নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উড়তে শেখাবে আমায়

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৩৭



শিশু পাপাই দোলনায় দোলে। মায়ের মুখ দেখে, বাবার আশায় ভরা চোখ দেখে। তারপর চোখবুজে মানুষ দেখে, ঘুরতে থাকা চরকি দেখে, টিকটিকি দেখে। তারপর একটু মাড়িহাসি হেসে উঠে।
পাপাই ঘরে বসে পুতুল নিয়ে খেলে । মায়ের হাসি দেখে বাবার আশায় ভরা চোখ দেখে, নিজের শিশ্ন ধরে দেখে তারপর পুতুলেরটা খুঁজে পায় না। জানালা দিয়ে পাখি দেখে। আবার দুদাঁতমাড়ি হাসি দিয়ে খিক খিক করে উঠে ।
শিশু পাপাই জানালার ধারে বসে থাকে। বর্ণমালার বইটা ছিঁড়তে থাকে। কখনো হাত দিয়ে ছিঁড়ে তো কখনো দাঁত দিয়ে। তারপর চোখ বড় করে বসে থাকা কাক দেখে । বইয়ের পাতার পাখিটার সাথে ওটার মিল খুঁজে পায়। আগ্রহ নিয়ে ‘মাম্মা মাম্মা’ বলে ডাকে। মা আনন্দে পাশে এসে দাঁড়ায়, কোলে তুলে চুমু খায় । ততক্ষনে কাকটা উড়ে চলে যায়। বিস্ময়ে কাককে উড়তে দেখে পাপাই এর চোখ আরো বড় হয়ে যায়।
শিশু ইস্কুলের বেঞ্চে বসে ডানা মেলা চিল আজই প্রথম দেখেছে। সেটা কাকের চেয়েও বড় পাখনা মেলে উড়ে। তারপর স্যার কান ধরে হোমোয়ার্কের খাতায় বন্দী করে ফেলে। বিশাল চিল আর দেখা হয় না পাপাই এর। পাশে বসে থাকা মিমো’কে স্যার বাহবা দেয়। পাপাইয়ের পাখি সেদিনটার জন্য উড়ে চলে যায় অনেক দূরে।
পাপাই কুঁজো হয়ে হাটে । মাথা উচিয়ে আজ পাখি দেখা হয় না অনেকদিন। তারপর রাস্তার ধারে আহত চড়ুই পড়ে থাকে। দেখে খিক খিক করে হাসে ।“মাম্মা মাম্মা- ওটা উড়তে পারে না,খিক খিক” মা ছেলের ভেতরের নৃশংস দিক আবিষ্কার করে। বাবার সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করে। বাবা জানালার কপাট বন্ধ করে দেয়। তারপরও পাপাই জানালার ফুটো খুঁজে পায়।
আজ বদ্ধ জানালার ফুটো দিয়ে পাপাই জ্বালালি কবুতর দেখেছে। ওটা ধূসর পাখা নিয়ে ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারপর সন্ধ্যা নেমে আসে। ফুটোয় আর কোন পাখি ধরা দেয়া না। তারপর পাপাই কাগজ কলম নিয়ে একটা ছড়া লিখে । ‘ পাপাই সোনা উড়তে চায় , মাম্মা পাপ্পা শেখাবে আমায়?’ কবিতা মাম্মা দেখে । মাম্মা পাপ্পা কে দেখায়। দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হোমওয়ার্ক বাকি রেখে ছেলে কবিতা লেখে!! তারপর বাবা জানালার ফুটোটাও বন্ধ করে দেয়।
তারপর পাপাই একজন মানুষ হয়ে উঠে। সূর্যের মত তেজ নিয়ে মাম্মা-পাপ্পার মুখ আলোকিত করে। পাপাই খোলা মাঠে বসে খেলতে থাকা শিশুদের দেখে, উড়ে চলা পাখিদের দেখে। কাক দেখে, চিল দেখে , জ্বালালি কবুতর দেখে। তারপর মনে মনে খিক খিক করে হাসে। মানিব্যাগ দেখে তা থেকে ক্রেডিট-ডেবিটকার্ড বের করে দেখে। আবার পাখিদের দেখে।
হঠাৎ তার সেই প্রথম এবং একমাত্র লেখা দুলাইনের কবিতার কথা মনে পড়ে । ‘ পাপাই সোনা উড়তে চায় , মাম্মা পাপ্পা শেখাবে আমায়?’ চোখের কোনে আফসোস জমা হয়। মাম্মা পাপ্পার দিকে রাগ হয়। -কেন মাম্মা পাপ্পা উড়তে শেখালো না আমায়? পাশ দিয়ে পাগল হেঁটে যায় । আর পাপাই এর দিকে চেয়ে হেসে গেয়ে যায় ‘ তুই পাগল তোর মনও পাগল, পাগল পাগল করিস না...’
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমে আসে। পাগল আর পাপাই ভিজতে থাকে। পাপাই একবার চারদিকে চেয়ে দেখে। পাপাই উড়তে থাকা হাওয়া দেখে, ঝরতে থাকা বৃষ্টি দেখে, গাইতে থাকা বাউল দেখে। তারপর আবার ভেজা দেহে উড়তে থাকা কাক দেখে, চিল দেখে, জ্বালালি কবুরত দেখে। সমগ্র পৃথিবীটাকে একটা পাখি বলে মনে হয় পাপাই এর । পাপাই এর মনে হতে থাকে হঠাৎ যেন পাপাই উড়তে শিখে গেছে। ঝাঁকে উড়ে চলা পাখিদের দলে অনায়াসেই সামিল হয়ে যেতে পারবে সে।
তারপর বৃষ্টিটা হঠাতই থেমে যায়। পাখিরাও যেন কোথায় হারিয়ে যায়। পাগলটাও আর পাশে থাকে না । পাপাই আবার সেই দুলাইনের কথা মনে করে। তারপর হেসে উঠে, ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড পকেট থেকে বের করে দেখে । তারপর নতুন দুলাইন বাঁধে –
“মুক্তির পাখীরা সব উড়ে চলে যায়
তবে কে আর উড়তে শেখাবে আমায়?”



(ছবি সোর্স ঃ গুগল)





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৪৮

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পাঠে ভাল লাগা জানাই গেলাম ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২১

ব্রতশুদ্ধ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.