নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীটা আজ বড়ই অদ্ভূত মনে হয়, ভাতের অভাবে যখন মৃত্যুময় জীবন, চাঁদের আলোয় তবু বেঁচে থাকা! ব্যার্থ প্রেমে জীবননাশ যেখানে, আবার সিগারেটের ধোঁয়ায় জীবনের ছবি আঁকা ।

শরীফ বিন ঈসমাইল

আমি ভীষণ খারাপ মানুষ, তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করি, সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে

শরীফ বিন ঈসমাইল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোলক হারানো বিজ্ঞাপন

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪১



এই তো কিছুদিন আগের কথা
মায়ের নোলক হারানোর পর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম পত্রিকায়।
পৌষের শেষ সন্ধ্যায় উনুনের পাশে পিঠা খেতে খেতে বলেছিলাম- আমার একটা সাইকেল দরকার।
পাশের বাড়ীর পাপনের সাইকেল চড়েছি বলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।
মা হেসে উত্তরে বলেছিলেন; পিঠা খা, পিঠা খেলে ব্যথা কমে!
প্রচন্ড রাগে আর কষ্টে এক দৌড়ে বিছানায় গিয়ে কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকেছিলাম!
মা বলতেন; ছেলেদের কান্না কাউকে দেখাতে নেই! ছেলেরা হবে লোহার মতো!
এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমার বাবা।
আমি বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি, কখনো ভাঙ্গতেও দেখিনি, কখনো হাসতেও দেখিনি।
তবে বাবা ঘরে আসার সাথে সাথে আমি ভেঙ্গে যেতাম।
ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো ভয়ে মায়ের ভিতরে সিঁধিয়ে যেতাম।
চৈত্রের শুরুতে হঠাৎ একদিন বাবা আসলেন লাল রঙা সাইকেল নিয়ে।
আমার সে কি আনন্দ, সে কি উচ্ছ্বাস, সে কি চিৎকার!
ঘরের কোণে থাকা মা দৌঁড়ে এসে আমাকে বুকে টেনে নেন,
আর আমি বুকে টেনে নেই লাল রঙা সাইকেল।
সেদিন যদি চোখ তুলে তাকাতাম তাহলে হয়তো দেখতে পেতাম,
পদ্ম নাকে সোনালি ভ্রমরটি নেই।
মায়ের হাতের বালা গলার হার কানের দুল, এক এক করে সব হারাতে শুরু করলো কোন কারণ ছাড়াই!
যখনি কিছু হারানো যেতো তখনি আমাদের জন্য কিছু একটা ঘরে আসতো।
স্যাকরা সত্য জানতো, বাবা সত্য জানতেন, মা সত্য জানতেন, প্রকৃতিও সত্য জানতো,
শুধু আমি মিথ্যা জানতাম।

তারপর এক সন্ধ্যায়- আমিও সত্য জানলাম।
বিশ্বাস করুন, বহুবার বাঁধা দিয়েছি, চোখে চোখে রেখেছি যাতে কিছু আর না হারায়।
কিন্তু তারপরও রাক্ষসী পেট সব ছিনিয়ে নিলো।
নোলক গেলো, বালা গেলো, কানের দুল, গলার হার গেলো, তবুও মায়ের মুখ থেকে কোনদিন হাসি যায়নি।
রাক্ষসী পেট সব নিতে পারলেও মায়ের হাসি নিতে পারলো না!
ধানের বয়সের সাথে আমার বয়স হলো।
বাছুর বড় হলো, নিজের মতো খেতে শিখলো, পড়তে শিখলো, চলতে শিখলো।
বুঝতে শিখলো; স্যাকরারা বড্ড পাষাণ হয়।
তারা সোনা গলায় কিন্তু সোনার ভিতরে লুকানো কষ্ট দেখতে পায় না।
দেখতে পেলে হয়তো মায়ের কিছুই হারাতো না।
পূবালী বাতাস স্রোতোবহা নদী জেনে রেখো, ঝিলের মাছ ধূসর চিল জেনে রেখো,
একদিন মায়ের নোলক আনব আবার।
বিশাল পদ্মার বুক মুড়ে দিবো সুনালী আভায়।
সেই স্বপ্নে পত্রিকায় লিখছি হারানো বিজ্ঞপ্তি, আজ থেকে ষোল বছর আগে এক শীতের দিনে
মায়ের নোলক হারিয়েছে।
খুঁজে দিন, দোহাই লাগে খুঁজে দিন।
বিনিময়ে দরকার হলে- আমার লাল রঙা সাইকেলটা নিয়ে নিন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

ওমেরা বলেছেন: আমি নেই নাই খুঁজে ও পাই নাই, পেলে আপনাকে জানাব । লেখা খুব সুন্দর হয়েছে ধন্যবাদ ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৬

শরীফ বিন ঈসমাইল বলেছেন: উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
মায়ের এই নোলক আর পাওয়া যাবেন।
মা নিজের ইচ্ছায় যা হারিয়ে ফেলেছেন সেটা খুজে নিয়ে আসলে মায়ের কষ্ট বাড়বে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৮

শরীফ বিন ঈসমাইল বলেছেন: হয়ত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.