নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাল রাতেই আমার মৃত্যু হয়েছে

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০০

মাথার নিচের বালিশটা ফেটে গেছে। তার থেকে তুলো সহসাই মুখের ভেতর ঢুকে যায়। গলায় ঢুকে তা একটা দমবন্ধ অবস্থার সৃষ্টি করে।। আচমকাই ঘুম ভেঙ্গে যায়।। তারপর খুক খুক করে গলা থেকে তুলোর কণা গুলো বের করে গ্লাস দুয়েক পানি না খেলে ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় থেকে যায়।তারপর আবার ঘুম।। সকালে উঠে আবার দুই গ্লাস পানি। অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ওপার থেকে একটা মোটা ভারী কন্ঠস্বর বলে উঠলো । ' ইউ আর ফায়ার্ড'। নিঃসন্দেহে ওটা বসের গলা ছিল। ফোনটা রেখে আবার ঐ ফাটা বালিশের উপর শুয়ে সিলিং ফ্যানের পাখায় ময়লার আস্তরণ চোখে পড়লো। ডান কাত হয়ে আবার ঘুম। ঘন্টা তিনেক পর দুপুর। গত রাতের বাসি তরকারী আর আর ৬/৭ টা রুটি দিয়ে দুপুরের আহার সেরে আবার একটু ঘুম।
সন্ধ্যে হল।
এবার এক কাপ চা।
আবার ফোন। একটা মেয়ের কন্ঠস্বর।
-তুই এলি না??? হারামজাদা।। শুয়োর , ইতর, আহাম্মক। জানোয়ার।.।.।.। (বিপ বিপ)

ফোন টা কেটে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তারপর ঘড়ির কাটা চোখে পড়ল। ১২ টা। হ্যা ঘড়িটা নষ্ট। একটা সিগারেটের অর্ধেকটা গতরাতে খেয়ে এখন বাকি অর্ধেকটা ধরিয়ে কানের উপর বসে থাকা মশাটার হুল ফোটানো অনুভব করতে থাকা।
আবার সেই মেয়ের ফোন।। কল কেটে দিয়ে সরাসরি সুইচড অফ করে আবার সিগারেটে টান।

আরো এক ঘন্টা পেরুলো। তারপর বাসার ছাদের খুব কাছ দিয়ে একটা প্লেন উড়ে গেল সজোরে।।
ডিং ডং।
- স্যার লন্ড্রির বিল।
(দরজা খুলে হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে দরজা টা আবার লাগিয়ে দেয়া)
মিনিট পাঁচেক চুপ থেকে আবার এক কাপ চা।

রাতে অল্প কিছু বাজার না করলে সকালে খাবার জন্য কিছুই থাকবে না। সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোজা বাজারে। অল্প কিছু তরকারী কিনে বাসার দিকে আসার সময় বুকের বাঁ দিকে একটু ব্যাথা অনুভূত হল।। একটা চিকন ঘাম দিয়ে শরীরটা খানিকটা দূর্বল হয়ে পড়লো। পাশের টং দোকানে বসে মিনিট দশেক বিশ্রাম নেবার পর কড়া মেজাজের দোকানদার বলে উঠলো। " কিছু খাইবেন না?? "
না বসে থেকে সরাসরি আবার রওনা বাসার দিকে। পেছন থেকে দোকানদার গুষ্টি উদ্ধার করছে।

রাতের রান্না চলছে।। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।
দরজা খুলে সেই ফোনে গালাগাল দেয়া মেয়েটি দাঁড়িয়ে। হঠাত দেখে মনে হচ্ছিল একজন অপ্সরা স্বর্গের থেকে নেমে এসেছে। অপ্সরার মুখের ভাষা বেশ বিশ্রী। মিনিট তিনেক গাল শোনার পর লাল জামা পড়া অপ্সরার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে অনবরত চুমু দিতে শুরু । অপ্সরা চুপ করে চুমু গুলো সহ্য করছিলো। চার পাঁচ মিনিট অনবরত চুমু বর্ষনের পর ডাল পোরা গন্ধে চুমু থামিয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা।
- এলে না কেন? আমি দু ঘন্টা বসে ছিলাম।
(খানিকক্ষণ চুপ থেকে)
-কথা বলছো না যে?? এই যে কি হল??

টেবিলে খাবার পরিবেশন করে ইশারা দিয়ে অপ্সরা কে খেতে বসতে বলা।
অপ্সরাও লক্ষ্মীটির মত বসে গেল খেতে। খাবার খেতে খেতে কপালে হাত দিয়ে অপ্সরা দেখে নিল জ্বরের উপস্থিতি। না জ্বর নেই।
অপ্সরা এবার একটু বোকা বুনে গেল। এমন অবস্থায় কখনো দেখেনি তার প্রিয়তমকে। কিছুক্ষণ প্রিয়তমর মুখের হাবভাব পর্যবেক্ষণ করে একটা আদর্শ পোকার ফেস আবিষ্কার করলো।
আবার একটা বিমান উড়ে গেল খুব নিচ দিয়ে।। এবারের টা আরো কাছ দিয়ে আরো বেশি বেগে ছুটে গেছে।
হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অপ্সরা তার প্রিয়'র মুখ থেকে একটা শব্দের জন্য মরে যাচ্ছিল। এমন সময় প্রিয়তমা শার্ট টা খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বিছানায় গিয়ে সেই ছেড়া বালিশের উপর মাথা গুঁজে আবর্জনাপূর্ণ ফ্যানের দিকে তাকিয়ে গড়গড়িয়ে কিছু বলতে শুরু করলো।


' শালা ধান্দাবাজ। তোর বুজরুকি আমি বুঝে গেছি। তোর পকেটে যে একশ টাকা পুরে দিয়েছিলাম সেটা না দিয়েই পালিয়ে গেছিস??? ধার চুকাবে কে শুনি? তোর বাপ? শালা বেঈমান।'
অপ্সরা যখন কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো তখন পকেট থেকে একটা চিঠি বের করলো প্রিয়তমা। সেটা অপ্সরার হাতে দিয়ে বলে উঠলো।
-এটা তুমি বাসায় গিয়ে খুলে দেখবে। না কোন সুইসাইড নোট নয়। ভয়ের কিছু নেই।
- আমি কি এখনই চলে যাব?
- তোমার ইচ্ছা।
- কিছুক্ষণ থাকি?
- মনে হয় চলে যাওয়াটাই ভাল হবে।। রাত বাড়ছে।
- রাতে ফোন দিব কি?
- না দিলেই ভাল হয়।
- ঠিক আছে ।। গেলাম।। কাল আবার আসবো।
- ঠিক আছে।

চলে যাবার পর একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে কানন আবার ডান কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেল।
রাস্তায় যেতে যেতে মল্লিকা দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে গায়ে ঘাম দিতে লাগলো। বুকের বাঁ দিকটা খানিকটা চিন চিন করে ব্যাথা করতে লাগলো। ট্যাক্সিতে বসে নিজের ধৈর্য আর ধারণ করতে না পেরে চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো।

' " কাল রাতে আমার মৃত্যু হয়েছে।
মিনিট পাঁচেক পরই আবার পূনর্জন্ম।
এর মাঝে কি হয়েছে তা বলতে পারবোনা।
তবে বন্ধু প্রিয়ম দেশ ত্যাগ করেছে আমাকে না বলে।
ডাক্তার বলেছে হার্টে ব্লক আছে।
উপন্যাসটার আর দুটো লাইন লিখলে শেষ হয়ে যেত-
ছোট্ট আবীর ওটা ছিড়ে ফেলেছে।
তারপর একটা খসে পড়া তারা দেখলাম।
অন্য তারা গুলো সেটাকে সাহায্য করেনি।
আমিও পারিনি সাহায্য করতে।
ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ছোট করবো না।
ভুল না করলে আবার মানুষ কিসের।
কাল রাতে একটা ছোট্ট ল্যাংড়া নেড়ি কুকুর দেখেছি
ওটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল।
ঠিক নিজের খাদ্য সন্ধান করে নিচ্ছে।
আমিও খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেশ কয়েক বছর বেঁচে ছিলাম।
তবে কাল রাতে আমার মৃত্যু হয়েছে। কারন জানি না।
তার মিনিট পাঁচেক পর আবার পুনর্জন্মও হয়েছে।

মল্লিকার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো। ট্যাক্সি ঘুরিয়ে কাননের বাসায় আবার যাবে এমন সময় কাননের ফোন।
- শান্তনা দিতে আসবে? আরে বোকা ওগুলো কেবল কিছু ঘটনা। যা কোন না কোন ভাবে আমার সাথে জড়িয়ে আছে। রক্ত মাংসে গড়া মানুষ তো তাই প্রভাব ফেলে।। তবে কাল রাতেই আমার মৃত্যু হয়েছে যখন লাইসেন্স করা রিভলভারটা আমি আমার মাথায় ঠেকিয়ে ছিলাম। ট্রিগার টা চেপে দেবার পর বুঝি যে গুলি নিজের ঘর ছেঁড়ে বেরিয়ে আসেনি।
তাই কাল রাতেই আমার মৃত্যু হয়েছে তবে মিনিট পাঁচেক পর আবার পূনর্জন্ম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লেগেছে। কিছু বানান দৃষ্টিকটু লাগছে।
"প্রিয়তমা" না হয়ে "প্রিয়তম" হওয়া উচিত। "বুজলুকি" না হয়ে "বুজরুকি"।

পোষ্টে ২য় ভাললাগা।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: ধন্যবাদ ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্য। শুধরে নিয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.