নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিরাপত্তায় সাত্তার

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪১

হিসেব কষে মুখে একটা হাঁসি এল। গুনে গুনে তেরশ কোটি টাকার মালিক । আজ থেকে ১৩ বছর আগে একটা তেল কোম্পানির সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী সাত্তার ব্যাপারী। দুই স্ত্রী , তিন সন্তান আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ভাই। এইতো উনার সংসার। বেশ কাটছে।অট্টালিকা, দামি গাড়ি, মহামূল্যবান আসবাবপত্র নিয়ে তার বসবাস। বিরক্তিকর কীট পতঙ্গগুলো এমন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে না। ওগুলো গরীব আর মধ্যবিত্তের রক্ত চুষে খেতেই বেশি পছন্দ করে। শহরের মান্যগণ্য ব্যক্তিদের তালিকায় সাত্তার ব্যাপারি একজন মহীরুহ'র নাম।সামান্য একজন তেল শ্রমিক হয়ে এত্ত ধন সম্পত্তির ডেরায় পদার্পন অবশ্যই সহজ যাত্রার ফসল নয়। ঝরাতে হয়েছে লিটার কে লিটার ঘাম। বিকল হওয়া যন্ত্রপাতি সুকৌশলে আত্মস্বাৎ করতে আর যাই হোকনা কেন একজন দক্ষ বাটপার হওয়া আবশ্যক। তারপর শ্রমিক আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকে একজন দক্ষ নেতার পরিচয় দেয়ার ইতিহাসও আছে এই সাত্তার সাহেবের জীবনে। এসব কথা ভেবে গর্ব বোধ হয় সাত্তার ব্যাপারীর। মনে মনে ভাবে " হে হে।। হালার বেকুবের দল।। আমার লগে থাইক্যা অহনও হেই আগের মতই তেলের ঘানি টানে। দ্যাখ শালা ব্যাক্কলের দল তগোর লগে থাইক্যাই আইজ আমি কোন যায়গায়। বুদ্ধি নাই হালাগোর । হে হে। " যে শ্রমিকরা একসময় সাত্তার সাহেবকে দোস্ত বলে সম্বোধন করতো তারা অনেকেই আজ সাত্তার ব্যাপারীর কোম্পানী গুলোর কোন একটায় সামান্য বেতনভুক্ত শ্রমিক। মালিকের সাথে দেখা করতেই পোহাতে হয় অনেক কষ্ট। কিছু করার নেই। সময় ব্যাপারটা এখন নিজেই কলুষিত।

আজ সকালে বেশ বড় ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে শহরের। সাত্তার সাহেব ঝাঁকুনিটা একটু বেশিই খেয়েছে। মাথায় মাঝে মধ্যে একটা ইসিকিউরিটি কাজ করে।। ঘুমের মধ্যে সেটা আরো বেশি করে। এই বুঝি কেউ এসে হানা দিয়ে নিয়ে গেল তার সব। চায়ের কাপের চুমুক দিতে দিতে বড় বউ হেলেন কে কাছে ডাকল। হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে কোলে বসিয়ে বউয়ের চোয়াল টায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
-আচ্ছা ডার্লিং আমি যদি না থাকি তাইলে এই সম্পত্তির কি হইবো?
-ধুর যা সকাল সকাল এইতা কিতা কইবার লাগসুইন?
-আরে দেহো না কেমনে লাড়া দিতাসে দুনিয়াডা।
- ও!! ভুমিকম্প হইলে তো আমরা বেকেই মইরা যামু।। তুমি একলা কেরে??
- হ এইডাও ঠিক।
-আইচ্ছা ইংরেজী পেপারডা ড্রইং রুমে রাখসো না?
-হ রাখসি।
- হুনো বিদেশি খাওন রাইন্ধো, সাইসিস হইলে আরো ভালো হয়। বহুত বড় বড় ব্যাবসায়ী আইবো আইজ। বুজছ ডার্লিং?
- হ বুজছি। এলা যাইতে দেইন দেখি আইন্ন্যের ছুডু বউ না জানি কি আওলাঝাওলা করতাসে রান্নাঘরডাতে।
- হ। ছুডুডা একটা বেকুব। আমার ভরসা তুমিই।

অফিসে ঢুকেই সালামের ফুলঝুরি। একের পর এক সালাম পান সাত্তার সাহেব। যেন তেন সালাম নয় এমবিএ হোল্ডারদের সালাম। আলিশান অফিসরুম টাতে ঢুকতেই নারী এসিস্ট্যান্ট দৌড়ে চায়ের কাপ আর গোঁটা বিশেক ফাইল নিয়ে পেছন পেছন ঢুকল রুমে।
-স্যার আপনার চা।
-কেমন আসো পলি??শরীর স্বাস্থ্য ভালোতো?
-জি স্যার।।
-একটা জিনিস কইতে পারবা আমারে?
- কি স্যার?
- এই আমার রুমডাতে ঢুকার আগে আমি টোটাল কয়খান সালাম পাইসি??
-স্যার এক্সাক্ট নাম্বার টা বলতে পারবো না তবে ১৬/১৭ টা তো হবেই।
- হেহেহেহে। এই হইলাম আমি মিস্টার সাত্তার ব্যাপারী। কি বুঝলা??
- জ্বি স্যার??
-আরে থউ ফালায়া তোমার স্যার। তোমারে আমি পছন্দ করি ক্যান জানো??
-ক্যানো স্যার?
- দরজাডা লাগাও দেখাইতাসি কেরলেইগ্যা।

লাঞ্চটাইমে বাসায় চলে এলো সাত্তার সাহেব। ঘরে তার জন্য অপেক্ষমান অন্যান্য মহীরুহদের সাথে বেশ একটা সফল সময় পাড় করতে করতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেল। খানিকক্ষন সন্তানদের সাথে সময় কাটিয়ে রাতের খাওয়াটা সেরে ঘুমোতে গেল। রাত দশটার মধ্যেই ঘুমিয়ে জান সাত্তার ব্যাপারী।

একটা তেরশ। এক তিন শূন্য শূন্য। হ্যা ওটা তেরশ। নাম্বারটা একটা চিকন সূতোয়া বাঁধা।ওপরে ঝুলছে। তেরশ সংখ্যাটা বেশ ভারী। কাল রঙের একটা তেরশ। মনে হচ্ছে একদম সলিড লোহায় তৈরি। সূতোটা ছিঁড়ে যাবে এমন অবস্থা। একটা কালো জামা পড়া মানুষ। ওটা পুরুষ না মহিলা বোঝা যাচ্ছে না। আপাদমস্তক কাল কাপড়ে ঢাকা। তেরশ নাম্বারটা ধরে নিচ থেকে টানছে। কিন্তু ওটার নাগাল পাচ্ছে না। তবে খুব বেশিক্ষন নেই নাগাল পেতে। চেষ্টার পরিমান ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এমন সময় একটা জোরে ভুমিকম্প এল। তেরশ নম্বরটা ওখানে নেই। সূতোটা আছে। শুধু তেরশ এর যায়গায় একটা বড়ো শূন্য ঝুলছে। অনেক বড়ো শূন্য। আরো ভারী শূন্য। নিশ্চয়ই ঐ কালো কাপড় পড়া শয়তা্নটার কারবার এটা।
ঘুম ভেঙ্গে একগ্লাস পানি খেয়ে নিল সাত্তার। স্বপ্নটা বেশ ভয়াবহ ছিলো। এতটাই ভয়াবহ যে এর থেকে ভয়ের কিছু হতে পারে না। সাত্তার সাহেবের মাথায় দ্বন্দ্ব কাজ করতে লাগলো। মনে মনে একাই বলতে লাগলো।
- নাকি হালায় কোনডায় আমার ট্যাকা গুলান খাওনের চেষ্টা করতাসে? কুফরি কালাম করতাসে না তো??

রাতের ৩ টা। বড় ছেলে টার কাল ছুটি তাই এখন অব্দি ল্যাপটপে বসে গেম খেলছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে সাত্তার সাহেব ছেলের কানটা জোরে চেপে ধরলো।
-শুয়োরের বাচ্চা। রাইতের তিনডা পর্যন্ত কার বাল ছিরতাসো শুনি??? যা ঘুমাইতে যা।

ছেলে ভয়ে ঘুমোতে গেল ঠিকই কিন্তু সাত্তার সাহেবের আর ঘুম আসে না। কেমন যেন অসহ্য লাগছে। শরীরে ঘাম দিচ্ছে। ঘামগুলো কেন জানি নিজের ঘাম বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে নিজের দেহ দিয়ে অন্যের ঘাম ঝরছে। ঘামগুলোতে বেশ সততার গন্ধ পাচ্ছে সাত্তার সাহেব। হঠাত নিজের দেহের সকল জামাকাপড় খুলে বাথ্রুমে শাওয়ার নিতে দাঁড়িয়ে গেল। নাহ স্নান করে এসেও দেখে আবার ঘাম দিচ্ছে। সেই সততার ঘাম। সাত্তার সাহেব বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এসির তীব্রতার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েও ঘাম যাচ্ছে না।

-কিরে কার ঘাম রে আমার শইল্যে???? ঐ বউ, বড়ো বউ কই তুমি?? আমার শইল্যের ঘাম মুইছ্যা দিয়া যাও। এইডি আমার ঘাম না। আমার ঘাম ব্যাংকে আসে।। এইডি গফুর, নজর আলী, কেরামতের ঘাম। ঐ বউ কই তুমি??? আমার তেরশ কোটি টাকা খাইবো হালারা। কালা কাপড় পড়া শয়তানডারে দেইখ্যা আমার গফুরের মত লাগসে। আমার টেকা লইয়া যাওনের লেইগ্যা শয়তানী আটসে হেরায়।। ও বউ আমার ঘাম মুইছ্যা দিয়া যাও।

স্বামীর এমন চিৎকারে বড় বউ দৌড়ে এল। পেছনে এলো ছোট বউ ।
- কি গো কি হইসে তুমার??? কি হইছে??
-বউ গফুর আমার টেকা লইয়া যাইবোগা । আমি হেরে ট্যাকা লইয়া যাইতে দিমু না।
-ওমা, গফুর ক্যাডা??
-আরে গফুইরা গফুইরা। আমার লগে মিছিল করছে। হালায় কয় আমি নাকি হের হক মারছি। হালায় জেল থেইক্যা বাইর হইসে। হালা ফকিরের বাচ্চার শখ কত।। আমার টেকা খাইবার চায়।

এসব প্রলাপ বকতে বকতে সাত্তার সাহেব হঠাত চুপ করে গেলেন। আর কোন আওয়াজ নেই। চোখের কোটর গুলো থেকে পর্দা আরো বেশি করে হটে গেল। নিমেষেই মিইয়ে গেল তার উন্মাদ দেহ। না কোন আওয়াজ নেই। নেই কোন অস্থিরতা। সাথে থেমে গেল তার হৃদস্পন্দনও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.