নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাত ও কিছু বুলি

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৫

রাত বাড়তে থাকলে বন্ধুরা তাদের নিজস্ব নীরে ফিরে যায়। কেউ পরদিন সকালে অফিসে যাবার জন্য একটু দূর্ভাবনায় পড়ে আবার কেউ রাতে স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে । আমি শুধুই রাত জেগে থাকার পরিকল্পনা করি। রোদের আচ খুব অসহ্য ব্যাপার। মুখোশ পড়ে যাতায়াত করা ব্যাপারটা স্বাভাবিক হলে আমার জন্য বেশ হতো। তাহলে আমি হাতির শূরওয়ালা একটা মুখোশ কিনতাম। আয়নায় নিজের চেহারা দেখলে যে প্রাণীটির কথা সবার আগে মাথায় ভাসে সেটা একটা ক্ষুদ্রকায় বানর ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার ঘুম ভাঙ্গে দুপুরে কখনো আবার সূর্যের তেজ খুইয়ে যাওয়া বিকেলে। তারপর খাওয়া দাওয়া সেড়ে মোবাইলে গুতোগুতি করতে করতে সন্ধ্যের আগমন ঘটে যায়। রাত হলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর সহস্রবার ব্যবহৃত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সময় কেটে যায়।

রাতে বাসার দিকে ধেয়ে চলা প্রতিটি পদাঙ্কই আমায় বেশ উৎসাহ দেয়। প্রতি রাতেই মনে হয় এমন একটা কিছু আমার দ্বারা আজ হতে যাচ্ছে যা এর আগে কখনো হয়নি। আমার দ্বারা তো নয়ই বরং কেউই তা করতে পারেনি। সে আজ অব্দি হয়নি। মানুষ হিসেবে আমার চিন্তাশক্তির গন্ডি এতটাই সীমিত যে একটা সাধারন কথা বুঝতে আমার অনেক সময় লেগে যায়। যদিও এমন ভাব করি যেন পুরো ব্যাপারটা তো আমি বুঝেছি বটেই পাশাপাশি কথাটার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ একেবারে আমার নখদর্পনে চলে এসেছে । আজ অব্দি কোন জিনিস নখদর্পনে আসেনি। সমগ্র জীবন যা জানার বা বোঝার চেষ্টা করেছি সব বিষয় গুলোই একটা যায়গায় গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে নয়তো এমন কোন সমাধিতে নিজের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে যার গভীরতা সাড়ে তিন হাতের চেয়েও অনেক বেশি। তবে জিঘাংসা আজ অব্দি খুইয়ে যায়নি । যে ব্যাপার আজ আমার অস্বস্তির কারণ হয়েছে তাই পরবর্তিতে আমার মস্তিষ্কে পুনর্জীবন লাভ করেছে আরো দ্বিগুণ আগ্রহ নিয়ে। যদিও শুধু ভাবনায়ই সীমাবদ্ধ থেকেছি বাস্তবে তাকে রূপ দেয়া আর সম্ভব হয় নি।

ক্ষমতা, সনদ, অর্থ, গাড়ি, বাড়ি এগুলোর কথা শুনলে চোখের খয়েরী মণি কোনদিন বড় হয়ে ওঠেনি । আগ্রহের বিষয়ে অবশ্যই যায়গা করে নিয়েছে ব্যক্তি, জীবন, গান , সিনেমা এবং বিশেষ মুহুর্তে খেলাধুলা। সাহিত্য নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। তবুও হারুকি মুরাকামি ছাড়া কোন সাহিত্যিকের জন্মসাল আমি এই মূহুর্তে বলতে পারবো না। ১৯৪৯। সেটাও বলা সম্ভব হচ্ছে দুটো কারনে তার প্রথমটা হচ্ছে শহরের নগন্য সংখ্যক পাঠক সমৃদ্ধ বইমেলা থেকে কেনা ‘শোন বাতাসের সুর’ উপন্যাসটাই আমার সর্বশেষ পঠিত বই আর দ্বিতীয় কারণ হারুকির জন্মসাল আমার পিতার জন্মসনের সাথে মিলে যায়। হয়তো তা ভুলতে বেশ কয়েকবছর লেগে যাবে।

আমার ভেতর কিছু অতীন্দ্রিয় ধারণা আজো বিরাজ করে। আমি ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত না করতে পারলেও কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আমি কি ধারণা আমার ভেতরে পোষণ করি তা আমার খুব ভালো করে জানা। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে অভিনয় করতে ভালবাসি। কেউ যদি আমার ভেতরের ধারণাটা সম্পর্কে জেনে যায় তবে বিপদ হয়ে যেতে পারে। কারণ যা আমার ভেতর আছে তা আমার ক্ষেত্রে চিরন্তন সংজ্ঞা নাও হতে পারে। যে ধারণা আমি পোষণ করছি তা আজ থেকে কয়েকবছর পর পাল্টে যেতে পারে কিংবা তার সাথে যোগ হতে পারে আরো নতুন কিছু। আমি চাইনা কেউ আমাকে নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলে সংজ্ঞায়িত করুক। সে দায়িত্ব কেউ অবশ্য কাঁধে তুলে নেবে না। আমার মত পানশে মানুষকে নিয়ে বেশিদিন চর্চা করা কারো পক্ষে খুব বেশি উৎসাহের কারণ হবে না। তার উপর দৈহিক বিবরণ থেকে শুরু করে অর্থকড়ির অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে মানুষ তাতে বড়জোর সিগারেটের ধূসর ছাই এর নিস্তেজ একটু গন্ধ ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাবে না ।
কালো আমার খুব প্রিয়। কালো জামা, কালো চাদর, বইয়ের কালো মলাট এবং গভীর রাত। রহস্যে ঘেরা রাত। আদিভৌতিক রাত। রাত গাড়ো হতে থাকলেই মনে হয় অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হতে যাচ্ছে কালো মূল্যবান রত্ন যার মূল্য অর্থ দিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। দিনের বেলায় জেগে হতাশা ছাড়া কিছুই পাইনি। রূপসীদের সুসজ্জিত রূপ, কর্মক্ষম পেশীসমৃদ্ধ মাংস পিণ্ড, খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা অন্ধ ভিক্ষুক আর নগ্ন দালানসারি । এদের কাউকেই আমার খুব বেশি শক্তিশালী মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে অসহায় সবাই একই দলের সদস্য যারা জীবনের সত্যটাকে এড়িয়ে অপরিবর্তনীয় আখের গোছাচ্ছে।সত্যিই জীবন একটা হাস্যকর রঙ্গমঞ্চ ব্যাতিত কিছুই নয়। কিন্তু আমি ঠিকই গড়গড়িয়ে নিজের সঙ্গির সাথে কথা বলে চলেছি। স্বপ্নেও বলেছি, নৈশ জাগরণেও বলেছি। তা এখনো আমায় দিয়ে যায় অসীম প্রশান্তি। মানুষ হিসেবে নিজের ক্ষেত্রে আমি দারুণ আশাবাদী আবার অন্যদের নিয়ে আমি বেশ হতাশাবাদী । অনুশোচনায় মাঝে মধ্যে লিখে ফেলি দু-তিনটে কথাও। হ্যাঁ আমিই ছিদ্রান্বেষী এক মানব যে কখনো পরিণত হতে চাইনি। কারণ সামাজিক সংজ্ঞায় যাকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ বলা হয় তার স্থান সমাজ নিজেই তার অভিবাসীদের জন্য সৃষ্টি করতে ব্যার্থ।
এক রাত থেকে আরেক রাতে পৌঁছুতে যতটুকু সময় প্রয়োজন তা খুব অসহনীয় । মাঝে মধ্যে মনে হয় একটা অলৌকিক কাঁচি থাকলে ভালো হত যা দিয়ে ‘নাইট টু নাইট’ পরিবহনের মধ্যের যাত্রাপথ টুকু অনায়াসে ছেটে দেয়া যেত। অবশ্য ১১ দিনের বেশি মানুষ ঘুমছাড়া বাঁচে না।
মাঝে মধ্যে গভীর রাতের প্রতি ভালোবাসার কারণ বের করার চেষ্টা করি। এতে অনেক সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ নীরবতা। সারাদিন খাটাখাটনি করে খুব বেশি দেরী অব্দি শহরতলী জেগে থাকতে পারেনা। আমার মত নৈশপ্রেমীদের দিন এখান থেকে শুরু। তারপরের বেশিরভাগ জুড়ে থাকে অনুসন্ধানের যাত্রা । মনে হয় রাতের আচমকা বাতাসকে একটা সূচাল অস্ত্র দিয়ে ভেদ করছি। তারপর বের করে আনার চেষ্টা করছি সেই শিশুকে যে এখনো ভূমিষ্ট হয়নি। মনে হচ্ছে ওর কেবল মাথা অব্দি বেরিয়েছে, অভিমানী জননী এখনো দ্বিধায় আছেন। কতটুকু দ্বিধায় থাকলে একজন জননী প্রচণ্ড প্রসব বেদনা নিয়েও তার সন্তানকে ভুমিষ্ট করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তার প্রগাঢ়তা বুঝতে কোন মা’য়ের কষ্ট হবার কথা নয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় রাত আমায় বলছে তাঁর সন্তানের জন্য এখনো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তা জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা পূরনের পরিবেশও এখন অব্দি তৈরী করতে আমি ব্যার্থ। তবুও জননী এখনো আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। যথার্থ ভালোবাসাই দিয়ে যাচ্ছেন আমায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৬

ভীতুর ডিম্ব বলেছেন: খুবই ভালো লাগলাে। আরো লিখা চাই।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৩

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।। হ্যাঁ আরো লিখবো।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

কানিজ রিনা বলেছেন: আপনার জ্ঞানের ভান্ডার অনেক বড়। জ্ঞানই
সুখের আধার। এমন লেখা নিশ্চয় আরও
লিখবেন আশা রাখি। অসংখ্য ধন্যবাদ,

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৪

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.