নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক

শেহজাদ আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বন্ধু, একজন পিতার অক্ষমতা

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫

একটা বিষয়ে মন-মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে আছে। এই মেজাজ খারাপের উৎস এক ‘সেলিব্রিটি পথশিশু’ আর আমার এক আবাইল্লা বন্ধু।

পলাশীতে রাস্তার পাশে থাকা এবং আজিমপুর গার্লস স্কুলে ক্লাস এইটে পড়া সেই মেয়েটিকে সেই এলাকার অনেকেই চেনেন। পথশিশু হয়েও পড়ালেখায় ভাল করায় তাকে নিয়ে পত্রিকায় কিছু প্রতিবেদনও বেরিয়েছিল। তার আসল নাম বলছি না; ধরে নেন তার নাম ‘আসমা’। তাকে প্রথম দেখেছিলাম পলাশীর মোড়ে, ২০১৪ সালের প্রথমদিকে। একটা দেখতে ভাল উঠতি কিশোরীকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার দিকে তাকিয়েছিলাম আগ্রহ সহকারেই। দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমিষ্টি একটা হাসি দিল। আমি তখনই তার সম্মন্ধে মোটামুটি ধারণা করতে পেরেছিলাম। আমি আবার তার কাছে ফিরে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি এখানে কি কর, থাকো কই- এসব। ও বলেছিল, সে রাস্তাতেই থাকে বাপ-মায়ের সাথে। তার পাশাপাশি আমাকে বলেছিল, সে আজিমপুর গার্লস স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে; আর সে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার সেই স্বপ্ন দেখা আমাকেও মুগ্ধ করেছিল। তারপরও আমি তার সম্মন্ধে যেহেতু কিছু ধারণা করতে পেরেছিলাম, তাই তাকে বললাম, ‘ তুমি আমাকে আঙ্কেল বলে ডেকো।‘
এরপর, তার সাথে আমার যখনই রাস্তাঘাটে দেখা হতো, সে আমাকে 'ভাইয়া' বলে ডাকতে চাইলেও, আমি বলতাম, 'আমাকে তোমার আঙ্কেল বলতে পার। আমার দুই বোনের ঘরে ছয়টা ভাগ্নে আছে; কোন ভাগ্নি নেই। তুমি কি আমার ভাগ্নি হবা?’
সে বললো, 'আপনার সাথে আমার বাবার চেহারায় মিল আছে। আপনাকে আমি চাচ্চু বলে ডাকবো।'
আমার নাম্বারটা সে তার মোবাইলে সেভ করেছিল, ‘চাচ্চু’ নামে।
তাকে আমি নিজের ভাগ্নি বা ভাতিজির মতই ভালবাসতাম। দেখা হলে এটা ওটা কিনে দিতাম। ও আমার কাছে আবদার করে এটা ওটা চাইতো। বিদায় নেয়ার সময় ও মাথায় আর গালে হাত বুলিয়ে আদর করে দিতাম।

কিন্তু, ‘আসমা’কে নিয়ে নিদারুণ একটি সমস্যার সূত্রপাত সম্প্রতি। আমার এক রুমমেটের মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল বলে সে আমার একটা সিম নিয়ে ব্যবহার করতে লাগল। ধরি সেই ছেলের নাম ‘আসিফ’। সেই সীমে আসমার নাম্বার সেভ করা ছিল। আমার সিমটা নেয়ার আগে আমি আমার নাম্বার থেকে আসমাকে একটা কল করেছিলাম, সে ধরেনি। পরে যখন আসমা কলব্যাক করল, আমার সেই আবাইল্লা রুমমেট ফোন ধইরা দেখলো মেয়ের কণ্ঠ, আর সাথে সাথে খাতির জমাইয়া দিলো।
পরে সে আমারে বললো, এরকম ‘আসমা নামে একটা মেয়ে ফোন দিছলো। আমি আসিফকে বিস্তারিত বললাম ওর সম্মন্ধে। শুনে আসিফ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিল, ‘ওরে ফেসবুকে দেখে আর কথা বইলা তো মনে হয় না ও রাস্তায় থাকে!’
আমি বলেছিলাম যে আসলেই ওর অবস্থা এইরকম। আর আসিফের মেয়েদের প্রতি দূর্বল চরিত্রটি আমার ভালই জানা ছিল। ও জীবনে অনেক মেয়েকেই ইউজ করছে। তাই, আমি ওকে বলে দিয়েছিলাম যে, তুই আসমার সাথে কিছু করিস না।
কিন্তু, ও আমার কথা না মেনে আসমার সাথে দেখা করল। আমি তখনই উল্টাপাল্টা কিছু্র আঁচ করে বারবার আসিফকে অনুরোধ করলাম যেন ও আসমাকে কিছু না করে। এটাও বলেছিলাম, দেখ আসিফ তুই অন্য মেয়েদের সাথে যা খুশি কর, বা আসমা অন্য ছেলেদের সাথে যা কিছু করুক, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমার কাছের মানুশ হইয়া তুই ওদিকে যাইস না। আসিফও আমাকে এনসিউর করে বললো, ও ওদিকে যাবে না। আর আসমাকে সে বোনের মত দেখে।
কিন্তু, এরপর দিন দুয়েক আগে রাত ২টার সময় ফোনে কথা বলার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি দেখলাম আসিফ ফোনে কোন একটা মেয়ের সাথে রোমান্টিক কথাবার্তা বলছে। ধীরে ধীরে সেই কথাবার্তা একসময় ফোন সেক্সে রুপান্তরিত হল। কিন্তু, আমি যে বিষয়টা খেয়াল করেছি, সেটা আসিফ বুঝতে পারেনি। আসিফ ভেবেছিল, আমি ঘুমাচ্ছি।
পরে আসিফ ঘুম থেক ওঠার আগে ওর মোবাইল চেক করে সন্দেহবশত গতরাতে সে যে মেয়েটার সাথে কথা বলেছে, তার নাম্বারের সাথে আসমার নাম্বারটা মিলিয়ে দেখলাম। দুটো একই নাম্বার দেখে তো আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকলো না। প্রচন্ড রাগে আর দুঃখে আমার শরীর কাঁপছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি এমন এক অক্ষম পিতা যে, আমি আমার বন্ধুকে আমার কন্যাসম সেই পথশিশুর সাথে ফষ্টিনটি করা থেকে রক্ষা করতে পারিনি। আর এমন এক অক্ষম পিতা যে, বন্ধুর এই অনৈতিক আর গর্হিত কাজ থেকে নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনি।

এই ব্যাপার নিয়ে আমার সেই রুমমেট বন্ধুর সাথে এখন আমার সম্পর্ক খারাপ।

যাই হোক, পথশিশু আসমা যখন ছোট ছিল, তখন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছেলেমেয়ে পড়াত। তারা তাকে পড়িয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হতে সাহায্য করেছিল ২০১১ সালে। কিন্তু, এরকম ‘রাস্তার মেয়ে’দের শুধু অক্ষরজ্ঞান দিলেই হয় না; তাদের নীতি আর নৈতিকতার শিক্ষাও যে দিতে হয়, তা সেই সৌখিন সমাজসেবীরা বুঝতে পারেনি। যার কারণে কিছু সময়ের জন্য আসমার পাশে থেকে তারা পরে আর খোঁজখবর নেয়নি।

যারা ২০১১-তে আসমাকে পড়িয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলে তারা কি আসমার পাশে আবারো একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন? এই দুঃসময়ে আপনাদের সাহায্য নতুন করে দরকার আসমার।

আসমা আমাদের সমাজেরই অংশ; সে এখনো একটা বাচ্চা মেয়ে; সে ভুল করতেই পারে; পারে ভুলের ফাদে পা দিতে। এখন আসমাদের জন্য কিছু করার দায়িত্ব এই সমাজের। সমাজের সদস্যরা কি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.