নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা এবং আমাদের সমাজবাস্তবতা

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২৩


বহু আগে হুমায়ূন আহমেদের একটা লেখা পড়ে জানলাম, জাপানের একটা জঙ্গল আছে যেখানে গেলে নাকি মানুষের ভেতরে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে। অনেকে আত্মহত্যাও করেছে, এইজন্য বর্তমানে জাপান সরকার জঙ্গলটায় প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছে। দেশ ভেদে মানুষ জনের আত্মহত্যা কারণও ভিন্ন। তবে সবদেশেই কমন একটা কারণ রয়েছে, তাহল ডিপ্রেশন বা হতাশা।
ডিপ্রেশন দুইভাবে তৈরি হতে পারে-
এক. কোন একটা কাজ বার বার করেও সফল হতে না পেরে। এই ধরনের ডিপ্রেশন জনিত মানুষদেরকে আপনি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন কারণ এরা পুর্বে প্রমাণ করেছে এরা পরিশ্রমী। এদের ভেতরে একধরনের জেদও কাজ করে ফলে এরা পূর্বের কাজ বাদ দিয়ে অন্য কোন কাজে সফলতা পেয়ে যায়। আর এইটাই স্বাভাবিক।
দুই. অন্য কেউ অাপনার উপর ডিপ্রেশনটাই চাপিয়ে দিয়েছে।
এই সম্পর্কে বলতে গেলে আমাকে বঙ্গবন্ধুর একটা বিখ্যাত উক্তি, "দুনিয়ার কোনো ভাষাতেই এই কথাটা পাওয়া যাবে না, পরশ্রীকাতরতা। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে পরশ্রীকাতর বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সব ভাষাতেই পাবেন, সব জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সব রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।"
এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই পরশ্রীয়ের মাধ্যমে নিজেকে মুল্যায়ন করতে গিয়ে ডিপ্রেশনের মধ্যে পড়ে। যেটা থেকে বের হবার আর কোন উপায়ই থাকে না। এটা অনেকটা ইনফিনিটি লুপের মত। আজ হয়ত আপনার চাচাত ভাইয়ের শ্রীদেখে ডিপ্রেশন ভুগতেছেন কাল মামাত ভাইয়েরে দেখে পরশু খালাত ভাইয়েরে দেখে, এইভাবে এটা চলতে থাকে অমৃত্যু পর্যন্ত। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে,নিজের ডিপ্রেশন থেকে বের হতে আমরা বেছে নিচ্ছে অন্যের পরাজিত মুহুর্তকে উদযাপন করে। যার সর্বশেষ বলি, অরবিন্দ সৈকত। কুমিল্লা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করে। ফেবুতে তার একটা স্ট্যাটাস এখানে তুলে ধরলাম,
"দুই বছর কেটে গেলো। কোন চুতমাড়ানি খবর নিলো না! কেমন আছি,কী অবস্থায় আছি। ভাল আছি নাকি কোন অসুবিধায় আছি। কোন খবর নিলো না!! :)আজ রেজাল্ট দিবে! তাই,ফোন করে রেজাল্ট জিজ্ঞেস করে! অশ্লীল অট্টহাসি শোনায়!!Bloddy Bastards!" অদ্ভুদ সমাজ। প্রতিবেশীরর বা আত্মীয়র দুঃখে সহমর্মিতা বা পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আমরা তাতে কথার ঘি ঢেলে দিই।
দেখা যায়, বাংলাদেশের চাকুরির জন্য মামা, চাচার দ্বারস্থ হয়।(এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট ব্যপার। ) যার মামা চাচা নেই সেই মামার মামা বা মামার বন্ধু কিংবা দুরবর্তী কোন আত্মীয়র দ্বারস্থ হয়। অনেকে আফসোস করে, কেন তার মামারা উচ্চপদে নেই। অথচ এই আমরাই আমাদের চারপাশের মানুষ জনের যেমন চাচাত কিংবা মামাত বা খালাত, পাশের বাসার ভাই বোন দের উন্নতি সহ্য করতে পারি না। তাদের দুর্বলতা খুঁজে কিভাবে মানুষের সামনে ছোট করা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত থাকি। এক অদ্ভুদ সামাজিক কাঠামো, একদিকে অাফসোস অন্যদিকে পরশ্রীকাতরতা। আমরা যখন নিজেদের উন্নতি করতে পারিনা তখন অন্যের উন্নতিও সহ্য করতে পারি না।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে বড় বড় সরল অংককে কিভাবে সামাধান করতে হবে শিখায় কিন্তু কিভাবে ডিপ্রেশন থেকে বের হতে হবে কিংবা অন্যের জয়কে কিভাবে অভিনন্দন জানাতে হয় বা অন্যের দুঃসময়ে কিভাবে কাঁধে হাত দিয়ে সাহস দিতে হয় তা শিখায় না। বরং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ই পুরানো দিনের বর্ণভেদ বা জাতভেদের মতো শিক্ষার্থীদের ভেতরে ক্ল্যাসিফিকেশনে ব্যস্ত। ক্লাস ওয়ানই থেকে তাদের কে শিখানো হয় কিভাবে ফার্স্ট হতে হবে, শিখানো হয় ১ম, ২য়, ৩য় হতে না পারলে তুমি পরাজিত, তুমি নিম্নমানের ছাত্র, তুমি গাধা। তার ভেতরে এক ধরনের হীনমন্যতা সৃষ্টি করা হয় যেটা তাকে আজীবন বহন করতে হয়। আমরা মানুষকে আর মানুষ হিসেবে মুল্যায়ন করি না, করি জিপিএ ৫, পদ বা তার ক্ষমতা দিয়ে। আমাদের বাসা, আমাদের স্কুল কলেজ, আমাদের আত্মীয় স্বজন, আমাদের বন্ধু বান্ধব, আমাদের শিক্ষক, কেউই আমাদের হতাশার সময়ে পাশে এসে দাঁড়ায় না, বরং সবাই বর্থ্য মানুষকে আত্মহত্যা করার প্ররোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আমরা একটা কথা চিন্তা করি না, জিপিএ-৫ বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারই জীবনের সব না। জীবনটা জিপিএ-৫ পেলেই বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেই সফল বা হতে না পারলে ব্যর্থ, তা না। জীবনটা উপভোগের। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই, আপনার নির্ধারিত পথে এগিয়ে যাবে এমনটা ভাবা শুধুই বোকামি। জীবনের প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা আর নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ। আমরা এগুলো বুঝতে চাই না বা সেগুলো নিয়ে চিন্তাও করি না। আমরা শুধু বোকার মতো ফলো করে যাচ্ছি তথাকথিত সিস্টেম কে। জীবনটা দাবা খেলার মতো, একটা ভুল চালের মানে এই না, আমি হেরে গেছি। দাবা খেলার মুল মন্ত্রই হল, বিচক্ষণতার সাথে খেলা আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা। কিন্তু আপনি মাঝপথে খেলা ছেড়ে দেয়ার মানেই হচ্ছে আপনি হেরে গেলেন। আত্মহত্যা কোন সমসারই সমাধান নয়। এই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষের মনে কোন না কোন সময়ে আত্মহত্যা করা ইচ্ছা জেগেছে। এখন সবাই যদি আত্মহত্যাকে প্রাধান্য দিত তবে সভ্যতা এই পর্যন্ত আসত না। আমরা সফল হতে চাই কিন্তু ব্যর্থতার হতাশা কে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারি না। সুখ, দুঃখ, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর রাতের ডিনারের মত হতাশাও জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
পৃথিবীতে হাজারো প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষই আত্মহত্যা করে। অন্য কোন প্রাণী আত্মহত্যা করে না। তবে কি এখন, "তোরা মানুষ হও" উক্তি পরিবর্তন করে বলতে হবে, তোরা প্রাণী হও,হিংস্র হায়না হও, তবু আত্মতুষ্টি আত্মহত্যা করবি না ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪

স্বতু সাঁই বলেছেন: মানুষ জানে না মানুষ কি চায়। এই না জানার কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরী হয়। যেদিন থেকে মানুষ তার মেধা অনুসারে তাদের প্রতিভাকে খুঁজে পাবে সেদিন থেকে মানুষের মধ্যে হতাশা আর থাকবে না। মেধাহীন মানুষরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে তাই সত্যিকার মেধাবীরা তাদের প্রতিভা অন্বেষণের সুযোগ পাচ্ছে না।

লেখনীটি ডুপ্লিকেশন হয়ে গেছে। এডিট করে নিবেন।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৫৩

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
"লেখনীটি ডুপ্লিকেশন হয়ে গেছে। এডিট করে নিবেন।" এই টুকু কি বুঝাতে চাচ্ছেন বুঝিনি। বুঝিয়ে বললে খুশি হবো।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: ধন্যবাদ। বুঝতে পেরেছি।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:২৮

কানিজ রিনা বলেছেন: আত্বহত্ব্যা মহাপাপ এর উপর একটা রচনা
থাকা উচিৎ ক্লাসের বইয়ে। ssc Hsc
রেজাল্ট খারাপ হলে প্রত্যেক বছর অনেক
ছাত্র ছাত্রী আত্বহনন বেছে নেয়। এদিকে
বাবা মা সহ স্কুল কলেজের শিক্ষকদের
সচেতনতা বাড়ানো জরুরী। পোষ্টের জন্য
অনেক ধন্যবাদ।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: এই যে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এরা আমাদেরই কাছের মানুষ । টাই ব্যর্থতাটা অনেকাংশে আমাদেরও যে আমরা আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারছিনা। একটা নির্ভরতার হাত যদি তার কাঁধে রাখা যেত তবে হয়তো সে মরণমুখী না হয়ে জীবনমুখী হতেন

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪

স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: সহমত ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.