নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন- নদী- আশা

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল, বিপদসংকেত, উত্তাল হাওয়া, সেই সাথে উত্তাল আমাদের শহরের পুরুষনামধারী নদীটাও। ছন্নছাড়া নদীটার ধারে আধো নিস্তেজ মাটির উপর দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে বন্ধুকজন কালচে মেঘের ঝাঁক অবলোকন করছি আর থেকে থেকে মেলামাইনের স্বচ্ছ লাল চায়ের কাপে ঠোঁট ছুইয়ে শুষে নিচ্ছি ধুঁয়াধার চা । আভ্যন্তরীণ চোখাচোখিতে বুঝতে পারছিলাম আমরা কজন যুবকের দেহকোষ গুলো একেকটা কিলবিল করা শুঁয়োপোকা হয়ে উঠেছিল। প্রত্যাশিত শব্দগুলো শুধু স্বরযন্ত্র ছেঁড়ে বেরিয়ে আসার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে । হঠাৎ বন্ধু বাবু বলে উঠলো ‘ ঐ চল নৌকা দিয়া ঘুরি। দারুণ হইবো ব্যাপারটা একটা ছোটখাটো এডভেঞ্চার” প্রথমে নেহাতই মশকরা বলে মনে হলেও বন্ধুদের মতামতে বাবু’র প্রস্তাব জয়যুক্ত হল। তাই মাথা পেতে মেনে নিতে হল রায় । না এখানে কোন বিচারক ছিল না। আমরাই আমাদের বিচারক ছিলাম, আমাদের দৃঢ় মানসিক শক্তি ছিল। আমার প্রাথমিক অনীহার কারণ ছিল সাঁতার কাটতে পারায় অপারগতা। সে যাই হোক, আমাদের ৬ জনের ভেতর ৫ জনেরই আমার মত ডানায় সাঁতরে আর জলে সাঁতার কাটা শেখা হয়নি।
বিকেলের হাওয়া যতই ব্যতিক্রমী থাকুক, আভ্যন্তরীন বৈকালিক হাওয়া চার দেয়ালের ভেতর আটকে রাখতে পারেনি কোনদিন । ঠিক ছুটে যাই ঐ রুপালী অপরুপ অনসূয়ার কাছে । একটা নদীর জল কতটুকু ভালবাসা নিয়ে বয়ে যেতে পারে তা আমার শহরের এই বিশাল জলাধারের পাশের কামুক মাটিতে না দাড়ালে বোঝা যাবে না কিংবা তার বুকে বয়ে চলা নৌকাতে বসে ঢেউয়ের সাথে আধো-সঙ্গমে মিলিত না হলে ব্যাপারটা কেবল ফ্যান্টাসী হয়েই থেকে যাবে।
বিকেলের আলো সূর্যের প্রবেশদ্বারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘন্টা দুয়েক বাদে বাকি আলোটুকুও প্রবেশ করে যাবে কিরণমালীর বুকে। চাঁদের সাময়িক সাম্রাজ্য শুরুর আগের মূহুর্তটা অনেকটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অপরূপার শূন্য কপালে টিপ পরিধানের মূহুর্তের মত। চাঁদটাকে এমনিতেই দেখলে ঐ গোল আঠালপৃষ্ঠের টিপ বলে মনে হয় । যেন একটা বিশাল কপালের কেন্দ্রে সদর্পে অবস্থান করে সুশোভিত করে যাচ্ছে চারিদিক। চন্দ্রমন্থন নাহয় পরে হবে তার আগে এগিয়ে যাওয়া যাক সিমেন্টে বাঁধা পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝারী নৌকাটার দিকে।
নৌকায় মোট সাত জোড়া পা ভাঁজ করা অবস্থায় আছে। বৈঠা আর নদীর জল একে অপরের সাথে খেলতে শুরু করলো। মুখ থেকে কোন বুলি না বেরিয়েও যেন একেকজন বলে যাচ্ছি অনর্গল কথা। কেউ বাতাসের কাছ থেকে চুরি করে নিচ্ছি নব্য কোন গানের সুর। কেউ নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা সোনালু গাছের দিকে তাকিয়ে কামনা করছি না পাওয়া ললনার সঙ্গ। কেউবা উত্তাল উর্মির গহীনে হাতরিয়ে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছি সুখদায়ক কোন স্মৃতি । একেকজন যেন হয়ে উঠেছি ধরাধামের ভিন্নধর্মী মাধুকরী।
ভারী হাওয়ার ধাক্কায় খেয়াল হল আমরা এখন নদীর মাঝবুকে ভাসছি। ঢেউয়ের খেলা এতক্ষন একটা ছন্দ মেনে চললেও ক্রমেই যেন তা উন্মাদ হয়ে উঠছে। বাবু বলে উঠলো “ ও মাঝি নৌকা পাড়ে লইয়া যাও”। মাঝিও পাড়ে নৌকা ভেড়াবার জন্য এবার বৈঠা দিয়ে নদীর বুকে শক্ত ঘাই দিয়ে চললো। নদী ক্রমেই আরো উত্তাল হতে থাকলো। মাঝিও ক্লান্ত হয়ে উঠছে বৈঠা মারতে মারতে তবুও নৌকা যেন আর পাড়ের দিকে এগুচ্ছে না। এ যে মহাবিপদ!! এরই মাঝে আকাশ ক্ষোভে চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে । থেকে থেকে ইন্দ্রদেব তাঁর বর্শার অলৌকিক ঝলকানি দেখাচ্ছে । আমি ভয়ে চুপসে নৌকায় রাখা কাঠের তক্তা জড়িয়ে বসে রইলাম। চোখের সামনে ভেসে আসতে থাকলো নদীর জলে ভাসতে থাকা আমার লাশ এবং তার তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা সহস্র মানুষের ন্যাকামোয় পরিপূর্ন অনুশোচনায় ভরা মুখগুলো। হয়তো আমার মৃত্যুর পর সহস্র মানুষ হবে না। হয়তো একজনো হবে না। হয়তো আমি এমন ভাবে ডুবে যাবো নদীর অতলে যেখান থেকে আর ভেসে ওঠা সম্ভব নয়। আমার পাশের বন্ধুদের অবস্থা ইচ্ছে করেই দেখছি না। এতে আমি এবং আমার বন্ধুদের ভীতির মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে। হঠাতই বন্ধু মৃদুল ক্ষোভভরা দৃষ্টিতে বন্ধু বাবুর দিকে চেয়ে বললো ‘ ব্যাটা হইসে তোর এডভেঞ্চার? ওই মাঝি সাঁতার পারি না কিন্তু, ডুইব্যা গেলে বাচাইয়ো”। আচমকা যে কথাটা মাঝির মুখ থেকে বেরিয়ে এল তারপর আমার মনে হল শুধু শুধু এভাবে তক্তা ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা না করে এখনই বরং নদীতে ঝাপিয়ে পড়ি । “হেহেহে, ভাই আমি তো সাঁতার পারি না”- নির্বিঘ্নে কথাটা বলে মাঝি হাসছে আর বৈঠা চালাচ্ছে। “নদীতে থাকো সারাবছর অথচ সাঁতার পারো না!! মিয়াঁ ভণ্ডামি করার যায়গা পাওনা?” মৃদুলের এমন কড়া ধাতানিতেও কোন লাভ হবে না। সাঁতার কোন কবিতা নয় যে কলম আর কাগজ হলেই লেখা হয়ে যাবে।
আমাদের ভেতর একমাত্র সাঁতারু গুড্ডু তখনো চুপ। ভাবটা এমন যেন সে-ই আমাদের ত্রানকর্তা । সে কোন কথাই বলছে না । নদী যেন আজ আমাদের ইহলীলা সাঙ্গ করেই ক্ষান্ত হবে। নৌকা একবার এপাশে হেলে পড়ে তো আরেকবার ওপাশে। আমরাও নৌকার উপর রাখা কাঠের তক্তাগুলো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। আশার কথা হচ্ছে আর অল্প একটু যেতে পারলেই নিরাপদ একটা স্থানে চলে যেতে পারবে আমাদের নৌকাটা । যা সাঁতার না কাটতে পারা আমাদের মত নদীবিলাসী মানুষগুলোর জন্য হবে চরম সুখবর। জীবনের ক্ষেত্র গুলোও তো এমনই। মানুষ নিজের বিপদ নিজে তৈরী করে তারপর সে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে চরম প্রশান্তি পায়। যেমন আজ যদি আমরা নৌকাতে না চড়তাম তবে এই বিপদের সম্মুখিন হতে হতো না।
তারপর হঠাৎ একটা প্রচন্ড ঢেউ এসে আমাদের বিপদের কারণ হতে পারলো না। বরং ভিড়িয়ে দিয়ে গেল আমাদের নৌকাকে সিমেন্টে শক্ত করে বাঁধা তীরটায় । আমরা এখন নিরাপদ। একে একে নৌকা ছেঁড়ে নেমে তীরে এসে দাড়ালাম সারিবদ্ধ হয়ে। টু শব্দটি না করে মাঝির টাকা চুকিয়ে সেই মাটির বুকে গিয়ে আশ্রয় নিলাম যার উপর রাখা কাঠের বেঞ্চিতে বসে আমরা প্রতিদিন আড্ডা দেই, গান গাই, সমালোচনা করি,তারপর আবার মেলামাইনের কাপে চা খাই।
জীবনের প্রতিটি ক্ষণই তো আমাদের বাঁচতে শেখায়। যে মূহুর্তটা এই মাত্র আমার কাছে গত হয়ে হয়েছে সেটা আমার মৃত্যুর কারণ হতে পারতো অনায়াসেই। বাঁচিয়ে দিয়ে আশা জাগায়, জানান দিয়ে যায় হে বাছা- তোমার ধুকে ধুকে চলা জীবনে একটু প্রশান্তি দিয়ে গেলাম ভাল করে ভেবে দেখ ‘তাই নয় কি?’।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

ঋতো আহমেদ বলেছেন: বেশ কিছুদিন পর আবার আপনার লিখা পড়লাম। ভাল লাগল খুব।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:২২

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: হ্যাঁ ভাই আগের মতো আর লিখা হয় না সামু তে।। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.