নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র বিশ্লেষণঃ The Terminal

১৪ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯

আমি দুই ধরণের সিনেমা নিয়ে রিভিউ লিখিনা। এক. যে সিনেমা ভালো লাগেনা। দুই. যে সিনেমা বেশি ভালো লাগে। প্রথম ধরণের ক্ষেত্রে বলি, যে জিনিস ভালোই লাগেনি, সেটা নিয়ে "রিভিউ" লেখার মত পরিশ্রম করতে ভালো লাগেনা। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে, যে সিনেমা বেশি ভালো লেগেছে, সেটা নিয়েও লেখা যায় না। নিরপেক্ষভাবে সিনেমার ময়নাতদন্ত করা যায়না। তবুও, আজ দ্বিতীয় ক্যাটাগরির একটি সিনেমা নিয়ে কিছু লিখবো। দুয়েকটা সিনেমা বেশি ভালো লেগে গেলে, সেটা নিয়ে দুয়েক লাইন না লিখলে জগদ্দল পাথরের মত ভার মনে হয়। লিখলে ভারমুক্ত হওয়া যায়। তাই আজকের রিভিউ লিখছি আমি হয়তো নিজের জন্যেই, নিজে ভারমুক্ত হওয়ার জন্যে। বাকি কারো যদি উপকারে লাগে এ রিভিউ, সেটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

সিনেমার নাম "The Terminal." এ সিনেমা বোধকরি অধিকাংশ দর্শকই দেখে ফেলেছেন। দেখারই কথা, আমি এতদিন কেন দেখিনি, সেটা নিয়ে এখন আক্ষেপ হচ্ছে। সিনেমার প্রেক্ষাপট যদি বলিঃ ইউরোপের দেশ ক্রাকোজিয়া থেকে আগত এক বিমানে জন এফ কেনেডি (JFK) বিমানবন্দরে নামে ভিক্টর নাভোরস্কি (টম হ্যাঙ্কস) নামের এক মধ্যবয়স্ক লোক। যাবে নিউইয়র্কে, তার বাবার এক অসম্পূর্ণ স্বপ্ন সম্পূর্ণ করতে। কিন্তু, এয়ারপোর্টে নেমেই সে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটকচালে পরে যায়। ক্রাকোজিয়াতে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় আমেরিকা ক্রাকোজিয়ার নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এই নিষিদ্ধতার ফাটলে আটকে পড়ে ভিক্টর নাভোরস্কি। সে জানতে পারে, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখতে পারবেনা সে। ক্রাকোজিয়ার যুদ্ধ যতদিন না শেষ হবে, ততদিন তাকে এয়ারপোর্টেই থাকতে হবে। সে দেশেও ফিরে যেতে পারবেনা। মোটামুটি, গানের ভাষায়, "মাইনকা চিপা"য় ফেঁসে যায় ভিক্টর।

ভিক্টরের আরেকটা সমস্যা হলো, সে ইংরেজি জানে খুব কম। যে ইংরেজি দিয়ে কাজ চালানো একরকম অসম্ভব। চারপাশে সবাই ইংরেজি জানলেও, সে মোটেও জানেনা। মোটামুটি, এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভিক্টর নাভোরস্কি আটকে পড়ে বিমানবন্দরে।

তবে, সেও দমে যাওয়ার পাত্র না। বিমানবন্দরকেই সে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলে বসবাস শুরু করে। প্রতিদিনই উদ্ভট সব কার্যকলাপে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরকে। আস্তে আস্তে বিমানবন্দরের কর্মীদের সাথেও সখ্যতা বাড়ে তার। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পরে মোটামুটি বিখ্যাতও হয়ে যায় ভিক্টর নাভোরস্কি। সবাই তাকে এক নামে চেনে।

এভাবেই এগোয় সিনেমা...

সিনেমা-দর্শকদের মধ্যে কয়েকটা শ্রেণিবিভাগ আছে। কেউ ক্লাসিক সিনেমাগুলোর ফ্যান। "গডফাদার", "ক্যাসাব্লাঙ্কা"... টাইপের মুভি ছাড়া তাদের অন্যকিছু ভালো লাগেনা। একশ্রেণির হরর প্রিয়, কেউ এ্যাকশন প্রিয়, কেউ সুপার হিরোদের মুভি পছন্দ করে, কেউ আবার থ্রিলার...। আমি সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে আগুনের মত, সর্বভুক। বেছে বেছে, ক্যাটাগরি অনুযায়ী সিনেমা দেখার পক্ষপাতি না। যে সিনেমার আইএমডিবি রেটিং ৭ এর ওপরে থাকে, আমি সেই সিনেমাই দেখার চেষ্টা করি। নো ম্যাটার, সেটা টাইটানিক, লাইফ ইজ বিউটিফুল বা "দ্য সার্কাস"। অনলি রিকোয়ারমেন্টঃ আইএমডিবি রেটিং ৭ এর ওপরে থাকতে হবে।

কাস্ট এ্যাওয়ে দেখেছিলাম দুই-তিন দিন আগে। এরপরে, এই সিনেমার সাজেশন পেলাম। দেখলাম, মুগ্ধও হলাম। মানে, মুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো অপশন হাতে ছিলোওনা, স্টিভেন স্পিলবার্গ সে সুযোগ রাখেননি কোথাও। এবং, দুই ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিটের সিনেমা... বিরক্ত লাগার বা একঘেয়ে হওয়ার সুযোগ এক সেকেন্ডের জন্যেও পাইনি। কিছু দৃশ্য খুব ভালো লেগেছে, বারবার দেখেছি।

এবার বলতে হয় "টম হ্যাঙ্কস" এর কথা। কী বলবো? বাকরুদ্ধ। এ ভদ্রলোকের এখন পর্যন্ত যে কয়টি সিনেমা দেখেছি, প্রতিটিতেই মুগ্ধ হয়েছি। শুধু মুগ্ধ না, তীব্র মুগ্ধ। এই সিনেমার কথাটাই ধরা যাকঃ ওয়ান ম্যান শো। সিনেমার অন্যান্য কলাকুশলীরাও ভালো অভিনয় করেছেন। কিন্তু, দিনশেষে, সবাইকে ছাপিয়ে একজনই সবার ওপরে, "টমাস জেফরি হ্যাঙ্কস।" কারো কারো অভিনয় দেখলে মনে হয়, অভিনয় আসলে ছেলের হাতের মোয়া, খুব সহজ, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই অভিনয় হয়ে যায়। টম হ্যাঙ্কস সেই শ্রেণির অভিনেতা। এরকম উঁচুজাতের অভিনেতা যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিতেই খুব কম, খুব। আর এ সিনেমায় তাঁর ভুলভাল ইংরেজিতে কথা বলা, সরল চাহনির উচ্ছ্বাস, নিষ্পাপ সব কার্যকলাপ দেখে কখনো প্রচণ্ড হেসেছি, তৃপ্তি পেয়েছি। "আবেগ" নামক কনসেপ্টকে যদি সরিয়েও রাখি, তবুও বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা "দ্য টার্মিনাল"এ ভিক্টর নাভোরস্কি চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে টম হ্যাঙ্কসের চেয়ে ভালো চয়েজ ছিলোনা। এই চরিত্র টম হ্যাঙ্কসের চেয়ে ভালোভাবে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতো কী না, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

আমি সিনেমার এন্ডিং নিয়ে খানিকটা শঙ্কিত ছিলাম। মানে, সিনেমার স্টোরিলাইন অনুযায়ী এন্ডিংটা সুন্দর হবে তো? এরকম চিন্তা ছিলো। কিন্তু, মিঃ স্পিলবার্গ ফিনিশিং লাইন টেনেছেন মিঃ স্পিলবার্গের মতই। অনেকটা চর্বচোষ্য-লেহ্য-পেয় খাওয়ার পরে শেষপাতে দইয়ের মত।

এ সিনেমা কয়টা পুরস্কার পেয়েছে, তা নিয়ে কিছু বলবোনা। একটাই কথা বলা যায়, আপনি যদি অস্কার কমিটির কেউকেটা কেউ হতেন, সিনেমা দেখার পরে নির্দ্বিধায় সিনেমাটিকে দুই-তিনটি অস্কার দিয়ে দিতেন। তাহলে, বুঝতেই পারছেন, পুরস্কারের কথা বলা এখানে কতটা অপ্রাসঙ্গিক। আমরা সিনেমা দেখি কেন? আমাদের সিনেমা দেখার মূল উদ্দেশ্য তো এন্টারটেইন্ড হওয়া। আপনি এ সিনেমায় সেটা ভালোভাবেই হতে পারবেন, নো ডাউট। তাহলে, পুরস্কার নিয়ে মাথা ঘামানোর আদৌ কী কোনো দরকার আছে?

আপনার মনমেজাজ যদি এ মুহুর্তে প্রচণ্ড খারাপ হয়ে থাকে, পুরো দুনিয়ার ওপরে যদি ত্যক্তবিরক্ত থাকেন, কিছুই ভালো লাগছেনা টাইপের অবস্থা যদি হয়ে থাকে, আপনার জন্যে প্রেসক্রিপশন, যত দ্রুত সম্ভব এ সিনেমা দেখুন। আপনি খুব তাড়াতাড়িই মনমেজাজের বিমর্ষ ভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন, নিশ্চয়তা দেয়া যায়।

তবে, এই রিভিউ লিখতে এতগুলো শব্দ আমাকে খরচ করতে হতোনা, যদি রিভিউ'র শুরুতেই লিখে দিতামঃ

Masterpiece!


সাধারণ জ্ঞানঃ

Movie: The Terminal
Director: Steven Spielberg
Genre: Comedy, Drama, Romance
Cast: Tom Hanks, Catherine Zeta Zones, Chi Mcbride...
Release: Jun 18, 2004
IMDB: 7.3/10

Happy Freaking :D

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:৩৪

জেন রসি বলেছেন: প্রিয় মুভি।

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭

কূপমন্ডূক বলেছেন: same here

২| ১৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

অপু তানভীর বলেছেন: খুবই চমৎকার একটা মুভি ! অনেক দিন আগে দেখেছিলাম !

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭

কূপমন্ডূক বলেছেন: অসাধারণ

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৫

লিওনাডাইস বলেছেন: অনেক সুন্দর মুভি। আগেই দেখা।

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৮

কূপমন্ডূক বলেছেন: অসাধারণ

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

জোছনা রাতে বনে বলেছেন: ভাইয়ুউউউউউউ!!!!!!

সুন্দর পোস্ট!!!!!!!

তোমাকে এমন পোস্টের জন্য নুডুলসের চিকেন ফ্রাই বানাই খাওয়াব!!!!!!!!!

হা হা হা হা!!!!!!!!!!!!

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭

কূপমন্ডূক বলেছেন: আপনিই খান। খেয়ে জানায়েন, কেমন লাগলো

৫| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬

আল ইফরান বলেছেন: টম হ্যাংকস মানেই অসাধারন কিছু (সালি/ ভিঞ্চি কোড বাদে)।
তবে সবচাইতে মুগ্ধ হয়েছিলাম কাস্ট এওয়ে দেখে, বিশেষ করে লাস্ট সিকুয়েন্সে ক্রসরোডের সিনটাতে।

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬

কূপমন্ডূক বলেছেন: সালি ভালো না লাগার কারন কী?

৬| ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৪১

আল ইফরান বলেছেন: এমেরিকান হিরোইজম আমার কোনকালেই ভালো লাগে না।
আর হাডসন বে'তে প্লেন ল্যান্ড করা নিয়া একটা আস্ত মুভি বানানো ওয়েস্টার্ন কালচারাল হেজেমনির স্থুল প্রকাশ ছাড়া আমার কাছে কিছুই মনে হয় নাই।
ঠিক যেই কারনে হার্ট লকার ভালো লাগে নাই সেই কারনে সালি'ও ভালো পাই নাই।

১৭ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:০৬

কূপমন্ডূক বলেছেন: আমার কাছে অতটা মনে হয়নি। ১৫৫ জন লোককে বাঁচানো নেহায়েত খারাপ কিছু না। তাছাড়া, সে আসলে নায়ক না খলনায়ক... এটা নিয়ে পরে একটা প্রশ্নও উঠে গেছিলো। আমার মনে হয়, এই বিষয়টাই পরিচালক সিনেমায় ফোকাস করতে চেয়েছেন।

সালি বা সুলি খারাপ লাগেনি আমার। বেশ একটা মানবিক বিষয় ছিলো।

৭| ২০ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:২৩

এডওয়ার্ড মায়া বলেছেন: হায় ,হায় আমি এখনো দেখি নাই =p~

৮| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:০৩

কূপমন্ডূক বলেছেন: দেখে ফেলুন, যত শীঘ্র সম্ভব :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.