নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাকরীর পরীক্ষাটা খুব একটা ভাল হয়নি। না টেকার সম্ভাবনাই বেশি। একেবারে উদ্দেশ্যহীন নয় তবুও খানিকটা মন খারাপ করে পকেটে হাতদুটো পুরে দিয়ে হাটছিলাম।হতাশা নয়, হতাশা বিষয় টা আমার ভেতর এখন খুব একটা কাজ করে না। তবে আগে একসময় বড্ড হতাশাগ্রস্থ ছিলাম। রাতদিন হতাশায় মগ্ন থাকতাম। এখন আর খুব একটা হতাশ হই না। বেঁচে আছি এতেই অনেক সন্তুষ্ট আমি। রাতে খাবার টা সেরে একা রেল স্টেশনে বসে থাকার অভ্যাস অনেক দিনের। ভাগ্যহীন সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শীতের রাতে ছেড়া কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখতাম আর ভাবতাম নিজের অবস্থান টা। মনে মনে বলতাম, ভালোই তো আছি। দুটো টিউশনি আর হাজার পাঁচেক টাকা মাইনে। খারাপ কি? অন্তত চারদেয়ালের ভেতর একটা ভাঙাচোরা ছাদের নিচে তো ঠাই হয়, কিন্তু ওদের তো তাও হয় না। এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে কাটিয়ে দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু এখন আর খুব একটা চিন্তা করা হয় না। চিন্তার নাকি বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। বাস্তবে না ঘটা যে কোন ঘটনাই মূল্যহীন। অন্তত অস্তিত্ববাদীরা তো তাই বলে। ওই রেল স্টেশনে শুয়ে থাকা মানুষরাই আমাকে হতাশা থেকে খানিকটা মুক্তিতে সহায়তা করেছিল। এ দিক দিয়ে আমি ওদের প্রতি কৃতজ্ঞই বটে।
হাঁটতে হাঁটতে একেবারে বাসার সামনে চলে এলাম। এ শহরেই একটা ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে আমি থাকি। তাতে অবশ্য রান্নাঘর ও বাথরুম এটাচড। এ শহরে আমার কোন বন্ধু নেই। যাদের সাথে সখ্যতা ছিল তারাও এখন সবাই চাকরী ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সামাজিক অবস্থানের প্রতিযোগিতায় ওরা মত্ত। আমি ওদের সাধুবাদ জানাই। আমি অবশ্য ওদের মত হতে পারিনি কিংবা হতে চাইনি অথবা না হতে পেরে আমি ওদের দল থেকে ছিটকে গিয়ে এখন হতাশায় এমন কথা বলছি। না না হতাশা নয় হয়তোবা হিংসা, অবশ্য ব্যাপারটা হিংসা হবার সম্ভাবনাও কম কারণ আগে আমি অনেক হিংসা করতাম তাই হিংসার অনুভুতিটা আমার জানা আছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে স্কুলের ফার্স্ট বয় মকবুলকে আমি অনেক বেশি হিংসা করতাম,কিছুতেই ওকে টপকানো সম্ভব হতো না। আমার মনে আছে কায়সারকে আমি অনেক বেশি হিংসা করতাম কারণ ও আমার চেয়ে খেলাধুলায় অনেক বেশি ভাল ছিল। এখন অবশ্য খুব একটা হিংসা করা হয় না। রাতে এলাকার মাঠটায় একা শুয়ে থাকতাম আর আকাশের প্রজ্বলিত নক্ষত্রদের কথা ভাবতাম। শুনেছি সূর্যের থেকেও অনেকগুণ বড় নক্ষত্রের অস্তিত্ব আছে। ওদের তুলনায় তো আমি একেবারে অনু পরমানুর থেকেও ক্ষুদ্র একটি সত্ত্বা , আমার হিংসা করার মত আছেই বা কি?
বাসায় এসে হাত মুখটা ধুয়ে সবজি আর ডাল ভাত দিয়ে দুপুরের খাওয়া টা সেরে নিলাম। শুয়ে শুয়ে খবরের কাগজটা পড়ছিলাম ঠিক তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম ছোট মামা ফোন করেছেন।
- আসসালাম ওয়ালাইকুম মামা।
- -আলাইকুম আসসালাম, মিঠু তোমার জন্য একটা সুখবর আছে।
- মামা এক মিনিট অপেক্ষা করুন।
- কি?
- অনেকদিন সুখবর পাই না । তাই সুখবর টা পাবার আগে একটু ওযু করে আসি।
- -ধুর মিয়া , তুমি ইদানিং দেখতেসি সব কিছুতেই একটু বেশি বেশি কর। পাগল হবার আগের লক্ষন। ওযু পরে করলেও চলবে আগে আমার কথা টা শুনে নেও।
- জি মামা বলেন।
- একটা প্রাইভেট কম্পানিতে তোমার চাকরীর ব্যবস্থা করসি। একাউন্টেন্ট এর চাকরী। বেতন যদিও খুব একটা বেশি না তবে বেতন বর্ধনশীল, দিন যত যাবে বেতন তত বাড়বে।
- আলহামদুলিল্লাহ মামা, এই দুঃসময়ে বড্ড একটা সুখবর দিলেন। বেতনের দরকার নাই মামা একটা সামাজিক তখমা তো গায়ে লাগলো।
- হুম উচিত কথা বলেছ মিঠু। রাতে একফাকে বাসায় আইসো।
- জি মামা আমি রাতে টিউশনি টা শেষ করেই আপনার সাথে দেখা করব।
- তাইলে এখন রাখলাম?
- জি মামা, আসসালাম ওয়ালাইকুম।
ফোনটা রেখেই প্রথমে আমি যে কাগজে জাতীয় পত্রিকায় পাঠাবো বলে প্রতিবেদনটি এতদিন ধরে লিখছিলাম সেই কাগজটাকে ম্যাচের আগুনে পুড়িয়ে সে আগুন দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম । কম দামি সিগারেট, তবে যেহেতু চাকরি হয়েছে এর পর সিগারেটের স্ট্যান্ডার্ডটা একটু হাই না করলেই চলছে না। এখন শুয়ে শুয়ে পুড়িয়ে দেওয়া কাগজের ভেতর লিখে চলা কথা গুলো নিয়ে চিন্তা করছিলাম । মনে আছে ওতে অনেক প্রতিবাদের কথা লেখা ছিল, একজন বেকারের দুর্দশার কথা উল্লেখ ছিল। পুড়িয়ে দিলাম। ভালোই হয়েছে। এখন তো আমি চাকরীজীবি।
একঘুমে রাত দশটা বাজিয়ে দিলাম। টিউশানি তে যাবার আর প্রয়োজন নেই । মামার বাসায় আর যাওয়া হবে না আজ। অনেকদিন পর আজ বেশ স্বস্তির একটা ঘুম হল। মামাকে ফোন দিয়ে বললাম যে আজ আর আসা হবে না ।
বাসার নিচের দোকানে বসে একটা চা আর একটা সিগারেট খাচ্ছিলাম । ওমনি রতন পাগলার সাথে দেখা। এ এলাকায় সবাই ওকে রতন পাগলা বলেই চেনে। লোকটা আবার আমার সাথে খুব একটা পাগলামো করে না, তাই ওকে পাগলা বলে ডাকাটা যদিও আমার উচিত নয় । যাই হোক, আমার পাশেই এসে বসলো রতন।
-কি হে মিঠু সাব, আছেন কেমন?
- হ্যাঁ ভালো। একটা চা খান?
-তা খাওয়া যায় তবে তার আগে একটা কথা ছিলো।
-কি কথা?
- এই প্রথম তোমারে বেনসন খাইতে দেখতাসি। চাকরী হইসে মনে হয়?
- আরে আপনেরে মানুষ পাগল যে কেন কয় বুঝিনা ? আপনি তো একজন সুস্থ মানুষের থেইক্যাও বুদ্ধিমান। এইযে একেবারে শার্লক হোমস এর মত কইরা বুইঝ্যা ফালাইলেন যে আমার চাকরী হইসে।
- কোন শালা বাইঞ্চোদ আমারে পাগল ডাকে?
- না না কেউ ডাকে না।
- যে শালা ডাকে ও পাগল ওর গুষ্টি পাগল। খামুনা চা। গেলাম। আমার মাথা গরম হইয়া গেসে।
এই বলে রতন যথারীতি উঠে চলে গেল সোজা মাঠের দিকে। আমি যখন মাঠে একা একা শুয়ে তারা দেখতাম তখন মাঝে মধ্যে রতনও আমার পাশে শুয়ে আকাশ দেখতো, তারাদের দেখতো, নক্ষত্রদের দেখতো । এখন ওর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আর আমার অতীতে।
আমার ব্যক্তিগত ডাইরীর পাতায় প্রতিবাদী কলমের আস্ফালনে লেখা এমন অনেক কথাই আছে যা আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ ছিলো। সমাজ পালটে দেবার কথাও ওতে লেখা আছে। লেখা আছে রেল লাইনের বস্তিতে শুয়ে থাকা অগণিত মানুষের কথা। ওদের বেঁচে থাকার গান, কবিতা। আমার দুঃসময়ের সঙ্গীদের কথা , শহরতলীতে চড়ুই পাখির অস্তিত্ত্ব সংকটের কথা।
এবার ভেবেছি একটা নতুন ডাইরী কিনবো। পুরনোটাকে একটা ডাস্টবিনে ফেলে দেবো। ওটা রেখে এখন আর লাভ নেই, জৈবিক তাড়ণায় এমন অনেক কথাই তো মানুষ লেখে কিংবা বলে, সাময়িক ক্ষোভ প্রকাশের জন্য বাস্তবে রূপ না পেলে তার কি লাভ? ভেবেছি এবার আমি স্বপ্ন দেখবো , উঁচু ইমারত গড়ার স্বপ্ন, একটা দামী গাড়ির স্বপ্ন।
প্রায় এগরোটা বাজে। রাতের খাবার টা মনু কাকার হোটেলে গিয়ে সেরে নেবার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । মনু কাকার হোটেল যেতে রাস্তায় স্টেশনটা পড়ে। স্টেশনটা পেরিয়ে এসে খেয়াল হল আজ শুয়ে থাকা মানুষদের চোখে পড়েনি । রাস্তায় হঠাৎ রতন পাগলার সাথে আবার দেখা। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল
- কি মিঠু সাব ,আইজ ইস্টিশনের গরীবগোরে চোক্ষে পড়ল না? পড়ব কেমনে তোমার তো কাম হইয়াই গেসে। যাই আরেক নতুন মিঠুরে খুজি গিয়া।
এই বলে মিঠু চলে গেল। একসাথে খাবার খাওয়ার প্রস্তাব দিলাম। কিন্তু পাগলা টা কেন জানি ‘নতুন মিঠু খুজি গিয়া’ ‘নতুন মিঠু খুজি গিয়া’ বলতে বলতে চলে গেল আমার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে। আমিও হেটে চলে গেলাম মনু কাকার হোটেলে। রাতের খাবার টা বেশ জম্পেশ ভাবেই সেরে নিলাম। এবার আরেকধাপ শান্তির ঘুম দেব।
.......................................
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
মনু মিয়ার হোটেলে খেটে কত টাকা খরচ?
৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭
তদন্তকারী বলেছেন: রতনের ব্যাপারে কিছু আলোচনা আপনার আর আমার মধ্যে হওয়া দরকার। কিভাবে করা যায়?
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো