নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমিক (ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-১)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৬



#১
গতরাতে সহকর্মী বিজনের বিয়ে গেল। পর্যাপ্ত পরিমাণে মদ, ভেড়ার মাংস, আটার সফেদ রুটি আর গলদা চিংড়ির আয়োজন করা হয়েছিল। যতগুলো মদের গ্লাস আমি কালরাতে সাবার করেছি তা আমার পুরো জীবন মিলেও এই ক্ষুদ্র পেটে চালান করিনি। টাকা দিয়ে মদ কিনে খাওয়ার পক্ষপাতি আমি নই। আমার সহকর্মীরা সারাদিন চাতালে কাজ শেষে একসাথে বসে মদ গেলে কিন্তু আমি ওদের সাথে তখন থাকিনা । আমি মাইল খানিক দূরে ছোট্ট ঘরটায় থাকি, বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করে, শীতের প্রকোপে কাবু হয়ে থাকা শেয়াল গুলোও মাঝে মধ্যে বেড়ার ভাঙ্গা ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। বাসায় থাকা যদিও খুব একটা সুখকর ব্যাপার নয় তবুও আমি ওদের সাথে কোনদিন বসে মদ খাইনি। কিন্তু গতকাল মদের সাথে থাকা খাবারগুলো আমায় খুব লোভে ফেলেছিল। সে লোভ সংবরণ করতে পারলে আজ আমি নিজেকে হয়তো ব্যক্তিত্ত্ববান বলে দাবী করতে পারতাম । আমি একজন সামান্য রাইস মিলের শ্রমিক, অতটা মহত্ত্ব প্রদর্শন আমায় মানায় না। ছেঁড়া শার্ট, মাথায় কুন্ডলী হয়ে জড়িয়ে থাকা সাড়ে তিন হাতের গামছা আর ঠোঁটে শাদা মোড়কে উটকো গন্ধের বিঁড়িই আমার অলঙ্কার। ব্যক্তিত্ত্ববান হয়ে লাভ নেই, সে অস্বস্তিকর মুখোশ দেখারও কেউ নেই। আমি এক নগন্য চাতাল শ্রমিক। আমাদের মত চাতাল শ্রমিকরা দু-বেলা খেয়ে থাকতে চাই শুধু । তাতে বাঁচা হয় কি না জানি না তবে শরীরটা পরদিন কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করে।
মদের রেশ এখনো পুরোপুরিভাবে কাটেনি । এইমূহুর্তে রোদের প্রখরতাও কম নয়। তাতে অবশ্য অসুবিধা হচ্ছে না। শীতের সকালের রোদ আরামদায়কই বটে। চারপাশে চেয়ে দেখলাম দু’তিন জন করে সহকর্মীর আগমন ঘটছে। মনসুর সবার আগে মিলে আসে। প্রতিদিনই আসে। সময়ানুবর্তিতা আর পরিশ্রমে মনসুর চাতাল মালিক নাসির মোল্লার কাছে বেশ পছন্দের পাত্রে পরিণত হয়েছে। মনসুর একবার চেয়ে দেখে নিল আমায়। তারপর ওর কাঁধে ঝুলিয়ে রাখা গামছাটা নিজের কোমরে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো ‘কিরে রাতে বাসায় যাসনি? নাইলে তোর তো এত্ত তাড়াতাড়ি মিলে আসার কথা না?‘- ব্যাপারটা তার প্রথম চাহনীতেই আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। চাতালে ওর আগে আমার অবস্থানের ব্যাপারটা খুব একটা সহজ ভাবে নিতে পারেনি মনসুর। আমিও উত্তরটা সরল ভাবে দিলাম না “আরে তোর কি ধারণা? তোর আগে মিলে আর কেউ আসতে পারেনা?” আর একটি বাক্যও ব্যায় না করে নিজের কাজে লেগে গেল সে।
পেটে কিছু না ফেলে কাজ করা যায় না। ধান মাড়াই খুবই পরিশ্রমের কাজ। তার জন্য খাওয়াটা জরুরি। কিন্তু মাতাল অবস্থায় পকেটের টাকা পুরোটাই খরচ করে ফেলেছি । কিছু না খেলেও চলছে না। মাধবী সামনে বসে মুড়ি-গুড় খাচ্ছে। ওখান থেকে অনায়াসেই দু’তিন মুঠো খেয়ে নিতে পারি। কিন্তু মাধবীর একমনে থেকে খাওয়ার তীব্রতায় মন থেকে খুব একটা সাঁই পেলামনা। তাই দু গ্লাস জল খেয়ে আপাতত পেটকে সান্ত্বনা দিতে হল।কাজে লেগে যাব এমন সময় পেছন থেকে মাধবী ডেকে বলে উঠলো “এই আদিত্য দা খেয়েছ কিছু সকাল থেকে?”- মেয়েটা আমার বড্ড খেয়াল রাখছে ইদানীং। ‘হ্যাঁ খেয়েছি’ ধান মাড়াই এর মেশিনটায় তেল দিতে দিতে বললাম আমি । ‘না তুমি মিথ্যে বলছো। দাও তোমার গামছাটা দাও’। আমার গামছায় ক’মুঠ মুড়ি আর একটুখানি গুঁড়ের টুকরো রেখে তা পোটলা করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। মেয়েটা সত্যিই বেশ খেয়াল রাখছে আমার। এমনকি আমার প্রয়োজন আর মনের কথা গুলোও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। আঠারো উনিশ বছরের ঐটুকু একটা মেয়ের এতটা কান্ডজ্ঞান সত্যিই প্রশংসনীয়।
মনসুরের খেয়ালেও ত্রুটি রাখেনা মাধবী। বিকেলের অবসরে মনসুর আর মাধবী বসে আড্ডা দেয়। সে আড্ডায় আমি মন থেকে প্রবেশ করতে চাইলেও শারীরিক ভাবে করা হয়ে ওঠেনি । সাক্ষী এই বিশাল চাতাল, আজ অব্দি আমি নিজের টাকা দিয়ে মদও খাইনি আবার ঐ মনসুর আর মাধবীর দ্বৈত আড্ডায় প্রবেশও করিনি। না, তাই বলে আমায় ব্যক্তিত্ত্ববান বলা যাবে না। আমি এক অতি নগন্য চাতাল শ্রমিক।
দুপুরের খাবার টা সেরে একটা বিঁড়ি ফুঁকছি। আজ দুপুর থেকেই মাধবী আর মনসুর তাদের আড্ডায় মজেছে। মালিক ম্যানেজারকে নিয়ে বিদেশে গেছে। তাই চাতালের সকল শ্রমিকরাই আজ বেশ ফুরসৎ নিয়েই কাজ করছে। এমনিতে সবাই বেশ চাপেই থাকে। চাবুক থাকেনা, কোন জহ্লাদ থাকেনা তবু নিয়ন্ত্রনের পন্থাটা বেশ ভিন্ন এই মালিকদের। অর্থদন্ড কিংবা চোর সাব্যস্ত করে থানার গারদের পেছনে পাঠানোর ভয় হর-হামেশাই দেখানো হয়। সংসারী কর্মচারীদের এ ধরণের হুমকি চাবুক মারার চেয়েই বা কম কিসে? কাজের ফাঁক খুব বেশি না হলেও যখনই সময় পাই তখনই বই পড়ি। আমি ক্লাস সেভেন অব্দি পড়েছিলাম। তারপর বাবার মৃত্যু আর টাকার অভাবে পড়তে পারিনি। এমন উদাহরণ আমাদের সমাজে অজস্র আছে। ‘টাকার অভাবে পড়তে পারিনি’ বাক্যটা জনমহলে বেশ পরিচিত। তবে আমার কাছে এটা কোন দুঃখের কারণ নয় । ছাত্র হিসেবে খুব ভাল ছিলাম না। হয়তো বাবা বেঁচে থাকলেও বড়জোর আর দুই ক্লাস বেশি পড়া হত তারপর ভাগ্য এই চাতালের দরজাতেই এসে কড়া নাড়তো । আমার বাবা এবং তার বাবা এই চাতালেই চাকুরী করেছেন তবে তাঁর বাবা কি করেছেন তা ঠিক করে বলতে পারছি না।। হয়তো উনিও টাকার অভাবে পড়তে না পেরে ঠাই নিয়েছিলেন এমনই কোন এক চাতালে কিংবা কোন পাটকলে।
রোদটা ক্রমেই থিতিয়ে আসছে। আর তাই শীতের প্রকোপও বাড়ছে। চাদর টা মুড়ি দিয়ে ম্যানেজারের টেবিলের সামনে পারিশ্রমিকের জন্য এসে দাঁড়ালাম । ম্যানেজার না থাকলেও আজ টাকা বন্টনের দ্বায়িত্ব পড়েছে ম্যানেজারের ছোটভাই স্বপনের উপর। প্রায়শই এ কাজটি তার ভাইয়ের পরিবর্তে করে থাকে সে। আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বজ্জাত, চরিত্রহীন লোক এই স্বপন। ওর মনটাকে অনায়াসেই আলকাতরার পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে। চাতাল শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। ওদের সবার দিকেই ওর কু নজর পড়ে। একটু বুড়িয়ে যাওয়া মহিলা শ্রমিকদের এখানে থাকতে দেয় না সে। তার বড় ভাইকে বলে এদের চাকরী ছাটাই করার ব্যবস্থা করে । তারপর নিজের ইচ্ছা মত দেখে শুনে যুবতীদের নিয়োগ দেয়। এতে তার কুদৃষ্টি আরো তীব্রতর হয় আর তার চরিত্রহীনতা হয় আরো কলুষিত। এমনই কোন এক বুড়িয়ে যাওয়া মহিলা কর্মচারীর পরিবর্তে মাধবীকে নিয়োগ দিয়েছিল স্বপন। চাতালে আসার পর থেকেই মাধবীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে সে। তা কমবেশি আমরা শ্রমিক কর্মচারীরা সবাই জানি। বিশেষ করে মনসুর তা বেশ ভাল করে জানে। মনসুরের সাথে স্বপনের মধ্যকার বাক্যবিনিময়ের বেশির ভাগই যে মাধবীকে ঘিরে তা আমি জানি। তবে মাধবী যে মনসুরের প্রতি দূর্বল তাও আমি বেশ করে জানি। তাই আমি আগ বাড়িয়ে মাধবীকে কোনদিন বলিনি যে মনসুর তার ভাল চায় না। কিংবা এমনও তো হতে পারে যে আমার সমগ্র ধারণাটাই ভুল।
সামনের তিনজন পুরুষ কর্মচারী তাদের পারিশ্রমিক নিয়ে কেটে পড়লো । আমি টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই স্বপন বলে উঠলো ‘ কিরে আদি? তোর কাজ কেমন চলছে?’। ‘ভালো’- বেশি কথা বলতে ভয় হয় কখন আবার নিজের কুৎসিত মনের দু একটা উপাদান আমার ভেতর চালান করে দেয় কে জানে। “নে তোর টাকা, আজ দশ টাকা বেশি দিয়েছি”- একটা অসভ্য হাসি দিয়ে বলে উঠলো হতচ্ছাড়া। “ধন্যবাদ” বলে আমি পরের জন কে জায়গা করে দিলাম। এরকম প্রায় সময়ই কুড়ি-দশ টাকা বাড়িয়ে দেয় সে আমায়। এতে অবশ্যই ওর স্বার্থ জড়িত। আর কিসের স্বার্থ তা আমি ভালো করেই জানি। মিলের নারী শ্রমিকরা আমায় খুব বিশ্বাস করে। কারো দাদা কারো ছোট ভাই আমি। স্বপনের ধারণা আমাকে মাধ্যম করে ভবিষ্যতে ওর কু-বাসনাগুলো পূরণ করা সহজ হবে। আজ অব্দি যদিও এমন কিছু মুখ ফুটে বলেনি সে। আমার ধারণা এক্ষেত্রেও ভুল হতে পারে। কিন্তু আমি ওর সাথে কথা না বাড়িয়ে বাড়তি টাকাগুলো নিয়ে নিই। আবার বাড়িতে গিয়ে ডায়েরীর কোণায় ছোট্ট করে লিখে রাখি স্বপন আজ অব্দি কতটাকা আমার পারিশ্রমিকের বাইরে আমায় দিয়েছে। আজকের ১০ টাকা নিয়ে মোট চারশত চল্লিশ টাকা ।
চাতালের কাজ আজকের মত শেষ করেছি। বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেব এমন সময় খেয়াল হল বয়লারের ওখানে নিজের গামছাটা ফেলে এসেছি। ওটা নিতে বয়লার রুমে প্রবেশ করবো এমন সময় চোখে এলো মিল বিল্ডিং এর এক কোণায় আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা কাঠের তক্তার পেছনে দাঁড়িয়ে মাধবী তার কাপড় পাল্টাচ্ছে। কামুক মন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না। উঁকি দিয়ে আবিষ্কার করলাম সুডৌল স্তনযুগল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাধবীর নগ্ন দেহ। চোখে পড়লো মাধবীর ঝরনার জলের মত নেমে আসা কোমরের নিচের সুগঠিত নিতম্ব আর সেই সাথে তার ঘাড়ের নিচের দিকে নখের একাধিক আঁচড়। বুঝতে দেরী হল না ওগুলো মনসুরেরই সম্ভোগ চিহ্ন। আবার আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। এমনো তো হতে পারে সেগুলো মাধবীর নিজেরই নখের আঁচড়। কামুক মনটাকে নিয়ন্ত্রন করে সরে দাঁড়ালাম সেখান থেকে।গামছাখানা কাঁধে ফেলে বেরিয়ে এসে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলাম । আজকের দিনটা সব মিলিয়ে একটু ব্যতিক্রমিতার ভেতর দিয়েই গেল।কিছুটা প্রশান্তি, কিছুটা হিংসা, কিছু চেপে রাখা কথা, কিছু বঞ্চনা আর কিছু ভালবাসা। এবার শীত সমেত নিজের বসতে একাকী আশ্রয় নেবার পালা।

#২
চাতাল মালিকদের ভেতর অসন্তোষ চলছে। সরকারের কাছে ন্যায্য দাবি নিয়ে তারা আন্দোলনে মজেছে। আন্দোলনের কর্মসূচিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট রাখা হয়েছে। তাই আগামী কদিন মিলে যেতে হবে না। এ ফাঁকে মা কে একবার দেখে আসবো ভেবেছি।শহরের একটা মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে মা কে রেখেছি আজ নয় বছর । খুব কষ্ট লাগে ব্যাপারটা বলতে। প্রত্যেক ছেলেরই স্বপ্ন থাকে নিজের মা কে রানীর আসনে অধিষ্ঠিত অবস্থায় দেখতে। কিন্তু সবার হয়ে ওঠেনা। যেমন আমার হয় নি। আমি এখন অব্দি পারিনি।।
বাবা মারা যাবার পর থেকে মা অনেক বেশি কষ্ট করেছে। কিশোর আমি বেশ চঞ্চল ছিলাম। কোন কথা শুনতাম না মায়ের। কতরাত আমি মায়ের খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলেছি তার হিসাব নেই। কিন্তু মা টু শব্দটিও করেনি কোনদিন। সেই সকালে বেরিয়েছে বাসা থেকে, তারপর দুপুরে বাসায় এসে আমাকে ভাত খাইয়ে আবার কাজে বেরিয়ে গেছে। বাবা মারা যাবার প্রথম দুবছর খেলার ছলেই কাটিয়েছি। তখন ভাবতাম বাবা মরা একটা ছেলের জন্য সবার সমবেদনা, ভালবাসা থাকে। কিন্তু সময় আমাকে বোঝালো, শেখালো যে সত্যিই ‘কেউ কারো নয়’।শুধু এই পৃথিবীতে মা আমার। আর কেউ না।
যেদিন মা ভোরে কাজে গেল না, বিছানা থেকেও উঠতে পারছিল না এমনকি কোন কথাও বলছিল না সেদিন থেকে আমি পরিণত হবার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। ডাক্তার বললেন অতিরিক্ত কাজের চাপে মা’র মানসিক সমস্যা হয়েছে আর সেদিনই আমি অনুধাবন করলাম অতিরিক্ত কাজের চাপ সত্যিই খুব গম্ভীর একটা বিষয়। এই অতিরিক্ত চাপ নিজের কাঁধে নেবার চেষ্টা করলাম ঠিকই কিন্তু তার আগে মা কে মানসিক হাসপাতালে দিতে হল। মা আমায় আজ চেনে, কিন্তু কিছু বলে না। মা আজ আমায় ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে দেখে কিন্তু নির্বাক থেকেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যায়। খুব কষ্ট হয়, খুব। আজ পরিশ্রম আমি করছি ঠিকই কিন্তু মাকে পাশে পাচ্ছি না। আমি সত্যিই এক অভাগা সন্তান,সত্যিই অভাগা।
ভাবছি মায়ের জন্য কাল কি নিয়ে যাওয়া যায় । একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি এবার, মায়ের জন্য হরলিক্স, ভালো বিস্কুটের প্যাকেট, বাজার থেকে নলেন গুড়ের সন্দেশ নিয়ে যাবো ভেবে। মা নলেন গুঁড়ের সন্দেশ খুব ভালবাসে। এই একটা জিনিস মা প্রায় সময়ই আমায় না সেধেই খেয়ে নিতেন। তাই এই সন্দেশের পরিমাণটা একটু বেশি করেই নিয়ে নিতে হবে । তারপর ভাবছি কিছু ইতিবাচক কথা। এমনও তো হতে পারে কাল মায়ের ঘরে প্রবেশ করতেই মা জড়িয়ে ধরে বলে বসবে “খোকা এসেছিস?চল বাড়ি চল আমি সুস্থ হয়ে গেছি”। ইশ! সত্যিই যদি এমন কিছু একটা হত? মন চাইছে এখনই মায়ের কাছে ছুটে যাই।
কোনমতে রাতটা অতিক্রম করে খুব ভোরে বাস চেপে শহরের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হলাম। বাসের ঝাঁকুনিতে দেহের পাশাপাশি নিজের ভাবনাগুলোও নড়ছিল। একবার মা, একবার মনসুর একবার মাধবী তো আরেকবার স্বপনের চেহারা চোখের সামনে ভেসে আসতে লাগলো। ভাবনার গন্ডি এবার সীমা ছাড়ালো। দিবা স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। দেখছি মাধবী আর আমি বিয়ের পিঁড়িতে বসে আছি আর পেছনে দাঁড়িয়ে মনসুর ও স্বপন একে অন্যের চুল ছিঁড়ছে।নিজের মত করে ভাবছি আরকি। ভাবনার নির্দিষ্ট গন্ডি থাকা উচিৎ নয়। এমনকি নিজের কুৎসিত দিকটাকে নিয়েও ভাবা উচিৎ। তারপর সেটাকে কুৎসিত বলে নিজের কাছে প্রমাণ করে মনের ভেতরেরই কোন এক কোণায় মাটি চাপা দিতে হবে আর এমন ভাবে দিতে হবে যেন সেটা বাস্তব জীবনে এসে উঁকি দিতে না পারে। তবে আমার মস্তিষ্কে কুৎসিত চিন্তা কমই আসে। ব্যক্তিত্ববান নই বলে কেউ আমার এই সুন্দরমনটাকে দেখে না ।
এসব চিন্তার মধ্যবর্তী কোন এক সময় বুঝতে পারলাম শহরে প্রবেশ করে গেছি। আশপাশেই কোথাও বাসটা ব্রেক চেপে নেমে যাবার তাগাদা দেবে। তাই সিট ছেঁড়ে উঠে দাঁড়ালাম।বাসের ভেতর থেকে শহরটাকে আধুনিক বলে মনে হলেও বেরিয়ে এসে হাওয়াটা জানান দিচ্ছিল আমার নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে আসাযাওয়া করা বিষাক্ত কার্বন অস্তিত্বের ।সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, প্রাইভেট কার, মালবাহী ট্রাক, বাস সহ আরো কিছু হালকা ভারী যান চলাচল করছে। সেখান থেকেই একটা রিক্সায় চেপে বসলাম যা আমায় সরাসরি নিয়ে নামিয়ে দিল হাসপাতালে যেতে যে বাজারটা পড়ে ওটার মাঝামাঝি কোন একস্থানে। ওখান থেকে শহুরে নলেনগুঁড়ের সন্দেশ, হরলিক্স, বিস্কুটের প্যাকেট আর কিছু আপেল কমলা নিয়ে প্রবেশ করলাম “পুনর্জীবন মানসিক হাসপাতালে”। এই হাসপাতালের তিন তলার কোণার রুমটায় আমার মা থাকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকা আমার প্রতিটি পদাঙ্কই আমার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অনেক দিন বাদে আজ মায়ের মুখখানা দেখবো। মা কি সত্যিই খোকা ডেকে কথা বলবে আমার সাথে?? সত্যিই কি মা আমার সাথে আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করবে?
তেমনটি হল না। হাসপাতালের রুমটাতে প্রবেশ করতেই দেখলাম মা তাঁর বেডে নেই। একজন মধ্যবয়স্কা নার্স ঘরটা গোছাচ্ছেন। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই জানালেন মাকে ইলেকট্রিক শক দেবার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগামী দু-তিন দিন পূর্ণদমে বিশ্রামে রাখতে হবে। কোন কথা বলার প্রয়াসতো করাই যাবে না পাশাপাশি কোন শক্ত কিছু মুখে চালানও করা যাবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে মহিলার কথা গুলো শুনছিলাম। ‘আচ্ছা একবার তো দেখা যাবে নাকি?’- একটু আবেদনমাখা কন্ঠে বলে উঠলাম আমি। ‘দেখুন! আগে ডাক্তার আসুক। উনি যা বলেন।’- মহিলার গলার আওয়াজে বেশ একটা মিলেটারিটোন আছে। কিছু করার নেই। শত আশা বুকে জড়িয়ে শহরে এসেছি, মায়ের মুখখানা না দেখে যদি ফিরে যেতে হয় এর থেকে কষ্টের আর কিছু থাকবে না । রুমের পাশের বেল্কনিতে গদিহীন বেঞ্চিটাতে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম।ঘন্টাখানেক বাদে স্ট্রেচারে করে মাকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে আসা হল। ঘাড় নেড়ে ডাক্তার কাকু আমায় কাছে যাবার সুযোগ করে দিলেন। তারপর দেখে নিলাম আমার স্নেহময়ী মায়ের মুখখানী। “আগের থেকেও মলীন হয়ে এসেছে” বলে কেউ একজন মন্তব্য করলো পেছন থেকে।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে চেয়ে হঠাতই বলে বসলাম “আপনার কাছে মলিন শব্দটা বলা যতটা সহজ হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন আমার এ ধরণের কোন শব্দ চিন্তা করা। আমি মায়ের সিঁদুর দেয়া মুখমন্ডল দেখেছি, বাবা মারা যাবার পর সেই সিঁদুর আবার মুছে ফেলতেও দেখেছি , কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসার পর মায়ের ঘর্মাক্ত মুখ দেখেছি, আপনার কাছে যে মুখমন্ডল মলিন বলে মনে হচ্ছে তা নাহয় দেখেই নিলাম। কিন্তু জানেন মশাই? সব ধরণের মুখমন্ডলেই উনি আমার মা। সেই মা যে মাকে আমি একজন রাণীর আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারিনি” চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে চোখ মুছতে মুছতে বলে উঠলাম “ডাক্তার বাবু মার জন্য নলেন গুঁড়ের সন্দেশ আর কিছু ফলফলারী এনেছিলাম। রেখে গেলাম। আপনাকে ফোন দেব সামনের সপ্তাহে। আজ আসি” দৌড়ে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। থাকতে কেন জানি খুবই কষ্ট হচ্ছিল। নিজেকে আর কোনভাবেই সামলাতে পারিছিলাম না। মন চাইছিল আমার হাতদুটোকে শহুরে কোন মালবাহী ট্রাকের চাকার নিচে রেখে পিষে দিই। কি করেছে এই হাত? ব্যার্থ হাতযুগল, চালু থেকেও অকেজো হাতদুটো আমার।
#৩
টানা সাতদিন চাতালে না গিয়ে বেশ অর্থকষ্টে পড়তে হল। রাতে খাবার মত টাকাটা পর্যন্ত পকেটে নেই। প্রথম দু তিনদিন শুধু মা আর মাধবীকে নিয়েই ভেবেছি। আজও মা কে নিয়ে ভেবে খুব কষ্ট পাচ্ছি কিন্তু মাধবীর চিন্তা এখন আর খুব একটা প্রশান্তি কিংবা আফসোসের জন্ম দিচ্ছে না। ঐ যে কথায় আছে ‘ অভাব এলে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায়’- সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। ভালোবাসা!! হয়তো ভালবাসা । হয়তো একপেশে ভালোবাসা। তবে মালিকদের দাবি মেনে নিলে ধর্মঘট উঠে যাবে। ধর্মঘট উঠে গেলে চাতালে আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে আর এবার আশা করা যায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে মালিকরা বাড়তি মজুরি দেবে মালিকপক্ষ। ভালোই হবে। আমার ভালোবাসা অপ্রাপ্য থাকুক তবে বাসাটার মেরামত করে তাকে খানিকটা ভালো করা যাবে। এতে আমার আরামে থাকার পরিমাণ কিঞ্চিৎ হলেও বৃদ্ধি পাবে।
রাতের খাবারটার ব্যবস্থা না করলেই নয়। মনসুরের কাছে টাকা ধার নেয়া ঠিক হবে কি না জানিনা। ওর কাছ থেকে আজ অব্দি টাকা ধার নিইনি। এদিকে চাতালের বাকি কর্মচারীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ যাচ্ছে। যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে মালিকের তাবেদার মনসুরের কাছে টাকার অভাব থাকবে না। ভাবছি ওর কাছেই টাকা ধার চাইবো। একবার অন্তত এই প্রচেষ্টা করাই যেতে পারে। এতে ছোট হবার কিছু নেই। আমি সত্যিই অতি সাধারণ একজন চাতাল শ্রমিক , অতশত মানসম্মানের কথা চিন্তা করা আমার সাজে না। টিকে থাকার লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রাত খুব বেশি হয়নি। অন্যান্য শ্রমিকদের অভাবের দিনেও মনসুর জুয়া খেলে টাকা ওড়ায়। ওর কাছে টাকার অভাব হবার কথা নয়।এখানে সেখানে নিজের মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেবার অভ্যাস আছে ওর। জুয়ার আড্ডায় গিয়ে শুনলাম আজ কিঞ্চিৎ তড়িঘড়ি করেই মনসুর সেখান থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ হিসেবে জানিয়ে গেছে মালিকের সাথে মিটিং এর কথা । আমি মনসুরের বাসার সামনে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। শেষ সম্বল তৃতীয় বিঁড়িটাও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে কিন্তু মনসুরের আসার কোন নামগন্ধ নেই। সাহস করে তাই স্বিদ্ধান্ত নিলাম মালিকের বাসার আশপাশে গিয়ে ঘোরাফেরা করবো । তাতে মালিক মনসুর যাই ভাবুক না কেন। সাধারণ কর্মচারীদের মালিকের বাসায় যাওয়া বারণ। তাতে বিশেষ করে মনসুর আর স্বপন বেশ চটে যায়। এরা এ ধরণের পদক্ষেপকে ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার সাথে তুলনা করে। মনসুর একটু বেশিই করে। হাঁসি পায় যখন ভাবি মনসুরও নিজেকে ঘোড়ার দলের কেউ বলে গন্য করে।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর মনসুরের দেখা পাওয়া গেল না। টাকা চাওয়ার অভিপ্রায় অবশ্য এরই মাঝে ঘুচে গেছে। অতটা বেহায়া হওয়া ঠিকও হচ্ছে না। বাড়ির দিকেই ফিরে যাব ভাবছি।বাড়ি আসার সময় বিজনের সাথে দেখা। রাতের বাজার করে নিয়ে যাচ্ছে। সদ্য বিবাহিত পুরুষদের সাংসারিক কর্তব্য প্রদর্শনে ত্রুটি হয় না । আমায় দেখে জড়িয়ে ধরলো। জানালো চাতালে আর কাজে যাচ্ছে না সে। একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে নিজের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। মজুরি চাতালের প্রায় দ্বিগুণ। তারপর আমায় বোঝালো একজন সাংসারিক পুরুষ হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। আমি নেহাৎ একা মানুষ, অবিবাহিত তাই মাথা নেড়ে কথাগুলোর শুনেছি এতটুকু বোঝানো ছাড়া আর উপায় থাকলো না। এক পর্যায়ে বিজন রাতে তার বাসায় খাবার আমন্ত্রণ জানালো। আমন্ত্রণ পেয়েই আমার চোখে মণিগুলো বড় হয়ে উঠলো। অবশ্যই এটা একটা সুখবর আজ রাতে আমার জন্য। ভাগ্যদেবী যেন হঠাতই সুপ্রসন্ন হয়ে উঠেছেন আমার দিকে।
বিজনের বাসায় খেতে বসার পর সবার আগে মনসুরের প্রসঙ্গ এলো । মনসুরের প্রতি এতদিনের চাপানো ক্ষোভ ভেতর থেকে বের করে আনতে শুরু করলো সে । এখন বিজন আর চাতালের কেউ নয়। বর্তমানে সে একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টোরীর সামান্য শ্রমিক। তবে চাতালের থেকে খানিকটা উঁচু স্তরের। সেখানের মজুরিটা চাতালের তুলনায় অনেক বেশি। মনসুরের আড়ালেও ওর সমালোচনা করিনা আমি। এখনো মনসুরকে আমি বন্ধু বলেই গণ্য করি। যদিও সে নিজেকে একজন ঘোড়া বলেই মনে করছে ইদানিং।ঘোড়া যে মানুষের বন্ধু হতে পারে না এমনতো কোন কথাও নেই। শুনতে পেলাম বিজনের সাথে একটু আগে মনসুরের দেখা হয়েছিল। মাধবীও নাকি তখন তার সাথে ছিল। ওরা দুজন একসাথে চাতাল মালিকের সাথে মিটিং করতে যাচ্ছে শুনে মনটা একটু খারাপই হয়ে গেল। নাই বা হোক ভালবাসা, তবে খানিকটা দূর্বলতা যে আমার ভেতর কাজ করে সে বিষয়ে আমি মোটেও সন্দিহান নই। খাবারটা সেড়ে কখন বিদায় নেব সে পাঁয়তারা করতে লাগলাম। মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠেছে হঠাতই । বিদায় নেবার সময় বিজন আমার অর্থনৈতিক অবস্থা আঁচ করতে পেরে পকেটে ২০০০ টাকা পুরে দিয়েছে। বেশ উপকারই হল। এতে ক’দিন অনায়াসে খেয়ে থাকতে পারবো।তবে টাকাটা ধার হিসেবেই নিয়েছি আমি। ওটা অবশ্যই চুকিয়ে দেব, একটু দেরীতে হলেও দেব।বাসার দরজা অব্দি মাধবী আর মনসুরের একত্রে যাতায়াতের বিষয়টা মনকে বেদনাচ্ছন্ন করে রাখলো। ঘরে ঢুঁকে সদ্য কেনা প্যাকেট থেকে বের করে যে বিঁড়িটা আমি জ্বালিয়ে নিলাম ওটা আমায় খানিকটা প্রশান্তি দিল। ঘুমানোর জন্য এখনের পরিবেশটা যথাযোগ্য, আগামীকালের খরচের টাকাটাও এই মূহুর্তে পকেটে আছে। ব্যাস, আর কি চাই একজন একাকী খেঁটে খাওয়া সামান্য চাতাল শ্রমিকের?
মধ্যরাতে অপ্রত্যাশিতভাবে দরজায় ধাক্কার শব্দ বিপদের জানান দিলো। ধীরপায়ে এগিয়ে দরজা অব্দি গেলাম। তারপর দরজার কপাট খুলে এক ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী হলাম যা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি কোনদিন। মাধবীর অসাড় মুখ আর তার পায়জামা চুইয়ে নেবে আসা রক্তের স্রোত দেখে আমার বুক কেঁপে উঠলো। আমায় জড়িয়ে ধরে মাধবী গুঙিয়ে কাঁদতে লাগলো। সে যেন ঠিক করে কাঁদতেও পারছেনা। তার দেহের অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি আমার দেহে সংক্রমিত হল। এক ভীষণ বিপদ বার্তা এই মধ্যরাতে আমি পেতে যাচ্ছি তার আঁচ করতে পারলাম। আমিও মাধবীকে জড়িয়ে ধরে তার মুখ থেকে সেই বার্তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম যা আমি মোটামুটি নিশ্চিত বলেই অনুমান করেছি। হঠাত মাধবীর গলা ফেটে বেরিয়ে এল ‘আদিত্য দা আমার সব শেষ, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে । স্বপন আর মনসুর আমার সব শেষ করে দিয়েছে’। এই বলেই মাধবী আমার কোলে ঢোলে পড়লো। সে এবার একদম নিস্তেজ , জ্ঞানহীন। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে মাধবীকে আমার খাটে নিয়ে শুইয়ে দিলাম। ব্যাপারটা জানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই প্রথমে দৌড়ে গিয়ে টোকা দিলাম বিজনের দরজায়। বিজন গভীর ঘুম ভেঙ্গে দরজা খুলে আমার কথা শুনলো। মারাত্মক ক্ষোভে হাতে তুলে নিল তার খাটের নিচে রাখা বিশাল আকারের রামদা খানা। আমার হাতের কবজি ধরে বলে উঠলো
-চল আদি আজকে স্বপন আর মনসুরে ধর ঘাড় থাইকা নামায়া দিমু । চল আমার সাথে।
- না বিজন এভাবে নয়। আগে মাধবীকে বাঁচাতে হবে। ওর অনেক রক্ত বের হচ্ছে। আগে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
-তুই হাসপাতালে নিয়া যা। আজ আমার বোনের ইজ্জত নষ্ট করসে ঐ কুত্তার বাচ্চারা। ভাই হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব এর শোধ নেয়া।
আমি একরকম জোর করেই ওর হাত থেকে রামদাখানা সরিয়ে ফেলতে সমর্থ হলাম আর বুঝতে পারলাম এ লড়াইয়ে বিজন অন্তত আমার পাশে থাকবে। এ লড়াই আজ কেবল শুরু হল। আজ থেকে স্বপন মনসুররা ওদের দিন গোনা শুরু করবে। আমি মাধবীর সম্ভ্রমহানীর বদলা তো নেবোই পাশাপাশি চাতাল ঘিরে ওদের সকল কূকীর্তির হিসাব আমি ওদের কাছ থেকে সুদেআসলে বুঝে নেব। বুঝিয়ে দেব ওদের একজন নিষ্ঠাবান সৎ শ্রমিকের হাতের জোর কতখানি। যে হাতকে আমি ক’দিন আগেও অর্থহীন বলে ভেবেছিলাম তা যেন আজ হঠাতই দ্বিগুণ শক্তি অর্জন করলো। সেদিন আমি এই হাতজোড়াকে মালবাহী ট্রাকের নিচে পিষে ফেলতে চাইছিলাম আর আজ মনে হচ্ছে আমার এই হাত জোড়াই সম্বল, এই মূহুর্তে এই হাতজোড়ারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমার। (চলবে >>>)


(পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা 'এখন তরঙ্গে' প্রকাশিত, চিত্র সোর্স-গুগল)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.