নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Still, I don\'t know myself Perfectly!

শরতের ছবি

...

শরতের ছবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সে যে আমার জন্মভূমি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১২

{ ছবিটা এবারের । আমার ভাইয়ের হাতে তোলা । আমাকে পাঠিয়েছে }

(সাধারণত ভ্রমণ এর কথা মানুষ পরে লেখে । আমি আগে লিখি । কেননা কোথাও যাবার আগে আমার মন অস্থির থাকে । সেই অস্থির সময়ে আমি কিছু না কিছু লিখি । সবার সাথে শেয়ার করলে এক ধরণের স্বস্তি কাজ করে । তাই লিখলাম । ব্লগে দিলাম । আমার মত মন হলে হয়ত ভাল লাগবে । কোথাও বেড়ানোর পরে আমি খুব তৃপ্ত থাকি । ঐ সময় কিছু লিখি না ।আমার অতৃপ্ত আত্মাটা আমাকে লিখতে বাধ্য করে । )


গ্রামে যাচ্ছি । ডিসেম্বরে । বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষে । পরীক্ষা শেষ হতে ডিসেম্বর মাঝামাঝি এসে যাবে । কিন্তু মন বড় আনচান করছে , এখনও কেন যেতে পারছি না ! কার্তিক থেকে শুরু হয় এই অস্থিরতা । যাবার আগ পর্যন্ত চলবে । মনে হয় যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে বুকের ভেতর । ওখানে পৌঁছার পর এবং ওই মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত এমনি চলবে ।

মন যেন গুনগুনিয়ে গায় ''আমার মন পাখিটা যায় রে উড়ে যায়
নাটা বনের চোরা কাঁটা ডেকেছে আমায় ..............

হয়ত ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে রওনা দেব । এবার গাড়িতে বাড়ি যাচ্ছি । নতুন রাস্তা হচ্ছে । একেবারে বাড়ির ঘাটে থামবে সেই রাস্তা । আগে যেতাম চামড়া ঘাট থেকে ট্রলারে অথবা লঞ্চে ।
লঞ্চে মজা বেশি । লঞ্চের বারান্দায় হেঁটে , দাঁড়িয়ে মন ভরে প্রকৃতি দেখা যায় । নদীর দুপারে কী অপরূপ দৃশ্য ! উদাত্ত আকাশ । অনাবিল সুখের প্রান্তর । যেন অসীম সীমান্ত । সবকিছুর শেষ আছে কিন্তু এই সুন্দরের যেন কোন শেষ নেই !আমি এই দৃশ্য দেখে দেখে হত-বিহবল হই ।আনন্দে উদ্বেলিত হই । আমি যেন এই স্বর্গ সুখের এক একচ্ছত্র রানী। পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য এর সমতুল্য নয় ।

এ পথটি অবশ্য আরো একটি কারণে আমার কাছে সুখের । এ পথে আমার মামার বাড়ি । আমারই যেন পথ চেয়ে থাকে । যেন আমার শৈশবকে তার ঘাসের বুক থেকে , নদীর চর থেকে , কলমীর ফুল থেকে তুলে দিতে চায় । তাই হাত বাড়িয়ে পরম মমতায় , মামা ,খালা , মামীর আদুরে গলায় ডেকে যায় ।আমি আমার টেলিপ্যাথি মন দিয়ে তা বোঝতে পারি !

মোটের উপর এ পথে গেলে শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি মুখখানিও দেখা হয়ে যায় । এ ও তো
এক বাড়তি রোমাঞ্চ ।এই দিকে ( শ্বশুর বাড়ির দিকে ) নদীর পানি যেন বেশিই থই থই করে । তার বুকে ছোট ছোট ঢেউগুলো যেন শহরে থাকা রিক্ত মনটাকে একেবারে সুখে ভরিয়ে দেয় ।
প্রসঙ্গত , এ পথে অবশ্য শ্বশুর বাড়ির বাতাসটাই আগে সম্ভাষণ জানায় আমাকে । তারপর মামার বাড়ি , শেষ গন্তব্য আমার বাবার বাড়ি । আমার জন্মস্থান । এ পথে যেতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম । কারণ এ পথের আমার একে একে সব পাওয়া হয়ে যেত ।

২ বছর হল আমার মনের গহীনে এক কষ্ট দানা বেঁধে আছে । যে পথে আমার এত সুখ পাওয়া হত এ পথটি এখন আর নেই । সে নাব্যতা হারিয়েছে । এ পথে যাওয়া বারণ ।

আমার ভেতরে এই কষ্টটা যেন প্রিয় হারানোর মত । এই কষ্ট আমি জীবনে ভুলব না ।
স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি আমার সুখের রাজ্যে এই বৈরী বাতাস ভাগ বসাবে । নদীটি অন্যপথে বাঁক নিয়েছে । অনেক ঘুরে যেতে হবে নদী পথে গেলে । হয়ত সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে ।
তারপর ও পথেতো মামার বাড়ির মুখ দেখা হবে না । বিয়ে হওয়ার পর থেকে সময় এবং যোগাযোগের অসুবিধার জন্য মামার বাড়ির মধুর হাড়ি দেখতে পাই না । যদিও প্রিয় মানুষেরা কেউ নেই । ভিটায় ঘুঘু চড়ে । কোথায় গেল সেই দিনগুলো ! মন টানে আর কাঁদে ।

ছিলতো তাদের তরে কিছু ঋণ ।
হবে না তো শোধ কোন দিন ।

ওখানকার মাটি , বাতাস , কলমি ফুল ছুঁয়ে আসলেও সুখ পেতাম ।

তো আমরা বাধ্য হয়েই এবার গাড়িতে বাড়ি যাচ্ছি । গত ২ বছর বাড়ি যাইনি । একবছর হজে যাবার জন্য পরের বছর ছেলের এসএসসি পরীক্ষার জন্য । প্রতি বছর অন্তত একবার আমাকে ওখানে যেতে হবে । মনের ভেতর কে যেন অদৃশ্য গুন টানে । ওখানের কাদা- জল আমার শরীরে , বাতাস আমার ফুসফুসে মিশে আছে । যখন তার অভাব ঘটে আমি যেন বাঁচি না । এই শহরে আমি মরার মত বেঁচে থাকি ।এই গ্রাম , প্রকৃতি আমার ঐশ্বর্য । আমার মনের খোড়াক ।

বছরের শেষের দিকে যখন আমার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যায় । হৃদয় দমে যায় । আমি recharged হতে ওইখানে যাই । বক যেমন তার খাদ্যের টানে জলে নামে , আমি তেমনি করে ছুটে যাই আমার প্রাণের টানে ।

কারো হয়ত বিদেশ দেখতে মন চায় , আমার মন খালি উল্টো যেতে চায় । আমি গ্রামের মানুষ । চিরজীবন তাই থাকব হয়ত।
আমার কাছে এ যেন বেঁচে থাকার প্রেরণা । আমি মরে গিয়েও কবর গোহ থেকে চোখ মেলব এই দৃশ্য দেখার জন্য ।
আমাদের বাড়ি পৌঁছার শেষ দৃশ্যগুলোও দারুণ মজার ।
আমরা যখন পৌঁছে যাই সূর্যটাও ফিরে যায় তার গন্তব্যে । সূর্য ডোবার সাথে সাথে চাঁদটা ও মুচকি হাসির পরাগ মেখে স্নিগ্ধ আলোর ভেলায় মনকে কোন সুদূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । এ যেন কোন মধুর আথিতেয়তা। এ যেন আমারই ভালবাসার সুগভীর প্রতিদান ।
ভালবেসে এমন প্রতিদান পেলে কে না ভালবাসবে ,বলুন ।

এখানে ,
আকাশ নীল
বাতাস নির্মল
মালা হয়ে উড়ে
পাখিদের দল
ডুরবাডোল বিছিয়ে রাখে
মায়াবি আঁচল ।
মানুষগুলো সহজ সরল
মাটি নরম
বাতাসে সর্ষের ঘ্রাণ
আহা কত রঙ !
প্রজাপতি ফুলে ফুলে
করে কত যে ঢঙ !
বাতাসে পুড়া মাটির ঘ্রাণ
আমার উদাসী পরাণ ।

আমিধয়ে যাই অবোধ শিশু এক
কখনও ঊনিশের উচ্ছ্বাস
কখনও বারোতে করি বাস ।

কখনও উদাস বাঊল
একতারায় তুলি গান
এখানে যা কিছু সব
আমারই মনের মতন ...!



এই সব ছবি ২০১৪ সালের ছবি লঞ্চ থেকে আমার নিজ হাতে তোলা ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২২

নীল-দর্পণ বলেছেন: হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো জন্যে যে হাহাকারটা আমি সেটা অনুভব করতে পারছি অন্তর দিয়ে! কারন আমার এরকম দিন হারিয়ে গেছে। কোন কিছুর বিনিময়েই হয়ত আর ফিরে আসবে না। বিশেষ করে শীতকাল এলে খুব বেশি নস্টালজিক হয়ে যাই!

শেষ ছবিটা দেখে পরিচিত মনে হচ্ছে মাওয়া দিয়ে পদ্মা পাড় হবার সময়ে নদীর কোন এক জায়গার ছবি কি এটা?

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩০

শরতের ছবি বলেছেন: ধন্যবাদ আমার সঙে থাকার জন্য । এই ছবিটা আমায় বেশি কাঁদায় । এটি আমার মামার বাড়ি তরী ভিড়ানোর পথ । এটি কিশোরগঞ্জ । চামড়াঘাট থেকে আজমিরীগঞ্জে যাওয়া যায় । তারপর গাড়িতে করে হবিগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফিরা যায় ।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: স্মৃতিগুলো সবসময় কষ্ট দেয় আমার মতে।

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অপূর্ব সুন্দর সব ছবি !!!
আর কী অসাধারন মায়া দিয়ে লেখা প্রতিটি অক্ষর শব্দ বুনে বুনে !!!
অনেক অনেক ভালোলাগা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.