নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলা এলে আমি শুধুই নীতুকে খুঁজি।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৪


গতবছর ঈদের দিন আমরা কয়েকজন ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে ঈদের পোষাক বিতরণ করি। সেই সূত্রে দিন কয়েক পর এক মেয়ের ফোন আসে। সে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি হুম,হ্যাঁ, আসছি,যাব, যাচ্ছি, ব্যস্ত বলে দিন কয়েক পার করে দিলাম।

তারপর একদিন শাহবাগে নিতুর সাথে আমার পরিচয়। আমার জানা মতে নিতু এই মুহুর্তে এদেশের সবচেয়ে সাহসী মেয়ে। সে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের শেষ সময়গুলো মানসিক প্রশান্তি জন্য কাজ করতে চায়।

আমি যাব যাব বলে নীতুদের বাসায় যাওয়া হল না। নীতুর বাবা একদিন প্রস্তাব দিলেন প্রয়োজনে ঘন্টা হিসেবে টাকা দেওয়া হবে আমাকে। আমি নীতুর সাথে গল্প করতে যাই। আজব গল্প করি।

নীতু আমাকে তার মনবল শক্ত রাখার মন্ত্রটা শিখিয়ে দিল। মনের খাতাটা যেন শূন্য না থাকে। স্বপ্নগুলো ছোট করে হলেও পূরণ করে ফেলতে হবে। তবেই বাঁচার আগ্রহ জন্মাবে। এই জোরে গত পাঁচ বছরের মত সে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছে।

তিন তারিখ ভদ্রলোক আমাকে টাকা দিলেন প্রথম কিস্তির টাকা । সেই টাকায় বেলী রোড নার্সারী থেকে গাছ কিনা হল। কিছু পাওনা ঋণ শোধ করা হল। তারপর গন্তব্য চকবাজার শিশুদের জন্য খেলানা কেনা।

শত বাধা উপেক্ষা করে নীতু আমার সাথে গেল চক বাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য খেলনা কিনতে। নিতু বেছে বেছে শুধু পুতুল কিনে। একটা তারের তৈরি পুতুল দেখে “ আমার একটা ছবি আছে এই পুতুলটার মত”।

৪ তারিখ নিতুর শরীরের অবস্থা খারাপ সে প্রোগ্রামে আসতে পারেনি। আমি আমার কলিগদের নিয়ে ধানমন্ডি একটা সেন্টারে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মাঝে খেলা বিতরণ করলাম। আর কিছু খেলনা রেখে দিলাম। একদিন নিতুকে নিয়ে ঢামেকে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মাঝে বিতরণ করব।

বিষয়টা এখানে শেষ হলে ভাল হত। চার তারিখে থেকে দিনগুলো দ্রুত পাল্টাতে থাকল। আমাদের নীতুর শারিরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল। তারপরও নীতুর নানা প্ল্যান ।

তাদের রামপুরা ছয় তলা বাড়ির চার তলা ভাড়া দিয়ে দেওয়া হবে। আর নীচতলা আর ১ম তলায় চলবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের প্রশমন সেবা। কারো কাছ থেকে অনুদান নিতে হবে না। ভাড়ার টাকায় সেন্টার চলবে। আমি হু,হ্যাঁ দিযে সময় পার করি। তার বাবা ক্যালকুলেটার দিয়ে হিসেব করে ভাড়া আর খরচের । নীতুর মা সেন্টারটা বয়স্কদের না শিশুদের হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।

নিতু মাথার জন্য নতুন চুল আনা হয়েছে । সেই চুল পড়ে সে বসে থাকে। আমি প্রতিদিন দেরি করে যাই। এক একদিন একজনকে নিয়ে যাই গল্প করার জন্য। আমাদের নানা প্ল্যান।

গতকাল আমার একবন্ধু আমার সাথে যাওয়ার কথা। নীতু অনেকবার তার গল্প শুনল আমার কাছে। নানা ব্যস্ততার কারণে তার যাওয়া হয়নি। তাই আর একজনকে খুঁজতে খুঁজতে দেরি হয়ে গেল। তবে ইতিমধ্যে আমর অনেকবন্ধুই তাকে দেখতে গেল।

নিতু তার দেহ দান করে দিতে চায়। যদি দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় কোন গবেষনার জন্য জীবন্ত নিতুর ‍উপর পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে তাতেও সে রাজি। তার বয়স কাগজে ১৮ পার হয়নি। তাই তার সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি, তার পরিবার আগ্রহী নয়।

১৩ তারিখ আমাদের অনেক কাজ সারাদিনের প্ল্যান তৈরি। দুপুরে বানানীতে যাত্রায় মাটি মেলায় যাব, তারপর বই মেলায় গল্প তুচ্ছ নামের বই কিনব । যদি কিছুটা আনন্দ পাওয়া । ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি জন্য চেষ্টারত তরুণদের সংগঠন হিমু পরিবহনের মিটিংয়ে যাব।

আমি নীতুর সাথে কথা বলে চলে আসতে চাইলাম। আর একটু থাকো আর একটু। ভাইয়া কোনভাবেই আমার ব্যাথা কমে না। মরফিন মনে হচ্ছে কাজ করছে না।

নিতু আমার যেতে হবে আমার এক বন্ধু রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। তার মটর সাইকেল নষ্ট হয়ে গেছে । বনানীতে আমার একটা মিটিং আছে। তারাও অপেক্ষা করছে। যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

রাতে বাসায় ঢুকে খবর পেলাম নীতু অসুস্থ । আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি। নিতু কাঁচ ঘেরা ঘরে।

অনেক রাতে ঘরে ফিরে আমি নিতুর ডাইরী পড়ছি। সে মৃত্যুর পর কোন হিমঘরে থাকতে চায় না। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি যেন সমাহিত করা হয়। বেশি হলে তিন-চার ঘন্টা। মৃত্যুর পর একটু ফোটাও সম্পদ যেন তার জন্য নষ্ট করা না হয়।

প্রিয় নিতু
তোমার মত সাহসী মানুষ আমি নই। তাই রাত থেকেই সেলফোন বন্ধ করে বসে আছি।

আমি আর আমার বন্ধু @সাকিল শুক্রবারের অপেক্ষায় আছি। আমরা নীতুর সাথে মেলায় যাব। মাছুম ভাই নীতুকে দেখতে যাবেন কাল। হিল্লোল ভাই গান শুনাতে যাবেন। আমার পুরো অফিসের লোকবল তোর সাথে সময় দিবে। আর একা একা সময় কাটাতে হবে না।

নীতু তোমার খাতাটায় যদি ফাঁকা থাকে। তবে আরো অনেকেই আসতে চায় সময় কাটাতে। শুধু তুমি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসো।

হে ঈশ্বর
মানুষ হাজার বছর বাঁচতে চায় ।
নিতুকে আর একটা সপ্তাহ সময় দাও।

এই শহরে হরতাল হোক কঠোর হরতাল। যেন কোন জমদূত না আসতে পারে নিতুর কাছে।

শুভরাত্রি নীতু, শুভ কামনা নীতু।

৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ ।

কত তাড়াতাড়ি সময় পার হয়ে যায়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:১৯

ওমেরা বলেছেন: আল্লাহ নীতুকে জান্নাত দান করুন আমীন ।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: :( :( :(

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:০৭

উম্মে সায়মা বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেল পড়ে :|

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:২০

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: জীবন কি কষ্টের ! মৃত্যুর দোড়গোড়ায় না এলে বুঝি জীবনের মূল্য বুঝা যায় না ।
আপনার লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল ।
সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত যখন কেউ বুঝতে পারে সে আর বাঁচবে না ।
লেখা ভালো হয়েছে ।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩

অংকুর জেসফি বলেছেন: খুব খারাপ লাগছে :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.