নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র বিশ্লেষণঃ Cast Away

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:০১



বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি পন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফেড এক্স (Fed Ex)। এই প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ অফিসার চাক নোলান্ড (টম হ্যাংকস)। ফেড এক্সের কাজ হচ্ছে, এক জায়গার মালামাল আরেক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। এরকমই ফেড এক্সের এক বিমানভর্তি মালামাল নিয়ে চাক যাচ্ছিলেন এশিয়ার কোনো এক জায়গায়। আকাশপথে বিমানে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়, বিমান ধ্বংস হয়, চাক আকাশ থেকে সরাসরি পাতাল মানে সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়, সাথে জিনিস বলতে একটা লাইফ র‍্যাফট। আর, পকেটে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে স্ত্রীর উপহার দেয়া একটা ট্যাঁকঘড়ি।

সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে চাক নিজেকে আবিষ্কার করে পাণ্ডববর্জিত এক দ্বীপে। প্রশস্ত প্রশান্ত মহাসাগরের এক অজ্ঞাত দ্বীপে, যে দ্বীপে খাবার বলতে নারকেল গাছের কিছু ডাব, সরঞ্জাম বলতে প্লেন থেকে ভেসে ভেসে চলে আসা ফেড এক্স এর কয়েকটা বক্স, সঙ্গী বলতে উইলসন কোম্পানির একটা সাদা ভলিবল। এই কয়টি উপাদানকে আঁকড়ে ধরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শুরু হয় চাকের জীবনযুদ্ধ। প্রবাদ আছে, "যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ।" "আশা"কে মশাল বানিয়ে বাস্তবের রূঢ় রাস্তায় চাক নোলান্ডকে নামতে হয়।

প্রথম কিছুদিন নারকেলের তরল খেয়ে দিন কাটলেও আস্তে আস্তে নারকেলে অরুচি ধরে যায় চাকের। এরপর সমুদ্র থেকে ছোট মাছ ধরে কাঁচা কাঁচাই খাওয়া চললো কিছুদিন। এরপর আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করা, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করা, দ্বীপে মানুষ ও প্রকৃতির দ্বৈরথেই পেরিয়ে যায় চার চারটে বছর।

চাকও এতদিনে জানতে পেরে গেছে, তার জন্যে আর কোনো সার্চ পার্টি আসবেনা। প্রত্যেকটা সার্চ পার্টির নির্দিষ্ট একটা রেঞ্জ থাকে। চাক যে দ্বীপে আটকে পড়েছে, সার্চ পার্টি যদি তাদের রেঞ্জের ডাবল এরিয়ায়ও সার্চ করে, তবুও এ দ্বীপকে খুঁজে পাবেনা। আর, তাছাড়া, চাককে খুঁজতে এখন আর কেউ আসা সম্ভবও না। চার বছর তো আর কম সময় না। এতদিনে হয়তো সবকিছুই পালটে গেছে চারপাশের। তবুও, চাক আবার ভেলা বানায়, সঙ্গী ভলিবল (যাকে চাক উইলসন বলে ডাকে) ভেসে পড়ে সমুদ্রের বুকে, উদ্দেশ্য লোকালয়ে ফিরে যাওয়া। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণই তো আশ...

চাক কী পারবে লোকালয়ে ফিরতে...?

ডিসকভারিতে বেয়ার গ্রিলসের "ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড" যাদের পছন্দ, তাদের এ সিনেমা ভালোই লাগবে। ওয়ান ম্যান শো, বেঁচে থাকার লড়াই। যেখানে প্রকৃতিই আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, আবার "প্রকৃতি' নামক প্রতিপক্ষই যেখানে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।

আমি টক হ্যাঙ্কসের অভিনয়ের ভক্ত। ফরেস্ট গাম্প, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, ব্রীজ অফ স্পাইস অথবা ক্যাস্ট এওয়ে, টম হ্যাঙ্কস নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দী সবখানে। হলিউডে যারা অভিনয় করেন, তারা প্রত্যেকেই মেধাবী, তবুও টম হ্যাঙ্কস যেন তাদের মধ্যেও প্রথম শ্রেণির। এই সিনেমায় দুই চেহারার টম হ্যাঙ্কসকে দেখা যাবে। প্রথম টম হ্যাঙ্কস “ফেড এক্স” এর এক্সিকিউটিভ অফিসার, গোলগাল, আরামপ্রিয় চেহারা। দ্বিতীয় টম হ্যাঙ্কস চার বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের অজ্ঞাতকুলশীল এক দ্বীপে জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত এক জীর্ণ মানুষ। চুল-দাড়িতে বোঝাই মুখমণ্ডল, পোড়খাওয়া চেহারা... এই চেহারায় আসতে টম হ্যাঙ্কসকে শরীর থেকে কমাতে হয়েছিলো পঞ্চাশ পাউন্ড ওজন। সিনেমার শ্যুটিং বন্ধ ছিলো এক বছর, এ কারণেই। টম হ্যাঙ্কসের “ফ্রেঞ্চ ফ্রাই” পছন্দ, গোটা এক বছরে এ জিনিস ছুঁয়েও দেখতে পারেননি তিনি। চরিত্রের জন্যে খুব বেশি ডেডিকেশন না থাকলে এগুলো সম্ভব না।

প্রথমবার যখন অনেক কষ্টে আগুন ধরালেন, সে সময়ে “I have made fire” বলে চিৎকার, কয়েকবার আপ্রাণ চেষ্টায়ও আগুন ধরাতে না পারার তীব্র হতাশা-অবসাদ, চার বছর পরে কোনো প্লেনের ধ্বংসাবশেষ দেখে খানিকটা বিস্ময়, খানিকটা ভয় নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা, সঙ্গী উইলসনের সাথে বিচ্ছেদের সময়ের গভীর হাহাকার... টম হ্যাঙ্কসের অভিনয় চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন।

উইলসনকে নিয়ে অনেক কথা বললাম। “উইলসন” নামধারী যে তিনটি ভলিবলকে সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে একটিকে পরবর্তীতে নিলামে ওঠানো হয়, ভলিবলটি বিক্রি হয় ১৮,৪০০ ডলারে। বলে রাখা ভালো, সিনেমার “উইলসন” নামের ভলিবল কিন্তু পুরস্কারও জিতেছে। “Broadcast Film Critics Association Awards” এ “বেস্ট ইনএ্যানিমেট অবজেক্ট” হিসেবে পুরস্কার জেতে “উইলসন দ্য ভলিবল।“

“কাস্ট এ্যাওয়ে”তে অসাধারণ অভিনয়ের জনে অস্কারের জন্যে নমিনেটেড হয়েছিলেন টম হ্যাঙ্কস। গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে তিনি। “কাস্ট এ্যাওয়ে” সিনেমা গোল্ডেন গ্লোব সহ পনেরোটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে সবমিলিয়ে।

প্রকৃতিকে আসলে বশ করা যায় না, সম্ভবও না। তবে, তার সাথে সখ্যতা করাই যায়। এবং বেলাশেষে, তা খুব একটা খারাপ ফলাফল বয়ে আনেনা, তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণঃ “কাস্ট এ্যাওয়ে।“ এবং প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ যে কতটা দুর্দমনীয়, সাহসী, অদম্য হয়ে উঠতে পারে, তারও খুব ভালো উদাহরণ সিনেমাটি।

প্রকৃত সিনেমাপ্রেমীদের ভালোই লাগবে, আশা করা যায়।

তথ্যঃ
Movie: Cast Away
Director: Robert Zemeckis
Writer: william Broyles Jr.
Genre: Adventure, Drama, Romance
Release: December 22,2000
Cast: Tom Hanks, Helen Hunt, Paul Sanchez...
IMDB: 7.7/10


বি.দ্রঃ চাক নোলান্ড এর নাম ইংরেজিতে লিখলে হয়ঃ Chuck Noland. শর্ট ফর্মে C. Noland বা see no land ;)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:২৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: TOM HANKS এর GREEN MILE দেখতে পারেন, এক অসাধারণ অভিনয়, সিনেমা দেখতে বসে আর নড়াচড়া করার কথা মনে থাকবে না, আমি নিজেও টম হ্যাংকস সাহেবের মুভির জোড়ালো ভক্ত । গ্রিন মাইল ছবিটি দেখে থাকলে জানাবেন আর না দেখে তাকলে অবস্যই দেখে নিবেন টম হ্যাংকস এর অনবদ্য ছবির একটি গ্রিন মাইল ।। ধন্যবাদ

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:২৭

কূপমন্ডূক বলেছেন: দেখেছি। আমার অন্যতম প্রিয় একটি সিনেমা। ক্যাপ্টেন ফিলিপস ও

২| ১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: GREEN MILE


POLAR EXPRESS

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: প্রিয় অভিনেতা, "কাস্ট এওয়ে" চলচ্চিত্রটি প্রায় ৯ বছর আগে দেখা। এই অসাধারণ অভিনেতার অভিনিত আমার আর একটি প্রিয় চলচ্চিত্র হল "গ্রিন মাইল" - এই চলচ্চিত্র এর বিখ্যাত ইলেকট্রিক চেয়ার এর দৃশ্যটি দেখে আমি খূব কেঁদেছিলাম ।

১৭ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:০২

কূপমন্ডূক বলেছেন: অসাধারণ সিনেমা "দ্য গ্রিন মাইল"

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:১৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: এবং ভয়ন্কর তথ্য বিষয়ক ছবি “ডা ভিঞ্চি কোড”

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.