নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেখানে সারা দুনিয়াব্যাপী টেররিস্ট বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। সেখানে আমি “একজন টেররিস্টের চিঠি” মস্তিষ্কে নিয়ে ঘুরছি।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫২

প্রাইমারি স্কুলের কবিতাগুলো মস্তিষ্কের বিশাল জায়গা দখল করে আছে। ইদানিং আমি হুটহাট ভুলে যাই বহুকিছু। মুখস্থ বিদ্যায় আমি মহা খারাপ। তারপর কবিতাগুলো মস্তিষ্ক থেকে মুছে না।

আমার প্রাইমারি স্কুল বইয়ে সেই কবিতা।

মাঝে মাঝে আমি কবিতাগুলো জাবর কাটি। বিশেষ করে ভাত খাওয়ার পর। কবিতার প্রতি আমার বিশেষ প্রেম ভালবাসা নেই।

আমার এক বন্ধু অসাধারন কন্ঠে সুবোধ সরকার এর একটি কুকুরের বায়োডেটা পড়ে। পড়া পর শেষ লাইনে সে হু হু করে হেসে উঠে। পুুরো ঘর কাপিয়ে হাসি। এক কবিতা বার বার পড়ে মানুষ কি করে হাসতে পারে। তার কোন যৌক্তিক কারণ আমার জানা নেই। আমি কয়েক ডজন বার দেখেছি সেই হাসি। বিকট হাসি, ভনিতা ছাড়া হাসি।

আমরা এক সাথে হলেই তাকে বলি Play। সাথে সাথে সে পুরো শরীর শক্ত করে একের পর এক সুবোধ সরকার, প্রদীপ বালা,মহাদেব সাহা, পূর্ণেন্দু পত্রী, তসলিমা নাসরিন, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, আল মাহমুদ, শুরু করে। কিছুতেই ক্লান্তি নেই।

এত শত কবিতা কি করে একটা মানুষ মস্তিষ্কে রাখে? তার দাবী আমি কবিতা মস্তিষ্কে রাখি না। পেটে রাখি।


আমি চেষ্টা করে তার মত পেটে কবিতা রাখতে পারি না।

অনেক কষ্ট করে সুবোধ সরকারে “একজন টেররিস্টের চিঠি” মুখস্থ করে ফেলেছিলাম।

যেখানে সারা দুনিয়াব্যাপী টেররিস্ট বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। সেখানে আমি “একজন টেররিস্টের চিঠি” মস্তিষ্কে নিয়ে ঘুরছি। শব্দটা ভয়নাক।

কিন্তু বিশ্বাস করুন সুবোধ সরকারের “একজন টেররিস্টের চিঠি” পড়লে আপনার ভয়ানক মনে হবে না। বরং আপনার মনে হবে এই চিঠি তো ৪৭ কিংবা ৭১রে আপনার লেখা চিঠি।

পৃথিবীতে এখন সব আন্দোলনকে যদি টেররিস্টের এর মোড়কে মোড়ানো যায়। তবে মন্দ হবে না। শাসক আর শোষক গোষ্ঠী দুনিয়াব্যাপী প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে এটি প্রতিষ্ঠিত করেছে টেররিস্টের শব্দটা মানে ভয়ানক কিছু।

একে শেষ করে দেওয়া রাষ্ট্রের কাজ, দুনিয়ার কাজ। দুনিয়া আজ ঐক্যবদ্ধ টেররিস্টদের শেষ করতে।

কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্তে যে মানুষগুলো লড়ছে অধিকার, স্বাধীনতা, শোষন, ক্ষুদা, আগ্রাসনের বিপক্ষে তাদের কি হবে। তারাও কি শাসকগোষ্ঠীর কথিত ”টেররিস্ট”?

এ প্রশ্নের উত্তরে শুধু বলি, টেররিস্ট শব্দটা ব্যবহার করে শাসকগুলো দুনিয়া যেকোন আন্দোলনকে থামিয়ে দেওয়ার শক্তি রাখে। যেমন দেখুন আফ্রিকা পুরো আফ্রিকা লুট করে নিচ্ছে সন্ত্রাস দমনের নামে। বার্মায় সরকার হাজার হাজার মানুষ মেরে চালিয়ে দিল সন্ত্রাস বলে। ইরাক, আফগান, সিরিয়া, ইয়েমেনে হাজার হাজার মানুষ মারল তারা টেররিস্ট শব্দটাকে পুঁজি করে।

প্রিয়
সুবোধ সরকার আপনার দীর্ঘ কবিতা মুখস্থ করতে গিয়ে আমি বার বার ভাবতাম। ফেইসবুক, মুভি, আড্ডা, অফিস, অভাব, অভিযোগ, ঘুরাঘুরিতে ঠাসা আমার মস্তিষ্ক। তাতে এই চিঠি দিয়ে আর একটু জায়গা ভরে লাভ কি?

কিন্তু যখনই পড়ি “একজন টেররিস্টের চিঠি” তখন বলি আমার মস্তিষ্কের সবচেয়ে উর্বর অংশ জুড়ে আছো সুবোধ সরকার।

সুযোগ পেলে আপনিও একবার পড়ে নিতে পারেন। “একজন টেররিস্টের চিঠি”। মিলিয়ে নিতে পারবেন দুনিয়াব্যাপি লক্ষ মানুষ মারা কি করে তার বৈধতা নিয়ে নিল টেররিস্ট বলে। তাদের পালিত টেররিস্ট কর্মকান্ড দুনিয়া অন্য সকল বৈধ আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পারে না।

“একজন টেররিস্টের চিঠি”
সুবোধ সরকার

প্রিয়তমাসু
আমি তিনদিন খাইনি। কেউ কোনও খাবার দিয়ে যায়নি।
কী করে দেবে? গুহার বাইরে প্রচন্ড বরফ পড়ছে।
যে কোনও দিন আমি গুলিতে মারা যাব। যে কোনও দিন
তুমি টিভির পর্দায় আমার মুখ দেখতে পাবে।আমি
গুহার ভেতর সারারাত কম্পিউটরের সামনে বসে। কতদিন
আমি বকুল ফুলের গন্ধ পাইনি। কতদিন আমি গরম রুটি
খাইনি। কতদিন আমি তোমার ঘাসে হাত দিইনি।
কালো ঘাস। আঃ! ভাবলেই চে গুয়েভারা ছুটে বেড়ায়
শরীরে। স্টালিনকে হাতের মুঠোয় ধরে বসে থাকি।
তার মুখ দিয়ে গরম বেরিয়ে আসে। আঃ, গরম।
আমার স্টালিন ভালো আছে। তোমার সাইবেরিয়া?
হা,হা,হা… এখানে কেউ আমার জন্মদিন কবে
জানে না।

আমি পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। অধ্যাপক বাবার ছেলে।
কম্পিউটরে আমার চাইতে কেউ ভাল ছিলনা। আজ আমি
গুহায় বসে আছি।কিন্তু কেন? প্রিয়তমাসু,মাই লাভ,তুমি
এর উত্তর পাবে যদি অত্যাচারের ইতিহাস পড়ো। কত হাজার
কোটি ডলার খরচ করে ওরা গরিবকে আরও গরিব
করে চলেছে। ১১ বছরের একটি
বালককে একটি পাউরুটি কিনে দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তোর কি হয়েছে রে? সে গোগ্রাসে পাউরুটি কামড়
দিয়ে বলেছিলঃ আমার বাবা-মাকে ওরা পুড়িয়ে
দিয়েছে,জ্যান্ত। ছেলেটা খেতে খেতে কর গুনছিল,
বাবা-মা, দুই ভাই, তিন বোন…এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ…
হ্যাঁ, এগারো জন। ছেলেটার নাম বলব না। কে খোঁজো। আজীবন
খুঁজে যাও।

প্রিয়তমা, আমাকে আর বেশি দিন ওরা বাঁচিয়ে রাখবেনা।
তার আগেই আমি ওদের দু’দুটো ঘাঁটি উড়িয়ে দেব।
ওদেরতো পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, ওরা
আবার জন্মায়, আবার গনতন্ত্র বানায়, আবার পার্লামেন্টে
যায়।আবার প্রেস মিট করে। একটা সত্যি কথা লিখি,
ওরা গনতন্ত্র দিয়ে যা করায়, আমরাও AK-47 কে,
দিয়ে তাই তাই করাই। ওদেরটা দোষ নয়, আমাদেরটা দোষ।
আমি মারা যাব। তার আগে একবার, যদি
একবার তোমাকে দেখতে পেতাম। তোমার হাত ধরতে
পারতাম।যদি একবার তোমার ভেতরে ঢুকতে পারতাম, যেভাবে
বরফ ঢোকে গুহায়,যেভাবে শিকড় ঢোকে পাথরে,যেভাবে
ভাইরাস ঢোকে কম্পিউটরে।

আজ আমি একজন টেররিস্ট। হয়তো এটাই আমার শেষ চিঠি।
বলতো,কেন আমার মত ছেলে টেররিস্ট হবে?
কেন আমি ঘর-বাড়ি ছেড়ে,মায়ের হাতের খাবার ছেড়ে,
ভাল চাকরী ছেড়ে;গুহার জীবন,জঙ্গলের জীবন,
বরফের জীবন বেছে নিলাম?


আমি মাতাল হতে পারতাম।লম্পট হতে পারতাম। একজন
মাতালকে মেনে নেয় সমাজ। একজন লম্পটকে মেনে নেয় রাষ্ট্র।
একজন মাফিয়া বিধায়ককে মেনে নেয় এসেম্বলি। কিন্তু
একজন টেররিস্টকে মেনে নেয়া যায়না।
কতদিন তোমার স্নান করা চুলের গন্ধ পাইনি।
চোখ ভরে আসে জলে। পাউরুটি খাওয়া শেষ করে
১১ বছরের ছেলেটি বলেছিল,আর আছে? আমি আর
একটা পাউরুটি কিনে দিয়ে বলেছিলাম; শোন্ তুই বড় হয়ে
কী করবি? সে বলেছিলঃ বদলা নেব।
ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠে যেই মনে হয় আমার সামনে
অনেক অনেক কাজ। অনেকগুলো খারাপ কাজ। ভুল
বললাম,অনেক,অনেক,ভালো কাজ।


আমাকে ক্ষমা করো। মা’কে একবার দেখে এসো। বোকা মেয়েটা
আমার মা হয়ে কোনও অন্যায় করেনি।

ইতি-
কোন নাম নেই

পুনশ্চঃ আমি মরে গেলে, আমাকে তুমি ‘আকাশ’ বলে ডেকো।

ছবিটি সামু ব্লগার Monjurul Haque ভাইয়ে ফেবু প্রোফাইল থেকে নেওয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.