নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ফাঁদ

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:০০


১.
টুলু ক্লাস নাইনে পড়ে।যথেষ্ট বুদ্ধিমান মাঝে মাঝে এমনসব আচারণ করে মনে হবে সেই বুঝি ক্লাসের সবচেয়ে গাধা ছাত্র। এই নিয়ে তার মাথাব্যথা না থাকলেও তার সহপাঠীরা সব সময়ই কৌতুহলী। কিন্তু তারা ঐ অদ্ভূত আচরণের কারণ খুঁজে পায় না। তার এই সহজ সরল আচরণের কারণে শয়তান সমাজও আজ চিন্তিত। শয়তান কিলমন অনেক চেষ্টা করছে তাকে রাগানোর জন্য। কারণ রাগলে মানুষের পশুত্ব জেগে ওঠে এবং মনুষ্যত্ব লোপ পায়।টুলু যখন স্কুলে যায় কিলমন প্রায় তার চলার পথে ইট, কাঠের টুকরা রাখে যাতে সে ওষ্টা খেয়ে পড়ে যায় এবং রেগে গালমন্দ করে কিন্তু টুলু তা করে না সে সুন্দর করে তা তুলে রাস্তার পাশে পেলে দেয়। মাঝে মাঝে বড় বড় মনকাঁটা গুলো ফেলে রাখে রাস্তায়। টুলু পা পোড়লে তা ব্যথায় মন খারাপ হয় কিন্তু পুনরায় আবার মন ভালোও হয়ে যায় কারণ সেভাবে কোন বৃদ্ধার যদি এমন হতো।ফলে মাঝে মাঝে কিলমন পিঁপড়ার রূপ ধারণ করে তার পিঠের ঠিক মধ্যখানে কামড় দেয় যাতে হাত দিয়েও তাকে ধরতে না পারে। কিন্তু টুলু তখন কিছু অধৈর্য হয়ে পড়লেও সে গালাগাল করেনা।
শয়তান কিলমন তার গুরু সাইমনের কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বলল। সাইমন বলল"দেখ কিলমন, পৃথিবীতে আমাদের কাজই হচ্ছে মানব প্রজাতিকে অসৎ, অনৈতিক, অন্যায় পথে যাতে তারা সহজে উন্নতি লাভ করতে পারে তার জন্য তাদের পথ সরল করে দেয়া। কষ্ট ছাড়াই মিষ্টি দেয়া।" একটু থেমে আবার বললো "মানুষের মন যখন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়,তখন মানুষ রেগে যায় । আর আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে। মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা। একবার যদি তা তোমার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারো, তখন পুরো মানুষটাই তোমার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে । তাই মানুষের পথে বাধা না হয়ে তাদের মনের সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করো দেখবে সফলতা তোমারই হবে।" বললো সাইমন শয়তান। কিলমন তার ভুল বুঝতে পারলো। সে গুরুকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যেতে লাগলে সাইমন ডেকে বললো "আর একটা কথা মনে রাখবে, বিবেক জাগ্রত হওয়ার আগেই কাজ শেষ করতে হবে যাতে আফসোস করা ছাড়া কিছুই না থাকে।" নতুন উদ্দম্যে কিলমন আবার টুলু পিছনে লাগলো।
২.
টুলুর ১ম সেমিষ্টার ফাইল পরীক্ষা চলছে । আগামী কাল ইংরেজি পরীক্ষা। সে ইংরেজিতে একটু দুর্বল। তাই আজ বিকেলে খেলতেও যায় নি। যেভাবেই হোক তাকে আবার প্রথম হতে হবে তার জন্য ইংরেজিতে এ+ চাই। টুলু বারবার গ্রামার, প্যারাগ্রাফ গুলো পড়তেছে কিন্তু কিছুতেই সেগুলো তার মাথায় থাকতে চায় না। রাত ৮ টা বাজে। হঠাৎ দরজায় নক
"কে?? " টুলু জানতে চায়।
"আমি, রাব্বি "
টুলু দরজা খোলে।রাব্বি ভিতরে এসে বসে। তারপর জিজ্ঞাস করে " কেমন, প্রিপারেশন নিলি? আমিতো এখনও কিছুই পড়ি নি। "
"তুই তো জানস আমি ইংরেজিতেই একটু দুর্বল। কিছুই মাথায় ডুকছে না। " বলল টুলু।
"আমি স্যারের কাছে গেছি। স্যারের কাছ থেকে কিছু সর্ট সাজেশন আনলাম। দেখি আসে কিনা?? " রাব্বি বললো।
টুলু রাব্বির কাছ থেকে সাজেশন নিলো এবং সারারাত সে এগুলো পড়লো। পরের দিন দেখা গেল এগুলোই পরীক্ষায় আসলো। টুলু মনে মনে বিষণ খুশি। আর এদিকে কিলমন শয়তানও খুশি। শেষ পর্যন্ত তার পাঁদে টুলু পা দিল বলে। কারণ রাব্বিকে সেই পাঠিয়েছিল।
ঐ বছর ফাইনাল পরীক্ষার সময়ও টুলুকে, কিলমন শয়তান সহয়তা করে।গত পরীক্ষায় যেখানে একটা ছিল। এবার গনিতের সাজেশনও এনে দেয় কিলমন শয়তান। কিলমন শয়তান এভাবে প্রশ্নফাঁস করে দিতে দিতে টুলুকে পড়া বিমুখী করে তুলে। কিলমন শয়তান এখন তার মন নিয়ন্ত্রনকারী। যখনই টুলু পড়তে বসে কিলমন তার মনে মনে বলতে থাকে " এত কষ্ট করার কি দরকার, পরীক্ষার আগে তো প্রশ্ন ফাঁসই হবে। তার চেয়ে একটু খানি টিভি দেখা যাক।"
৩.
এদিকে সাইমন আসলো কিলমনের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে। সব কিছু শুনে সাইমন জিজ্ঞেস করল " পরবর্তী পদক্ষেপ কি? "
কিলমন বলতে লাগলো, "এখন থেকে শুরু হবে আসল খেলা। দেখুন আগামী কাল তার পরীক্ষা অথচ এখনও তার হাতে ফাঁসকৃত প্রশ্ন আসেনি। এখন সে রাগবেই!! তারপর সে কি করে তা এখন শুধু দেখার সময়।"
এদিকে টুলু প্রশ্ন না পেয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এতদিন না পড়ায় তার কাছে সবই নতুন লাগছে। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কাল ইংরেজি পরীক্ষা তাও বোর্ড পরীক্ষা। ফেল করলে মান সম্মান সবই হারাবে। বাবা মা, আত্নীয় স্বজন, বন্ধু শিক্ষকদের সামনে কিভাবে মুখ দেখাবো। নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে। টুলু আর ভাবতে পারে না। সে বাসা হতে বেড়িয়ে পড়ে। অন্ধকারের ভিতর দিয়ে সে হাঁটছে। এদিকে কিলমন তার গুরুকে বললো " একটা খেলা দেখুন।" বলেই সে অন্ধকারে টুলুকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। টুলু রেগে আগুনই হয়ে পড়ে। সে লোকটিকে অনেক গালিগালাজ করে,যতক্ষন না তার রাগ কমে। সাইমন অনেক খুশি হয় শিষ্যের কাজে। "খেলা সবে শুরু, আরো অনেক কিছুই বাকী " বলল কিলমন। টুলু দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনে। তা পান করে বাসাতে আসে |
পরীক্ষার ফলাফল দেয়। টুলু ইংরেজিতে ফেল করে। সে চিন্তিত এবং লজ্জিত। এই প্রথম সে ফেলের স্বাদ পেল। সে কোন ভাবেই মানতে পারছে না। ড্রয়ারের ভেতর হতে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে। সিগারেটে আগুন লাগিয়ে একটা টান দিয়ে ধোঁয়াগুলো ধীরে ধীরে মুখ থেকে ছাড়ে। সে বুঝে উঠতে পারে না, তার এখন কি করা দরকার। এমন পরিস্থিতি তে সে কি করবে বা কার কাছেই সাহায্য চাহিবে বুঝতে পারে না। সে পকেট হতে মোবাইল টা বের করে, মুহিদকে কল দেয়। কারণ মুহিদ সব সময়ে ফেল করে। মুহিদ আসে। মুহিদ সব কথা শুনে বলে " চল, মন ভালো করার উপায় আছে,তবে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। " সে রাজি হয়। মুহিদ টুলু কে নিয়ে যায় শহরের শেষ প্রান্তে বর্ডারের কাছাকাছি একটা গ্রামে। তারা একটা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।টুলুকে একটা রুমে বসিয়ে মুহিদ ভেতরের একটা রুমে প্রবেশ করে। সে অবাক হয়ে দেখে, অনেক ছেলে মেয়ে রুমের এক কোনা তে বসে কি যেন শুকছে। আর কিছু ছেলে মেয়ে পাশের একটা টেবিলের চারপাশে বসে একটা বোতল হতে তরল জাতীয় কিছু পান করেছে। একটু পরে মুহিদও একটা বোতল হাতে প্রবেশ করে। টুলু প্রথমে মদ পান করতে খারাপ লাগলেও কয়েক পেগ পান করার পর টুলু যেন অন্য জগতে প্রবেশ করলো। যে শিক্ষক তার পেপার দেখছে তার চৌদ্দগোষ্ঠি নিয়ে গালিগালাজ শুরু করলো। এমন অকথ্য গালাগাল শুনে মুহিদও অবাক। এরপর থেকে টুলু এখানকার নিয়মিত খদ্দের হয়ে গেল। ধীরে মদ, গাঁজা, এবং যাবতীয় নেশাদ্রব্য গ্রহণ শুরু করলো। তার বাবা মা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু না পারলো না। প্রথমদিকে তাকে দেয়া হাত খরচ বাঁচিয়ে নেশা দ্রব্য কিনতো কিন্তু যখন ফ্যামিলি জানলো তখন হাত খরচও কমে গেল। ফলে সে আরো ঊৎশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। সে টাকা আয়ের পথ খুঁজতে থাকে।
৪.
টুলু একটা লোকের সামনে বসে আছে। লোকটির নাম তৈমুর। তৈমুর সিকদার। সে মাদক দ্রব্য চোরাকারবারকারী সদস্য।
--- দেখ, টুলু এই রাস্তা অনেক রিস্কি। তবে টাকা অনেক। শুধু বুদ্ধি করে টোপ পেলা জানতে হবে। তৈমুর বলল।
--- আমায় কী কাজ করতে হবে?
" প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তোমার কাজ একটু সহজ। শুধু গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো। আমি জানি, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে।" একট থেমে আবার বলল " তুমি তোমার বাড়িতেই থাকবে আর ঐদিকে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর দায়িত্ব তোমার উপর। গ্রাহক যত বাড়াবে ততই তোমার কমিশন ও পদবি দুইটাই বাড়বে।" টুলু মাথা নেড়ে সমর্থন দেয়।
দুরেই দাড়িয়ে ছিল কিলমন আর সাইমন।
কিলমন বলল " কেমন দেখলে গুরু। একটা মোমবাতি হতে যেমন হাজারটা জ্বালানো যায় তেমনি টুলু হতে হাজার টা টুলু তৈরি হবে। আমাদের আর কিছুই করতে হবে না এই,শহরে। আমাদের হয়ে টুলুই,দায়িত্বের ভার নিয়ে নিল " সাইমন কিলমনের কাজে শুধু খুশিই হয়নি অবাক ও বিস্ময় হলো।কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ, সাইমন তার রুপালি চুল হতে একটা চুল ছিড়ে কিলমনের বাম হাতে পড়িয়ে দেয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমাদের চলার পথে এ রকম শত শত ফাঁদ পাতা আছে।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৪৪

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: তাই চলতে হবে সাবধানে । মন্তব্যের ধন্যবাদ

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫

শামীম সরদার নিশু বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন, লেখক ভাইয়ের জন্য শুভকামনা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.