নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র বিশ্লেষণঃ Invictus

০১ লা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

তথ্য
Movie: Invictus
Director: Clint Eastwood
Genre: Biography, Drama, History
Cast: Morgan Freeman, Matt Damon, Tony Kgoroge...
Release: December 11, 2009
IMDB: 7.4/10

আমাদের চারপাশে খুব কমন একটা ডায়লগ আছে, যেটা আমরা প্রায়ই ব্যবহার করিঃ খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না। অথচ, যেকোনো খেলাকেই আপনি রাজনীতি বাদ দিয়ে দেখতে পারবেন না। খেলার আগে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়, দেশের সব মানুষ সেই দেশকে সমর্থন দেয়, খেলোয়াড়েরা জিতে গেলে জিতে যায় দেশ। যেখানে খেলার সাথে দেশই মিশে যায়, সেখানে রাজনীতি তো খুবই পলকা একটা বিষয়। তাহলে, রাজনীতি কেন মিশবেনা? তবুও আমরা ভারত-পাকিস্তান খেলায় পাকিস্তানকে সাপোর্ট দিই, ভারতকে সাপোর্ট দিই আর মুখে “খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না” নামক প্রলাপ বকি।

ভাবছেন, সিনেমার রিভিউ লিখতে বসেছি, এখানে দুম করে এসব কী ছাইপাঁশ লিখছি। বিচলিত হবেন না, সিনেমার সাথে সম্পর্ক আছে বলেই ওপরের শব্দগুলোর অবতারনা। এই যে নিজের দেশ থাকতেও আমরা অন্য দেশকে সমর্থন দিই, এ অবস্থাটা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ছিলো। তখন দক্ষিন আফ্রিকার জাতীয় দলের নামঃ স্প্রিংবকস। কিন্তু, সে দেশের অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষজন এ দলটিকে সমর্থন দিতোনা, বরং এই দলের সাথে অন্য যে দলই খেলুক না কেন, তাদের সমর্থন দিতো। স্প্রিংবকস কে একরকম ঘৃণাই করতো সে দেশের সিংহভাগ মানুষ। নেলসন ম্যান্ডেলা তখন সদ্য সদ্য প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সে দেশের। তার কানেও এ তথ্যগুলো আসে। তিনি একদিন রাগবি ম্যাচ দেখতে মাঠে যান। গিয়ে এ তথ্যের সত্যতাও খুঁজে পান। এবং সেসময় স্প্রিংবকস এর খেলার মানও ছিলো যথেষ্ট হতাশাজনক। মাদিবা মানে নেলসন ম্যান্ডেলা ভাবলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার।

আর কিছুদিন পরে দক্ষিন আফ্রিকাতে “রাগবি বিশ্বকাপ” শুরু হয়ে যাবে, তারাই এবারের হোস্ট। ম্যান্ডেলা চাইলেন “স্প্রিংবকস” এর খেলার উন্নতি ঘটাতে। সেসাথে, দেশের মানুষের “স্প্রিংবকস” এর ওপরে যে ঘৃণা, সেটাকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত করতে।

দেশের মানুষ গ্রিন এন্ড গোল্ড প্রোটিয়াদের কে ভালোবাসতে পেরেছিলো কী না, স্প্রিংবকস শেষপর্যন্ত রাগবি বিশ্বকাপে ভালো করেছিলো কী না, তা জানা যাবে সিনেমার পরবর্তী অংশে। আগ্রহীরা দেখতে পারেন সিনেমাটি। কাহিনী নিয়ে আর কিছু না বলাই ভালো।

অভিনয়

এ সিনেমায় “মরগ্যান ফ্রিম্যান” চরিত্রে অভিনয় করেছেন “নেলসন ম্যান্ডেলা”, স্যরি “নেলসন রোলিলাহলা ম্যান্ডেলা” চরিত্রে অভিনয় করেছেন মরগ্যান ফ্রিম্যান। আমি এই লোকটির অভিনয়ের বিশাল ভক্ত অনেক আগে থেকেই। আর, নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে তাঁর চেহারার এত মিল যে, দুজনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া রীতিমত কঠিন। বাস্তব জীবনে বহুবছর ধরে ম্যান্ডেলার বন্ধু ছিলেন মরগ্যান ফ্রিম্যান। যেটা তাকে এ চরিত্রে অভিনয় করতে খুবই সহায়তা করেছে। এবং তিনি এ চরিত্রে এতটাই নিখুঁত ছিলেন যে, ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত সচিব, মরগ্যান ফ্রিম্যানকে ম্যান্ডেলার মত হাঁটতে নিষেধ করেন, যাতে করে তিনি দুইজনের মধ্যে অন্তত একটি হলেও পার্থক্য বলতে পারেন। নেলসন ম্যান্ডেলা নিজেও বলেছিলেন, আমার চরিত্র যদি কেউ করতে পারে, ফ্রিম্যানই পারবে। "ম্যান্ডেলা" চরিত্রে অভিনয় করতে ফ্রিম্যানকে কিছু ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। মরগ্যান ফ্রিম্যান বামহাঁতি ছিলেন, কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন ডানহাতি। ডানহাতে সবকিছু করার অভ্যাস করতে মরগ্যান ফ্রিম্যানকে অনেকটাই কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এ চরিত্রটির জন্যে তাঁর চেয়ে উপযুক্ত আর কেউ নেই, এ কথা হলফ করে বলাই যায়।

আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা ম্যাট ডেমন ছিলেন স্প্রিংবকস এর ক্যাপ্টেন “ফ্রান্সিস পিয়েনার” এর চরিত্রে। তিনিও ভালো অভিনয় করেছেন। এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে তিনি আসল “ফ্রান্সিস পিয়েনার” এর সাথে দেখা করেন এবং রাগবি খেলার ওপরে ট্রেনিংও নেন চেস্টার উইলিয়ামের কাছে, যিনি নিজেই দক্ষিন আফ্রিকান রাগবি টীম-১৯৯৫ এর একজন খেলোয়ার ছিলেন। এটা ম্যাট ডেমনের দ্বিতীয় সিনেমা, যেখানে তিনি রাগবি খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। ডিপার্টেড সিনেমাতেও তিনি “রাগবি” খেলেছিলেন।

যাই হোক, পাদপ্রদীপের সব আলো "মরগ্যান ম্যান্ডেলা"র ওপরে থাকায়, বাকিরা খুব একটা অভিনয়ের সুযোগ পাননি এ সিনেমায়। তবুও সবাই যার যার নিজের অংশটুকু ভালোই করেছেন।

দৃশ্যায়ন-চলচ্চিত্রায়ন

এ সিনেমার এক অংশে “স্প্রিংবকস” টীম, নেলসন ম্যান্ডেলা যে প্রিজন সেলে ত্রিশ বছর আটকে ছিলেন, সেটা দেখতে যান। সিনেমায় আসল প্রিজন সেলই দেখানো হয়েছে, যেখানে ম্যান্ডেলা কারারুদ্ধ ছিলেন ত্রিশ বছর। সেখানের দৃশ্যায়ন মুগ্ধ করেছে।

রাগবি খেলাকে কেন্দ্র করে একটা দেশ যে কতটা উৎসবমুখর হয়ে উঠতে পারে, সেটা এ সিনেমায় খুব ভালোভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। "ফেস্টিভ লুক" সুন্দরভাবেই উঠে এসেছে পর্দায়।

নেলসন ম্যান্ডেলার ফেভারিট ব্যান্ড “সোয়েতো স্ট্রিং”কে এ সিনেমায় কাজ করার জন্যে ডাকা হয়, তারাও এ সিনেমায় কাজ করেছে। এবং তাদের সঙ্গীত, সিনেমায় ভিন্ন দ্যোতনা দিয়েছে।

সিনেমায় কিছু কারচুপিও অবশ্য আছে। এ সিনেমার রাগবি ফাইনাল ম্যাচের দিনে স্টেডিয়ামে ৬৩০০০ দর্শক দেখানো হয়, আসলে সেখানে সর্বসাকুল্যে ২০০০ জন দর্শক ছিলো। বাকিটা, ক্যামেরার কারিশমা...

আরেকটা ভুল অবশ্য নজরে এসেছে। সিনেমার ফাইনাল ম্যাচের পরে এক মহিলাকে ক্যামেরাতে দেখানো হয় যিনি স্প্রিংবকস এর ২০০১-০২ সালের জার্সি পরে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন, খেলা হচ্ছিলো ১৯৯৫ সালে, তিনি ২০০১-০২ সালের জার্সি পেলো কই? প্রশ্ন রইলো।

নামকরণ

সিনেমার নাম ইনভিকটাস(Invictus). এটা একটা ল্যাটিন শব্দ, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় অপরাজিত। এটা আবার ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম আর্নেস্ট হেনরির লেখা একটি বিখ্যাত কবিতারও নাম। যে কবিতাটি আমরা মরগ্যান ফ্রিম্যানের গলায় এই সিনেমাতে শুনতে পাবো। যে কবিতাটি “স্প্রিংবকস টীম” কে লিখে পাঠিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা, খেলায় অনুপ্রাণিত করবার জন্যে। অসাধারণ এক কবিতা। সিনেমা দেখলেই বোঝা যাবে, নামকরণের সার্থকতা কতটুকু। নাই বা লিখলাম।

ভালো লাগা

পুরো সিনেমাই অসাধারণ। খারাপ লাগা বা বিরক্ত হওয়ার সুযোগ খুব কমই ছিলো। প্রথম ভালো লাগা, মরগ্যান ফ্রিম্যান। তাঁর ডায়লগ ডেলিভারি, তাঁর গলায় “ইনভিকটাস” কবিতা, সবই অসাধারণ। মাদিবা কে অসাধারণ ভাবে ক্যামেরার সামনে তুলে এনেছেন তিনি।

রাগবি খেলা খুব একটা বুঝিনা। তবুও এ সিনেমায় রাগবি খেলাকে এত চমৎকার, উত্তেজক করে দেখানো হয়েছে যে, শেষের দিকে আক্ষরিক অর্থেই স্নায়ুচাপে ভুগেছি। কী হয়, কী হয় ধরণের অবস্থা। পরিচালক এ সিনেমা বানানো শেষে রাগবি খেলার ফ্যান হয়ে গেছিলেন, আমিও এ সিনেমা দেখা শেষে রাগবি’র ফ্যান হয়ে গেছি। ফুটবলের সাথে খানিকটা মিল আছে এ খেলাটার।

খারাপ লাগা

সিনেমার শেষের “রাগবি ফাইনাল ম্যাচ” ৪৫ মিনিট ধরে দেখানো হয়েছে, এটা ভালো লাগেনি। যদিও এ ৪৫ মিনিটে বিরক্ত লাগেনি, বেশ সাসপেন্সই ছিলো, তবুও সময় খানিকটা কমিয়ে দিলে বোধহয় বিষয়টা আরেকটু ছিমছাম হতো।

ব্যক্তিগত মতামত

অসাধারণ লেগেছে সিনেমাটি। এ সিনেমায় একইসাথে দর্শক নেলসন ম্যান্ডেলাকেও খানিকটা চিনবেন, তাঁর নীতি, আদর্শের কিছুটা ইঙ্গিত পাবেন, সে সাথে একটা খেলার সাথে কীভাবে রাজনীতি যুক্ত হতে পারে, ভালোবাসা যুক্ত হতে পারে, তাও জানবেন।

দেখা যেতে পারে “ইনভিকটাস।“ সময় অপচয় হবেনা, নিশ্চয়তা দেয়া যায়।

অনেককিছু লিখে ফেললাম। শেষপাতে দইয়ের মত শেষ করছি “ইনভিকটাস” কবিতা থেকে দুই লাইন লিখে।

I Am The Master Of My Fate
I Am The Captain Of My soul

আমার অসম্ভব প্রিয় দুটি লাইন...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৩০

এ্যান্টনি ফিরিঙ্গী বলেছেন: I Am The Master Of My Fate
I Am The Captain Of My soul


লেখা পড়ে সিনেমার প্রেমে পড়ে গেলাম। এখন দেখতেই হবে।

০১ লা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

কূপমন্ডূক বলেছেন: অবশ্যই দেখুন :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.