবে, নাটকীয় ও রোমাঞ্চকরভাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিকট ভবিষ্যতে সেই সুখের দিন আমাদের উপহার দেবে বলে বিশ্বাস রাখি।

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: ভারতকে বলছি----এক ফোটা রক্ত থাকতে এক চুল মাটি কাউকে দেব না, যদি নিতে হয় আমাদের বুকের তাজা রক্ত ভেজা লাল মাটি নিবি

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩

শেহজাদ আমান বলেছেন: হুম!

তবে আমার লেখাটি কিন্তু অন্য আরেকটি বিষয়ে। লেখাটি পড়ে বিস্তারিত মন্তব্য জানাবেন আশা করি!

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

মো: রায়হান চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর লেখা । ভাল লাগলো ।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

শেহজাদ আমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার জন্য ফুলেল শুভেচছা !

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০০

টারমিনেটর বলেছেন: ভালো লাগলো।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

শেহজাদ আমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার জন্য ফুলেল শুভেচছা

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:১৮

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: আপনার লেখায় খুব চমৎকারভাবে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। আপনার লেখা থেকে কিছু প্রশ্ন মনে জাগছে, আশা করি উত্তর দিবেন। আপনার লেখা মতে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বর্বরতার সাথে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা জড়িত ছিল না। আমিও একবাক্যে মেনে নিচ্ছি সে কথা।
আপনি যুক্তি দিচ্ছেন ১৯৭১ এর পাকিস্তানি কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি ক্রিকেট দলকে অপছন্দ করার কারণ নেই। পাকিস্তান ভাল খেলে বলেই তাদের সমর্থন করাই যায়। আবার সাথে সাথে ধর্মকেও টেনে এনেছেন খেলার মাঝে! খেলার সাথে ইতিহাস কিংবা রাজনীতি না জড়াতে আপনি লিখলেন কিন্তু আপনি এর মাঝে ধর্মকে কেন টেনে আনলেন তা বুঝলাম না। আশাকরি ক্লিয়ার করবেন।


অনিশ্চয়তার ঘোরাটোপে বাস করা বাংলাদেশের মানুষ, তাই পাকিস্তানের পারফরম্যান্স বা খেলার সাথেই যেন নিজেদের জীবনের মিল খুজে পায়। পাকিস্তান তাই নিজের অজান্তেই তাদের কাছে প্রিয় ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়মিত বিরতিতে ম্যাচ জিতছে। কোন কোন ম্যাচ জিততে জিততে হেরে যাচ্ছে। সেখানে একজন বাংলাদেশিকে কেন বাংলাদেশকে বাদ রেখে পাকিস্তানের সাথে জীবনের মিল খুজতে হয়????

আর এখানে প্রশ্ন রাখতে হয় যে, বাঙ্গালী হলে কি একটা মুসলিম দেশ ভাল খেললে তাকে সাপোর্ট দেয়া যাবেনা?

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যদি দেশকে ভালোবেসে হয়, তাহলে ভালো কথা। কিন্তু ইসলাম বিরোধীতাঁর কারণে যদি হয় তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।

খেলার মাঝে রাজনীতি না জড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আপনি বারবার ধর্মকে ব্যাবহার করছেন। খেলার মাধ্যমে ধর্মের কি উপকার হচ্ছে তা অন্তত আমার বোধগম্য হয় নি!!!

ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে উদাহরণ দিচ্ছি-

মনে করুণ পাশাপাশি দুইটি পরিবারের মধ্যে অতীতে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এক পরিবারের লোক অন্য একটি পরিবারের উপর অনৈতিকভাবে হামলা চালায় । হামলাকারীরা ঐ পরিবারের মা বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করে এবং হত্যা করে।
তিন যুগ পর হামলাকারী পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম খেলাধুলায় খুব ভাল। আর যাদের উপর হামলা হয়েছিল তাদের সন্তানরা খেলাধুলায় পিছিয়ে আছে।
এখন আপনি, যেই পরিবারটার উপর হামলা হয়েছিল সেই পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। আপনি কি করবেন- খেলাধুলায় ভাল বলে হামলাকারীদের পরিবারটাকে সমর্থন করবেন??? ধর্মের দোহাই দিবেন ??? নাকি নীরবে তাদের ঘৃণা করবেন???

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

শেহজাদ আমান বলেছেন: দেখেন ভাই, খেলার মধ্যে ধর্ম টেনে এনে আমি বলি নাই যে আমরা মুসলমান বলে পাকিস্তানকে আমাদের সাপোর্ট করতে হবে। কিন্তু কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদি সবসময়ই রাজনৈতিক কারণে যে পাকিস্তানকে সমর্থন করা যাবেনা, পাকিস্তানকে যেসব বাঙ্গালী সমর্থন করে থাকে, তারা হল পাকিস্তানী জারজ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে থাকেন।

সো, পার্থক্যটা আশা করি আপনার কাছে পরিস্কার।

আর আমার লেখাটা ভাল করে আবারো পড়লে আপনি আপনার বাকি প্রশ্নগুলোরও উত্তর পেয়ে যাবেন।

# আমার পরিবারের সদস্যের উপর খুন ও নির্যাতন যদি পাকিস্তানীরা করতো, তাহলে যেসব পাকিস্তানী এসব করেছে, তাদেরই ঘৃণা করতাম। সব পাকিস্তানীকে ঢালাওভাবে নয়। পাকিস্তানী ক্রিকেট দলকে তো নয়ই।

আপনার কাছে একটা প্রশ্ন – “আপনি কি পাকিস্তানের হামিদ মীর বা আসমা জাহাঙ্গীরকেও ঘৃণা করতে বলেন?


৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:




আমি জানি না আমাদের সরকার কেনো ক্ষমা না চাওয়ার পরও কেনো পাকিস্তানের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে !

আপনার লেখা ও যুক্তি খারাপ নয়। আমার কিন্তু ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার, জাভেদ মিয়ানদাদ, সাইদ আনোয়ার দের খেলা অপছন্দ না কিন্তু তারপরও আমি পাকিস্তান সমর্থন করি না বা আমার বিবেক সমর্থন করতে দেয় না। কেননা পাকিস্তান ক্রিকেট দল দেশ পাকিস্থানের রিপ্রেজেন্ট করে থাকে। আর আমি একজন বাংলাদেশী হিসেবে সেই দেশ কে সমর্থন করা মানে আমার দেশের সাথে বেঈমানি করা। আমার দেশের ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের অপমান করা হয়ে যাবে। ধর্মের কথা এনে বারবার আমার ধর্মের অপমান করেন ! পাকিরা সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে পরিচিত। কেন জানেন তারা তাদের নিজ দেশের বাইরেও পৃথিবীর জগন্যতম কাজগুলো তাদের দ্বারাই সংঘটিত হয়ে থাকে।


এখন আপনি কেনো সমর্থন করবেন সেটা আপনার বিষয়।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

শেহজাদ আমান বলেছেন: আমার পরিবারের সদস্যের উপর খুন ও নির্যাতন যদি পাকিস্তানীরা করতো, তাহলে যেসব পাকিস্তানী এসব করেছে, তাদেরই ঘৃণা করতাম। সব পাকিস্তানীকে ঢালাওভাবে নয়। পাকিস্তানী ক্রিকেট দলকে তো নয়ই।

আপনার কাছে একটা প্রশ্ন – “আপনি কি পাকিস্তানের হামিদ মীর বা আসমা জাহাঙ্গীরকেও ঘৃণা করতে বলেন?

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আপনি যদি ব্যতিক্রম বা ২/১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে উদাহরন মনে করেন তাহলে আমার বলার কিছু নাই। আমি কোন মানুষকে ঘৃনা করতে বলছি না আপনাকে। আমি বলছি সমর্থন না করতে। পাকিদের যারাই প্রতিনিধিত্ব করবে আমি তাদের সমর্থন করতে পারি না যতসময় পর্যন্ত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না চাইবে।


২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯

শেহজাদ আমান বলেছেন: পাকিস্তানের কত হাজার বা কত লাখ লোক বাংলাদেশের প্রতি সহমরমি হলে আপনি তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলবেন না, সেটা একটু জানান।

আর হ্যা, পাকিস্তান যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায় সেজন্য আমরা আন্দোলন করতে পারি, বাংলাদেশ সরকার যাতে সেজন্য পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে, সেটার জন্য পথে নামতে পারি; কিন্তু, ঢালাওভাবে সব পাকিস্তানীকে ঘৃনা করা বা তাদের সবার চউদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করা এক ধরনের ফ্যাসিস্ট আর অসুস্থ চিন্তা ছাড়া আর কিছু না।

৭| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৩৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি। আমার মাকে ধর্ষণ করেছে পাকিস্তান। আমি পাকিস্তানকে ঘৃনা করি। আর সেটা যদি হয় প্রতিটি পাকিদের ঘৃনা করা বুঝায় তাহলে তাই আর রক্ত বলে একটা কথা আছে দূষিত রক্ত থেকে ভালো কিছু আশা করা ভুল। ইমরান খান নিয়াজী কি বলেছে জানেন তো ! আবারও ২/১ বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোন উদাহরন হতে পারে। আমরা বাংলাদেশীরা অনেক সহনশীল এবং মানুষকে মানুষ জ্ঞান করি বলেই এখন পাকিদের এই দেশে ঢুকতে দেয়া হয় ব্রাদার। নয়ত কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব পাস করার পর একটা একটা পাকিদের ধরে ফাঁসি দিয়ে দেয়াই উচিৎ কাজ হতো । আর যেসব বাংলাদেশী যারা পাকি পাকি করে তাদের চৌমাথায় দাড় করিয়ে পিটানো উচিৎ। আমাদের সংসদে যা পাশ হবে সেটা আমাদের সকলেই দায় আছে। কেননা ৩০০ সাংসদকে আমরা সংসদে ভোট নিয়ে নির্বাচিত করি আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে।


ভালো থাকুন নিরন্তর।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

শেহজাদ আমান বলেছেন: তবে খেলাধুলাকে রাজনীতির সাথে মিলিয়ে ফেলার প্রবণতা থেকে বোধ হয় বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে? সাধারণ মানুষ যদি ভালো ক্রিকেট উপভোগ করতে চায়, শুধু সে কারণেই যদি ভারত বা পাকিস্তান দলকে সমর্থন করে আর এ নিয়ে যদি আমরা তাদের দেশপ্রেম বিবেচনা করি তাহলে তাদের ওপর অবিচার কর হবে কি না তা বোধহয় ভেবে দেখা দরকার।

খেলার মাঠে যে যার দলকে বেছে নিতেই পারে। কেউ পাকিস্তান দলকে সমর্থন করলেই যে সে সেই রাষ্ট্রকে সমর্থন বা পছন্দ করে তা ভাবার কি জায়গা আছে। আবার কেউ ভারতের ক্রিকেট দলকে পছন্দ করা মানেই এই না যে সে ভারত রাষ্ট্রকে পছন্দ করে। ভারতের বিরুদ্ধে শ্রীলংকা দলকে সমর্থন করলে আমরা তা নিয়ে তো উত্তেজিত বা চিন্তিত হয়ে উঠি না। শুধু ভারত-পাকিস্তান নিয়েই আমাদের যতো মানসিক দ্বন্দ্ব।

আবার ভারত-পাকিস্তান এই দু’দলের বিরুদ্ধেই যদি কেউ আফগান দলকে সমর্থন করে, আমরা কি তাকে তালেবান বলবো? আবার অনেকে আফগান ক্রিকেটারদের অনেকে তালেবান বলে আখ্যায়িত করেছেন দেখে খুব বিরক্ত হয়েছি। এধরনের আচরণ, আমি মনে করি, খেলাধুলার মূল চেতনাকে অবজ্ঞা করা হয়।

আমরা এ দেশে অনেক মানুষকে চিনি যারা ইংলিশ, স্প্যানিশ ও ইউরোপের ফুটবল দলকে পছন্দ করেন, তাদের খেলা দেখার জন্য একেবারে পাগল। আমার ভাগ্নে চেলসি দলকে সমর্থন করে, আমার এক প্রাক্তন বস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য পাগল। আমরা কি তাদের ঔপনিবেশিক শক্তির সমর্থক বলে ডাকবো? তা যদি না হয় তবে শুধু ভারত-পাকিস্তানের বেলায় তা হবে কেন?

এবার রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আসি। একজন বাংলাদেশী যদি পাকিস্তানবিরোধী হন, আমরা কি তাকে ভারত সমর্থক বলতে পারবো? আবার কেউ যদি ভারতবিরোধী হন, তাকে কি আমরা পাকিস্তান সমর্থক বলতে পারবো? পাররো না। আমরা কাউকে জোর করে ভারত বা পাকিস্তান সমর্থক বানাতে পারি না।

জাতি হিসেবে ও বাংলাদেশী হিসেবে, পাকিস্তান রাষ্ট্রকে ঘৃ্ণা করে না এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। পাকিস্তান ’৪৭-পরবর্তী সময়ে ও একাত্তর সালে যে বর্বরতা আমাদের ওপর চালিয়েছে, তা ক্ষমা করে দিতে বোধ হয় আরো একশ বছর লেগে যাবে। অন্তত যতদিন না পর্যন্ত ওই রাষ্ট্র আমাদের কাছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমা না চায় এবং আমাদের ইতিহাস নিয়ে ভুল তথ্য দেয়া বন্ধ না করে। বাংলাদেশীদের এই অবস্থান বোধগম্য।

ওদিকে, বাংলাদেশীদের মধ্যে ভারতবিরোধীর সংখ্যা বাড়ছে, অনেক বাড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার পর থেকে এই যে এতো মানুষ ভারতকে অপছন্দ করা শুরু করেছে, এরা কি সবাই পাকিস্তানকে পছন্দ করা শুরু করেছে? পাকিস্তান কি ভারতবিরোধী বাংলাদেশীদের উৎসাহ দিচ্ছে দিল্লিবিরোধী হবার জন্য? এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ আছে

সত্যি বলতে কি, ভারত না থাকলে পাকিস্তানের জন্ম হতো না, আর পাকিস্তানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। তাই কি আমরা আমাদের চেহারা শুধুই ভারত-পাকিস্তান দর্পণে দেখতে চাই?

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪০

শেহজাদ আমান বলেছেন: ভাই আগে বাংলাদেশ সরকারকে বলুন, যাতে করে তারা পাকিস্তানের সাথে আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, যদি পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ও আন্তরিকভাবে ক্ষমা না চায়। সেজন্য, আপনার সামর্থ্য থাকলে আন্দোলন করুন।

খালি ব্লগে আর অনলাইনে হাতি ঘোড়া মেরে আর উগ্র কথা বলে কি লাভ?

আর নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তানের সংসদের শ’খানেক লোক। আর তার বদলে আপনি সব পাকিস্তানীকে ধরে ফাসিতে ঝোলাতে চাচ্ছেন! ভালোই তো, ভালো না?!?

উগ্র আর ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদী হতে হলে জার্মানিতে গিয়ে আবার নাৎসি পার্টি খুলে বসুন। বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের আরও সুস্থ মানসিকতার অধিকারী হওয়া উচিত!

৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



ভাই রাজাকার কাঁদের মোল্লার ফাঁসি হয় কিন্তু তার জন্য সমবেদনা জানায় পাকিস্তানিরা আর সেই পাকিদের সমর্থনের কথা বলছেন !!! এই একটি দেশের সাথে নো কম্প্রোমাইজ যতদিন না তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইছে।

৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

ধুমধাম বলেছেন: "লেখক বলেছেন: আমার পরিবারের সদস্যের উপর খুন ও নির্যাতন যদি পাকিস্তানীরা করতো, তাহলে যেসব পাকিস্তানী এসব করেছে, তাদেরই ঘৃণা করতাম। সব পাকিস্তানীকে ঢালাওভাবে নয়। পাকিস্তানী ক্রিকেট দলকে তো নয়ই"

আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক, আপনার লেখা পড়ে জানতে ইচ্ছা হলো

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩

শেহজাদ আমান বলেছেন: কেন ভাই? পরিচয় জেনে কি হবে, সেটা একটু বলুন না?

আপনি নিজে তো উপনামে আর ছবি ছাড়া আইডি খুলছেন। আপনার নিজের আসল পরিচয়টাও দিবেন আশা করি।

১০| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২৯

খাটাস বলেছেন: আপনি একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক। আপনার সৃষ্টি শীলতায় রাতে অংশ গ্রহন করব ।

১১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




আপনাকে আপনে তো লাইনে চলে এসেছে #:-S #:-S #:-S


খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবেন না কিন্তু ধর্ম মিশানো যাবে তাই না ! মিঃ শেহজাদ আমান আপনি আপনার পোষ্টে ধর্ম মিশিয়ে গেছেন কিন্তু আমি কোথাও আমার কমেন্টের এক জায়গায়ও রাজনীতি মিশাইনি!


এরপর ভালো মতো পড়ে আমার কমেন্টের রিপ্লাই দিবেন। আপনার কমেন্টের বাকী অংশ পড়ার ধৈ্য হারিয়ে ফেলেছি ! পরে এসে যদি ইচ্ছে যাকে কমেন্ট পড়ে না হয় কমেন্ট করবো।


ভালো থাকবেন মিঃ শেহজাদ আমান !!!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

শেহজাদ আমান বলেছেন: আপনি খেলার সাথে রাজনীতি মিশিয়েছেন, সেটা আমি কোথায় বললাম? আমি সেসব মানুষের কথা বলেছি, যারা খেলার সাথে এটা মেশায়...। আপনাকে স্পেশালভাবে ইন্ডিকেট করি নাই।

খেলার মধ্যে ধর্ম টেনে এনে আমি বলি নাই যে আমরা মুসলমান বলে পাকিস্তানকে আমাদের সাপোর্ট করতে হবে। কিন্তু কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদি সবসময়ই রাজনৈতিক কারণে যে পাকিস্তানকে সমর্থন করা যাবেনা, পাকিস্তানকে যেসব বাঙ্গালী সমর্থন করে থাকে, তারা হল পাকিস্তানী জারজ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে থাকেন।

আর সব বাংলাদেশী কিন্তু ধর্মীয় কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে না। অন্য অনেক কারন আছে, যেটা আমি আমার লেখায় বলেছি।

আপনিও ভালো থাকুন! কিপ ইন টাচ!

১২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

তওসীফ সাদাত বলেছেন: ওয়াও !! অসাধারণ যুক্তি !! পানি সত্যি অসাধারণ :)

স্যালুট বস !!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯

শেহজাদ আমান বলেছেন: আপনার স্যালুটের প্রতি উত্তর দিতে পেরে আমিও গর্বিত!

১৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭

তওসীফ সাদাত বলেছেন: আপনি *

১৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

জন কার্টার বলেছেন: ভাইতো দেখি সেরাম বলেছেন ।

সাংঘাতিক একটা ব্যাপার নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন ।

তো ভাইজান আপনি এতদিন কই ছিলেন ??

কেঁচো খুঁড়তে গিয়া দেইখেন, না আবার সাপ বের হয়ে আসে :#> :#> :#>

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮

শেহজাদ আমান বলেছেন: "কেঁচো খুঁড়তে গিয়া দেইখেন, না আবার সাপ বের হয়ে আসে"

আপনার কথাবারতা পরিসকার না। বিষয়টা একটু পরিসকার করেন...।

১৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪৫

আমিজমিদার বলেছেন: বাদ দেন একাত্তরের কথা।
বাদ দেন আমার মায়েরে, বোনেরে ধর্ষণ করসে তার কথা।
বাদ দেন এখনও তারা মাফ চায় নাই সেই কথা।
ভুইলা যান। এইগুলা কিছু না। আগের কথা।
অদৃশ্য।
ভিনি ভিডি ভিসি।

আফ্রিদি, আজমল আমাগো জান। সাল্মান বাট আমাগো কাপিটান। অরা তো গুল্লি করে নাই, ধর্ষণ করে নাই রাইট? এরা একটা কৈরা শট মারে, হাত ঘুরায়া বল করে, দেখলে আমাগো স্পোর্টিং অরগ্যাজম লাইগা যায়। আনন্দে খাড়া হইয়া যায় পশম। ঠিক কিনা?

কিন্তু, অরা যখন জিত্তা কয়- দিস ইজ ফর পাকিস্তান।
অরা যখন সেঞ্চুরি কৈরা চাঁদতারায় চুম্মা খায়।
অরা যখন পতাকা উড়ায়া সিএনএনরে কয়- আওয়ারস ইজ দ্য মোস্ট রাইচাস নেশন।

তহন আপনার কোথাও এট্টু লাগে কি না? এইটা কন, আমার আর কুন জিজ্ঞাসা নাই।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭

শেহজাদ আমান বলেছেন: "কিন্তু, অরা যখন জিত্তা কয়- দিস ইজ ফর পাকিস্তান।
অরা যখন সেঞ্চুরি কৈরা চাঁদতারায় চুম্মা খায়।
অরা যখন পতাকা উড়ায়া সিএনএনরে কয়- আওয়ারস ইজ দ্য মোস্ট রাইচাস নেশন।

তহন আপনার কোথাও এট্টু লাগে কি না? এইটা কন, আমার আর কুন জিজ্ঞাসা নাই।"

ওরা ত সেটা করবেই, পাকিসটান ওডের দেশ না?

ওরা ত আর বাংলাদেশি না যে ওদের ঐ কাজ দেখলে আমাদের খারাপ লাগবে!

ওরা কি বাংলাডেশের পতাকায় সমমান জানাবে?

আপনার কথা ভাই অপ্রাসঙ্গিক, অর্থহীন আর উল্টোপাল্টা

১৬| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

শেহজাদ আমান বলেছেন: কিন্তু, অরা যখন জিত্তা কয়- দিস ইজ ফর পাকিস্তান।
অরা যখন সেঞ্চুরি কৈরা চাঁদতারায় চুম্মা খায়।
অরা যখন পতাকা উড়ায়া সিএনএনরে কয়- আওয়ারস ইজ দ্য মোস্ট রাইচাস নেশন।

তহন আপনার কোথাও এট্টু লাগে কি না? এইটা কন, আমার আর কুন জিজ্ঞাসা নাই।
[/sb

ওরা ত সেটা করবেই, পাকিসটান ওডের দেশ না?

ওরা ত আর বাংলাদেশি না যে ওদের ঐ কাজ দেখলে আমাদের খারাপ লাগবে!

ওরা কি বাংলাডেশের পতাকায় সমমান জানাবে?

আপনার কথা ভাই অপ্রাসঙ্গিক, অর্থহীন আর উল্টোপাল্টা

১৭| ২০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫

Riazkhan বলেছেন: ভাই আমিও আইসি...... :-D। ;-) :-*

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

শেহজাদ আমান বলেছেন: ধন্যবাদ রিয়াজ ভাই ! আপনাকে স্বাগতম ! ইস্টিশনে আমার লেখার লিঙ্কটা অতিথি সেজে আমি নিজেই দিয়েছি! তারপর দেখি আমার এই লেখায় আরও ৬০-৭০ টা হিট পাইছি !

১৮| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:২৩

Riazkhan বলেছেন: ও....ধন্যবাদ ভাই। :-D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.