নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাউন টাউন সোলেমানিয়া

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬



ডাউন টাউন সোলেমানিয়া

শীতের বরফ গলে যাওয়ার সাথে সাথে কুর্দিস্থানের পাহাড়ের গায়ের কালো কালো দাগ গুলো থেকে সবুজ কুড়ি বের হওয়া শুরু হয়। আস্তে আস্তে তা সবুজ গাছের বাগান হয়ে যায়, অপূর্ব দৃশ্য। যেন ছোপ ছোপ সবুজ কার্পেট পাহাড়ের গায়ে বিছানো হয়েছে। এখানে প্রচুর ফলের গাছ হয়। আংগুর ,কমলা, পীচ,ফিগ, এপ্রিকট, কি হয় না। ফলের দাম একদম কমে যায় তখন। ৫ দিনার দিয়ে ১ কিলো আপেল কিংবা কমলা কেনা তখন মামুলী ব্যপার। পিচ,চেরি এগুলোর একটু দাম বেশী এবং খুব অল্প কদিন এগুলো বাজারে থাকে। তখন ফল খাওয়ার ধুম পড়ে যায় সারা কুর্দিস্থানে। সোলেমানিয়া ডাউন টাউনের জুসের দোকানগুলোর তখন রমরমা অবস্থা। কালো আংগুর, আনার,কমলা,আপেল এর ফ্রেস জুস বড় বড় গ্লাসে দেদারসে বিক্রি হয়। ১০ দিনার দিয়ে বিশাল এক গ্লাস ঠান্ডা জুস খেলে প্রান ভরে উঠে। অনেক বর্ণের জুসই পাওয়া যায় তখন তবে সবচেয়ে দামী হলো বানানা মিল্ক সেক। এটা ধনীদের খাবার। বাংলাদেশে কলা সহজেই পাওয়া যায় তাই এর মর্ম আমরা বুঝি না। কুর্দিস্থানে এর এত দাম দেখে একটু কৌতুহলি হলাম। খোজ নিয়ে জানলাম কলা স্থানীয় ফল না এটা ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে আমদানী করে আনতে হয়। বহু ঘাটের জল খেয়ে সবশেষে বাজারে আসে তাই এই অগ্নিমূল্য। প্রতিটি কলার সাথে ষ্টিকার লাগানো। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ থেকে আমদানী করা। সাধারণ অন্যান্য ফলের দ্বিগুন তিনগুন দাম দিয়ে মিল্ক বানানা সেক খেতে হয়। কুর্দিস্থানে পাকা চেরীফল খেতে সবচেয়ে বেশী মজা লেগেছিল। আংগুর তো আমাদের বাসার মাচাতেই থরে থরে সাজানো ছিল। আর নাসপাতি ঝরে পড়ে থাকত বাগানে। সকালে মাঝে মাঝে দুর থেকে আসা গরীব বাচ্চারা কুড়িয়ে নিয়ে যেত কেউ বাধা দিত না।



ডাউন টাউন এর বাজার আমাদের বাজার গুলোর মতই, হরেক রকমের কাপড় চোপড় পড়ে বুড়ো বুড়ি, তরুন তরুনীরা বাজার করতে এসেছে। দোকানের সামনে বৃদ্ধরা গুটি দিয়ে পাশা খেলে অলস সময় কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে কাঁচের গ্লাসে লাল চা বা শায়ে খাচ্ছে। অনেক দোকান বন্ধ এবং মালামাল কম। বেশীর ভাগ কাপড় চোপড় ইরাণ থেকে স্মাগলিং হয়ে আসে এবং ইরানী ফ্যাশন ই এখানে বেশ চলে । রাস্তা গুলোতে মোটামুটি ভীড় আছে গাড়ী ও ট্যাক্সি ক্যাবের সাথে ঘোড়া গাধায় টানা ঠেলা ও আছে। ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা তেমন একটা নেই এবং এ জন্য কেউ গা করে বলে মনে হয় না। পুলিশ আছে, তারা যা পারছে করছে, মোটামুটি প্রায় স্বাধীন অবস্থা । কাঁচা বাজারে গেলে শুধু লুঙ্গি পড়া মানুষের দেখা পাওয়া যাবে না। বাকী সব কিছুই প্রায় বাংলাদেশের কাঁচা বাজারের মত।

স্যুভেনির শপ ও আছে এবং এ সব দোকানে পুরানো জিনিষের ছড়াছড়ি। এক সময়কার ধনী ও সৌখিন মানুষ গুলো তাদের নিজস্ব শখের জিনিষ টাকার প্রয়োজনে কমদামে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে এবং এগুলো পরে হাত বদল হচ্ছে এসব দোকানে। বাজারে আসলে ঘুরে ফিরে কেনাকাটা করতে করতে আশপাশের অবস্থা দেখতাম। ট্যাক্সি ক্যাবে করেই বাজারে আসতাম। বাসা থেকে বের হয়ে দক্ষিণে ঢালু নুড়ি বিছানো রাস্তা মুল রাস্তায় এসে মিলেছে। দুই ব্লক পার হলেই রাস্তা তাই হেটেই এ পথটুকু পার হতাম। রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব গুলো সব ভক্স ওয়াগন পাসাত, ট্যাক্সিগুলো সাদা ও কমলা রং করা। জনশ্র“তি ছিলো এগুলো সাদ্দাম ব্রাজিল থেকে ট্যাংক কেনার সময় প্রতি ট্যাংকের সাথে দুটো করে পেয়েছিল। কুর্দিস্থান এবং বাগদাদের প্রায় ট্যাক্সি ক্যাব গুলোই ব্রাজিলের তৈরী এই ভক্স ওয়াগন পাসাত। গাড়ীগুলো বেশ মজবুত।

সোলেমানিয়াতে এক হাজার ডলার দিয়ে মোটামুটি এ ধরনের একটা কারের মালিক হওয়া যেত। একটা সুবিধা ছিল এই গাড়ীর, যে কোন ওয়ার্কশপে বা গ্যারেজে মেরামত করা যেত অতি সহজে। স্থানীয় ভাবে অনেক পার্টস ও বানাতে পারত কারিগররা। হাত বাড়ালেই প্রায় সময় টেক্সি পাওয়া যেত। ডাউন টাউন যেতে ২৫/৩০ দিনার লাগত। রাস্তার দুপাশের দৃশ্য তেমন আকর্ষণীয় নয়। মাঝে মাঝে থেমে যাওয়া নির্মাণ কাজ দেখা যেত। কিছুটা পশ্চিমে গেলে পাহাড়ের উপর আরেকটা সুন্দর আবাসিক এলাকা, সেখানে বিভিন্ন সরকারী অফিস। এই এলাকার আশে পাশেই কিছু মার্কেট আছে। চুল কাটার জন্য নাপিত সামান এর এসি সেলুন এখানেই। এই সেলুনের মালিক সামানের সাথে চুল কাটার সময় গল্প করে সময় কাটতাম। আরো এগিয়ে গেলে বিধ্বস্থ ৫ তারা হোটেল সোলেমানিয়ার ভগ্নদশা দেখতে দেখতে ডাউন টাউন সোলেমানিয়ার চৌরাস্তার মোড়ে পৌছে যেতাম। হোটেল সোলেমানিয়া যুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ও আগুন লেগে বিধ্বস্থ হয়েছিল অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তখনও এটার কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়নি। এর পাশেও আরেকটা দামী হোটেল ছিল সেটারও একই অবস্থা। হোটেল সোলেমানিয়া ছাড়িয়ে মোড় পার হয়ে বাজারের মুখেই ট্যাক্সি আমাদের নামিয়ে দিত। বাজারের ভেতরের রাস্তায় গেলে একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে পরে ঘোরার ব্যবস্থা, তাই মোড়ে নেমে হেটেই বাজারে চলে আসতাম। বাজারে আসার পর প্রায় সময় আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে কোন আইসক্রিম খেতাম। বেশ মজার আইসক্রিম একেবারে খাঁটী দুধ দিয়ে বানানো। ইউরোপিয়ানরা কুর্দিস্থানে দুধের কোন জিনিষই খেত না। তাদেরকে দুধের মধ্যে এক ধরণের জীবানু ্আছে বলে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। কুর্দিরাও বেশ আইসক্রিম খায় এবং বরফের ও ভক্ত। আমরা বাজারে ঘুরে ঘুরে দেখে শুনে বাজার করে ট্যাক্সিতে বোঝা চাপিয়ে প্রায় সময়ই সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে আসতাম। তখন সন্ধ্যা হতো ৯টার দিকে। ধুধু খোলা প্রান্তরের মত জেলখানার জীবনে এটাও ছিল এক ধরনের আউটিং। প্রবাস জীবনের দিন পঞ্জীর পাতাগুলো এভাবে সুখ দুঃখ, দেখা না দেখার আনন্দ বেদনা নিয়ে এগিয়ে যেত।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০০

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: শোভন,

আমি কুর্দিস্থানের পাহাড়ে যেতে চাইলাম, গায়ের কালো কালো দাগ গুলো থেকে সবুজ কুড়ি বের হওয়া শুরু হয় যখন তখনি যাবো। আস্তে আস্তে তা সবুজ গাছের বাগান হয়ে যাক। সে অপূর্ব দৃশ্য দেখবো

ডাউন টাউন এর বাজারটাতে যেতে ইচ্ছে হয়। প্রবাস জীবনের এই যে বর্ণনা, সে অসাধারণ

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৮

শোভন শামস বলেছেন: গেলে আনন্দ লাগবে আমারই মত ।
তবে দেশটা বড় দুখী । এরা যেন কারও না ।
কুর্দিরা বরাবরই অবহেলিত ।

শীতের শেষে বরফ গলা পানিতে মালভুমির মাটি উর্বর হয়ে উঠে ।
সবুজে ভরে যায় দেশটা ।

কুর্দিস্তানের উপর লিখাটা পরবেন আশা রাখি ।

বেশ কয়েক পর্বে লিখা চলছে । ধন্যবাদ

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৬

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: আহারে সকল রাজনৈতিক পোষ্টের মাঝে একটা পোষ্ট দেইখা দিল টা একটু শান্তি পাইলো! :) :) :) :)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৫

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ ++

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪২

রাসেল মাহমুদ শুভ্র বলেছেন: আমারতো এখনই যেতে ইচ্ছে করছে.....

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৬

শোভন শামস বলেছেন: আমারও যেতে ইচ্ছে করে।

ধন্যবাদ

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

সানড্যান্স বলেছেন: ক্যামেরায় ফিল্ম ছিল না? এত কম ছবি দিলে ক্যাম্নে কি?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৯

শোভন শামস বলেছেন: দেশটার অনেক ছবি আছে । অন্য লিখা গুলোতে দিয়েছি কিছু।

লিখাটা পরার জন্য ধন্যবাদ ।

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

অনীনদিতা বলেছেন: এখনই যেতে ইচ্ছে করছে....+++

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৫

শোভন শামস বলেছেন: দেশ টার অবস্থা এখনও বেড়ানোর মত হয়নি ।

আমারও যেতে ইচ্ছে করে।

ধন্যবাদ

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৩

কুন্তল_এ বলেছেন: দারুণ ... এটাই কি গাজী সালাহউদ্দিনের দেশ? ভাল থাকুন। :)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৬

শোভন শামস বলেছেন: গাজী সালাহউদ্দিন একজন কুর্দি ।
কুর্দিস্থানের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব করে।
ধন্যবাদ

৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৬

জুন বলেছেন: পোষ্ট দেয়ার সাথে সাথেই পড়ে গেছি অফলাইনে। ঠান্ডা জ্যুস রং বেরংয়ের আনার আর কমলার ইশ কি মজা খেতে। ফিগ আই মিন ডুমুর কিন্ত শুকনো আমার খুবই প্রিয়। কিন্ত এখানে পাওয়া যায় না :(
খুব ভালোলাগছে আপনার ভ্রমন কাহিনী পড়তে। তবে প্যারাগুলোর মধ্যে কিছুটা দুরত্ব রাখলে ভালো হয় শোভন শামস। আমার স্বামী এসে উকি দিয়ে দেখে যায় আর বলে 'উনি কিরকুক নিয়ে কবে লিখবে '?
আমি কি জানি বলেন তো !! কিরকুকের অপেক্ষায়।
+

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:০৩

শোভন শামস বলেছেন: লেখক বলেছেন: এই ভ্রমন কাহিনী পড়তে ভালোলাগছে জেনে ভাল লাগল।

সোলেমানিয়া থেকে আমরা চামচামাল পর্যন্ত যেতাম।

সেখানে ইরাকী চেকপোস্ট, আমাদের অনুমতি ছিল না কিরকুক যাবার।

কুর্দিস্তানে ইরবিল হয়ে আসতে হতো ।

ভাইকেও আমার ধন্যবাদ দিবেন।

দক্ষিণ আমেরিকার ভ্রমন খুব কম বাংলাতে।
ভাল থাকুন। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.