নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য, সুন্দর ও শান্তির জন্য,,,,,,,,

সেতুর বন্ধন

সম্পাদক, মাসিক ব্রাহ্মনবাড়িয়া ফিচার, সাংগঠনিক সম্পাদক কসবা প্রেসক্লাব, গীতিকার, কসবার গান

সেতুর বন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রীরামপুরে বাংলায় প্রথম ছাপাখানা ও ছাপাখানার ইতিকথা

০৪ ঠা মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৮


শ্রীরামপুরে বাংলায় প্রথম ছাপাখানা ও ছাপাখানার ইতিকথা
------------------------------------------------------------------------------------------------

লোকমান হোসেন পলা

বাংলা ভাষায় প্রথম ছাপা শ্রীরামপুরে শুরু হয়েছিল এই বিষয়টি আমি প্রথমে শুনেছি আমার প্রিয় কবি মৃদুল দাশগুপ্ত কাছ থেকে উনার জন্যই এবার শ্রীরামপুর যাওয়া সফর সংগি কবি শিশির দাশগুপ্ত। মৃদুল দার কাছ থেকে শোনা ছাপাখানা ইতিকথা টি ধরে তোলা। সততা, নির্ভরশীলতা, ব্যয়ে স্বল্পতা, উন্নত মুদ্রণ প্রভৃতির জন্য অল্প সময়ের মধ্যে শ্রীরামপুরের মুদ্রণ শিল্প সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ইংরেজ কোম্পানি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এরূপ উন্নত মুদ্রণশালার অস্তিত্ব পছন্দ করে নি। তারা প্রেসটি বন্ধ করে দিতে বারবার চেষ্টা করেছে। ছাপাখানার ইতিকথা



মানব সভ্যতার শুরুর দিকে মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিল ভাষা। তখনো লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পর গাছের বাকল, পাতা, পশুর চামড়া, পাথরের উপর লেখা হতো। প্রাচীন মিসরে হায়ারোগ্লিফিক ও কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা হতো প্যাপিরাস নামক এক প্রকার কাগজে। তখনো মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা তৈরি হয়নি। প্রাচীন রোমে পশুর চামড়ার উপর “একটা ডায়ার্না” নামক সংবাদপত্র হাতে লিখে প্রকাশ করা হতো।
চীনে সর্বপ্রথম ছাপা তৈরি করা হয়। এ ছাপাখানায় কাঠ খোদাই করে অক্ষর তৈরি করে কাগজে ছাপানো হতো। রাবার স্ট্যাম্পের মতো নির্মিত অক্ষরের ছাপ দিয়ে বই ছাপা হতো। এতে সমস্যা ছিল, একবার ছাপানো হলে পুনরায় চাপানো যেত না। পুনরায় অক্ষর সাজিয়ে ছাপার সরঞ্জাম বানাতে হতো। জার্মানীর ইওহান গুটেনবার্গ (১৩৯৮-১৪৫৮) সর্বপ্রথম আধুনিক মানের ধাতব অক্ষরের ছাপাখানা আবিষ্কার করেন। সে আরেক ইতিহাস। গুটেনবার্গ বেশি লেখাপড়া জানতেন না। অল্প বয়সেই স্বর্ণকারের দোকানে কাজ নেন। এই সুবাদে বিভিন্ন ধরনের ধাতুর উপর ধারণা লাভ করেন। আরো পরে স্টাসবুর্গে স্বর্ণকারের দোকানে কাজ করেন। পরে এ দোকানের অংশীদার হন। এ সময় মণি, মুক্তা কাটার ও আয়না তৈরির কারখানা খোলেন। এসব ধাতু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ধাবত টাইপ আবিষ্কারের পথে অগ্রসর হন। তিনি অবশেষে ১৪৫০ সালে বিশ্বের প্রথম ধাতব টাইপ বা অক্ষর তৈরি করতে সক্ষম হন। এ চিন্তা হতেই ছাপাখানা বানানোর পরিকল্পনা করেন।
ইওহান গুটেনবার্গ ১৪৫০ সালে ইওহান কুশটের মাইনৎসে ফিরে আসেন। তিনি ছাপাখানা বানানোর পরিকল্পনা করেন। তিনি ১৪৫২ সালে ইওহান কুশটের আর্থিক সহযোগিতায় ছাপাখানা তৈরি করতে সক্ষম হন। গুটেনবার্গ আলাদা আলাদা অক্ষর সাজিয়ে বই ছাপার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি ছাপাখানা বসানোর পরিকল্পনা করেন। তিনি ১৪৫২ সালে ইওহান কুশটের আর্থিক সহযোগিতায় ছাপাখানা তৈরি করতে সক্ষম হন। গুটেনবার্গ আলাদা আলাদা অক্ষর সাজিয়ে বই ছাপার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ছাপাখানা বসানো হল কুশট ও গুটেনবার্গের মধ্যে মতবিরোধ চরমে উঠলো। কুশট ছিল অর্থলোভী। তার ধনী হওয়ার নেশা ছিল প্রবল। অপরদিকে গুটেনবার্গ চান সুনাম অর্জন করতে। মতবিরোধ চরম হলে কুশট মামলা করেন ছাপাখানা ও অর্থ ফেরত চেয়ে। মামলায় হেরে যান গুটেনবার্গ। পরে ১৪৫৫ সালের ৬ নবেম্বর কুশটের ছাপাখানায় সর্বপ্রথম ছাপা হয় বাইবেল। বলা বাহুল্য বাইবেল ছাপানোর সকল উপকরণ গুটেনবার্গ তৈরি করেছিলেন। কুশটের মামলায় হেরে গিয়ে গুটেনবার্গ পরে ছাপাখানা বসালেও সুবিধা করতে পারেননি। তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। অবশেষে ১৪৫৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। বিশ্বে সর্বপ্রথম ধাতব অক্ষর নির্মাণ করে ছাপাখানা স্থাপন করে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ইউরোপের দেশ জার্মানীতে আধুনিক ছাপাখানা উদ্ভাবন হলেও এর ৩২৬ বছর পর বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশে ১৭৭৮ সালে সর্বপ্রথম ছাপাখানা বসানো হয়। তবুও বাংলা হরফে ছাপার কাজ শুরু হয় আরো পরে। ১৭৭৮ সালে হুগলীতে নাথানিয়েল ব্র্যাসী হ্যালহেড লিখিত ‘এ গ্রামার অব বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ বই মুদ্রণের উদ্যোগ নেন চার্লস উইলকিন্স। তখন হুগলী জেলার ত্রিবেনীর পঞ্চানন কর্মকার বাংলা হরফ প্রস্তুত করেন। বই মুদ্রণে ছেনিকাটা, ঢালাই করা চলনশীল ধাতব হরফ ব্যবহার করা হয়। উইলকিন্স ও পঞ্চাননের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলা হরফ তৈরি করা হয়েছিল। ১৭৭৯ সালে গবর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের উৎসাহে ও উদ্যোগে কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছাপাখানা স্থাপিত হয়।

১৭৯৯ সালে উইলিয়াম কেরীর উৎসাহে শ্রীরামপুর মিশনে ছাপাখানা স্থাপন করা হয়। পঞ্চানন কর্মকার এখানে কাজ শুরু করেন। পুরাতন মেশিন নিয়ে কাজ শুরু হলেও মেধা, পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে পঞ্চানন কর্মকার এ ছাপাখানাকে এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর কারখানায় উন্নীত করতে সক্ষম হন। এ ছাপাখানা হতেই বাংলাভাষায় বই ছাপা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম কেরী বাংলা ভাষা ভাল জানতেন এবং বাংলা ভাষায় বই লিখেন। ১৮০১ সালে শ্রীরামপুর মিশন ছাপাখানা হতে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট (ইঞ্জিল শরীফ) মুদ্রিত হয়। পঞ্চানন কর্মকার সর্বপ্রথম বাংলা হরফ নির্মাণ করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। তিনি বাংলা বর্ণমালার অক্ষর নির্মাণে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সমর্থ হন। ১৮০৪ সালে তার মৃত্যু হয়। তিনি তার জামাতা মনোহর কর্মকারকে হরফ নির্মাণ শিক্ষা দেন। পরে বাংলা অক্ষরের আরো উৎকর্ষ সাধন করেন মনোহর কর্মকার। ছাপাখানায় বাংলা বর্ণমালার অক্ষর নির্মাণ করে পঞ্চানন কর্মকার ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবেন।(তথ্য সংগ্রহ, কবি মৃদুল দা)



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ রাত ১১:০৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: সুন্দর শিক্ষনীয় পোষ্ট। নিয়মিত ব্লগে আসুন এবং কিছু লিখলে প্রিয় ব্লগারদের জানান যেন তারা তা পড়ে দেখেন। ধন্যবাদ।

১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৩১

সেতুর বন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য। দেরী করে মন্তব্যর উত্তর দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খীত।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২০

সনেট কবি বলেছেন: ভাল পোষ্ট।

১৭ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৩৩

সেতুর বন্ধন বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক অভিবাদন। দেরী করে মন্তব্যর উত্তর দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খীত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.