নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি প্রণয় উপাখ্যান

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৮

খুব বেশি নিজেকে জানি না আমি।। সেদিন চেয়ারটায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমার একমাত্র পোষা কুকুরটির লেজটির দিকে লক্ষ্য করছিলাম। ওটা বেশ দ্রুত গতিতে নড়ছিল। হ্যাঁ এভাবেই কুকুর গুলো নিজেদের প্রভুর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে। ওরা বোবা ওদের ভাষা নেই তাই সবাক মানুষ গুলোকে তারা এভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা এখনও মালিকের বসেই আছে।
আমার পাশের বাড়িতে থাকা মেয়েটির নাম লোপা। আমার খুব ভাল লাগে ওকে। ওর বাবা শহরের বিখ্যাত হাড়কিপ্টেদের একজন। লোপার সাথে আমার প্রণয় ঘটিত কোন সম্পর্ক নেই। ওকে আমার কেন জানি খুব ভাল লাগে। আমার পোষা কুকুরটির নাম লোবো। বেশ লোমশ এবং নাদুস-নুদুস জার্মান শেফার্ড ঘরানার।
যেদিন লোপা ওদের নিজেদের ৩ তলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল সেদিন এই লোবোই প্রথম টের পেয়েছিল। ওর ঘেউ ঘেউ শব্দ আমার কানেই প্রথম এসেছিল তাই আমিই সেই প্রথম মনুষ্য যে লোপার রক্তাত্ত দেহ টা প্রথমে দেখতে পেয়েছিলাম এবং সেদিনই আমি মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম। রক্তের আড়ালে থাকা ওর মুখটা দেখে আমি বেশ সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছিলাম। একটা চাপা সমবেদনা আমার ভেতর কাজ করছিল। মাথায় শুধু তখন একটা জিনিসই ঘুরছিল, যেভাবেই হোক এই মেয়েকে আমার সাহায্য করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওর চিকিৎসাকালীন পুরোটা সময় আমি ওর পাশেই ছিলাম। কারন আমার মাথায় এই মেয়েটার প্রতি একটা দূর্বলতা জন্মে গিয়েছিল। ওর বাবা আমাকে ঈশারাঈঙ্গিত দিয়ে প্রায়ই বোঝানোর চেষ্টা করতেন যে আমি যেন হাসপাতালে আর না আসি, তাই এটা বোঝাতেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে। যাই হোক প্রায় ৩ মাস চিকিৎসার পর লোপা সুস্থ হয়। এবং ওর সাথে আমার বেশ একটা ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
এ শহরে আমার বাসায় আমি একাই থাকি সাথে শুধু লোবো আর দিনে ঘন্টা ৩ একের জন্য কাজের মেয়েটার আনাগোনা আছে। আমি খুব যত্ন করে মানুষের সমালোচনা করতে পারি। ওটা আমার অন্যদের থেকে একটু বেশিই ভাল হয়। তাই একটা দৈনিক পত্রিকায় মাঝে মধ্যে সমালোচনামূলক লেখালেখি করি। আমার লেখাগুলো নিয়ে রাস্তাঘাটে আলোচনাও হতে শুনি মাঝে মধ্যে। এসব আমার বেশ ভালোই লাগে। স্বভাবে আমি প্রচারবিমুখতা প্রকাশ করলেও অন্তরে খ্যাতি কার না ভাল লাগে?
যাই হোক আমার মাথায় লোপাকে নিয়ে একটু দুর্বলতা জন্মে গিয়েছিল।হৃদয় অব্দি সেই দূর্বলতা তখনো পৌছয়নি। হঠাৎ লোপা একদিন আমায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। আমি হতবাক। কারন এতটা আশা করিনি আমি সেদিন। আমি প্রস্তুত ছিলাম না এমন কোন প্রস্তাবের জন্য তাই উত্তরে আমি একটু আতেলগিরি খাটিয়ে নাকচ করে দিলাম ওর প্রস্তাবটি, পাশাপাশি বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক রাখার মত কমন ওয়ার্ড গুলোও ব্যবহার করতে ভুললাম না। তখন লোপার কাছ থেকে আমি অবশ্যই কান্না আশা করছিলাম। কিন্তু লোপা হো হো করে হাসছিল। মেয়েটা বেশ আজব প্রকৃতির। কিন্তু ওর চোখ দুটো কিছু চাপা দুঃখ সব সময় প্রকাশ করে। হয়তোবা কেবল আমিই সেগুলো বুঝতে পারি। ওর হাসিটার কারণ জানতে চাইলে বলে ও নাকি আমাকে পরীক্ষা করছিল। আমি হঠাৎ ই এই বিষয়টার মোড় ঘোরানোর জন্য সেদিনের আমার শেষ টুইট টার প্রসঙ্গ তুলে দিলাম। লোপা খুব বেশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলো ব্যাবহার করে। আমি আমার উদ্দেশ্যে সফল হলাম। স্বাভাবিক ভাবেই সেদিন আমার রাতের একমাত্র প্রসঙ্গ ছিলো লোপা।
এ শহরের সবচেয়ে নামকরা পত্রিকার সম্পাদকের কলে ফোনটা বেজে উঠলো হঠাৎ। ফোনটা তুলতেই গত রাতে শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে কথা বলতে শুরু করল লোকটি এবং আমাকে এ নিয়ে একটা লেখা জমা দিতে বলল সে। কথাগুলোতে বেশ একটা কমান্ডিং টোন ছিল। কমান্ডিং টোন আমার খুব একটা পছন্দের না। আমিও মানুষ তাই একটু অনুনয়, বিনয়, অনুগ্রহ, তেলবাজি পেতে আমারও খারাপ লাগে না। কিন্তু লোকটার কথা গুলো আমার ভাল লাগেনি তাই সরাসরি লিখতে অস্বীকৃতি জানালাম। না আমি লিখেছিলাম ঠিকই কিন্তু অন্য পত্রিকার জন্য।
মান যশে এ শহরের হাতে গোনা কয়েকজনের ভেতর একজন ইতোমধ্যেই হয়ে উঠেছি আমি। রাস্তায় বের হলে বিদ্রোহী, বিপ্লবী,কাবিখা, খাবিখা, হোমরা চোমরা, প্রায় সকলেরই সেলাম পাই আমি। বেশ ভালোই লাগে। বাসায় এসে আবার লিখতে বসি। ঐ সেলাম গুলোতে অনেক অনুপ্রাণিত হই আমি। এখন আর শহরের রাস্তায় হেটে বেড়ানো সম্ভব হয় না। গত মাসে একটা এক্সিডেন্টে আমি আমার দুটো পা ই হারিয়েছি। তাই এখন আমি পঙ্গু। ঘরে বসে হতাশায় দিন কাটাই। লেখালেখিটাও প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। এক্সিডেন্টে পা হারানোর দিন থেকে আজ অব্দি লোপার চেহারা আমি দেখিনি। তবে এক ঘন্টা আগে একটা খবর পেলাম লোপা নাকি অনেকদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিল। গতরাতে ও মারা গেছে। সেদিন লোপা হাসলেও আজ আমি দুফোটা চোখের জল সামলাতে পারিনি। জানতামই না যে লোপার রক্তে অমন জীবন বিদ্রোহীরা ঘুরছিল। শুনেছি দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হবার পরই নাকি এ ব্যাধি লোপার দেহে বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল। লোবো আমার চোখের জল দেখতে দেখতে দিব্বি নিজের লেজ নেড়ে যাচ্ছে। ও আমার পাশেই আছে। শুধু এই মাত্র চায়ের কাপে আমি শেষ চুমুকটা দিলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.