নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রত্যয়ে

শুজা উদ্দিন

ব্যতিক্রম

শুজা উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহাসিক কোন ভিত নেই-১

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

"আমাদের মধ্যে কেউ যদি ডোম, মেথর এবং চাড়ালের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে চান তা তারা নির্বিঘ্নে করতে পারেন, আমরা কৃপামিশ্রিত ঘৃণার সঙ্গে তা অবলোকন করবো।"
মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্মদাতা হচ্ছে যশোরের ‘চারুপাঠ’ সংগঠন। তারা ২১ ফেব্রুয়ারির আদলে ১৯৮৬ সালে যশোরে এটা চালু করে। শোভাযাত্রার জন্য তারা সারা শহরে আল্পনা আঁকে। তারা অশরীরী আত্মা, বিভিন্ন ধরনের পাখি এবং বাঘের মুখোশ পরা শুরু করে। এই বৈশাখী শোভাযাত্রাই ঢাকার চারুকলায় এসে রূপলাভ করে মঙ্গল শোভাযাত্রায়। শুরুতে তাদের বক্তব্য ছিল এটা শুধু মুসলমান হিন্দু খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধদের জন্য নয়, সমাজের সর্বস্তরের জনগণের জন্য। চারুপাঠের সার্বজনীন এ উদ্দেশ্য হাইজ্যাক হয়ে যায় তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকদের সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের হাতে। এর উদযাপন হয়ে থাকে রাজনৈতিক স্লোগানের মাধ্যমে, পেঁচা, বাদুড়, বাঘ, বানর, হনুমান, গণেশ ও রাক্ষস-খোক্কশসহ বিভিন্ন জন্তুর মুখোশ পরে।
বাংলাদেশ অঞ্চলের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, অষ্টম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত পাল রাজারা এ অঞ্চলে রাজত্ব করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন জন্মগতভাবে এ অঞ্চলেরই সন্তান। ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। পাল শাসনামলে তাদের কোনো অনুষ্ঠানের সূচনায় শঙ্খ বা কাঁসার ঘণ্টা বাজানো কিংবা মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোর প্রমাণ মেলে না। এ দেশে পালরা প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করেছে। সরহপার রচনার মধ্যে এবং চর্যাগীতিকায়ই ৪০০ বছরের সমাজজীবনের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই মঙ্গল প্রদীপ, শঙ্খবাদন এবং কাঁসার ঘণ্টার সমর্থন পাওয়া যায় না। সুতরাং এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারার সাথে এগুলো কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়।
পাল রাজত্বের অবসানের পর দ্বাদশ শতকে বহিরাগত সেনরা এ দেশ তাদের অধিকারে এনেছিল। কর্ণাটকের অধিবাসী সেনরা ছিল কট্টর ব্রাহ্মণ। এ দেশে এসে এ তস্কররা বৌদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করে এবং বৌদ্ধমন্দিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা সংস্কৃতকে রাজভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং নতুন করে জাতিভেদ প্রথা চালু করে। এরা সংস্কৃতিকে হিন্দুমন্দিরের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় এবং দেবদেবীর পূজা উপলক্ষে মঙ্গল প্রদীপের প্রবর্তন করে। মন্দিরের মধ্যে হোম ও আরতি হতে থাকে এবং কাঁসার ঘণ্টা প্রবর্তিত হয়। নিঃসন্দেহে বলা চলে, কাঁসার ঘণ্টা ও মঙ্গল প্রদীপ হচ্ছে একটি সাম্প্রদায়িক এবং পূজার সাথে অঙ্গাঙ্গী যুক্ত একটি বিজাতীয় অনুষ্ঠান।
সারা মধ্যযুগ ধরে এ দেশে একচ্ছত্র রাজত্ব করেছে ইসলাম। তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই ব্রাহ্মণ্য শাসনব্যবস্থা লোপ পেল। ৬০০ বছরের অধিক কাল ধরে এ দেশের প্রশাসনের ভাষা ছিল ফারসি। মুসলমানগণ ইরান, তুরান প্রভৃতি যে স্থান হইতেই আসুন না কেন, এ দেশে আসিয়া সম্পূর্ণ বাঙালী হইয়া পড়িলেন।’’ (দীনেশচন্দ্র সেন : বঙ্গভাষা ও সাহিত্য)। অস্বীকার করার জো নেই, ওই ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর সর্বশেষ দশক পর্যন্ত ৮০০ বছর ধরে বাঙালি মুসলমানদের সংস্কৃতি তৈরি হয়ে উঠেছে।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।


মরহুম জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের ভাষায়, ‘‘আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক মেরুদণ্ডহীন, পরজীবী এবং ধর্মচেতনাশূন্য এবং ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ কিছু মূর্খ লোক এ দেশের কোনো কোনো সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপের আয়োজন করে থাকে এবং কাঁসার ঘণ্টা বাজিয়ে থাকে। আমি সুস্পষ্টভাবে ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে জানাতে চাই যে, মঙ্গল প্রদীপ এবং কাঁসার ঘণ্টা সম্পূর্ণরূপে পৌত্তলিক এবং সাম্প্রদায়িক। তাছাড়া এগুলো কোনোক্রমেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। যারা জান্তব মুখোশ পরে কোনো আনন্দ উৎসব করতে চান, তা তারা করুন। তাদেরকে আমি বাধা দিতে চাচ্ছি না। তবে ইতিহাস অনুসরণ করে যে সত্যটুকু পাওয়া যায় তা হচ্ছে, এ সমস্ত অনুষ্ঠান নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের গাজনের এবং হরি উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। গাজনের মেলায় ডোম, মেথর এবং চণ্ডাল শ্রেণীর লোকেরা নানাবিধ বহুরূপী সঙ সেজে তাদের উৎসব করতো। আমাদের মধ্যে কেউ যদি ডোম, মেথর এবং চাড়ালের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে চান তা তারা নির্বিঘ্নে করতে পারেন, আমরা কৃপামিশ্রিত ঘৃণার সঙ্গে তা অবলোকন করবো।’’
(সূত্র : সাপ্তাহিক বিক্রম, বর্ষ ৬, সংখ্যা-১৯, ১৯-২৫ এপ্রিল ’৯৩)
ইদানিং পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গল প্রদীপের প্রবর্তন করা হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখের আগের দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়কপূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এদিন পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত হয় চড়ক মেলা। পরের দিন পহেলা বৈশাখ অনেক পরিবার স্নান সেরে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে। যেমনটা আমরা ঈদের দিন করি। কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশেও তাহলে বৈশাখী মেলা শুরু করতে হবে!!!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


যেটি সঠিক সেটাই টিকবে; বাকীগুলো চলমান পরিবর্তনের কারণে আসবে যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.