নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রমিক (ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ২)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১২



#৪
দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমানোর কথা ভুলে গেলাম। এখন তো প্রায় ভোর চারটা বেজে গেছে। বিজনও একের পর এক প্রলাপ বকে যাচ্ছে। সে তার কথায় মনসুর স্বপনকে কয়েকবার হত্যা করলেও এখন অব্দি ডাক্তার মাধবীর অবস্থার কোন জানান দেননি। হাসপাতালের যে দেয়ালটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি মাধবীর কথা ভাবছি ওটার গায়ে লাল কালিতে বড় করে লেখা “ লড়াই করে বাঁচতে চাই”-হারামজাদার দল, লড়াই?? লড়াই চিনিস?? জানিস লড়াই কাকে বলে?? জানিস প্রাণদেব কত রুঢ় ?? কেমন কষ্টকর ব্যাপার ওকে সন্তুষ্ট করা?? জানিস না। কারণ তোদের প্রাণই নেই। আছে বিপ্লবী বলে কান ফাটানো আত্মকথা। শালা সব বুজরুকি। লড়াই কাকে বলে আমি দেখাবো’- এসব কথা ভেবে যাবার কোন এক ফাঁকে ডাক্তার বাবুর গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । উনি আমাকে আগের থেকেই চেনেন। আমাকে খুব স্নেহ করেন। উনার বাসায় আমি নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে বস্তা কে বস্তা চাল সরবরাহ করেছি। অন্যরাও করেছে কিন্তু উনি আমাকে একটু বেশিই ভালবাসেন।
-আদিত্য? শোন তো একটু এদিকে?
হাত দুটো জোড় করে দাসসুলভ ভঙ্গিমায় গিয়ে দাঁড়ালাম উনার সামনে।
‘ মাধবীর কন্ডিশন এখন ভাল। সুন্থ হয়ে যাবে, চিন্তা করিস না। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা’ – ভ্রকুচকে বললেন ডাক্তার নীলকান্ত। ‘কি ডাক্তার বাবু? বলুন’-নিস্তেজ কন্ঠে বললাম আমি।
-না বলছি যে এরকম একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার, পুলিশকে না জানিয়ে চিকিৎসা করা তো ঠিক হল না মনে হচ্ছে। যদি ঐ পরবর্তীতে ...
-ডাক্তার বাবু, আপনি এই মূহুর্তে ভগবানের ভূমিকা পালন করছেন। একটা আঠার উনিশ বছর বয়সের অববাহিত মেয়ের এ ধরণের ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে মেয়েটার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে।
-তাই বলে অপরাধীদের ক্ষমা করে দিবি?? তুই এক কাজ কর, থানায় একটা মামলা দায়ের কর। একজন নাগরিক হিসেবে এটা করা তোর কর্তব্য।
‘নাগরিক’- এই শব্দটা শুনেছি বহুবার। তবে এর মর্ম বা তাৎপর্য আমি বুঝিনি কোনদিন। আমি নগন্য এক চাতাল শ্রমিক কি না! সভ্য,ব্যক্তিত্ত্ব ,মহত্ত্ব কিংবা “নাগরিক” ধরণের শব্দগুলোর বোঝা বহন করা বেশ কষ্টকর হবে আমার মত একজন সামান্য চাতাল শ্রমিকের জন্য।
‘ ডাক্তার বাবু আমি অত সচেতন নই। অপরাধীরা এমনিতেই শাস্তি পেয়ে যাবে। অযথা মামলা থানা পুলিশ করলে ব্যাপারটা জানাজানি হবে। মাধবীর বাবা-মা কিংবা অভিভাবক বলে যেহেতু কেউ নেই তাই ওর দায়িত্ব আমি আমার মাথায় তুলে নিতে রাজি আছি। ‘আমি মাধবীকে বিয়ে করবো’। তারপর থেকে ওর সকল দ্বায়িত্ব আমার।
‘আমি মাধবীকে বিয়ে করবো’- ভেবে বলিনি। মুখ ফোঁসকেই হঠাৎ বেরিয়ে গেল। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে, এই কথাটা আমি আমার মনের গহীনে দীর্ঘদিন যত্নে পুষে রেখেছিলাম। আজ সেটা একটা দৃঢ় অবস্থান অর্জন করলো।
এ কথা শুনে ডাক্তার বাবু তার দুই হাত দিয়ে আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠলেন
‘আদিত্য তুই এত ভাল মানুষ? এত বড় তোর মন!! তুই বুঝে বললি তো কথা টা?’
-ডাক্তার বাবু আপনি জানেননা আমি মাধবীকে কতটা ভালবাসি। মাধবীকে যেকোন অবস্থাতেই গ্রহন করতে আমি রাজি আছি। মাধবীর মত এত ভাল একটা মেয়ের জীবন কিছু বদমায়েশের কুকীর্তিতে ধ্বংস হতে কোন অবস্থাতেই দিতে পারি না আমি।
কথাগুলো শুনে ঝিমিয়ে থাকা বিজনও দৌড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। আনন্দে ওর চোখ জ্বলজ্বল করছে। ‘ তবে বেশ, তোদের বিয়ের আয়োজনের সমগ্রটার ভার আমি নিলাম’ – বিজন এসে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো কথাগুলো।
দুপর অব্দি মাধবীর দেখা পাওয়া গেল না। জ্ঞান ফেরেনি বলে হাসপাতালের নার্স জানালেন। রাত অব্দি জ্ঞান ফিরবে বলে পাশাপাশি আশ্বাসও দিলেন। ঘুমের তোড়ে চোখ দুটো মেলে রাখতে পারছি না। বিজন ওদিকে নাক ডেকে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ঘুমোচ্ছে। ওকে রাত থেকে এখন অব্দি অনেকবার বাসায় চলে যাবার কথা বলছি কিন্তু শোনেনি। এ ফাঁকে আমি আমার ভাবনা গুলোকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলাম । এতে আমার ঘুমের ঘোরটাও কেটে যেতে পারে আর ফলপ্রসু কোন বুদ্ধিও খেলে যেতে পারে মাথায় । সত্যিই আমি খুব অশান্তিতে আছি এই মূহুর্তে। মনসুর আর স্বপনের নামে মামলা না করা কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে? সত্যিই কি আমি মনসুর আর স্বপনের দুষ্কর্মের যথাযোগ্য শাস্তি দিতে সক্ষম? শাস্তি দিলেই কি ধরণের শাস্তি একটা নিষ্পাপ মেয়েকে ধর্ষনের জন্য সমুচিত বলে গণ্য করা যায়? ‘ধর্ষন’ শব্দটা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তবুও এই কূকীর্তিকে এ নামেই ডাকে সামাজিক সভ্য কিংবা অসভ্য জীবেরা। পাশাপাশি এও ভাবতে লাগলাম, আমি নাহয় মাধবীকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম, মাধবীর মতামতের কি কোন গুরুত্ব নেই? একজন ধর্ষিতার কি সত্যিই ইচ্ছার কোন মূল্য নেই? বিজয়ীরো কলঙ্কিত ইতিহাস থাকে, সে বিজয়ী হয়ে তা লুকায়, ছত্রছায়ায় থাকা চতুর জন্তুগুলো সে কলঙ্ক নিরাপদে আবৃত করে রাখে। আমার মাধবীও একজন বিজয়ী। একজন প্রকৃত বিজয়ী,ইতিহাস রচনা হবে না হয়তো তার নামে কিন্তু তার কলঙ্ককে সামাজিক কীটগুলো খুব সযত্নে সংরক্ষিত করে রাখবে নিজেদের মনে কিংবা মুখের বিশ্রী ভাষায়। সত্যিই মাধবী একজন গর্বিত শ্রমিক, একজন খেঁটে খাওয়া নারী,সামাজিক বঞ্চনার মুখের উপর এক করাঘাতের নাম মাধবী।
#৫
চোখ খুলে মাধবী নির্বাকই রইলো। তার মুখমন্ডল দেখে বুঝতে পারছিলাম তার সাথে ঘটে যাওয়া মূহুর্তগুলোর ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করছে সে। ভুলতে পারা সহজ নয়। হয়তো সম্ভবই নয়। এক মূহুর্ত আমায় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিয়ে আবার সিলিঙের দিকে দৃষ্টিপাত করলো সে। সাদা সিলিংটায় যেন তার সাথে ঘটে যাওয়া পাশবিক কাহিনীর উপর নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি ব্যাপারটা খুব ভালো করে বুঝতে পারলাম, ডাক্তার বাবু আরো ভাল করে বুঝলেন। মাধবীর হাত ধরে ওর নাড়ি আর রক্তচাপ পরীক্ষা করে আমার সাথে একাকী দুমিনিট কথা বলতে চাইলেন। উনি আমায় বললেন শারীরিক নয়, মূহুর্তটা মানসিক যন্ত্রণার। যে ব্যাপারটার ভেতর দিয়ে মাধবী যাচ্ছে তার একমাত্র সমাধান তার মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা। ডাক্তার বাবু বললেন আমি নাকি সেটা পারবো।আমিও জানি আমি তা পারবো। আমি মাধবীকে এও বোঝাতে সক্ষম হব যে ওর সাথে যা ঘটে গেছে তা তাকে কলঙ্কিত করেনি বরং ধর্ষকরাই নিজেদের নাম অমানুষের কাতারে নিয়ে গেছে। অবশ্য মানুষের কাতারে স্বপন ও মনসুর কোনদিনই ছিল না।
দীর্ঘক্ষন পাশে বসে থেকেও মাধবীর মাধবীর মুখ থেকে কোন কথা শুনতে পারলাম না । শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে তার। এরই মাঝে বিজন বাড়িতে একবার ঢুঁ দিতে গেছে। জানিয়ে গেছে রাতে আবার আসবে সে। তবে আজ রাতে থাকা সম্ভব হবে না তারপক্ষে, কাল খুব ভোরে গার্মেন্টসে যেতে হবে।
তারপর আমি মাধবীর হাত দুটো একত্রে ধরলাম। বুকের বাঁদিকে ওর হাত দুটোকে বসিয়ে আমার হৃদস্পন্দন তার রন্ধ্রে সঞ্চারের প্রচেষ্টা করলাম। আমি জানি আমাতে যে প্রাণটুকু এখনো বর্তমান আছে তা দিয়ে অনায়াসেই আরেকটা দেহের প্রয়োজনীয় প্রাণের চাহিদা পূরণ করতে পারবো । যদিও আমি কোন মহাপুরুষ কিংবা ব্যক্তিত্ত্ববান নই। চাতাল শ্রমিক, এক ক্ষুদ্র চাতাল শ্রমিক। একটা ঝটকা দিয়ে হাতদুটো সরিয়ে নিল মাধবী, যেন এক পশলা তড়িৎ ওর দেহ কুঠুরি দিয়ে এইমাত্র বয়ে গেল। তারপর হঠাৎই চিৎকার করে আমায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো।
“আদিত্য দা”, শুধু এতটুকুই বলেছে এখন অব্দি আর শুধু কেঁদেই চলেছে।
-মাধবী, ও মাধবী কাঁদছ কেন?? আমি আছি তো তোমার পাশে। তোমার সবকিছু আজ থেকে আমার। আমি আজীবন তোমার পাশে থাকবো। নিজের জীবনসঙ্গী করার সুযোগ দেবে কি আমায়? আমায় বিয়ে করবে মাধবী?
এই কথাগুলো বলার পর থেকে মাধবী এখন অব্দি কাঁদেনি বরং ওর চেহারায় এই মূহুর্তে আমি অন্য এক মাধবীকে আবিষ্কার করলাম। মুখের আধেকটা দেখে ধূসর পাথর মনে হচ্ছে। কথা বলছে না। কোন কথাই বলছে না সে।
-মাধবী?
- কি?
- যা বললাম তা কি বলা ঠিক হয়নি আমার?
- দয়া করছো?? হ্যাঁ?? দয়া?? যাও দরকার নেই তোমার দয়ার। আমি এখনো মনসুরকেই ভালবাসি। মনসুরের দাসী হয়ে থাকবো সারাজীবন তবু কারো দয়ার পাত্রী হব না।
- কিন্তু মাধবী যে মনসুর তোমার সম্ভ্রম...?
- কি মনসুর কি?? সম্ভ্রমই নিয়েছে তো?? প্রাণতো আর নেয় নি? কি করবো সেটা আমি বুঝবো। অনেক করলে আমার জন্য। এবার যেতে পারো।
আমি সত্যিই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। মাধবী কি বোঝাতে চাইলো এই কথা গুলো বলে? যে মাধবীকে দিয়ে স্বপন ও মনসুর নিজেদের পাশবিক লিপ্সা পূরণ করলো সেই মনসুরই ওর কাছে এখনো প্রিয়?? কিভাবে??? কেন?? আমার ভালবাসা কি তবে ওদের পাশবিকতার কাছে হার মানলো?? নাকি পুরো ব্যাপারটাই আমার ভুল হল? না , তবে আমি মাধবীকে ছেঁড়ে যেতে পারি না। ওর পাশে আমি ছিলাম আছি থাকবো, আজ রাতেও থাকবো এবং আজীবন সেখানেই আমার অবস্থান হবে।
চুপ করে বারান্দায় শুয়ে রইলাম। এখন একটু আধটু শীত লাগছে। গতরাতে যদিও শীতের কথা খেয়াল ছিল না। দেয়ালের লাল কালির লেখাটাও খুব একটা অসহ্য বলে মনে হচ্ছেনা এই মূহুর্তে । তবে একটা ব্যাপার খুব বেশি করে মনকে নাড়াচ্ছে। মাধবীর প্রত্যাখ্যান। আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। ব্যক্তিত্ত্ববান নই এটা কারণ?? নাকি আমার অর্থের যোগানের অপারগতার কথা ভেবে মাধবী আমার ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করল?? বড্ড জলদি বলে ফেললাম কি কথাগুলো??
সিথিতে সিঁদুর দেয়া মাধবী চাতালে দাঁড়িয়ে শঙ্খ বাজানোর মূহুর্তে আমার ঘুমখানা ভেঙ্গে গেল। জানিনা সিঁথিতে সিঁদুর কার জন্য পড়েছিল সে। আমার জন্য নয় হয়তোবা । তবে এই মূহুর্তে ঘড়িটা জানান দিচ্ছে বেশ কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়েছি আমি। শরীরে জোরও পাওয়া যাচ্ছে ভালোই । খিদের বালাই নেই।
দূর থেকে হাত নেড়ে ডাক্তার নীলকান্ত আমায় ডেকে বসলেন।
“আদিত্য একবার আমার রুমে আসিস তো। জরুরি কথা আছে’
আমি দেরী না করে দৌড়ে উনার দরজায় টোকা দিলাম।
-আয় ভেতরে আয়।
আমি ভেতরে গিয়ে দাড়ানোর পর উনি আমায় চেয়ারে বসতে বললেন। বসতে বসতে আমি উনার দ্বিধাগ্রস্ত মুখখানা আবিষ্কার করলাম। এমন মুখগুলো থেকে বেরিয়ে আসা কথা সুসংবাদ বহন করে না। আমিও যে কোন দুঃসংবাদ পেতে যাচ্ছি তা আমি আঁচ করতে পারলাম। অবশ্য দুঃসংবাদ আমার কাছে খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। এটা আমাদের মত চাতাল শ্রমিকদের কাছে নিত্য বিষয়। বেঁচে আছি এই বেশি।
‘বলুন ডাক্তার বাবু?? কি জরুরি কথা?’
- মাধবী আমার সাথে একটু আগে অনেকক্ষন কথা বললো।
- বুঝতে পেরেছি ডাক্তার বাবু। আমার বিষয়ে বলেছে।
- তোর বিষয়ে যে বলেনি তা নয় তবে ওর বলার মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্যটা।
- কি ডাক্তার বাবু??
- মনসুরকে খবর পাঠানোর জন্য বলছিল আমায়। আর সেজন্য তোর সাহায্য নিতে মানা করেছে। তুই কি নিশ্চিত যে মাধবীকে মনসুর আর স্বপনই??
- ডাক্তার বাবু মাধবী নিজের মুখেই আমায় বললো সে কথা।। একজন ধর্ষিতা কেন এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মিথ্যে কথা বলবে বলুন?
- হ্যাঁ তা ঠিকই বলেছিস। সত্যি বলতে ও হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চাইছে। মনসুরকে আমি আসার জন্য খবর পাঠিয়েছি তোকে না জানিয়েই। তবে সে মনে হয় আসবে না। না এলে বোঝাই যাবে যে সে এই অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণ করেছে।
- আমি জানি না আমি এই মূহুর্তে কি বলা বা করা উচিৎ । তবে আমার মনে হয় কাল সকালেই আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ। চিকিৎসা বাবদ টাকাটা আমি চুকিয়ে দেব। আপনি তা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
- টাকা দিতে হবে না। আমারো একটা তরুণী মেয়ে আছে। নাহয় একজন পিতা হয়েই মাধবীর চিকিৎসা খরচটা বহন করলাম আমি।

ডাক্তার বাবু মহত্ত্ব প্রদর্শন করলেও এই মূহুর্তে আমি সাংঘাতিক দ্বিধাগ্রস্ত। বিজনও আজ রাতে আসছে না। কিই বা করা উচিৎ এই মূহুর্তে বুঝতে পারছি না একদমই। মাধবীর হঠাৎ এমন ব্যাবহার সত্যিই আমার হৃদয়কে ক্লেশাচ্ছন্ন করছে। নিজেকে একটা উলটে থাকা তেলাপোকার মত মনে হচ্ছে। সাহায্য যা ডাক্তারবাবু আর বিজন করছে তা অনস্বীকার্য হলেও আমি সত্যিই জানি হাসপাতালে নিয়ে আসা থেকে এখন অব্দি আমি মাধবীর অনাহূত অভিভাবকের দ্বায়িত্ব পালন করছি। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান এবং একজন নগন্য চাতাল শ্রমিকের বাইরে আর কোন উপাধি বা অবস্থান আমার প্রাপ্য নয়। হ্যাঁ কাল সকালেই আমি হাসপাতাল ত্যাগ করবো।
‘ডাক্তার বাবু দয়া করে মাধবীর খেয়াল রাখবেন। কাল সকালেই আমি হাসপাতাল ত্যাগ করবো। তবে কোন প্রয়োজন হলে আমায় খবর পাঠাবেন। চাতাল যেহেতু বন্ধ তাই আমার বাসায় কাউকে পাঠালেই আমার সন্ধান পাবেন আশা রাখছি’ এই বলে আমি ডাক্তারবাবু রুম ত্যাগ করলাম। তারপর হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে শাদা মোড়কের উটকো গন্ধের একটা বিড়ি জ্বালিয়ে নিজের সাময়িক হারানো অস্তিত্ত্ব অনুভব করার চেষ্টা করলাম। তাতে খুব একটা প্রশান্তি না পেলেও কিছুটা দায়ভারমুক্ত বলে মনে হল।
#৬
খবর পেলাম মালিকপক্ষ ধর্মঘট তুলে নিয়েছে। পরশু থেকে আবার চাতাল চালু হবে। মজুরি মোট ছ’শত টাকা বাড়ছে আমার এবং আমার মত অন্যান্য শ্রমিকদের । অনেকদিন বাদে সহকর্মীদের চেহারাগুলো দেখা যাবে।ডাক্তার আজ অব্দি মাধবীর কোন খবর পাঠান নি। আমার কোন প্রয়োজন পড়েনি হয়তো । তবে বিজন কিছুদিন আগে মাধবীকে দেখতে একবার হাসপাতালে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে শুনেছে মাধবীকে মনসুর নিজে এসে নিয়ে গেছে। কাউকে বোঝাতেও পারবো না যে মহত্ত্ব প্রদর্শন নয়,ভালোবাসার মানুষের বিপদের সঙ্গী হয়েছিলাম মাত্র। যদিও ভালোবাসার মানুষ আমাকে ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে আমি সত্যিই একজন হতদরিদ্র চাতাল শ্রমিক মাত্র । তবে মাধবীর হয়ে লড়াইটার ব্যাপারে আমি দ্বন্দ্বে পড়ে আছি। ওটা করা ঠিক হবে কি না তাও বুঝতে পারছিনা। যার জন্য লড়বো সেই তো শত্রুদের দলে ভিড়ে গেছে। লড়াইটা দুধার দিয়েই নিশ্চিত হার আমার। খামখা এসব নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই। সাময়িকের জন্য আমি সত্যিই নিজেকে অসাধারণ কেউ বলে দাবী করার চেষ্টা করেছি। ভুল হয়েছে। ভুল তো হতেই পারে একজন খেঁটে খাওয়া চাতাল শ্রমিকের। তবে সামনের মাসে মন্দির প্রদর্শনে শহরে যাবো। ভগবানকে অনেকদিন ধরে দেখিনা। তবে এবারো নলেন গুঁড়ের সন্দেশ, বিস্কুটের প্যাকেট, ফলফলারি আর একরাশ আশা নিয়ে যেতে ভুলবো না।

কাকডাকা ভোরে আজ ঘুম ভেঙ্গে গেল। চাতাল আজ অনেকদিন বাদে খুলবে। আজ কিছুতেই মনসুরকে আমার আগে যেতে দেবনা। আমার ভালোবাসায় হাত বসিয়েছে হারামীর বাচ্চা তবে আজ আমার আগে ওকে চাতালে যেতে দিচ্ছি না আমি। গাঁয়ে একমাত্র শীতবস্ত্র কালো চাদরখানা জড়িয়ে আর কোমরে অসংখ্য ছিদ্রি হয়ে যাওয়া গামছা খানা পেঁচিয়ে রওনা হলাম চাতালের উদ্দেশ্যে। কুয়াশা ঢেকে রেখেছে চারিদিক, কুয়াশা ভেদ করে একাকী হেঁটে চলার এক মূহুর্তে নিজেকে ব্যক্তিত্ত্ববান বলে মনে হতে লাগলো। অস্বস্তিকর খোলস কাটানোর জন্য কোমর থেকে একখানা বিঁড়ি বের করে ফুঁকতে ফুঁকতে নিজেকে চাতালের সামনে আবিষ্কার করলাম। চারিদিক একবার চেয়ে দেখে নিলাম। না আজ সত্যিই মনসুরের আগে এসেছি আমি। আজ নিয়ে দুদিন হল ব্যাপারটা। সেদিন অনিচ্ছাকৃত ভাবে ওর আগে চাতালে অবস্থান করলেও আজ কিন্তু স্বেচ্ছায়ই এসেছি। এক ভাষায় বলতে গেলে আমি জিতেছি। পুরস্কার হিসেবে অবশ্য মাধবীকে পাবোনা আমি।
চাতালের মেশিনগুলোতে ধুলোর স্তর পড়ে আছে। সেগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে। ততক্ষণে অন্যরাও চলে আসবে। মাধবীও আসবে হয়তো। হয়তো মাধবীর পিছু পিছু মনসুরো আসবে। তবে স্বপনকে তাদের সাথে দেখতে চাই না আমি। ঐ হারামজাদাকে আমি সহ্যই করতে পারিনা। যদিওবা মনসুরকেউ খুব একটা সহ্য সহ্য হয় না আমার। তবে সে মাত্রা স্বপনের থেকে কিছুটা কম।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একে একে সহকর্মীদের আগমন ঘটতে থাকলো। কারো সাথে হেসে বুক মিলিয়ে নিলাম আবার কারো সাথে হাত নেড়েই জানিয়ে দিলাম দীর্ঘদিন তাদের অভাব অনুভবের কথা। এক পর্যায়ে মাধবী এল এবং মনসুর তার পিছু ধরে। মাধবী খুব স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় আমায় বলে উঠলো ‘আদিত্য দা? কেমন আছো?’- যেন কিছুই হয়নি ওর জীবনে। যেন গতকালই আমরা চাতালে একসাথে কাজ করেছি। চোখে পুরু করে কাজল দিয়েছে, গাঁয়ে নতুন সালোয়ার কামিজ। হাঁতে নতুন চুড়ি এবং বলার ভঙ্গিমায় কোমলমতী লাস্যময়ীর ছাপ, যেন চাতালে আজ বেড়াতে এসেছে সে। তবে মনসুরের চাহনীতে খানিকটা কর্কশ ভাব ছিল। ‘আদি?? ভালো আছিস?’- ‘তোর ভালো থাকার নিকুচি করি’ বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল যদিও তবু পুরনো চিরচেনা স্বর নিয়ে ‘ভালো আছি’ই বললাম।
কাজ করে খুব ভালো লাগছে আজ। দুপুর অব্দি হয়তো দেখবো মনসুর আর মাধবী নিজেদের আড্ডায় মজে গেছে। তবে স্বপনকে তাদের আড্ডার নব্য সদস্য হিসেবে দেখলেও খুব বেশি আতকে উঠবো না আমি। যদিও আমি তা আশা করছিনা। স্বপন এখন অব্দি চাতালে আসেওনি।
হঠাৎ চোখে এলো মনসুর মাধবীর কানে থেকে থেকে কি যেন বলছে আর মাধবীও সে শুনে হেঁসে উঠছে। তারপর দেখলাম মনসুর অনায়াসেই মাধবীর দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে, নিতম্বে চিমটি কাটছে, জোরে জোরা খোঁচা দিচ্ছে। মাধবী তাতে খুব বেশি সাঁরা দিচ্ছে না কিন্তু বাঁধা দিতেও দেখছিনা তাকে। শুনেছি মাধবীর ঘরে মনসুরের যাতায়াত ইদানীং খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওরা এখনো বিয়ে করেনি। এ বিষয়ে কিছু শুনিনি এখন অব্দি। মাধবীর দেহের মনসুরের সম্ভোগ চিহ্ন আবিষ্কার করতে তাকে এখন আর নগ্ন অবস্থায় আবিষ্কার করতে হবে না আমার। গাল এবং গলার এখানে এখানে পুরু নখের চিহ্ন একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়ছে অনায়াসেই। তবে বিজনের অভাব খুব অনুভব করছি এই চাতাল মূহুর্তগুলোতে। বিজন আমার প্রকৃত এক বন্ধু আমার বিপদের দিনের সহযোদ্ধা।
বিকেল আগমনের আগ মূহুর্তে স্বপনের অস্তিত্ত্ব আবিষ্কার করলাম। ও কখন চাতালে এসেছে তা বলতে পারবোনা আমি। তবে চেহারাটা দেখে মনে হচ্ছে ওর চরিত্রহীনতা আগের থেকেও বেশি বেড়েছে। অনায়াসেই মাধবীর হাত চেপে হেঁচকা টান দিচ্ছে। তারপর কোণায় যাবার আহ্বান জানাচ্ছে। মনসুর তা শুনে মুখ চেপে হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে মাধবী যেন ওদের খেলার পুতুল। যা ইচ্ছে তাই করার অনুমুতি পেয়ে গেছে। সত্যি বলতে মাধবীকে দেখে আজ কেন জানি ঘৃণাবোধ জন্মাচ্ছে মনে। এই কি সেই মাধবী যাকে আমি ভালোবাসি?? এই কি সেই মাধবী যাকে ক’দিন আগেও আমি এক বিপ্লবী হিসেবে ভেবেছি আমি? ‘ছিঃ ছিঃ মাধবী ছিঃ। তুমি এমন?? এত সহজেই হার মেনে গেলে? একবার শুধু আমায় বলো তুমি ওদের ঘৃণা কর, একবার শুধু বলো যে ওরা তোমার সাথে যা করেছে তার শাস্তি তুমি এদের দিতে চাও। দেখ আমি কি করি, দেখ আমি কি শাস্তি ভেবে রেখেছি ওদের জন্য। কিন্তু না তুমি নিজেকে বিকিয়ে দিলে, বিলিয়ে দিলে ঐ মানুষরূপী হায়নাদের হাতে। তোমাকে নিয়ে গর্বিত হওয়ার আর কিছুই অবশিষ্ট রইলো না। ছিঃ মাধবী ছিঃ’ – মনে মনে এমন ঘৃণাবাক্য ভাবা ছাড়া আর কিছুই রাখলোনা মেয়েটা। হয়তো আজ রাতে মনসুর আর স্বপন মদের নেশায় মত্ত হবে তারপর একে একে ঝাপিয়ে পড়বে মাধবীর মাংসপিণ্ড গুলোর উপর। ছিঃ মাধবী ছিঃ।
#৭
মধ্য রাতে দরজার টোকায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তবে তা খানিকটা প্রশান্তির জানান দিচ্ছে। এক ঢোক জল তৃষ্ণার্ত গলাকে প্রশান্তি দিল। তারপর দরজা খুলে মাধবীকে দেখতে পেলাম। এবার মাধবী হাসছে।
-আসবো আদিত্য দা?
- খুব বেশি জরুরী? কোন সমস্যা থাকলে বলতে পারো।
আমার কথার তোয়াক্কা না করে ঘরে প্রবেশ করে গেল সে।
‘একা থাকতে ভালো লাগে তোমার?’- বলে আমার চকিটার উপর গিয়ে বসলো মাধবী।

‘সেটা জেনে কি করবে??’ – খানিকটা গম্ভীর স্বরে বললাম আমি।

তুমি খুব রাগ আমার উপর তাই না?? আমাকে চরিত্রহীনা বলে কষ্ট হয় না তোমার আদিত্য দা?
- না এ ধরণের কোন কিছু ভাবিনা আমি তোমায় নিয়ে।
- তবে কি ভাবো?
- কিছুই ভাবি না।কেন এসেছ সেটা বলো। আমার ঘুমোতে হবে। সকালে কাজ আছে।
- কিন্তু তোমার সাথে যে আমার জরুরী কথা আছে আদিত্য দা?
- তো বলো। জরুরী কথাই যদি হয় তবে বলছো না কেন এখনো।
- তুমি খুব রাগ আমার দিকে তাই না? যে মনসুর আর স্বপন আমার সম্ভ্রম লুটে নিল তাদের সাথেই কি সুন্দর করে মিশে গেলাম আমি আবার।
- নাহ। তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।
- সত্যিই কি কিছুই আসে যায় না? যদি বলি কাল থেকে ওদের সাথে আর আমি মিশছি না? যদি বলি আজ এই মাঝরাতে আমি তোমার হতে এসেছি? আমায় গ্রহন করবে না আদিত্য দা?

কথাগুলো শুনে আমি বেশি হতচকিয়ে উঠলাম। হঠাত মাধবীর কি হলো? হঠাৎ এমন করে কেন কথা বলছে ও? কি হয়েছে জানতে চাইলে ও উঠে এসে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর নিজের ডানহাত খানা আমার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো
‘বিশ্বাস করো আদিত্য দা। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি। একজন একাকী নারী চাতাল শ্রমিকের অপারগতা তুমি বুঝলে না । তুমি বুঝলেনা যে এই মাধবী কোনদিন চায়নি অন্যান্য নিপীড়িত শ্রমিকদের মত বঞ্চনার স্বীকার হতে। আমার হাত বাঁধা ছিল। তবে এখন আমার হাত খুলে গেছে। আমি নিজেই সে বাঁধন খুলে দিয়েছি’
মাধবীর কথাগুলো আমার মাথায় ঢুকছে না। তবে বুঝতে পারছি সে কিছু একটা বলতে চাইছে।
হঠাৎ আমার কানের কাছে এসে বলে উঠলো মাধবী ‘ এই মাঝরাতে তুমি আমাকে নিজের করে নেবে আদিত্য দা? যেভাবে আমি তোমাকে পেতে চেয়েছি এতদিন সে সুযোগ দেবে আমায়?’
আমি চুপ করে থাকলেও মাধবী তার নরম ঠোঁটযুগল আমার ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিল। আমি যেন হঠাৎ করেই কামনার সাগরে ভেসে গেলাম। তাকে জড়িয়ে ধরে গালে, ঠোঁটে, কপালে চুমু খেতে খেতে আমার ভালোবাসার কথাগুলো তাকে বাতলে যেতে লাগলাম। এক পর্যায়ে দুজন সঙ্গম জোছনায় নিজেদের বিলীন করে দিলাম। এ যেন এক বহুপ্রতীক্ষিত মহাকাব্য, যার মন্থনে দুটি দেহ আগ্নেয়গিরির মত জ্বলছিল বহুদিন ধরে , এ যেন এক উষ্ণ দক্ষিণা হাওয়ার দোলা যার জন্য উষ্ণতা দুটো হৃদয়ের গহীনেই সৃষ্টি করে যাচ্ছিল প্রগাঢ় জলোচ্ছাস। দুজন আজ রাতে দুজনের মত করে নিজেদের ভালোবেসে নিলাম। একটু নয় অনেকটা, তবু যথেষ্ট নয়।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলোনা। তবে ঘুম ভেঙ্গে মাধবীকে আমার পাশে পেলামনা। হয়তো কলসীকাকে জলসেচনে গেছে সে কিংবা উঠোনে মনের মাধুরী মিশিয়ে লেপে যাচ্ছে নব্যসৃষ্ট মাটির চুলো। অপেক্ষায় থেকেও মাধবী এলোনা। উঠোনেও তার অস্তিত্বের কোন খোঁজ না পেলেও বিজনকে ধেয়ে আসতে দেখলাম আমার ঘরের দিকে।
‘ আদি কাহিনী শুনেছিস কিছু?’- আমার সামনে এসে ধড়ফড় করে বলে উঠলো সে।
কি কাহিনী জানতে চাইলে আমায় ঘরের ভেতর নিয়ে গেল বিজন। দরজায় খিল দিয়ে জগ থেকে কয়েক ঢোক জল গিলে নিল। তারপর আমার খাটের উপর বসে বলতে লাগলো ‘ আজ ভোরে স্বপনের ঘরে ওর আর মনসুরের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ মাধবীকে খুঁজছে। পুলিশ জানতে পেরেছে যে গত রাতে মনসুর আর স্বপন মাধবীকে নিয়ে স্বপনের ঘরে যায়। এটা দেখেছে অনেকেই’
এ কথাগুলো শুনে কোন কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না আমার। তবে এতদিন মাধবী ওদের সাথে মিশেছে তার সম্ভ্রমহানীর বদলা নিতে। আর সে প্রতিশোধ পূর্ণ করে সে এসেছে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে।হ্যাঁ আমিই মাধবীর ভালোবাসার মানুষ। আমি এও বুঝলাম যে মাধবী আমায় তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে বিদায় নিয়েছে। তবে তা চিরবিদায় হতে দেবোনা আমি। মাধবীকে আমি খুঁজে বের করবোই।
‘ বিজন তুই কি আমাকে তোর বন্ধু ভাবিস?’
‘আদিত্য কি বলছিস?? অবশ্যই ভাবি’
‘আমি একটা নব্য লড়াই শুরু করতে যাচ্ছি সাহায্য করবি আমায়?’
এবার বিজন আমার সামনে এসে দৃঢ় বলীয়ান কন্ঠে বলে উঠলো। একবার শুধু বলে দেখ বন্ধু’
‘ মাধবী ওর সম্ভ্রমহানীর বদলা একাই নিয়ে নিয়েছে। কাল রাতে ও আমার কাছে এসেছিল।আমাকে ওর ভালোবাসার কথা জানিয়েছে। আমি মাধবীকে ফিরে পেতে চাই।আমার ভালোবাসার মানুষকে আমি পেয়েই হারাতে চাইনা। মাধবী আর আমি পালিয়ে যাবো। এই সমাজ, এই আইন , এই চাতাল থেকে অনেক দূর। বহুদূর। আমার ভালোবাসাকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবি আমায় বিজন? (চলবে>>)

শ্রমিক (ধারাবাহিক উপন্যস পর্ব ১)


মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:২৫

Ariyan Ari বলেছেন: ভাল লাগছে! চালিয়া যান ----

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.