নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ চিঠি লিখুন কেন না ইহা স্থায়ী ”

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১১

এই ট্রাংক নিয়ে আমার একটা গল্প আছে। আমি তখন নিয়মিত নিয়মিত জিপিও যাই ( দেশের ডাক বিভাগের প্রধান কার্যলয়)। সেখানে পরিচয় হয় কয়েকজন পত্র লেখকের সাথে। সবারই ব্যবহার ভয়নাক খারাপ।

চিঠি লেখার পাশাপাশি তারা প্যাকেট করে এটাই তাদের পেশা। বিদেশে পার্সেল যায় তার প্যাকেট করে তারা। তাদের করা প্যাকেট ছাড়া ডাক বিভাগ প্যাকেট গ্রহণ করত না সহজে। চিঠি লেখা থেকে প্যাকেট করাটাই তাদের প্রধান পেশা হয়ে দাড়িয়েছিল। কারণ ২০০৪ সালের দিকে মানুষ হাতে চিঠি লিখা বাদ দেওয়া শুরু করেছিল মনে হয়। সেলফোনের ব্যাপক ব্যবহার সবে শুরু তখন।

জিপিওতে প্রবেশ পথে পশ্চিম পাশে তখন পত্রলেখকদের জন্য টিনের শেড ছিল। এই ট্যাংকের মালিক জনাব বাতেন সাহেবের ব্যবহার অন্য সকল পত্র লেখক থেকে আলাদা। তিনি অস্থায়ী/ দৈনিক কাজের টাকা প্রদানের ভিত্তিক জিপির কর্মচারী। তার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। তার কাছে যারা একবার চিঠি লিখতে আসে তারা বার বার আসেন। কারণ তিনি পুরো কথা শুনে চিঠি লিখেন। অন্যরা বলার আগেই লাইন পাঁচ শেষ করে দেন।

তার ছেলেরা দুইজন এ পেশায় নতুন। চিঠি লেখায় তাদের আগ্রহ নেই। কেউ মালপত্র আনলে তার পিছনে পিছনে ছুটে প্যাকেট করে দিতে। আমার হাতে ব্যাপক সময়। আমি বাতেন সাহেবের কাছে বসে বসে চিঠি লেখা দেখি।

আর বাতেন সাহেব ও তারা ছেলেদের ব্যস্ততা থাকলে নিজে চিঠি লিখে দেই মানুষের। আমি চিঠি লিখার পর। বাতেন সাহেব সেই চিঠি আবার নিজে দেখে দেন। উপরে লিখে দেন । আরবীতে ৭৮৬, এলাহি ভরসা, চিঠির কোনায় তারিখ, ঢাকা।

আমি শিখে যাওয়ার পরও এই অংশগুলো ফাঁকা রাখতাম বাতেন সাহেবের জন্য। মাস তিন এর বেশি হবে আমি সেই পত্র লেখকের নিয়মিত শিষ্য ছিলাম।

পত্রলেখক বাতেন সাহেব এখন স্থায়ী ভাবে পোস্ট অফিসে চাকুরী করেন। তার ছেলে এখনও প্যাকেট করেন। মানুষ এখন আর বাতেন সাহেবের কাছে চিঠি লিখতে যায় না।

আমি মাঝে মাঝে পোস্ট অফিসে যাই। সেই শেডের নিচে বসে থাকি, চিঠি পোস্ট করতে যাই। ফেইসবুকের ইনবক্সের পাশাপাশি আমি চিঠি লিখি। পরিচিত অনেক বন্ধুদের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, হবিগঞ্জসহ অনেক প্রান্তে আমার নিয়মিত চিঠি যায়, চিঠি আসে। আমি ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে সেই চিঠি পড়ি-উত্তর লিখি।

কিছু কিছু চিঠি আমার টেবিলের ড্রয়ারে জমা হয়ে আছে গত দশ বছর ধরে। প্রাপকের ঠিকানায় পোস্ট করা হয়নি। তারপরও আমি সেই প্রাপকদের নিয়মিত চিঠি লিখে যাই। যাকে কখনো দেখিনি তাকেও মাঝে মাঝেে তাকে চিঠি লিখি। কারো অনুরোধে চিঠি লিখি।

কারো চিঠি লিখে ফেবুর ইনবক্সে দিয়ে দেই। কেউ আমার দশ চিঠির উত্তরে একটা হুম লিখে পাঠায়। আমি বন্ধুদের পাশাপাশি মেয়র মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে যাই। এই চিঠি লিখাতে আমার ক্লান্তি নেই।

মাঝে মাঝে আমি নাজিম হিকমতের জেলখানার চিঠি পড়ি,
দড়ির এক প্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ
আমার কাম্য নয় সেই মৃত্যু।

পড়ি মহাদেব সাহা’র “চিঠি দিও”
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড়ো একা লাগে, তাই লিখো
করুণা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলে বলো, ভালোবাসি।

পড়ি “একাত্তরের চিঠি”
তাং: ২৩ – ০৫ – ১৯৭১
জনাব আব্বাজান,
আজ আমি চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি। শুধু এইটুকু জানি, বাংলাদেশের একজন তেজোদৃপ্ত বীর স্বাধীনতাকামী সন্তান হিসেবে যেখানে যাওয়া দরকার আমি সেখানেই যাচ্ছি।
..........
ইতি
আপনার স্নেহের ফারুক

পড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা উপন্যাসে অমিত কে লেখা লাবণ্যর শেষ চিঠি।

পড়ি শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কাছে সিরাজ সিকদারের খোলা চিঠি’র অংশ বিশেষ।

পড়ি নার্গিসকে লেখা কবি নজরুলের একমাত্র চিঠি.

পড়ি বুদ্ধদেব গুহের চিঠি
কুরচি দেখি কি করতে পারি? তোমার সাথে বেড়াতে যাবার। ইচ্ছে তো কত কিছুই করে। এই জীবনে ক'টি ইচ্ছে পুণ্য হলো বলো?

নেতাজী সুভাষ বসুর মাকে লেখা চিঠি

এত চিঠি মাঝে আমার একটা চিঠি বার বার পড়তে ইচ্ছে হয় আমি সেই চিঠি পড়ি

প্রিয় রুদ্র
তসলিমা নাসরিন
-------------------------------------------------
প্রিয় রুদ্র,
প্রযত্নে, আকাশ
তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুরে থাকো? তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার ছেড়ে আকাশে চলে গেছো। তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা, তোমার কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না? তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে, আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না, ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময় যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন পথে পথে হাটতে – হাটতে। কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ছিলো। এই জীবন নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই। ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো, তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি।

পর সমাচার এই যে
ঢাকা জিপিওর বাতেন সাহেবকে কখনো ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি। ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি যারা আমাকে চিঠি লিখেন, আমার চিঠি পড়েন। ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি যারা রাগ করে বলেন শোভন চিঠি দিতে এত দেরি হয় ক্যান। ভালবাসা চিঠির প্রাপক-প্রেরক সকলের প্রতি।

আজ ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস
চিঠি আবেগ, ভালবাসা, রাগ, অভিমান, ক্ষোভকে শুধুই কাগজ আর কালিতে বন্দি করে না। চিঠি আপনার সর্ম্পকের বন্ধনে দিবে ভিন্ন স্বাদ। চিঠি লিখুন চিঠি গোপনীয়তা রক্ষা করুন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

জাহিদ অনিক বলেছেন: শিরোনামটা ভাল লাগল, চিঠি লিখুন কেননা ইহা স্থায়ী।

ঠিকই বলেছেন, হাতে নিয়ে অন্যের কথা পড়ার যে আবেদন, যে ভাললাগা সেটা আর কই পাওয়া যায় ইমেইলে কিংবা ফেসবুকের ইনবক্সে!

ভাল লাগলো, চিঠির আবেদন ফুরায় না ।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: হ্যাঁ হয়তবা তাই ।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ভালো লাগলো।
তবে চিঠির যুগ এখুনি শেষ হবেনা।
আমেরিকায় এখনো অফিসিয়াল যোগাযোগব্যবস্থা একমাত্র চিঠি। প্রতিদিন একগাদা চিঠি। হাতেলেখাও পাওয়া যায় মাঝে মাঝে। ইমেইলও চলে। কম। ফোনেই বেশি।

# আপনার লেখা ডাবল পেষ্ট হয়েছে। এডিট করুন।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: এডিট করে দিলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.