নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলমি লতা ।। গল্প ।।

১৫ ই মে, ২০২১ রাত ৮:১৫




পর পর চার বার মেয়ে জন্ম হয়েছে তাই কলমির স্বামী তাকে আর রাখবে না সংসারে।যেন নারী পুত্র জন্ম দিতে পারে না তাকে রেখে কি লাভ ।।
আবার মেয়ে তাই এই বার কুলের মেয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবে আলফাজ মিয়া । আলফাজ মিয়া মেজাজ এখন চরম খারাপ । চার চারটা মেয়ে তার একটি পুত্র সন্তান নাই ।। এমন বউ তার লাগবে না।
আলফাজ মিয়ার ধানের জমি আর গঞ্জে ভাল ব্যবসা আছে । কোন কিছুর অভাব নেই । গঞ্জের দোকানে বসে এইবার সে খুব লজ্জা পাচ্ছে । মানুষ জন বলছে আলফাজ মিয়া জমি আর ব্যবসা খাবে পরে ছেলে । যার নাই পুত্র তার আবার বংশ কি ?
কলমির শাশুড়ির মন ছেলের চেয়ে বেশী খারাপ । এমন পুত্র বধু দিয়ে কি হবে যে পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারে না। তাই কিছুটা রাগ করে বলল
------ এই বউ রাখা যাবে না । এত জমি জমা ব্যবসা কি সব মেয়ের জামাইরা নিয়ে যাবে ? আমার ছেলের যদি বংশ রক্ষা না হইল তাহলে এমন বউ এই বাড়িতে রাখা যাবে না। আমার ছেলের বয়স আর কত দরকার হলে আবার বিয়ে করাব । আমার চাই একটি নাতি ছেলে ।
বংশের কেউ থাকবে না ? পোলা ছাড়া কি মানুষের কোন দাম আছে ।
কলমির শরীর টা ভাল না । বাচ্চাটা কুলে নিয়ে দেখে চাঁদের মতো মুখ। বুকে জরিয়ে বলে বাচ্চাকে মা গো পুত্র কন্যা তো আল্লার হাতে । তোমাকে আল্লায় দুনিয়া পাঠাইছে আল্লায় তোমারে দেখব । আমি তোমাকে আমার বুকের মধ্যেই রাখব । আল্লাহ নবী বলেছে প্রতিটা মেয়েই নাকি জান্নাত আমার তো এখন চার চারটা জান্নাত , মেয়ে কে বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কাদছে। পাশে আরো তিন মেয়ে বসে মায়ের সাথে কান্না করছে । তাদের দাদী বলল
-----এত কান্না করে কোন লাভ নাই । মেয়ে মানুষের কোন দাম আছে নাকি । এরা হল পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছে ।। সবাইকে কে একটা ধ্মক দিয়ে দিল ।।
কলমি লতা নামটা তার বাবা সখ করে রেখেছিল । কলমি জন্মের সময় ছিল বর্ষা কাল । কলমির জন্ম খবর যখন কলমির বাবা কাছে তখন তিনি দেখতে পান তাদের পুকুরে সাদা বেগুনী রঙের কলমি ফুল প্রজাপতির ফুটে আছে । তখন তিনি মনে মনে হাসি দিয়ে বলেন আমার মেয়ে নাম হবে কলমি লতা ।।
কলমির বাবা আসছে কলমি কে দেখতে । কিন্তু বাড়ির কেউ আজ তার সাথে কথা বলছে না। কলমির শাশুড়ি বলল
----- আপনার মেয়ে কে নিয়ে জান এমন মেয়ে তারা রাখবে না। একটাও পোলা জন্ম জন্ম দিতে পারে না। খালি বছর বছর মেয়ে জন্ম দেয় । মেয়ে মানুষের কোন দাম আছে । মেয়ে মানুষ হল পায়ের জুতা । পায়ের জুতা কয়টা লাগে । আমার ছেলে কে আবার বিয়ে করাব । তিনি এসে ভালই করেছেন সাথে করে যেন কলমি কে নিয়ে যান ।।
কলমির বাবা বলল
-----দেখেন বিয়াইন সাহেব মেয়ে হল আল্লাহর রহমত । আল্লাহর রহমতের উপর রাগ করতে হয় না। জন্মের উপর কারো কোন হাত নেই ।
এটা আল্লাহ ইচ্ছা ।।
কলমির শাশুড়ি বলল
———– ভাই আমাকে কুরান হাদিস বলে কোন লাভ নাই । এটা আরব না। যে মেয়ের বাবা কে পন দিয়ে বিয়ে করবে । এটা বাংলাদেশ এখানে মেয়ে বিয়ে দিতে টাকা লাগে । আপনার ছেলেরা কি টাকা দিবে ৪ টা মেয়ে বিয়ে দিতে ? আর সবাই আপনার মতো না।
আমার ছেলে কে একটা পোলা জন্ম দিইয়ে দেখাতে পারলো না আপনার কলমি লতা।
এমন বউ আমি রাখব না। আমার কথাই আমার ছেলের কথা । আমার ছেলে আজ পর্যন্ত তার মায়ের উপর কোন কথা বলে নাই । আমি জানি আমার ছেলের দুঃখ কি ? সেটা আপনি বুঝবেন না ।
কলমি বাচ্চা কুলে নিয়ে তার স্বামীর সামনে গেলে সে কোন কথা বলে না। নতুন জন্ম নেয়া মেয়েটা একবার বাবা হিসাবে কুলেও নেয় নাই । কলমি বলল
----- ওগো আম্মা যে আমাকে বাবার সাথে দিয়ে দিয়ে চাচ্ছে ? তুমি কিছু বলো ।
কলমির স্বামি বলল
---- তুমি তো ভাল করে জান আমি আমার মায়ের কথার বাহিরে কোন কাজ করি না। আমার মা যা বলে তাই আমি মেনে চলি । আমার মা যা বলেছে তাই হবে ।
–---- দেখ আমি যাই তাহলে হলে আমি আমার চার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যাব । আমার মেয়েদের কে আমি রেখে যাব না । শুধু এক মেয়ে নিয়ে যাব না। তুমি আর একটা বিয়ে করবা কর ।
আমার কোন মেয়ে তোমার মা আর তোমার বউয়ের বান্দিগিরি করার জন্য রেখে যাব না ।
আলফাজ মিয়া বলল
------- তাই যাও । আমার কোন মেয়ে লাগবে না। নিয়ে গেলেই ভাল হয় । ফটিক ঘটক মেয়ে দেখতাছে । আমি তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।
———- তুমি এত পাষাণ কি ভাবে হলে ? এই তোমার ভাল বাসা !!!
———- কি আমাকে পাষাণ বলছো । তোমার সাথে কোন কথা নাই ।
একটা কথা মনে রেখ কলমি । গ্রামের মানুষ আমাকে নিয়ে মজা করে ।
আমাকে বলে কেমন মাইয়া মানুষ বিয়ে করেছ পোলা জন্ম দিতে পারে না। আমার জমি ব্যবসা সব অন্যের ছেলেরা নিয়ে যাবে ।
———- দেখো আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। ১০ বছরে আমার হাতে তিলে তিলে যত্ন নিয়ে এই সংসার আমি সাজিয়েছি ।
———— আমি তরে তালাক দিলে তুই কি ভাবে থাকবি । মেয়ে মানুষ কে একবার তালাক বললে কি আর স্বামীর ঘরে থাকতে পারে ।।
———– কলমি লতা আর কোন কথা বলে না। বুঝতে আর বাকি নাই ।
স্বামী তার আর নাই ।
কলমির বাবা কলমি কে সাথে করে নিয়ে রওনা দেয় । কলমি তার চার মেয়ে নিয়ে নৌকায় উঠে । মেয়ে গুলো তার বাবার দিকে চেয়ে থাকে । তাদের বাবা মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে । তাদের দাদী বলে এখন বুঝবে মেয়ে জন্ম দেয়ার মজা ।
কলমির বাবা বলে
-----মা আল্লাহর উপর ভরসা রাখো । যে আল্লাহ্‌ জীবন দিয়েছে সেই আল্লাহ্‌ তোমাকে রিজিক দিবে ।
স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে কলমি লতা আসে । ভাইয়ের বউয়েরা তাকে কলমি কে ভাল ভাবে নেয় না । তিন ভাই কলমির কিন্তু তিন ভাই বোন কে বলে চিন্তা করিস না কলমি ভাইয়েরা এক বেলা খেলে তুই ও একবেলা খাবি । সকালে তোর দুই মেয়ে নিয়ে স্কুলে যাব ভর্তি করাতে । বড় ভাবি কলমি কে বলে কলমি আমার কোন বাচ্চা নাই । তোমার এক মেয়ে আমি নিলাম । তিন নাম্বার মেয়ে নিয়ে যায় কলমির বড় ভাই ।
সে আবার ঢাকা থাকে । কলমির চার মেয়ে বকুল জুই জবা আর ছোট মেয়ে নাম গোলাপি । জবা কে বড় ভাই নিয়ে যায় । কলমি কে তার বাবা গরু কিনে দিয়েছে । কলমি ভাইদের সংসারে নিজের জিবনে কে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে । কলমির বাবা একদিন মারা গেল । ভাইদের সংসার নিয়ে ঝামেলা । বড় ভাই ছোট ভাইদের নানা কথা শুনে কলমি কে আলাদা করে দিয়ে যায় ।
কলমির স্বামী আর কলমির কোন খোঁজ রাখে না।
কলমি খবর পায় আলফাজ মিয়া আবার বিয়ে করেছে নতুন বউয়ের দুই ছেলে । আলফাজ মিয়া ভালই আছে ।
কুলের মেয়েটার বয়স পাচ বছর । বড় মেয়ে এবার এস এস সি দিল । কলমি তার নিজের মত করে কাজ করে । বড় ভাই খুব দেখা শুনা করে । বকুল কে তার বড় মামা নার্সিং এ ভর্তি করে দেয় পরের বছর দ্বিতীয় মেয়ে কেও নার্সিং এ ভর্তি করে দেয় তাদের বড় মামা ।
ছোট মেয়ে কে নিয়ে গ্রামে থাকে কলমি । অবসারে স্বামী সংসার নিয়ে চিন্তা করে আর চোখের পানি ঝরে ।
কলমি বাবা কত সখ করে কত বড় বাড়িতে কলমি কে বিয়ে দিয়েছিল । এখন তার মেয়েরা কত কষ্ট করছে । কত কথা আজ মামা মামি দের শুনতে হয় । তাদের বাবার তো আর টাকার অভাব নাই ।
কলমি ভাবে মানুষে জীবনে আসলেই সুখ বলে কিছু নাই ।
বকুল জুই এখন নার্স । সরকারি চাকুরী পেয়েছে । মেয়েরা নার্স হিসাবে খুবেই সফল । তাই মেয়েরা কলমি এখন ঢাকা শ্যামলীতে মেয়েদের সাথে
সাথে নিয়ে এসেছে । কলমি যেন বহুকাল পরে মেয়েদের সাথে তার নিজের সংসারে ফিরে এসেছে এমন ভাবছে ।।
ছোট মেয়ে গোলাপি লিখা পড়ায় ভাল । ভাইয়ের কাছে যে মেয়ে ছিল জুই সে একটা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে । চার মেয়ের একটি সুন্দর আগামী জীবন কলমি দেখতে পাচ্ছে ।
সময়ের সাথে জীবনের অনেক কিছু বদলে যায় । বর্ষার পর আসে শরত তার পর হেমন্ত । জীবন ঠিক এমনি ।
ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে আলফাজ মিয়া ভর্তি আছে ।বারান্দায় একটা সিটে পরে আছে বেশ কিছু দিন । আলফাজ মিয়ার বউ পাশে বসা । আলফাজ মিয়া আর আগের আলফাজ নাই । গত ২৪ বছরে অনেক বদলে গেছে এই আলফাজ মিয়া । তার বড় ছেলে এখন এক বছর ধরে জেলে । ডাকাতি মামলায় জেলে গেছে । মানুষ হয় নাই । আলফাজ মিয়া মনে অনেক দুঃখ কেমন ছেলে আল্লায় দিল ।
। ছোট ছেলে লিখা পড়া করে নাই । সেও আলফাজ মিয়ার কোন কথা শুনে না। আলফাজ মিয়ার মা এখন চোখে দেখে না। অনেক দিন যাবত সে বিছানায় পরে আছে। আল্লাহর কাছে মৃত্যু চায় তার মৃত্যু হয় না।
মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে পেলে বলে - আমি কলমি কে জলে ফেলেছি আর আগুনে পুরেছি আমি । আমার বিচার আল্লাহ করছে ।
হাসপাতালের বারান্দায় পরে আছে আলফাজ মিয়া ডাক্তারের অপেক্ষা করছে ।
আজ এই দিক দিয়ে আলফাজ মিয়ার বড় মেয়ে নার্স বকুল যাচ্ছে ।
আলফাজ মিয়ার স্ত্রী বলল – সিস্টার ডাক্তার কখন আসবে একটু বলবেন । আমার স্বামীর শরীরটা খুব ভাল না ।
বকুল বলল
--------- রোগীর কাগজ গুলো দেখি । বকুল দেখে ফুসফুসে পানি জমেছে শ্বাস নিতে পারছে না। রোগীর নাম আলফাজ মিয়া । নামটা দেখে কেমন জানি মনের ভিতরে একটা অজানা কষ্ট ধাক্কা দিয়ে গেল । তার বাবার কথা ও চেহারা তার মনে আছে । দেখল চিকিৎসা ছাড়া যেই লোকটা বারান্দায় পরে আছে সেই তার বাবা ।
অপলক চোখে বাবার চেহারাটা দেখে ধ্মকে গেল । অন্য এক সিস্টার কে ডেকে কি যেন বলল কানে কানে ।।
আলফাজ মিয়া কে তাড়াতাড়ি নিয়ে গিয়ে ক্যাভিনে সিট দেয়া হলো । মুখে অক্সিজেন দেয়া হল । দুই জন ডাক্তার চলে আসলো তার তাকে দেখার জন্য । আলফাজ মিয়ার মেয়েটার দিকে চেয়ে আছে । আজ কত দিক হলো এই হাসপাতালে কেউ এমন করে দেখে নাই তাকে ।
চিকিৎসার সব কিছুই অল্প সময়ের মধ্যে শুরু হলো ।
বকুলের আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার বাবাকে দেখে । বাবার জন্য সে কত রাত কান্না করেছে । মা কষ্ট পাবে বলে মাকে কোন দিন বুঝতে দেয় নাই । তার বাবার জন্য যে তার মায়া লাগে । আজ বাবা তার কাছে কিন্তু বাবা বলে চিৎকার দিয়ে বুকে জরিয়ে কান্না করতে পারছে না।
বুকুলের দিকে আলফাজ মিয়া তার স্ত্রী অবাক হয়ে চেয়ে আছে , কে এই নার্স মেয়ে যে তাদের জন্য এত ব্যাকুল হয়ে গেল ।।
বকুল তার মা কে ফোন করে বলল – মা একজন মানুষকে পেয়েছি বহু কাল পরে কিন্তু আমি কি করব জানি না মা !!! ।
জিবনে সব চাইতে খারাপ মানুষটা আমার সামনে । কিন্তু আমি তার সব কিছু ভুলে তার জন্য কোন অদেখা মায়ায় পরে গেছি । মা আমি নিজেকে
ঠিক রাখতে পারছি না ।
কলমি লতা তার মেয়ে কে বলে
------ মা সে কি কোন রোগী ।
-------- হ্যাঁ মা রে একজন রোগী
কলমি লতা বলে সব কিছু ভুলে তুমি তার সেবা কর মা। সেবা ক্ষমা আর মমতা যে তোমার কাজ মা ।
বকুল বলল
——— মা তুমি জুই কে নিয়ে একটু হাসপাতালে এসো ! আমি আর পারছি না মা । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ।
আলফাজ মিয়া বকুলের দিকে চেয়ে আছে । বলছে আপনি কাকে
খারাপ মানুষ বলছেন মা জননী ।
শ্বাস নিতে পারছে না তবু মেয়ের দিকে চেয়ে বলছে আমি তো কোন খারাপ মানুষ না মা ।
বকুল বলল টেস্ট গুলো কেন করান নাই ।
পাশে বসা ছেলে বলল- আমাদের কাছে টাকা নাই । এক দুই দিনের মধ্যে আমার গ্রাম থেকে কিছু টাকা আসবে ।।
বকুল বলল -তোমার কি হয় এই লোক ? ,
——— আমার বাবা । আর উনি আমার মা ।
———- ঢাকা তোমাদের কেউ নাই কি আর ?
——— আমার মামা রা আছে কিন্তু মামা অফিস শেষ করে আসে । ৫০০ টাকা দিয়েছে এই টাকা দিয়ে কি হয় ।
বকুল ব্যাগ থেকে টাকা বের করে একজন কে বলল যা তো এই সকল ঔষধ নিয়ে আয় । আর ভাল দেখে একটা চাদর বালিশ নিয়ে আয় । কিছু খাবার নিয়ে আয় ।
ছেলেটাকে বলল
--------তোমার নাম কি সিস্টার ।। তুমি এত কিছু কেন করছো । এই খানে তো তোমার মতো কোন ভাল সিস্টার দেখছি না।
বকুল তার ব্যাগ থেকে খাবার বের করে ছেলেটা কে খেতে দিল । মাথায় হাত বুলিয়ে বলল চিন্তা কর না যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে ।
ছেলেটা বলে
------আপনি অনেক ভাল । অন্য সিস্টার রা আমাদের সাথে কথাই বলে না। আমার নাম বেলা ।
——— খুব সুন্দর তোমার নাম।
বকুল বেলার মাকে বলল
--------আপনাদের তো টাকা পয়সা জমি জমা অনেক ।
মহিলা বলল
------এক ছেলে কে বাচাতে সব শেষ ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে । বড় ছেলে দাদীর আদরে আদরে নষ্ট হয়েছে । তার পড় বাজারে বড় ব্যবসা আগুন লেগে শেষ । বাজারের ব্যবসাও শেষ ।
এখন আর আগের বস্থা নেই ।
আপনি কি আমাদের চিনেন মা ।। আলফাজ মিয়া বলল
-------- আপনি কে মা । এই দুনিয়ায় কি আজো ভাল মানুষ আছে মা ।
বকুল বলে আর কোন কথা বলবেন না। আল্লাহ চাইলে অল্প সময়েই ভাল হয়ে যাবেন । ফুস ফুসে সামান্য পানি জমেছে ।। তেমন কিছুই না।
জুই তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসে ।
কলমি লতার চুল পেকেছে । হাসপাতালের বেডে চেয়ে দেখে তার স্বামি ।। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ।। বহুদিন পর স্বামীর মুখ দেখে তার চোখে ছল ছল করে পানি চলে আসে ।
কলমি লতা আবার নিজের মুখ লজ্জায় লুকায় ।
বড় বড় চোখে আলফাজ মিয়া চেয়ে থাকে । বকুল জুই সাদা নার্সের পোশাকে পরে আলফাজ মিয়ার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ।
জুই মাথায় হাত দিয়ে বলে
------ আমাদের কি চিন্তে পরেছেন ?
আলফাজ মিয়া বলে
---- না আপনাদের আমি চিনতে পারছি না মা ।
জুই বলে
আপনার চিকিৎসা নিয়ে । টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
আমরা আপনার অতি আপন জন । যত টাকা লাগুবে আমরা দিব ।
———– আলফাজ বলে এই ক্যাবিনের ভারা তো অনেক । আর আপনারা কেন বা আমার জন্য এত কিছু করবেন । আমার তো এত টাকা দেয়ার মত ক্ষমতা নাই । আলফাজ মিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল ।
কলমি লতা তার দুই মেয়ের দিকে চেয়ে দেখে তারা তার বাবার জন্য ব্যাকুল । কলমি লতা তার মুখের কাপড় সরিয়ে বলল
——— আমাকে কি চেনা যায় দেখুন ।
আলফাজ মিয়া কলমির দিকে চেয়ে হাউ মাউ করে বলে কলমি আমাকে ক্ষমা কর ।। আমি তোমাকে চিনতে পারব না । তুমি তো কলমি লতা । আলফাজ মিয়ার চোখ দিয়ে যেন আরো বেশী পানি ঝরতে লাগলো ।
কলমি লতা কাদতে কাদতে বলল
------ হা আমি কলমি এরা আপনার মেয়ে । আমি আমার মেয়েদের সুশিক্ষা দিয়েছি যেন তারা তার জন্ম দাতা কে সম্মান করতে পারে । তোমার চার মেয়ে দুই জন নার্স একজন ইঞ্জিনিয়ার । অন্য জন আসা করি ডাক্তার হবে ।।
আলফাজ মিয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে । জুই বাপের মাথায় হাত দিয়ে
বলে বাবা তুমি আমাদের ফেলে দিলেও আমরা তোমাকে কোন দিন ফেলব না। আমার মা আমাদের বলেছে তুমি নাকি অনেক ভাল মানুষ ।
তোমার কোন দোষ নাই ।।
বকুল ছোট ভাই বেলা কে কাছে টেনে নেয় ।
বেলা বলে জুই আপা বকুল আপার লাগানো লিচু গাছে অনেক লিচু হয় । আব্বা ভাল হলে আমি তোমাদের নিয়ে যাব ।
কলমি লতা বলে শুধু বোন দের নিবে যাবে ।
বেলা বলে তুমি আমার বড় মা - আমি শুনেছি দাদী তোমাদের বের করে দিয়েছে । এবার বাড়িতে গেলে কানা বুড়িরে বাড়ি ছাড়া করব মা। এত সুন্দর করে মা ডাক শুনে কলমি লতার বেলা বুক জরিয়ে নেয় ।।
সবার চোখে পানি । বকুল বলে বেলা আমাদের মতো লেখা পড়া করে মানুষ হতে হবে ।।
আলফাজ মিয়া আজ ভাল হয়েছে । ট্রেনে তুলে দিতে চার মেয়ে এসেছে কিন্তু কলমি লতা আসে নাই । চার মেয়ে বলল বাবা তুমি ভাল থেকো । সৎ মাকে বলল বেলা যেন স্কুলে যায় । বড় জন কে জেল থেকে বের করে
বাজারে দোকানে বসাতে হবে। আমার মামার ছেলে উকিল কথা বলেছি এক দু মাসেই জামিন করে দিবে বলেছে । আজ থেকে আপনি আমাদের ছোট মা । কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি যে দিন বলেন আমি মাকে নিয়ে বাড়িতে আসব ।
আফজল মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে
--- মা তোমাদের বাড়ি তোমরা বুঝে নাও । আর আমার ছেলেদের কে তোমার মায়ের আদর্শ দিয়ে বড় কর। তাহলে আমি মরে গিয়ে শান্তি পাব ।
বেলা বলল
--- – আমি তোমাদের কাছে চলে আসব । ট্রেন ছারে আলফাজ মিয়া দেখে তার চার মেয়েরা পায়ের জুতা না - যেন মাথার তাজ হয়েছে । চোখের পানি তার আজ বুক ভিজে যায় । মেয়েরা বলে বাবা তোমার যা কিছু লাগবে আমাদের বলবে
আমরা আছি তোমার পাশে । এই ফোনটা রাখ । আমরা তোমার খোঁজ খবর নিব । আলফাজ মিয়া চেয়ে থাকে মেয়েদের দিকে । দু চোখ দিয়ে আবেক আর কষ্টে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে অনুতাপে …।
কলমি তার চার মেয়ে কে বলে
---- আমার বাবা বলে গেছে যে ক্ষমা করতে জানে সেই বড় মানুষ । আমি আমার বাবার কথা রেখেছি মাত্র……………… তোমরা ও তোমার বাবা কে মন থেকে ক্ষমা করে দিও , কারন যারা ক্ষমা করে তারাই মহৎ ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০২১ রাত ৮:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



পরিচিত প্লট, মোটামুটি হয়েছে; লেখার ষ্টাইল দুর্বল।

১৫ ই মে, ২০২১ রাত ৯:০২

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: রাইট

২| ১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: এই প্লট নিয়ে অসংখ্য গল্প, কবিতা আর সিনেমা নাটক হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.