নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা সম্মোহনের উপাখ্যান

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০০

নিভু নিভু ল্যাম্পপোস্টের ক্ষীণালোকে তোমায় যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন ঘড়িতে ঠিক কয়টা বেজেছিল তা আমার মনে নেই। মনে থাকার কথাও নয় কারণ ঘড়ির কাঁটা নয় আমার সমগ্র দৃষ্টিশক্তির আলোকপাত তোমার সৌন্দর্যের পেলব লহরীমন্ডিত মুখমন্ডলের দিকেই ছিল। তাই নাম দিলাম তোমার প্রেয়সী। তোমার ললাটে বড় লাল বিন্দু ছিলনা, বরং ছিল কিছু দুশিন্তার রেখা। তোমার উসকোখুসকো চুলে দীর্ঘদিনের অযত্নে স্পষ্ট প্রতীয়মান লালচে আভা। তোমার ওষ্ঠে শৈত্যের নির্মম ফাটল, তোমার এককানে দুল আরেক কান ফাঁকা, তোমার গায়ের রঙটা ঠিক কতটুকু সাদা তা এখনও আমার কাছে অস্পষ্ট, ওটা আজও আমার দেখা হয়নি। দেখা হবেই বা কিভাবে দ্বিতীয়বার যখন আমি তোমায় দেখেছি তখন তোমার মুখমন্ডলে সমগ্রটাই নিলাভ একটা স্তরের নিচে ঢাকা পড়ে ছিল। সত্যি বলছি, মানব সৌন্দর্যের অনেক প্রকরণ আছে বটে কিন্তু তোমার চেহারাটা আমার ইন্দ্রিয়কে সৌন্দর্যের এক নব্য সংজ্ঞা দান করেছিল।
তুমি হাসছিলে, তোমার মনের দরজার দু-কপাট খুলে তুমি হাসছিলে, তোমার সুখের সবকটা পায়রাকে উড়িয়ে দিয়ে তুমি হাসছিলে। আমি দেখছিলাম। না আমি হাসছিলাম না, আমি বিস্ময়ে দেখছিলাম। আমি আমার নয়ন আর মস্তিষ্কের গুহাপথে আলোর মশাল জ্বালিয়ে তোমায় দেখছিলাম। তুমি হেসেই চলেছিলে। তুমিও চুপ ছিলে আমিও হতবাক ছিলাম। কতটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছিল তোমায় বাক্যের অবরোধ প্রত্যাহার করতে তা আমার ঠিক মনে নেই। কারণ ঘড়ির কাঁটার দিকে আমার মনোযোগ ছিলনা।
এবার তুমি কিছু না বলে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলে। আমিও তোমার পিছু পিছু হাঁটতে ধরলাম। পিচঢালা পথে তোমার আঁচলটা লুটোপুটি খাচ্ছিল, অভিজ্ঞ পথটাও যেন এক নতুন শব্দ অনুভব করছিল তোমার আঁচলের ঘর্ষণে। তুমি বেশ কিছুটা পথ পেড়িয়ে গেলে। ঠিক কতক্ষন ধরে তুমি চলছিলে তা আমি অনুমান করতে পারছিলাম না। কারণ ঘড়ির কাঁটার দিকে আমার মনোযোগ ছিলনা। আমি একটা বুভুক্ষা নেড়ি কুকুরের মত তোমার পিছু পিছু চলছিলাম। লোভটা যে শুধুই তোমার সৌন্দর্যের জন্য ছিল তা অন্তত আমার কাছে সুস্পষ্ট ছিল। কিছুটা পথ পেড়িয়ে তুমি থেমে গেলে। আমি দেখলাম একটা বিশাল ধূধূ প্রান্তর। মধ্যিখানে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। ওতে একটু খানি আলো জ্বলছিল। তুমি আমার বিমোহিত করে রেখেছিলে অতটুকু আমি বুঝতে পারছিলাম। আমি ক্ষণিকের জন্য তোমার দাসে পরিণত হয়েছিলাম। কিন্তু ঠিক কতক্ষনের জন্য তা আমি ঠিক বলতে পারব না কারণ ঘড়ির কাঁটার দিকে আমার মনোযোগ ছিল না। তুমি এবার তোমার দক্ষিণ হাতটা প্রসারিত করে ওই ছোট্ট ঘরটার দিকে নির্দেশ করলে। আমি তোমার নির্দেশনা অনুসরণ করলাম। এছাড়া আমার কোন উপায়ও ছিল না কারণ তুমি আমায় বিমোহিত করে রেখেছিলে।
ঘরটা খুব নাজুক অবস্থায় ছিল। মনে হচ্ছিল দীর্ঘদিন হয়ে গেছে এদিকে কারও আসা যাওয়া ঘটেনি। ঘরটার খুব কাছাকাছি গিয়ে আমি তোমার দিকে ঘুরে তাকালাম, তখনো তোমার দক্ষিন বাহুখানি ওই একই নির্দেশনা দিচ্ছিল। আমি বুঝলাম এবার আমার ঘরে প্রবেশ করতে হবে। আমার ভয় হল, যদি বেরিয়ে এসে দেখি তুমি নেই?? যদি এই সম্মোহিত পরিবেশটা আর না থাকে? মনের এই দ্বিধার চৌরঙ্গীর সাথে এক প্রকারের যুদ্ধ করেই আমি ভেতরে প্রবেশের জন্য মনস্থির করলাম। দরজার এক কপাট ঠেলে ভেতরে গেলাম। অন্ধকার ছিলো তবুও অজানা উৎস থেকে খানিকটা আলো আসছিলো। একটা দীর্ঘদিন আধোয়া চাদরের নিচে একটা ভঙ্গুর চকির অবস্থান টের পেয়েছিলাম। নাহ, আর কিছু ছিলোনা ঘরটাতে। আমি তবুও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম।
আমার সম্মোহনতাটা যেন ধীরে ধীরে এবার মলিন হয়ে আসছিল, হারিয়ে যাওয়া আমি যেন আমাতে হঠাতই ফিরে আসতে শুরু করেছিলাম। এবার আমার সত্যি সত্যিই ভয় করছিল। কিন্তু কিসের ভয়? ওই বিমোহিত করা সুন্দর মুখখানির ভয়?? নাকি আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভিন্নধর্মী কোন অস্তিত্বের ভয়? আমি তবুও ঘরের এদিক ওদিক দেখছিলাম। বারংবার দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনে এমন কিছু আছে যা আমার চোখকে অনবরত ফাঁকি দিয়ে আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে। নাহ অনেক খুঁজেছি আর নয়। এবার ঘর থেকে বেরিয়ে রহস্যেঘেরা প্রেয়সীকে আবার দেখার পালা। ঘরের চৌকাঠটা সবে পেরুব ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা বীভৎস ভয় জাগানিয়া কন্ঠ বলে উঠলো-
- কিরে আমায় দেখলি না যে ?
পেছনে ফিরে আমি যা দেখেছিলাম শব্দে বলা হয়তোবা সম্ভব কিন্তু অনুভুতিটুকু ব্যাখ্যা করে বোঝানো সম্ভব না। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম প্রেয়সীর নগ্ন দেহ কুঁড়েঘরটার এক কোনের ছাদ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা একটা গাছের স্থুল ডালে ঝুলছিল। আর প্রেয়সীর মুখখানি আমার চোখের সামনে স্পষ্ট দিনের আলোর মত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। ওটার রঙ নীল ছিল। প্রেয়সী তখনো হাসছিল। এবারের হাঁসি আরও প্রকান্ড। আমার বুঝতে দেরী হলনা ব্যাপারটা। বিমোহিত করা এই পূর্ববর্তী মূহুর্তগুলোর ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এক দৌড়ে বহুদূর পেড়িয়ে চলে এলাম। ঠিক কতটা এসেছিলাম তা বলতে পারবোনা তবে এতটুকু বলতে পারবো যে এ দূরত্ব হয়তোবা নিরাপদ। আমার দেহ দিয়ে অনবরত ঘাম ঝরছিল। আমার পা গুলো থরথর করে কাঁপছিল। হঠাত পাশ থেকে আরেকটি আওয়াজ আমার কানে এল। আমি তড়িৎ গতিতে পাশে তাকিয়ে দেখলাম হাতে লুন্ঠনবাতি নিয়ে আমার বাংলোর দারোয়ান হাসেম আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
স্যার কই গেসিলাইন?
- আচ্ছা ওই দিকে যে একটা কুঁড়েঘর আছে...
অহ স্যার আপনেও?? অইদিকে কোন কুঁড়েঘর নাই স্যার। ঐদিকে আর যাইয়েন না। জায়গাটা ভালোনা।
আমি এই ঘটনার অন্তরালের রহস্য আর জানতে চাইলাম না। ভেতরে খুব ভয় কাজ করছিল। হাসেমের কাধে হাত রেখে তাই সরাসরি বাংলোতে ফিরে যাওয়াটাকে উচিত বলে ভেবে নিয়েছিলাম। একটা নতুন অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতাও হয়েছিল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:১৩

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: ভূতের অভিজ্ঞতা!লেখাটা বেশ ভালোই লাগল।শুরুটা রোমান্টিক আবহে ছিল.?

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৯

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যা শুরুটা রোমান্টিক আবহে ছিল, ভৌতিক অভিজ্ঞতার সাথে রোমান্টিকতার মিশ্রণ করার চেষ্টা করলাম আরকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.